আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কোনো ছাড় নয়
Published: 7th, August 2025 GMT
৫ আগস্ট সারা দেশে উৎসাহ–উদ্দীপনার সঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকী উদ্যাপিত হয়েছে। এদিন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ঘোষণা দিয়েছেন এবং জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন। এসব নিশ্চয়ই আনন্দের খবর।
কিন্তু যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে এক বছর আগে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, সেটা কতটা পূরণ হলো, সেই আত্মজিজ্ঞাসাও জরুরি। ‘কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী এক বছর: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণায় যেসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে, তা আশাব্যঞ্জক নয়।
রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো বিনির্মাণের কাজটি সহজ নয়। কোথাও সামান্য ব্যত্যয় হলে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের যে অঙ্গীকার অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা করেছে, সেটি বাধাগ্রস্ত এবং এমনকি নস্যাৎ হয়েও যেতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন নিয়ে। ফলে তাদের সহযোগিতা না পেলে সরকারের পক্ষে কোনো উদ্যোগই সফল করা সম্ভব নয়। সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিলে সরকার বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে সিদ্ধান্তে আসা কঠিন হয়ে পড়ে।
টিআইবির গবেষণায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছ। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের সংস্কার। যঁারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, তঁাদের মধ্যেও গণতান্ত্রিক মানসিকতা থাকতে হবে। কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে চাঁদাবাজি, দখলবাজির যে মহড়া চলছিল, তাদের বিদায় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কঠিন বাস্তবতা হলো, বন্ধ হয়নি। কুশীলব বদল হয়েছে মাত্র। আগে এক দলের নেতা–কর্মীরা চাঁদাবাজি ও দখলবাজিতে লিপ্ত ছিলেন, এখন অনেক দলের নেতা–কর্মীরা সেই কাজ করছেন। এ অবস্থায় সংস্কার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা যে অসম্ভব, সেটাও টিআইবির গবেষণায় উঠে এসেছে।
আওয়ামী লীগ সরকার নানাভাবে সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধে সচেষ্ট ছিল। তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার করেছে। ক্ষমতার পালাবদলের পর সেই উপসর্গ কমলেও নতুন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে সংবাদমাধ্যম কার্যালয়ে মব সহিংসতার মাধ্যমে। অনেক সংবাদমাধ্যম অফিস দখল হয়েছে, অনেক সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন। এ অবস্থায় আর যা–ই হোক, স্বাধীন সাংবাদিকতা করা সম্ভব নয়।
টিআইবির পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, বিচার, নির্বাচন, রাষ্ট্র সংস্কারসহ নানা ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়া হলেও অন্তর্বর্তী সরকার বিগত এক বছরে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সুশাসনের আলোকে বিচার, প্রশাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে বেশ কিছু ঘাটতি দেখা গেছে। এর ফলে দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনের যে প্রত্যাশা ছিল, তা বাস্তবে পূরণ হয়নি।
ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রভাব বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে টিআইবি বলেছে, অনেক ক্ষেত্রে সহিংসতা ও বলপ্রয়োগের কারণে নারীর অধিকার, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। এই হুমকি মোকাবিলায় সরকারকে যে সাহসী ভূমিকা নেওয়ার কথা ছিল, তা–ও অনেক ক্ষেত্রে অনুপস্থিত।
কর্তৃত্ববাদী সরকার বিদায় নেওয়ার পর আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হয়নি, সে কথা আমরা বলছি না। তবে যে মাত্রায় পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়নি। বিষয়টি অনেকটা গ্লাসের অর্ধেক পূর্ণ ও অর্ধেক খালি থাকার মতো। এক বছরের সাফল্য–ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের আগে যেটুকু সময় পাওয়া যাচ্ছে, গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা নেবে বলে আশা করি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক র জন ত ক এক বছর আইন র ট আইব সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কোনো ছাড় নয়
৫ আগস্ট সারা দেশে উৎসাহ–উদ্দীপনার সঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকী উদ্যাপিত হয়েছে। এদিন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ঘোষণা দিয়েছেন এবং জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন। এসব নিশ্চয়ই আনন্দের খবর।
কিন্তু যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে এক বছর আগে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, সেটা কতটা পূরণ হলো, সেই আত্মজিজ্ঞাসাও জরুরি। ‘কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী এক বছর: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণায় যেসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে, তা আশাব্যঞ্জক নয়।
রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো বিনির্মাণের কাজটি সহজ নয়। কোথাও সামান্য ব্যত্যয় হলে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের যে অঙ্গীকার অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা করেছে, সেটি বাধাগ্রস্ত এবং এমনকি নস্যাৎ হয়েও যেতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন নিয়ে। ফলে তাদের সহযোগিতা না পেলে সরকারের পক্ষে কোনো উদ্যোগই সফল করা সম্ভব নয়। সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিলে সরকার বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে সিদ্ধান্তে আসা কঠিন হয়ে পড়ে।
টিআইবির গবেষণায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছ। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের সংস্কার। যঁারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, তঁাদের মধ্যেও গণতান্ত্রিক মানসিকতা থাকতে হবে। কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে চাঁদাবাজি, দখলবাজির যে মহড়া চলছিল, তাদের বিদায় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কঠিন বাস্তবতা হলো, বন্ধ হয়নি। কুশীলব বদল হয়েছে মাত্র। আগে এক দলের নেতা–কর্মীরা চাঁদাবাজি ও দখলবাজিতে লিপ্ত ছিলেন, এখন অনেক দলের নেতা–কর্মীরা সেই কাজ করছেন। এ অবস্থায় সংস্কার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা যে অসম্ভব, সেটাও টিআইবির গবেষণায় উঠে এসেছে।
আওয়ামী লীগ সরকার নানাভাবে সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধে সচেষ্ট ছিল। তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার করেছে। ক্ষমতার পালাবদলের পর সেই উপসর্গ কমলেও নতুন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে সংবাদমাধ্যম কার্যালয়ে মব সহিংসতার মাধ্যমে। অনেক সংবাদমাধ্যম অফিস দখল হয়েছে, অনেক সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন। এ অবস্থায় আর যা–ই হোক, স্বাধীন সাংবাদিকতা করা সম্ভব নয়।
টিআইবির পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, বিচার, নির্বাচন, রাষ্ট্র সংস্কারসহ নানা ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়া হলেও অন্তর্বর্তী সরকার বিগত এক বছরে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সুশাসনের আলোকে বিচার, প্রশাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে বেশ কিছু ঘাটতি দেখা গেছে। এর ফলে দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনের যে প্রত্যাশা ছিল, তা বাস্তবে পূরণ হয়নি।
ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রভাব বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে টিআইবি বলেছে, অনেক ক্ষেত্রে সহিংসতা ও বলপ্রয়োগের কারণে নারীর অধিকার, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। এই হুমকি মোকাবিলায় সরকারকে যে সাহসী ভূমিকা নেওয়ার কথা ছিল, তা–ও অনেক ক্ষেত্রে অনুপস্থিত।
কর্তৃত্ববাদী সরকার বিদায় নেওয়ার পর আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হয়নি, সে কথা আমরা বলছি না। তবে যে মাত্রায় পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়নি। বিষয়টি অনেকটা গ্লাসের অর্ধেক পূর্ণ ও অর্ধেক খালি থাকার মতো। এক বছরের সাফল্য–ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের আগে যেটুকু সময় পাওয়া যাচ্ছে, গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা নেবে বলে আশা করি।