৫ আগস্ট সারা দেশে উৎসাহ–উদ্দীপনার সঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকী উদ্‌যাপিত হয়েছে। এদিন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ঘোষণা দিয়েছেন এবং জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন। এসব নিশ্চয়ই আনন্দের খবর।

কিন্তু যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে এক বছর আগে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, সেটা কতটা পূরণ হলো, সেই আত্মজিজ্ঞাসাও জরুরি। ‘কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী এক বছর: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণায় যেসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে, তা আশাব্যঞ্জক নয়।

রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো বিনির্মাণের কাজটি সহজ নয়। কোথাও সামান্য ব্যত্যয় হলে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের যে অঙ্গীকার অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা করেছে, সেটি বাধাগ্রস্ত এবং এমনকি নস্যাৎ হয়েও যেতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন নিয়ে। ফলে তাদের সহযোগিতা না পেলে সরকারের পক্ষে কোনো উদ্যোগই সফল করা সম্ভব নয়। সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিলে সরকার বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে সিদ্ধান্তে আসা কঠিন হয়ে পড়ে।

টিআইবির গবেষণায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছ। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের সংস্কার। যঁারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, তঁাদের মধ্যেও গণতান্ত্রিক মানসিকতা থাকতে হবে। কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে চাঁদাবাজি, দখলবাজির যে মহড়া চলছিল, তাদের বিদায় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কঠিন বাস্তবতা হলো, বন্ধ হয়নি। কুশীলব বদল হয়েছে মাত্র। আগে এক দলের নেতা–কর্মীরা চাঁদাবাজি ও দখলবাজিতে লিপ্ত ছিলেন, এখন অনেক দলের নেতা–কর্মীরা সেই কাজ করছেন। এ অবস্থায় সংস্কার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা যে অসম্ভব, সেটাও টিআইবির গবেষণায় উঠে এসেছে।

আওয়ামী লীগ সরকার নানাভাবে সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধে সচেষ্ট ছিল। তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার করেছে। ক্ষমতার পালাবদলের পর সেই উপসর্গ কমলেও নতুন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে সংবাদমাধ্যম কার্যালয়ে মব সহিংসতার মাধ্যমে। অনেক সংবাদমাধ্যম অফিস দখল হয়েছে, অনেক সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন। এ অবস্থায় আর যা–ই হোক, স্বাধীন সাংবাদিকতা করা সম্ভব নয়।

টিআইবির পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, বিচার, নির্বাচন, রাষ্ট্র সংস্কারসহ নানা ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়া হলেও অন্তর্বর্তী সরকার বিগত এক বছরে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সুশাসনের আলোকে বিচার, প্রশাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে বেশ কিছু ঘাটতি দেখা গেছে। এর ফলে দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনের যে প্রত্যাশা ছিল, তা বাস্তবে পূরণ হয়নি।

 ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রভাব বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে টিআইবি বলেছে, অনেক ক্ষেত্রে সহিংসতা ও বলপ্রয়োগের কারণে নারীর অধিকার, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। এই হুমকি মোকাবিলায় সরকারকে যে সাহসী ভূমিকা নেওয়ার কথা ছিল, তা–ও অনেক ক্ষেত্রে অনুপস্থিত।

কর্তৃত্ববাদী সরকার বিদায় নেওয়ার পর আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হয়নি, সে কথা আমরা বলছি না। তবে যে মাত্রায় পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়নি। বিষয়টি অনেকটা গ্লাসের অর্ধেক পূর্ণ ও অর্ধেক খালি থাকার মতো। এক বছরের সাফল্য–ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের আগে যেটুকু সময় পাওয়া যাচ্ছে, গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা নেবে বলে আশা করি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক র জন ত ক এক বছর আইন র ট আইব সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে চালাতে হবে সাইকেল

সাইকেল চালানো শরীরের জন্য ভালো। পকেটের ওপরও চাপ কমায়। সম্প্রতি করা এক গবেষণায় সাইকেল চালানোর উপকারিতার তালিকা আরও দীর্ঘ হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, চলাচলের জন্য কেউ যদি গাড়ির বদলে সাইকেল বেছে নেন, তবে তা মস্তিষ্কের বিভিন্ন জটিলতা কমানোর ক্ষেত্রেও বেশ কাজে আসে।

এই গবেষণা করেছে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য গবেষণাবিষয়ক তথ্যের সবচেয়ে বড় ভান্ডার ‘ইউকে বায়োব্যাংক’। সম্প্রতি গবেষণাটি জেএএমএ নেটওয়ার্ক ওপেন সাময়িকীতে প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, প্রাইভেট কার, বাস, ট্রেনে ভ্রমণের চেয়ে সাইকেল ব্যবহার করলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ১৯ শতাংশ এবং আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি ২২ শতাংশ পর্যন্ত কমে।

ডিমেনশিয়া বলতে মস্তিষ্কের চিন্তাশক্তি, স্মৃতিশক্তি ও কাজ করার ক্ষমতা হ্রাসকে বোঝায়। বিভিন্ন রোগের কারণে ডিমেনশিয়া হতে পারে। এমন একটি রোগ হলো আলঝেইমার। যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার (এনএইচএস) তথ্য অনুযায়ী, মস্তিষ্কের কোষের ভেতরে ও আশপাশে অস্বাভাবিকভাবে প্রোটিন জমলে আলঝেইমার হতে পারে।

এই গবেষণায় ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষ অংশ নেন। তাঁদের গড় বয়স ছিল সাড়ে ৫৬ বছর। গবেষণায় যাতায়াতের চারটি বিকল্প তুলে ধরা হয়। অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়—বিগত চার সপ্তাহে যাতায়াতের জন্য তাঁরা কোন বিকল্পটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন।

যাতায়াতের ওই বিকল্পগুলোর মধ্যে ছিল—একেবারেই সক্রিয় না থাকা, অর্থাৎ বাস বা ট্রেনে করে যাতায়াত করা। আরেকটি ছিল হেঁটে যাতায়াত। তৃতীয় বিকল্পটি ছিল হাঁটা ও সক্রিয় থাকা লাগে না—এমন সব মাধ্যম ব্যবহার করে যাতায়াত। আর শেষ ধরনটি ছিল সাইকেল চালিয়ে এবং অন্য ধরনগুলো ব্যবহার করে যাতায়াত।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের যাতায়াতের ধরনগুলো নির্বাচন করার ১৩ বছরের বেশি সময় পর দেখা যায়, ৮ হাজার ৮৪৫ জনের মস্তিষ্কে ডিমেনশিয়া দেখা দিয়েছে। আর ৩ হাজার ৯৫৬ জন আলঝেইমারে আক্রান্ত। এ ছাড়া যাঁরা যাতায়াতের ক্ষেত্রে হাঁটাহাঁটির ওপর ভরসা করেন, তাঁদের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ৬ শতাংশ কম।

গবেষণায় সাইকেল চালানোর ফলে ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমারের ঝুঁকি কমার প্রমাণও পাওয়া গেছে। এ–ও দেখা গেছে যে মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস নামক অংশের তুলনামূলক বড় আয়তনের সঙ্গে সাইকেল চালানোর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। মস্তিষ্কের এই অংশে স্মৃতি সংরক্ষণ থাকে এবং কোনো কিছু শেখার সঙ্গে জড়িত।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের স্টোনি ব্রুক ইউনিভার্সিটির স্নায়ুবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জো ভারগেস বলেন, দশকের পর দশক ধরে চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যায়াম মস্তিষ্কের জন্য ভালো। সাইকেল চালানো হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে এবং মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ও পরিপাকের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে করে হয়তো ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমে। তবে কেউ যদি সাইকেল চালানো শুরু করতে চান, তাহলে আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। দেখে নিতে হবে তিনি এখনই সাইকেল চালানো শুরু করার জন্য যথেষ্ট সুস্থ কি না। নাকি এর জন্য আগে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ