ডেঙ্গু জ্বরকে হেলাফেলা করার কোনো সুযোগ নেই। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে একেবারে শুরু থেকেই চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। চিকিৎসায় সামান্য বিলম্বও জীবন সংশয়ের কারণ হতে পারে। ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে দেরি করে আসা। তাই এই মৌসুমে জ্বর হলে দেরি না করে প্রথম বা দ্বিতীয় দিনের মধ্যেই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
শিশু, বয়স্ক, অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা কিডনি রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে থাকা আরও বেশি জরুরি। অনেকের ধারণা, ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষা জ্বরের তিন দিন পার না হওয়া পর্যন্ত করা যায় না। এই ধারণাটি সঠিক নয়। ডেঙ্গুর পরীক্ষা জ্বর আসার প্রথম দিন থেকেই করা যায় এবং ডেঙ্গু হয়েছে কিনা, তা প্রথম দিনেই শনাক্ত করা সম্ভব।
নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে:
l প্রচণ্ড পেটব্যথা ও বমি
l শ্বাসকষ্ট অথবা পেট ফুলে যাওয়া
l আঘাত ছাড়াই অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ
l জ্ঞানের মাত্রা কমে যাওয়া বা অস্বাভাবিক আচরণ করা
l অত্যধিক দুর্বলতা
l প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া
ডেঙ্গু থেকে সেরে উঠতে করণীয়
ডেঙ্গু জ্বর থেকে সেরে উঠতে পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তরল খাবারগুলো শরীর দ্বারা দ্রুত শোষিত হয়, যা শরীরকে পুনরায় আর্দ্র করতে এবং দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। ফলের রস, বিশেষ করে সাইট্রাস বা টক ফল যেমন কমলালেবু বা লেবুজাতীয় ফল, শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের সেরা উৎস। এসব ফলে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এবং ফাইবার হজমের সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে। ডাবের পানি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ ও লবণের দারুণ উৎস। ফলের রস রোগীদের স্বাভাবিক ইলেকট্রোলাইটের মাত্রা বজায় রাখতে, উচ্চ জ্বরের কারণে পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করতে এবং শরীরের দুর্বলতা কমাতেও সহায়তা করে।
বিশেষ করে যারা আইসিইউতে সময় কাটিয়েছেন, তাদের স্বাভাবিক কাজকর্মে ফেরার আগে বাড়িতে কমপক্ষে কয়েক সপ্তাহ বিশ্রাম নেওয়া উচিত। এই সময় ভ্রমণ এবং ভারী কাজ এড়িয়ে চলতে হবে। দিনে অন্তত আট ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়
ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য আপনার বাড়ির আশপাশের জায়গা সব সময় পরিষ্কার রাখা এবং কোথাও পানি জমতে না দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এ সময় কোনোভাবেই মশার বিস্তার হতে দেওয়া যাবে না। ফুলের টব, নারকেলের খোল, টায়ার, খালি বোতল এবং ফ্রিজের পেছনে যেন পানি জমে না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। ডেঙ্গুর মশা মিষ্টি পানিতে বংশবৃদ্ধি করে। বিশেষ করে সন্ধ্যা এবং ভোরে জানালা বন্ধ রাখা বা মশারি ব্যবহার করা উচিত।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড ঙ গ জ বর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি হতাশাজনক
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি হতাশাজনক বলে এক পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। এ সময়ের বিভিন্ন ঘটনায় মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। সোমবার এইচআরএসএসের নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলামের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও বাংলাদেশে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দেশের মানুষ এখনও স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল পায়নি। স্বাধীনতার পর ২০২৪ সালে মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল সবচেয়ে ভীতিকর ও চরম উদ্বেগজনক। গত আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ছাত্র-জনতার মাঝে স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ আস্বাদনের আকাঙ্খা সৃষ্টি হলেও তার প্রতিফলন মূলত ঘটেনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সংশ্লিষ্টরা এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সফলতা দেখাতে পারেনি। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেও মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রকৃত অবস্থা হতাশাজনক। নতুন বছরে মানবাধিকার পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নের প্রত্যাশা থাকলেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পূর্বের ধারা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি এতে নতুন কিছু বিষয়ও যুক্ত হয়েছে। রমজান মাসে বিগত বছরগুলোর তুলনায় দ্রব্যমূল্য ও দুই ঈদযাত্রা কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। ’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যু, গণপিটুনিতে নির্যাতন ও হত্যা, নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ও নির্যাতনে মৃত্যু, শ্রমিকদের ওপর হামলা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, মাজারে হামলা ও ভাঙচুর, কারাগারে মৃত্যু, সভা-সমাবেশে বাধা প্রদান, আন্দোলনরত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলার মতো ঘটনা ঘটেছে। এ সময় চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যাসহ বেশ কিছু সামাজিক অপরাধ ঘটেছে যা জনমনে ভয় ও আতঙ্ক তৈরি করেছে। শেখ হাসিনার বক্তব্য নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ৫, ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি, শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদন এবং সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের অফিস ও নেতাদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারের রায় ঘোষণার পর বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সাথে শাহবাগ বিরোধী ঐক্যের উত্তেজনা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত ১২ মে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গত বছরের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সব সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘর্ষ শিক্ষার্থীদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। রাজধানীতে বিভিন্ন দাবি আদায়ে রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। আদালত ও কারা ফটকে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা; থানা ও পুলিশের ওপর হামলা করে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে । দেশে সন্ত্রাসবাদ দমন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে ও বিশেষ অভিযানে বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া, ভারত সীমান্তে সংঘর্ষ, উত্তেজনা, বিএসএফের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বেড়া নির্মাণ, উসকানি, বাংলাভাষী মানুষদেরকে পুশইন করা, এমনকি নিরীহ বাংলাদেশিকে হত্যা, আহত ও গ্রেপ্তার এবং মিয়ানমারের আরাকান আর্মি কতৃক বাংলাদেশি জাহাজ আটক, সীমান্তে গুলি, মাইন ও মর্টারশেল বিস্ফোরণের মত বিভিন্ন ঘটনা মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।’