ভিক্ষাবৃত্তি নয়, যেন পরিকল্পিত অভিযান!
Published: 6th, August 2025 GMT
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় সম্প্রতি হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে ভিক্ষুকদের আনাগোনা। এদের বেশিরভাগই স্থানীয় নয়। বহিরাগতদের একটি দল ছদ্মবেশে এসে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বাজার, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি বাসাবাড়ির সামনেও অবস্থান নিচ্ছে। এতে যেমন বাড়ছে জনদুর্ভোগ, তেমনি প্রশ্ন উঠছে সামাজিক নিরাপত্তা নিয়েও।
স্থানীয়দের ভাষ্য, এই ভিক্ষুকদের আচরণ ও চলাফেরা সাধারণ ভিক্ষুকদের মতো নয়। অনেকে শিশু কোলে নিয়ে এসে কৃত্রিম কান্না শুরু করে, কেউ কেউ আবার টাকা না পেলে গালমন্দ করে। এমনকি ভয়ভীতিও দেখায়।
এসব ঘটনার ফলে অনেকেই মনে করছেন, এই ভিক্ষাবৃত্তির আড়ালে রয়েছে কোনো সংঘবদ্ধ চক্রের অপতৎপরতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালীগঞ্জের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, “সকালে অফিসে বের হলেই একঝাঁক ভিক্ষুক সামনে এসে দাঁড়ায়। কেউ কেউ অফিসেও ঢুকে পড়ে। তারা এমনভাবে কাঁদে, যেন না দিলে মহাপাপ হয়ে যাবে। আর টাকা না দিলে শুনতে হয় অপমানজনক কথা।”
স্থানীয় একজন গণমাধ্যমকর্মী বলেন, “একেক এলাকায় একেক দল নিয়ম করে বসে যায়। তাদের অনেকের কাছে মোবাইল ফোনও থাকে, সকালে ট্রেনে করে আসে আবার সন্ধ্যায় দেখি তারা রিকশা করে চলে যাচ্ছে। বিষয়টি সাধারণ ভিক্ষাবৃত্তির গণ্ডি ছাড়িয়ে গেছে। এখন এটা সংঘবদ্ধ কর্মকাণ্ড বলেই মনে হয়।”
একই রকম অভিজ্ঞতার কথা জানান স্থানীয় এক ব্যবসায়ীও। তিনি বলেন, “প্রতিদিন দোকান খোলার আগেই কয়েকজন এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। প্রত্যেককে ২০-৩০ টাকা করে দিতে দিতে মাস শেষে বড় অঙ্কের টাকা চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ টাকা না দিলে রেগে যায়, নানা কথা বলে। এতে ব্যবসা করাই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।”
স্থানীয়রা মনে করছেন, শুধু অভিযান নয় এই চক্রের নেটওয়ার্ক চিহ্নিত করে শেকড় উপড়ে ফেললেই বন্ধ হতে পারে এই ছদ্মবেশী ভিক্ষুক গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য। এখন প্রয়োজন প্রশাসনের দৃঢ় অবস্থান এবং স্থানীয় জনসচেতনতা।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আফরোজা বেগম বলেন, “আমরা নজরদারি বাড়িয়েছি। বেশিরভাগ ভিক্ষুকই বহিরাগত এবং স্থায়ীভাবে বসবাস করে না। তবে স্থানীয় যারা আছেন, তাদের বেশির ভাগই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি আওতায় বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। বহিরাগতদের ব্যাপারে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ জানান, বহিরাগত ভিক্ষুকদের বিষয়ে আমরা অবগত। জনদুর্ভোগ যেন না হয়, সেজন্য নিয়মিত বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রোগ্রামের মাধ্যমে স্থানীয়দের সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সমাজসেবা দপ্তর ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে পুনর্বাসনের পরিকল্পনাও আছে। ভিক্ষাবৃত্তিকে কোনোভাবেই পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে দেওয়া হবে না।
ঢাকা/রফিক/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জোট গঠন দোষ হলে অধিকাংশ দলই দল দোষী: জাপা নেতা আনিসুল
জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, ‘আজকে যেমন জামায়াত, হেফাজত, ইসলামী আন্দোলন একধরনের জোট গঠনের চেষ্টা করছে। নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় পার্টিও জোট গঠন করেছিল। জোট গঠন করা যদি দোষ হয়, সে দোষে বাংলাদেশের অধিকাংশ দলই দোষী।’
আনিসুল ইসলাম আরও বলেন, জাতীয় পার্টি কোনো বিপ্লবী পার্টি নয়। জাতীয় পার্টি একটি নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের কৌশল হিসেবে জাতীয় পার্টির একটি জোট করে ও নির্বাচিত হয়ে সংসদে যায়।
আজ শনিবার রাজধানীর গুলশানে জাতীয় পার্টির এক সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম এ কথা বলেন। জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ চেয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবি এবং চলমান জাতীয় রাজনীতি নিয়ে জাতীয় পার্টির অবস্থান তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
আনিসুল ইসলাম বলেন, আজ যারা জাতীয় পার্টিকে দোসর হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়, তারাও একসময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন করেছে। এমনকি তারা সংসদে ছিল। ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট গঠন করেছে, তেমনি ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে জোট গঠন করার জন্যও একাধিক বৈঠক করেছে জাপা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপির অনাগ্রহের কারণে সেই জোট গঠন হয়নি। জাতীয় পার্টি কোনো বিপ্লবী পার্টি নয়। জাতীয় পার্টি একটি নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের কৌশল হিসেবে জাতীয় পার্টির একটি জোট করে ও নির্বাচিত হয়ে সংসদে যায়।
জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে জামায়াতের দাবি প্রসঙ্গে জাপার এই নেতা বলেন, জাপা কিন্তু জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবি জানায়নি। এমনকি আওয়ামী লীগ যখন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে, জাতীয় পার্টি তার বিরোধিতা করেছিল। তিনি মনে করেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা গণতন্ত্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। দল নিষিদ্ধের দাবি আগামী দিনের রাজনীতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আরও বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় ঐক্য খুবই জরুরি। জাতীয় ঐক্যের ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা।
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ইতিমধ্যে প্রশাসনের বিরুদ্ধে দলীয়করণের অভিযোগ উঠেছে। কে বিএনপির লোক, আর কে জামায়াতের লোক, দেখা হচ্ছে। সেভাবেই লোকজন বসানো হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট দেশের রাজনীতিতে বিবর্তন হয়েছে। এখান থেকে রাজনীতিবিদদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। অনেকেই এই বিপ্লবকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলতে চান। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর অনুরোধ, একাত্তরের সঙ্গে কোনো কিছু যাতে তুলনা করা না হয়। যাঁরা বিপ্লব সংঘটিত করেছেন, তাঁরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু গত এক বছরে সারা দেশে চর দখলের মতো হাট–বাজার, টার্মিনাল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, জমি, বাড়ি দখল হয়েছে; যা বিপ্লবের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ প্রজন্ম প্রত্যাশা করেনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু, সিনিয়ার কো–চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, কো–চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, লিয়াকত হোসেন খোকা, মোস্তফা আল মাহমুদ প্রমুখ।