গণমাধ্যমের ওপর চাপ শুধু সরকার, মালিকপক্ষ বা সম্পাদকীয় স্তর থেকেই নয়—এর বাইরেও একটি ‘সামাজিক শক্তি’ সক্রিয় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

আলী রীয়াজ বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকার থেকে গণতান্ত্রিক ধারায় রূপান্তরের সময় এ ধরনের শক্তি তৈরি হয়। দেশে যা ঘটছে, সেটি সে অর্থেই বিবেচনা করেন তিনি।

আজ বুধবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: অভিযোগ নিষ্পত্তি ও স্ব-নিয়ন্ত্রণের বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এক সংলাপ আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন। সংলাপ আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বেশ কিছু বাধার কারণে তা সম্ভব হয় না। এর মধ্যে অন্যতম বাধা হিসেবে গণমাধ্যমগুলোর নিজেদের করপোরেট স্বার্থ অনুসরণ না করাকে দায়ী করেন তিনি।

অধিকাংশ মিডিয়া হাউস (গণমাধ্যমের পরিচালক প্রতিষ্ঠান) এখন তাদের অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যের নিরাপত্তার জন্য মিডিয়াকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে উল্লেখ করে অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, যতদিন এই বাস্তবতা থাকবে, ততদিন প্রকৃত অর্থে স্বাধীন সাংবাদিকতা সম্ভব নয়।

সংলাপে আলী রীয়াজ বলেন, সারা বিশ্বেই কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের সময় নতুন সামাজিক শক্তিগুলোর উদ্ভব ঘটে, তারা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে এবং কখনো কখনো তা ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নেয়। দেশেও তার কিছু প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।

তবে এ ধরনের ঘটনায় যে পরিমাণ সহিংসতা হয়, বাংলাদেশে তা হয়নি বলে মনে করেন আলী রীয়াজ। এ জন্য রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে ধন্যবাদ দেওয়া দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সরকারও চেষ্টা করেছে, যদিও আরও বেশি করা যেত।’
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর (পাভেল), জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক আসিফ বিন আলী প্রমুখ।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের সভাপতি জিল্লুর রহমান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র য় জ বল ন

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মেয়েকে হত্যা, বাবাসহ পরিবারের ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মেয়েকে হত্যার দায়ে বাবাসহ একই পরিবারের তিনজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মুহাম্মদ নূরুল আমিন এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, করিমগঞ্জ উপজেলার কিরাটন ইউনিয়নের ভাটিয়া জহিরকোনা গ্রামের আনোয়ারুল ইসলাম আঙ্গুর (৭৩), তাঁর ভাই খুর্শিদ মিয়া (৫২) ও ভাতিজা সাদেক মিয়া (৩৬)। রায় ঘোষণার সময় তাঁরা আদালতে ছিলেন না।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ সূত্রে জানা যায়, করিমগঞ্জের ভাটিয়া জহিরকোনা এলাকার আনোয়ারুল ইসলামের (আঙ্গুর) সঙ্গে জমিজমা নিয়ে একই এলাকার আবু বকর সিদ্দিকসহ কয়েকজনের বিরোধ ছিল। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট আনোয়ারুল ও তাঁর ভাই-ভাতিজা মিলে মেয়ে মীরা আক্তারকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। পরে তার লাশ বাড়ির পেছনে জঙ্গলে ফেলে রাখেন। এ ঘটনায় পরদিন আনোয়ারুল বাদী হয়ে আবু বকরসহ ১৬ জনের নামে করিমগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে তদন্ত করে পুলিশ হত্যার সঙ্গে আনোয়ারুল ইসলামসহ কয়েকজন স্বজনের জড়িত থাকার প্রমাণ পায়।

ওই হত্যা মামলায় যাঁদের আসামি করা হয়েছিল, তাঁদের জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়ায় ২০১৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। ওই দিন করিমগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অলক কুমার দত্ত বাদী হয়ে নিহত মীরার বাবা আনোয়ারুল ইসলাম, তাঁর ভাই খুর্শিদ মিয়া, ভাতিজা সাদেক মিয়া ও আনোয়ারুলের  স্ত্রী মোছা. নাজমুন্নাহারকে আসামি করে করিমগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশ চার আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

কিশোরগঞ্জ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জালাল উদ্দিন বলেন, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় নিহতের বাবাসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ড করা হয়েছে। তবে নিহতের মা আসামি নাজমুন্নাহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। তিন আসামিই জামিনে গিয়ে বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ