ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে র‍্যালি ও জুলাইয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে প্রশাসন। এতে পবিত কুরআন পাঠের মাধ্যমে আলোচনা সভা শুরু করলেও উপেক্ষিত হয়েছে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ।

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড.

নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে জুলাই বিপ্লব প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে প্রশাসন।

আরো পড়ুন:

সামরিক বাহিনীতে থাকা ভারতীয় দালাল নিয়ে ক্রমাগত খবর প্রকাশ হচ্ছে: মাহমুদুর রহমান

দায়বদ্ধতা থেকে সাজিদের ভিসেরা রিপোর্ট দ্রুত নেওয়ার চেষ্টা করেছি: এআইজি আশরাফ

জানা যায়, জুলাই বিপ্লব প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রশাসনের আয়োজিত সভায় ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাদের বক্তব্য প্রদানের পর্ব ছিল। সভায় শুরুতে পবিত্র কুরআন পাঠের সাথে অন্য ধর্মাবলম্বী গ্রন্থ পাঠের ব্যবস্থা প্রশাসন না করায় এ সিদ্ধান্তকে নিন্দা জানান বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি সভাপতি নুর আলম সিদ্দিক।

এ সময় ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিয়ে হট্টগোল সৃষ্টি করেন একাংশ শিক্ষার্থী। পরে একাধিক শিক্ষকের অনুরোধ ক্রমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। 

বক্তব্যে নুর আলম বলেন, “আমরা সবাই জানি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু মুসলিম শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে না। এখানে আমাদের সঙ্গে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন ধর্মের সহপাঠীরা আছে। কিন্তু আজ আমরা দেখলাম এ অনুষ্ঠানে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করা হলেও বাকী ধর্মগ্রন্থ উইন্ড্রো করা হয়েছে। বৈষম্যহীন সমাজে এ বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। আপনারা এ বৈষম্যহীন সমাজে আজ সবচেয়ে বড় বৈষম্য করলেন। আপনাদের এর জন্য উপযুক্ত জবাব দিতে হবে।”

এদিকে অনুষ্ঠান শেষে এ ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে চলে নানা আলোচনা-সমালোচনা। শিক্ষার্থী নুর আলমের বক্তব্যকে সমর্থন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নুর আলমকে ভুয়া বলে সম্বোধনকারী শিক্ষার্থীদের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, “ওই অনুষ্ঠানে যে ঘটনা ঘটেছে, তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। যে বা যারা এ কাজ করেছে, তারা হয়তো না বুঝে করেছে। তাদের আরো ম্যাচিউরিটির পরিচয় দেওয়া উচিত ছিল। আমাদের সব ধর্ম ও মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সবার মত প্রকাশের অধিকার আছে, এটাকে আমাদের সম্মান করতে হবে। আর প্রশাসনের এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত ছিল।”

শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, “আমাদের প্রত্যেকটি ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা উচিত। এ পরিস্থিতিতে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেওয়ার কাজটি ঠিক হয়নি। আমি মনে করি, যে বা যারা এটি করেছে, তারা হয়তো না বুঝে করেছে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সাবেক সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, “আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, যারা এ কাজ করেছে ওরা না বুঝে করেছে। তবে আমাদের আরো ধৈর্যশীল হতে হবে।”

এ বিষয়ে জানতে জুলাই বিপ্লব প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামানকে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

নুর আলমের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “সব প্রোগ্রামই পূর্ণতা পায়, কিন্তু কিছু ত্রুটি থেকে যায়। ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠের বিষয়ে অনুষ্ঠানে একটু মিস ম্যানেজমেন্ট হয়েছে। এজন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।”

তিনি বলেন, “একজন বক্তা তার বক্তব্যে জানতে চেয়েছেন, কেনো পবিত্র কুরআন পাঠের সঙ্গে অন্যগ্রন্থ পাঠ করা হয়নি? আমি তার এ মনোভাবকে শ্রদ্ধা জানাই। তার প্রতি আমার কোনো বিরাগ নেই। আগামীতে আমাদের প্রোগ্রামগুলো যাতে সার্বজনীন চরিত্রে রুপান্তরিত হয়, তার প্রতি খেয়াল রাখব।”

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ রন থ প ঠ অন ষ ঠ ন ন র আলম উপলক ষ আম দ র প রক শ ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

মৌলভীবাজারে সম্প্রীতির উৎসব মণিপুরি মহারাসলীলা

বর্ণাঢ্য আয়োজন আর বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মণিপুরি সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলা।

বুধবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকে মণিপুরি অধ্যূষিত জনপদ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরে এ উৎসব উদযাপিত হচ্ছে। কমলগঞ্জের মাধবপুর শিব বাজারের জোড়ামণ্ডপ এলাকায় রাখাল নৃত্য ও রাতে রাসনৃত্য এ উৎসবের অন্যতম মূল আকর্ষণ। 

পাশাপাশি আদমপুরে মৈতৈই মণিপুরি সম্প্রদায় মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্সে এ উৎসব উদযাপন করছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) ভোরে শেষ হবে শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা। উৎসব উপলক্ষে উভয়স্থানে মেলা বসেছে। রাস উৎসবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্তসহ দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত হবে কমলগঞ্জের মণিপুরি জনপদ। 

এ উপলক্ষে উভয় জায়গায় বসবে বিরাট মেলা। রাসলীলা উপলক্ষে এরইমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এলাকায় সাজ সাজ রব বিরাজ করবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

বৃহত্তর সিলেটের আদিবাসী মণিপুরি সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী মণিপুরি মহারাসলীলা উপজেলার মাধবপুর শিববাজার জোড়া মণ্ডপে মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের আয়োজনে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সম্প্রদায়ের ১৮৩তম এবং আদমপুর মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মৈতৈ মণিপুরি সম্প্রদায়ের ৪০তম মহারাস উৎসব হবে এবার।

কমলগঞ্জের মণিপুরি অধ্যুষিত গ্রাম ও পাড়াগুলোতে বইছে উৎসবের হাওয়া। আগামী বুধবার দুপুরে উভয় স্থানে গোষ্ঠলীলা বা রাখালনৃত্য এবং রাতে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা, গুণীজন সংবর্ধনা ও রাসনৃত্য।

উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মণ্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। এছাড়া মণিপুরি রাস উৎসব উপলক্ষে বুধবার বিকাল ৫টা ও সন্ধ্যা ৬টায় মণিপুরি ললিতকলা একাডেমি মিলনায়তনে মণিপুরি থিয়েটারের আয়োজনে ‘নুংশিপি’ চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

অপরদিকে উৎসবস্থল আদমপুরেও থাকবে যথারীতি রাখাল নৃত্য ও রাসলীলা। তবে মণিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়া ও মণিপুরি মৈতৈ এরা আলাদা স্থানে আয়োজন করলেও উৎসবের অন্তঃস্রোত, রসের কথা, আনন্দ-প্রার্থনা সবই একই। উৎসবের ভেতরের কথা হচ্ছে বিশ্বশান্তি, সম্প্রীতি ও সত্যসুন্দর মানবপ্রেম।

আলাপকালে মণিপুরি ললিতকলা একাডেমির উপ-পরিচালক (অ: দা:) প্রভাস চন্দ্র সিংহ জানান, মণিপুরের রাজা ভাগ্যচন্দ্র মণিপুরে প্রথম এই রাসমেলা প্রবর্তন করেছিলেন।

মণিপুরের বাইরে ১৮৪২ সালে কমলগঞ্জের মাধবপুরে প্রথম মহারাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। রাস উৎসবে সকালে ‘গোষ্ঠলীলা’ বা ‘রাখালনৃত্য’ হয়। গোধূলি পর্যন্ত চলে এই রাখালনৃত্য। রাত ১২টা থেকে শুরু হয় রাস উৎসবের মূল পর্ব শ্রীশ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা অনুসরণ।

মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের পোশাকে নেচে-গেয়ে কৃষ্ণবন্দনায় ভোর পর্যন্ত চলে রাসলীলা। রাসনৃত্যে শ্রীকৃষ্ণ, রাধা ও প্রায় ৫০ জন গোপী থাকেন। গোপীর সংখ্যা অনেক সময় কমবেশি হয়।

একটি রজনীকে কেন্দ্র করে মণিপুরিদের সংস্কৃতির এক বিশাল মিলন মেলায় পরিণত হয়। রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরের মণিপুরি পাড়া সমুহে চলে প্রস্তুতি ও উৎসবের আমেজ। রং ছড়িয়ে মন্ডপগুলোকে সাজানো হচ্ছে নতুন সাজে। 

রাসের দিন দুপুরে উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মন্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। রাস উৎসবে মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জাতি, ধর্মের হাজার হাজার লোক মেতে উঠবে আনন্দ-উৎসবে। উৎসব উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ ভারত থেকেও মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজন ছুটে আসেন।

মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, রাস উপলক্ষে আমাদের পাড়ায় পাড়ায় প্রস্তুতি চলছে। প্রতি বছরের মতো ঐতিহ্য ও ধর্মীয় ভাবধারায় মাধবপুর জোড়ামণ্ডপে ১৮৩তম শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। 

রাসলীলা মণিপুরিদের আয়োজন হলেও জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের আগমনে মানুষের মানবিক মূল্যবোধ বৃদ্ধির পাশাপাশি অপরাপর সকল জাতিগোষ্ঠীর মাঝে সম্প্রীতির বাঁধনে বেধে চলেছে এই উৎসব রাসলীলা, গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের প্রেমপ্রীতির ঐতিহ্য দর্শন।

কমলগঞ্জ থানার ওসি আবু জাফর মো. মাহফুজুল কবির জানান, নির্বিঘ্নে মণিপুরি মহারাসলীলা উপলক্ষে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। 

আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তার জন্য দুই জায়গাতেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে পুলিশ ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। উৎসব নির্বিঘ্নে করার লক্ষ্যে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের টহলও থাকবে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাখন চন্দ্র সূত্রধর জানান, ঐতিহ্যবাসী মণিপুরি রাসোৎসব উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এরইমধ্যে আইনশৃংখলা বিষয়ক সভা করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

ঢাকা/আজিজ/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মহান বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ফতুল্লায় বিএনপির প্রস্তুতিমুলক সভা
  • মৌলভীবাজারে সম্প্রীতির উৎসব মণিপুরি মহারাসলীলা
  • পুণ্যস্নান মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় শেষ হলো রাস উৎসব, মেলা চলবে ৫ দিন
  • সাহস করে সত্য প্রকাশ করে যাবে প্রথম আলো
  • প্রথম আলো পথভ্রষ্ট হয়নি : আলমগীর কবির
  • প্রথম আলো কোনো সংবাদ প্রকাশ করলে ধরে নিই সংবাদটি ঠিক আছে: মানজুর-আল-মতিন
  • অ্যাওয়ার্ড পেলে নিজেকে মাটিতে নামাতে হয়: স্থপতি মেরিনা তাবাশ্যুম
  • প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শুরু
  • মঙ্গলবার কুয়াকাটায় রাস উৎসব, গঙ্গা স্নান বুধবার