গত জুনে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই জয়টা ছিল অধিনায়ক হিসেবে দশম টেস্টে টেম্বা বাভুমার নবম জয়। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ১০ ম্যাচে সবচেয়ে বেশি জয়ের রেকর্ডে ইংল্যান্ডের পার্সি চ্যাপম্যানের পাশে বসেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক। তবে চ্যাপম্যান অন্য ম্যাচটি হারলেও বাভুমা প্রথম ১০ ম্যাচে অপরাজিত ছিলেন।

অধিনায়ক হিসেবে ১১ ম্যাচ শেষেও অপরাজিত রইলেন বাভুমা। কলকাতায় অবশ্য হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছিল তাঁর নিখুঁত রেকর্ড। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর ৫৫ রানের ইনিংসটাই অক্ষত রেখেছে তাঁর অপরাজেয় ধারা। ভারতকে দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৩ রানে অলআউট করে নাটকীয় এক জয় পেয়েছে তাঁর দল। আর এই জয়ে বিশ্ব রেকর্ডও ধরা দিয়েছে বাভুমার কাছে।

রেকর্ডটা অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ১১ টেস্টে সবচেয়ে বেশি জয়ের। ১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে আর কোনো অধিনায়ক প্রথম ১১ ম্যাচের ১০টি জেতেননি। প্রথম ১০ ম্যাচের ৯টিতেই জেতা অধিনায়ক পার্সি চ্যাপম্যান এরপর আর জয়ের দেখা পাননি। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ৯ টেস্টেই জয় পাওয়া চ্যাপম্যান পরের আট ম্যাচের দুটি হারেন আর ড্র করেন ছয়টিতে।

কলকাতা টেস্ট জয়ে ব্যাট হাতে বড় ভূমিকা রেখেছেন বাভুমা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র কর ড প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

আজ মাওলানা ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী

মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী সোমবার (১৭ নভেম্বর)। এ উপলক্ষে টাঙ্গাইলের সন্তোষে মরহুমের মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে ভোর থেকে ঢল নেমেছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের। প্রয়াত এই নেতার মাজারে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, তার পরিবার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছে। 

ইতোমধ্যে সন্তোষে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মাজার প্রাঙ্গণে সপ্তাহব্যাপী মেলা বসেছে। বিভিন্ন সংগঠন-প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আলোচনা সভা, সেমিনার চলছে। মাজার প্রাঙ্গণে ভক্ত, অনুসারী ও মুরিদরা ‘যুগ যুগ জিও তুমি, মওলানা ভাসানী’ স্লোগানে ক্ষণে ক্ষণে স্লোগান দিচ্ছেন।

এদিকে, সংরক্ষণের অভাবে এবং অযত্ম-অবহেলায় থাকা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর স্মৃতিচিহ্ন গুলো হারিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, তার চিন্তা ও আদর্শের ওপর ভিত্তি করে একটি রাষ্ট্র গঠন করা যেতে পারে। নতুন সরকারের কাছে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে যথাযথ সম্মান জানানোর দাবি তাদের। 

পরিবারের সদস্যরা বলছেন, বিগত দিনে যারাই সরকার ছিলেন, তাদের দায়বদ্ধতার ঘাটতি ছিল বলেই মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর হাতে গড়া অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। যমুনা সেতু ও টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ ভাসানীর নামে করার দাবি তাদের। 

জাতীয় নেতার মর্যাদার পাশাপাশি, মাওলানা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি সচেতন মহলের। দেশের মানুষের স্বার্থে তাকে নিয়ে আরো গবেষণা করা প্রয়োজন বলে মনে করে ভাসানী ফাউন্ডেশন।

মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর হাতে লেখা চিঠি

মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৭৬ সালের এই দিনে ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। পরে টাঙ্গাইলের সন্তোষে তাকে সমাহিত করা হয়। 

মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাকনাম ছিল চেগা মিয়া। তবে, তিনি লাল মওলানা হিসেবেও সমধিক পরিচিত। মক্তবে শিক্ষকতার সুবাদে ১৯০৯ সালে টাঙ্গাইলের কাগমারীতে চলে আসেন। সিরাজগঞ্জে জন্ম হলেও তার জীবনের সিংহভাগই টাঙ্গাইলের সন্তোষে কাটিয়েছেন। সন্তোষের মাটিতেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত।

মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী কৈশোর-যৌবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি তৎকালীন বাংলা-আসাম প্রদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন। লাইন-প্রথা উচ্ছেদ, জমিদারদের নির্যাতন বিরোধী আন্দোলনসহ সারাজীবনই তিনি সাধারণ মানুষের কল্যাণে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। তার উদ্যোগে ১৯৫৭ সালে কাগমারীতে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলন তৎকালীন রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেয়। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সর্বদলীয় ওয়ার কাউন্সিলের উপদেষ্টা ছিলেন। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর পাক জান্তাদের ‘ওয়া আলাইকুম আসসালাম’ বলে বিদায় জানিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর তার সর্বশেষ কীর্তি ছিল- ফারাক্কা লং মার্চ। 

১৯৬৭ সালে চীনের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে উপহার পাওয়া ট্রাক্টর, ওভার কোর্ট, তার ব্যবহৃত টাইপিং মেশিন, লাঠি, ট্রানজিস্টারসহ বিভিন্ন আলোকচিত্রসহ অনেক স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মওলানা ভাসানী রিসার্চ সেন্টারের উদ্যোগে জাদুঘরে এগুলো সংরক্ষণের চেষ্টা করা হলেও তার ওপরে ধুলা বালুর আস্তর পড়েছে।

আক্তারুজ্জামান সাজু নামে এক শিক্ষার্থী জানান, ভারত, এশিয়া, আফ্রিকা, লেটিনসহ নানা দেশে ভাসানীকে নিয়ে চর্চা ও গবেষণা করা হয়। তার চিন্তা ও আদর্শের ওপর ভিত্তি করে একটি রাষ্ট্র গঠন করা যেতে পারে। নতুন সরকারের কাছে ভাসানীকে যথাযথ সম্মান দিতে এবং তার চেতনাকে বাস্তবায়ন করার দাবি জানান তিনি। 

মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নাতি হাসরত খান ভাসানী ও আজাদ খান ভাসানী জানান, তাদের নানা দেশ ও জাতির জন্য জীবনকে উৎসর্গ করলেও ইতিপূর্বে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কেউ জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। মৃত্যুর পর তার শেষ স্বপ্ন ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় মুখ থুবড়ে পড়ে ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। ভাসানীর হাতে গড়া অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। 

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বলেন, ‍“ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাসানী সম্পর্কে জানাতে ভাসানী স্টাডিজ পাঠ্য বই পড়ানো হয়। সংগ্রামী মজলুম মানুষের পক্ষে কাজ করা ভাসানীর ওফাত বার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। আলোচনা সভা, সেমিনারসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। ভাসানীর উপহার পাওয়া ট্রাক্টর, বিভিন্ন আলোকচিত্রীগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে। তার হাতের স্মৃতি বিজরিত জিনিসপত্র রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিজ্ঞান মনস্ক ভাসানী স্বপ্ন দেখতে এদেশে কেরোসিন ও লবণ ছাড়া সব কিছুই তৈরি হবে। সততা, ন্যায় ও সংগ্রামী চেতনা নিয়ে নতুন প্রজন্ম এমন এক দেশ উপহার দিবে যা মাওলানা ভাসানী স্বপ্ন দেখতেন।”

ঢাকা/কাওছার/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ