বিএনপিসহ বিভিন্ন দল স্বাগত জানিয়েছে
Published: 6th, August 2025 GMT
জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ভাষণে নির্দিষ্ট করে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। তারা বলেছে, এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিয়ে যে দোদুল্যমানতা ছিল, সেটি কেটে গেছে।
তবে গতকাল মঙ্গলবার রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে দলটির একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেছেন, নির্বাচনের সময় ঘোষণায় বিএনপির চাওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠাব, যেন নির্বাচন কমিশন আগামী রমজানের আগে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।’
এরপর রাতে রাজধানীর গুলশানের কার্যালয় প্রাঙ্গণে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ দলের পক্ষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেন। তিনি বলেন, ‘আজকে প্রধান উপদেষ্টা দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন। একটি জুলাই ঘোষণাপত্র, আরেকটি জাতির উদ্দেশে ভাষণের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা দুটোকেই স্বাগত জানাচ্ছি।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এখন নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে যথাসময়ে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে যে একটি দোদুল্যমানতা ছিল, তা আর রইল না। এখন সারা জাতি নির্বাচনমুখী পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘আগামী দিনের নির্বাচন ইনশা আল্লাহ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে প্রশংসিত একটা নির্বাচন হবে বলে আমরা আশা করি। সেই লক্ষ্যে সমগ্র জাতিকে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আরও বেশি প্রতিষ্ঠিত হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগে কোনো রকমের অনিশ্চিত পরিবেশ আর থাকবে না। সবকিছু সচল হবে এবং গতিশীলতা পাবে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গতকাল রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে এক অনানুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে নির্বাচনের যে তারিখ ঘোষণা করেছেন, সেখানে বিএনপির চাওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জুলাই সনদের আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি এবং বাস্তবায়ন পদ্ধতির বিষয়টি এখনো সুরাহা হয়নি। এটি নিশ্চিত করেই নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না প্রথম আলোকে বলেন, ‘উনি (প্রধান উপদেষ্টা) যে রকম বলেছিলেন, সে রকমই তো করলেন। চিঠিও হয়তো কাল নির্বাচন কমিশনে দিয়ে দেবেন। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যেটা বলেছেন সেটা থেকে সরে যাবেন, বিষয়টা এমন হতে পারে না। সব বিবেচনায় রোজার ঈদের আগে নির্বাচন করা ভালো পদক্ষেপ।’
পবিত্র রমজানের আগে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে এবি পার্টি। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি দৃশ্যমান বিচার ও জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে দলটি।
নির্বাচনের সময় ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। দলটি বিচার, সংস্কার, জনজীবনের নিরাপত্তা ও নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির দিকে জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। দলটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য জাতীয় নির্বাচন অত্যাবশ্যক, এর সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা জনজীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে আমরা মনে করি।’
বিবৃতিতে গণসংহতি আন্দোলনের দুই নেতা বলেন, ‘এই নির্বাচন যাতে একটা টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সাংবিধানিকভাবে তৈরি করতে পারে, তার জন্য আমরা আগামী নির্বাচনকে সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন হিসেবে করার দাবি জানাচ্ছি। এই নির্বাচনে গঠিত সংসদ একই সঙ্গে একটা যৌক্তিক সময়ের ভেতরে সংস্কারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে ও রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ করবে। জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে যাতে রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে তার জন্য অবিলম্বে নির্বাচনে সবার সম–সুযোগ সৃষ্টি, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপরে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব গত জ ন য় ছ র জন য পর ব শ ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
’৭১-কে ’২৪-এর মুখোমুখি না দাঁড় করানোর আহ্বান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
’৭১ ও ’২৪— বাংলাদেশের ইতিহাসে দুটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। কিন্তু এ দুটি ঘটনাকে পরস্পরের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে বিভাজনের রাজনীতি চালানোর অপচেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি এ ধরনের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, ’৭১ ও ’২৪ কখনোই একে অপরের পরিপন্থী নয়। বরং ১৯৪৭ সালে ভূখণ্ড অর্জন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা এবং ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দীর্ঘ ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি— এই তিনটি অধ্যায় একই ধারাবাহিক মুক্তিসংগ্রামের অংশ।
সংগঠনটি বলেছে, ‘মুজিববাদী সংবিধানের ফলে সৃষ্টি ফ্যাসিবাদের কবর রচিত হয়েছে ২০২৪-এর অভ্যুত্থানে। তাই ’৭১ ও ’২৪— উভয়ই আমাদের গৌরবের অংশ। এই সংগ্রামগুলোর প্রত্যেকটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শ্রদ্ধাভরে স্বীকার করে ও সমভাবে সম্মান করে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করে, ’৭১ ও ’২৪-কে মুখোমুখি দাঁড় করানোর প্রয়াস আসলে ‘শাপলা ও শাহবাগের বাইনারি’ ফিরিয়ে আনার অপচেষ্টা, যার মাধ্যমে আবারও আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক করে তোলার সুযোগ সৃষ্টি হয়। অথচ ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ছিল মুজিববাদী শাসনব্যবস্থা ও বাহাত্তরের ত্রুটিপূর্ণ সংবিধানের ভিত্তিতে গঠিত দুর্বল রাষ্ট্র কাঠামোর বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ।
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সংগঠনটি বলেছে, ‘এ ধরনের অপরাজনীতি ছাত্র-জনতা কখনই মেনে নেবে না। আমরা জাতীয় স্বার্থ ও জনকল্যাণের পক্ষে রাজনীতির আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায়, কেউ যদি আওয়ামী লীগকে প্রাসঙ্গিক করার লক্ষ্যে এমন অপচেষ্টা চালায়, তাহলে ছাত্র-জনতার সঙ্গে নিয়ে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।’
আরও পড়ুনবাম সংগঠনগুলোর ঘৃণা মিছিল, ছাত্রশিবিরের সংবাদ সম্মেলন১ ঘণ্টা আগে