পণ্য আমদানির এলসি খোলায় বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হচ্ছে
Published: 20th, September 2025 GMT
পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে ন্যূনতম দর বা নগদ মার্জিন আর থাকছে না। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিবিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হওয়ায় তা একেবারেই তুলে দেওয়া হচ্ছে। ফলে যেকোনো আমদানিকারক যেকোনো পরিমাণ পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারবেন।
নতুন করে তিন বছরের জন্য (২০২৫-২৮) যে আমদানি নীতি আদেশ তৈরি করা হচ্ছে, তাতে এমন নির্দেশনা থাকছে। ইতিমধ্যে আমদানি নীতি আদেশের খসড়া তৈরি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। খসড়া তৈরির আগে এ বিষয়ে বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের মতামত নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে খসড়াটির মূল বিষয়গুলো বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের কাছে তুলে ধরার কথা রয়েছে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমানের। এরপর বাণিজ্য উপদেষ্টা কোনো পর্যবেক্ষণ দিলে তা যুক্ত করে আমদানি নীতির খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। এ বিষয়ে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, আমদানি নীতি আদেশের খসড়া অনুমোদনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো হবে। এলসির পরিমাণ ও ন্যূনতম দর–সম্পর্কিত বাধ্যবাধকতা যে আর থাকছে না, এ বিষয়ে ইঙ্গিত দেওয়া হবে নীতি আদেশে।
বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হতে আর ১৪ মাস সময় বাকি আছে। তিন বছরের জন্য তৈরি করা নতুন আমদানি নীতি আদেশের এ বিষয়টিকেও মাথায় রাখা হচ্ছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
বিদ্যমান আমদানি নীতি আদেশের ২০২১-২৪ মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২৪ সালের জুনে। নতুন আদেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান আদেশ বজায় থাকে, এটাই নিয়ম। নতুন আদেশ জারির কাজ এক বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। বিদ্যমান নীতি আদেশও প্রণয়ন করা হয়েছিল আগেরটির (২০১৫-১৮) নিয়মিত মেয়াদ শেষ হওয়ার সাড়ে চার বছর পর অর্থাৎ ২০২২ সালের মে মাসে।
নতুন নীতি আদেশের খসড়ায় হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধের কথা রয়েছে। আর থাকবে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে হর্নের মাত্রা কমানোর কথা। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে হর্নের মাত্রা ১০০ ডেসিবেলের মধ্যে রাখার কথা রয়েছে খসড়া আমদানি নীতি আদেশে। এ ছাড়া আমদানি করা খাদ্যদ্রব্যের ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার অনুমোদিত গবেষণাগারের (ল্যাবরেটরি) একটি তালিকা থাকবে। নির্ধারিত হবে মনুষ্য খাদ্যের উপযুক্ততা নির্ণয়ে অভিন্ন মানদণ্ড।
নতুন আমদানি নীতির খসড়ায় প্রথমবারের মতো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল ইথাইলিন ও প্রোপাইলিনকে। তবে বিস্ফোরক পরিদপ্তর ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের অনুমতি নেওয়ার শর্তের কথা রয়েছে খসড়ায়।
আমদানিনিষিদ্ধ পণ্য মিথাইল ব্রোমাইডের কারণে অস্ট্রেলিয়ায় চাল ও মসলা রপ্তানিতে সমস্যা হচ্ছে। গ্যাস সিলিন্ডার আমদানির ক্ষেত্রে আলাদা এইচএস কোড, পরিবেশবান্ধবভাবে ব্যাটারি রিসাইক্লিংয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে পুরোনো ব্যাটারি আমদানির অনুমতি নিয়েও কথা উঠেছে। সূত্রগুলো জানায়, এসব জটিলতার সমাধান হবে এবারের আমদানি নীতির মাধ্যমে। এ ছাড়া পাম অলিন আমদানির ক্ষেত্রে বিএসটিআই থেকে মান উত্তীর্ণের প্রত্যয়নপত্র নেওয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হতে পারে।
সম্ভাব্য নিষিদ্ধ পণ্য
নতুন আমদানি নীতির খসড়ায় সব ধরনের বর্জ্য পদার্থ আমদানি-নিষিদ্ধ করার কথা রয়েছে। এ তালিকায় আরও রয়েছে চিংড়ি, জীবিত শূকর ও শূকরজাত সব ধরনের পণ্য; পপি বীজ, পোস্তদানা, ঘাস, ঘন চিনি, কৃত্রিম শর্ষের তেল, রিকন্ডিশন্ড অফিস ইকুইপমেন্ট অর্থাৎ ফটোকপিয়ার, টাইপরাইটার, টেলেক্স, ফোন, ফ্যাক্স, পুরোনো কম্পিউটার, কম্পিউটারসামগ্রী ও পুরোনো ইলেকট্রনিকস সামগ্রী।
নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় আরও রয়েছে হাইড্রোলিক হর্নসহ ৭৫ ডেসিবেলের ঊর্ধ্ব মাত্রার সব হর্ন; বিভিন্ন রাসায়নিক কীটনাশক ও শিল্পজাত দ্রব্য অর্থাৎ এলড্রিন, ক্লোরডেন, ডিডিটি, ডাই-এলড্রিন, এনড্রিন, হেপ্টাক্লোর, মিরেক্স, টক্সফেন, হেক্সক্লোরোবেনজিন, পলিক্লোরিনেটেড বাই-ফিনাইল; পলি প্রোপাইলিন ও পলিথিন ব্যাগ; দুই স্ট্রোক ইঞ্জিন ও চেসিসবিশিষ্ট থ্রি-হুইলার যানবাহন অর্থাৎ টেম্পো, অটোরিকশা ইত্যাদি।
বাংলাদেশের সীমারেখা দেখানো হয়নি এমন মানচিত্র, চার্ট ও ভৌগোলিক গ্লোব, হরর কমিকস, অশ্লীল, নাশকতামূলক সাহিত্য পুস্তিকা, সংবাদ সাময়িকী, পোস্টার, ফটো, ফিল্ম, কাগজপত্র, অডিও-ভিডিও টেপ ইত্যাদি পণ্যও আমদানি করা যাবে না।
শর্ত সাপেক্ষে আমদানির সুযোগ দেওয়া হতে পারে সাড়ে ৪ সেন্টিমিটারের কম ব্যাস বা দৈর্ঘ্যের মাছ ধরার কারেন্ট জাল, পাঁচ বছরের বেশি পুরোনো গাড়ি, তিন বছরের বেশি পুরোনো ও ১৬৫ সিসির ঊর্ধ্বে সব ধরনের মোটরসাইকেলসহ এলএনজি।
সব ধরনের খেলনা ও বিনোদনমূলক পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কোন বয়সের শিশুর জন্য প্রযোজ্য, তা উল্লেখ থাকতে হবে এবং প্লাস্টিকের তৈরি খেলনার ক্ষেত্রে তা ‘স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়’ মর্মে রপ্তানিকারক দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সনদ থাকার শর্ত রাখা হয়েছে খসড়ায় আমদানি নীতিতে। এ ছাড়া বেসামরিক বিমান বা হেলিকপ্টারও আমদানি করা যাবে শর্ত সাপেক্ষে।
পুরোনো জাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে ‘কোনো বিষাক্ত বা বিপজ্জনক বর্জ্য পরিবহন করা হচ্ছে না’ মর্মে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নপত্র ও আমদানিকারকের ঘোষণাপত্র থাকার কথাও উল্লেখ রয়েছে খসড়ায়। তবে সব ধরনের যুদ্ধজাহাজ, শুধু প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং তরবারি ও বেয়নেট ইত্যাদি পণ্য শুধু ব্যবহারকারী সংস্থা–সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রের ভিত্তিতে আমদানির কথা বলা হয়েছে।
চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ছাড়া উপমহাদেশীয় ভাষায় নির্মিত কোনো চলচ্চিত্র আমদানি করা যাবে না। তবে বাংলাদেশে নির্মিত চলচ্চিত্র সাফটাভুক্ত দেশগুলোয় রপ্তানির বিপরীতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি সাপেক্ষে সমসংখ্যক চলচ্চিত্র আমদানির সুযোগ থাকতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আমদ ন র ক ষ ত র চলচ চ ত র সব ধরন র ন আমদ ন র আমদ ন ন ক রক র জন য অর থ ৎ বছর র খসড় য় র খসড়
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে ইউরোপের আরেকটি দেশ
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপের দেশ পর্তুগাল। পর্তুগালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আগামীকাল রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। খবর আল-জাজিরার।
মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, জাতিসংঘের আসন্ন উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের আগেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। চলতি সপ্তাহে যুক্তরাজ্য সফরের সময় পর্তুগালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওলো র্যাঙ্গেল বিষয়টি নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
এর আগে, গত বছরের মে মাসে প্রতিবেশী স্পেনের বামপন্থি সরকারের পাশাপাশি আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। একই সঙ্গে স্পেন অন্যান্য ইইউ দেশগুলোকে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানায়। তবে সেই সময় পর্তুগাল সতর্ক অবস্থান নেয়।
আরো পড়ুন:
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য
গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬৫ হাজার ছাড়াল
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ সদস্যদেশের মধ্যে এখনও অল্প কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সুইডেন, সাইপ্রাস ও কিছু সাবেক কমিউনিস্ট রাষ্ট্র। ফলে পর্তুগালের সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনের প্রতি ইউরোপের অবস্থানকে আরো স্পষ্ট করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
একই সঙ্গে আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যে দেশগুলো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পরিকল্পনা করেছে, সেগুলোর মধ্যে ফ্রান্স যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গের নাম রয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ