ভবিষ্যতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে স্বীকৃত প্রশিক্ষণকেন্দ্র থেকে ৬০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ নিতে হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেছেন, সরকার এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। যখন কেউ প্রশিক্ষণ নেবে, তাদের প্রশিক্ষণের ভাতাও দেওয়া হবে।

আজ বুধবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর মিলনায়তনে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথাগুলো বলেন। ‘মানসম্মত হেলমেট ও নিরাপদ গতি, কমবে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবার দিবসটি পালিত হচ্ছে।

মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘আমাদের সড়কে এই যে দুর্ঘটনা এবং যানজট হয়, এগুলোর আসল কারণটা কী? এটা কিন্তু আমরা সবাই জানি। যানজট এবং দুর্ঘটনার প্রধান কারণ ড্রাইভাররা (চালক) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না। সড়ককে নিরাপদ ও যানজটমুক্ত করতে হলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক হতে হবে। এ জন্য আমরা ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার যে পদ্ধতি এটাকে আমূল পরিবর্তন করছি। এখন যে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হবে, এটার মূল হবে প্রশিক্ষণ। বর্তমানে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার একটা কমিটি আছে, আমরা সেই কমিটি বাদ দিচ্ছি।’

তাহলে এখন কীভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যাবে সে বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্য দেশে যেভাবে মানুষ লাইসেন্স পায়। লাইসেন্স পাওয়ার প্রথম ও পূর্বশর্ত হচ্ছে আপনাকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে। এ জন্য আমরা বলেছি যে সামনে লাইসেন্স পেতে হলে আপনাকে ৬০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আমরা (সরকার) করব। আপনি যখন প্রশিক্ষণ নেবেন, আমরা প্রশিক্ষণের একটা ভাতাও দেব।’

এসব প্রশিক্ষণ স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে নিতে হবে বলে জানান ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, এমন প্রতিষ্ঠান বিআরটিসির আছে, সেনাবাহিনীর আছে, পুলিশের আছে, নানা জায়গায় আছে। পাশাপাশি বেসরকারি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানকেও উৎসাহিত করা হবে।

প্রশিক্ষণটা মূলত দুই ধরনের হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘একটি হলো, সড়কের চিহ্নগুলো বুঝতে পারা। আর দ্বিতীয়টি হলো গাড়ি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারা। আমরা কিছুদিনের মধ্যেই এই প্রশিক্ষণ শুরু করব।’

‘বিআরটিএকে নিয়ন্ত্রণমূলক সংস্থা থেকে সেবামূলক সংস্থায় পরিণত করতে চাই’ মন্তব্য করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা মোটামুটিভাবে বেশির ভাগ কাজ বিআরটিএ থেকে হস্তান্তর করে ড্রাইভিং ইনস্টিটিউটে দিয়ে দেব। সুতরাং বিআরটিএর যে একটা নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতা, সেটা থাকবে না।’

আরও পড়ুনসড়ক দুর্ঘটনা: প্রচার নেই, ক্ষতিপূরণের সুযোগ হারাচ্ছেন অনেক ভুক্তভোগী১৫ অক্টোবর ২০২৫

সড়ক দুর্ঘটনার বেশির ভাগই মোটরসাইকেলে হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, যেহেতু মোটরসাইকেলের ব্যবহার বাড়ছে, সেহেতু এই দুর্ঘটনার হার এবং মৃত্যুর হারও বাড়ছে। হেলমেটের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এ জন্যই এবারের প্রতিপাদ্য হেলমেট নিয়ে। যেসব সড়কে নির্মাণকাজ চলছে এবং যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে, সেসব এলাকায় ১০ হাজার হেলমেট দেওয়া হবে। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি হবে এবং সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি অনেকটাই কমে যাবে।

দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের খুঁজে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে উল্লেখ করে ফাওজুল কবির খান বলেন, দুর্ঘটনায় যখন একটা পরিবারের আয় উপার্জনের মানুষটি চলে যায় তখন তো পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে যায়। এ জন্যই সড়ক আইনে পরিবারকে ৫ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়ার একটা আইনি বিধান আছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এটা পরিবার পায় না। আগে বিধান ছিল কেউ চাইলে তখন এই সহায়তা দেওয়া হতো। কিন্তু এখন থেকে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তাঁদের পরিবারকে খুঁজে বের করে সরকার এই সহায়তা দেবে।

আরও পড়ুনদেশে সড়ক দুর্ঘটনার উচ্চ ঝুঁকি এই ২১ জায়গায়১১ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক দ র ঘটন দ র ঘটন র উপদ ষ ট এ জন য পর ব র সরক র ব আরট

এছাড়াও পড়ুন:

বুয়েটের ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে চাকসু নেতার পোস্ট, সমালোচনার পর মুছে দিয়ে দুঃখ প্রকাশ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে ফেসবুকে নিজের আইডি থেকে পোস্ট করেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) এক নেতা। এতে তিনি ভুক্তভোগী নারীকেও দায়ী করেন। তবে সমালোচনার মুখে এক ঘণ্টার মধ্যে পোস্ট ডিলিট করেন ওই নেতা। এরপর দুঃখ প্রকাশ করে আরেক পোস্টে তিনি লেখেন ঘটনা সম্পর্কে তিনি জানতেন না।

পোস্ট দেওয়া ওই চাকসুর নেতার নাম আকাশ দাস। তিনি চাকসু নির্বাচনে শিবির-সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলে নির্বাহী সদস্য প্রার্থী ছিলেন। এ পদে তিনি জয়ীও হয়েছেন। পোস্টের কয়েকটি মন্তব্য নিয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে। এ পোস্টে তিনি ধর্ষণ-কাণ্ডের ঘটনায় ভুক্তভোগীকেও দায়ী করেন। এ ছাড়া তদন্ত করলে ভুক্তভোগীর দোষ বেশি পাওয়া যাবে বলেও উল্লেখ করেন।

জানতে চাইলে আকাশ দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি পোস্টে বলেছি, অপরাধী ছেলে বা মেয়ে যেই হোক, তাঁর ফাঁসি হওয়া উচিত। অনেক আইনজীবীও বলেছেন, “অনেক ধর্ষণ মামলা ভুয়া।” আমি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, তাই সবার মন্তব্যের উত্তর দিতে পারি না। আমি নারী-পুরুষের সমান অধিকারেই বিশ্বাসী।’

তাঁর পোস্টের ব্যাখ্যা দিয়ে আকাশ দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ কাউকে জোর করে ধর্ষণ করতে পারে না। তাদের আগে থেকে পরিচয় থাকায় এমন ঘটনা ঘটে। আমি অপরাধীর শাস্তির কথাও বলেছি। তবে আমি একটি সংগঠনের প্যানেলে নির্বাচিত। তাই পোস্টটি ডিলিট করতে হয়েছে। কারণ, অনেকে আমার বক্তব্য বিকৃতভাবে তুলে ধরে শিবিরকে ছোট করার চেষ্টা করছে। আমি ইতিমধ্যেই দুঃখ প্রকাশ করেছি।’

বুয়েটের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নারীদের কটূক্তি করার অভিযোগ উঠেছে। শ্রীশান্ত রায় নামের ওই শিক্ষার্থীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

ফেসবুকে সমালোচনা

আকাশ দাসের পোস্টের স্ক্রিনশট ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে অনেকেই ইসলামী ছাত্রশিবির ও আকাশ দাসের সমালোচনা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, ছাত্রদলসহ অনেক রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এ পোস্টের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে পোস্ট করেছেন। শাখা শিবিরের নেতা-কর্মীরাও সমালোচনা করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চাকসুতে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন তাঁর ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘আকাশ দাস বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল থেকে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ধর্ষণকে কীভাবে স্বাভাবিকীকরণ করেছে দেখেন! এরাই নাকি নারীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়বে!’

এ ছাড়া ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের জিএস প্রার্থী শাফায়েত হোসেন, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রশিদ দিনার, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব আশরাফ চৌধুরীসহ অনেকে আকাশ দাসের পোস্টের নিন্দা জানিয়েছেন।

ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত হওয়া চাকসুর ভিপি মো. ইব্রাহীম তাঁর ফেসবুকে লেখেন, ‘চাকসুর নবনির্বাচিত সদস্য আকাশ দাস বুয়েটের ধর্ষণ ঘটনাকে ঘিরে যে নিন্দনীয় মন্তব্য করেছেন, আমি তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তিনি যেন অবিলম্বে বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।’ একই মন্তব্য করেন শাখা ছাত্রশিবিরের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক নবনির্বাচিত চাকসুর সাধারণ সম্পাদক সাঈদ বিন হাবিবও। এ ছাড়া চাকসুর অন্য নেতারাও এ পোস্টের নিন্দা জানিয়েছেন।

বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ

চাকসুর শিবির–সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত নির্বাহী সদস্য আকাশ দাস বুয়েটের ধর্ষণের ঘটনায় নেতিবাচক পোস্ট দেওয়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

আজ রাত সাড়ে নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু হয়। তারপর কাটা পাহাড়ের রাস্তা হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে সমাবেশ হয়। এতে বক্তারা আকাশ দাসের পোস্টে করা বক্তব্যকে ‘নারীবিদ্বেষী’ ও ‘ধর্ষণকে স্বাভাবিকীকরণ’ হিসেবে অভিহিত করে এর নিন্দা জানান। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।

প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব আল মাসনূন, ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী মো. শাফায়েত হোসেন, ইসলামী ছাত্র মজলিসের সভাপতি সাকিব মাহমুদ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সহসাধারণ সম্পাদক উম্মেহ সাবাহ্ তাবাসসুম, নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলের ভিপি পারমিতা চাকমা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও শাখা নারী অঙ্গনের সংগঠক সুমাইয়া শিকদারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ