দেশের বৃহত্তম সিনেমা হল ‘মণিহার’। যশোরে অবস্থিত হলটিকে এক সময় মনে করা হতো এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম। নব্বইয়ের দশকে যখন বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগ; তখন মণিহারও ছিল সিনেমাপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রে। 

রাজধানী থেকে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা পর্যন্ত ছুটতেন মণিহারের পর্দায় নিজের সিনেমা দেখতে। কিন্তু বাণিজ্যিক সিনেমার অভাবে হলটি এখন বন্ধ হওয়ার পথে।

হল কর্তৃপক্ষ জানায়, দর্শক চাহিদা অনুযায়ী ব্যবসাসফল সিনেমা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ক্রমাগত গুনতে হচ্ছে লোকসান। এমন অবস্থায় হলের কার্যক্রম বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই।

১৯৮৩ সালে যাত্রা করে মণিহার সিনেমা হল। সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ করলেও ৪২ বছরের পুরনো স্থাপনা এখনই ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সিনেমা হলটিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কলকাতার ‘অভিমান’ সিনেমার শো' চলছে। আর সিনেপ্লেক্সে চলছে সালমান শাহর ‘বিক্ষোভ’।

মণিহারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মিঠু বলেন, “অভিমান সিনেমা আগেও চারবার চালিয়েছি। একেতো নতুন ছবির খবর নেই। তারপর ভালো ছবির সংখ্যা খুবই নগণ্য। সর্বশেষ কুরবানী ঈদে তিনটি ছবি পেয়েছি। তারপর থেকে এ পর্যন্ত আর কোনো ছবি পাইনি। যেগুলো পেয়েছি সেগুলো আর্ট ফিল্ম।”

ব্যবসার প্রশ্নে আর্টফিল্ম গলার কাঁটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আর্টফিল্ম সিনেপ্লেক্সে দর্শক টানে না। ফলে বাধ্য হয়ে পুরনো ছবি বারবার চালাতে হচ্ছে। এভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলার চেয়ে পরিকল্পনা করছি, হলটি বন্ধ করে দেওয়ার।”

তিনি বলেন, “সিনেমা হল বাঁচাতে গেলে বেশি বেশি ভালো সিনেমা বানাতে হবে। আগে প্রতি সপ্তাহে দুটি ছবি পেতাম। এখন মাসেও পাই না। মাসে দুটি করে ভালো ছবি পেলেও হল চালিয়ে নেওয়া যায়। দেশে ছবি বানাতে না পারলে আমদানির সুযোগ দিতে হবে। আমরা তো ভারত থেকে ছবি আমদানি করে চালাচ্ছিলাম। টিকে ছিলাম। সে রাস্তাও বন্ধ করে দিল।”

তিনি জানান, মণিহারে দর্শক আসন সংখ্যা ১ হাজার ৪৩০টি। বছরের দুয়েকবার বাদে অধিকাংশ সময় আসনগুলো শূন্য পড়ে থাকে। প্রতি মাসে বিদ্যুৎবিল আসে প্রায় দেড় লাখ টাকা। ২৫ জন কর্মচারীর বেতন, বিদ্যুৎ বিল, সিনেমা কেনার টাকাসহ ব্যবস্থাপনা খরচ এ খাত থেকে ওঠে না। 

হলের সাথে থাকা আবাসিক হোটেলসহ অন্যান্য স্থাপনা থেকে উপার্জিত অর্থে মেটানো হয় হলের লোকসান। এমন পরিস্থিতিতে হলটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এটা ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা এই মুহূর্তে নেই। ভবিষ্যতে কোনো বিকল্প উদ্যোগ নিলেও মূল স্থাপনা ঠিক রাখাসহ চালু থাকবে ‘মণিহার সিনেপ্লেক্স’। প্রয়োজনে সেটির সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে।

উল্লেখ্য, ৯০ দশকের শেষভাগ পর্যন্ত দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৩০০টির ওপরে। এখন কমতে কমতে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০-৭৫টিতে। এর মধ্যে সবগুলো চালু নেই। নতুন করে বন্ধ হতে যাচ্ছে মণিহার সিনেমা হল। লোকসানের কারণে এর আগেও বেশ কয়েকবার বন্ধ হয়েছিল দেশের সর্ববৃত্তম এই সিনেমা হলটি।

মণিহার সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক ফারুক আহমেদ বলেন, “আগে সিঙ্গেল স্ক্রিন ছিল, সবাই বলত ভালো পরিবেশ দিলে দর্শক হলে আসবে। এরপর মাল্টিপ্লেক্স করা হয়। যদি সিনেমা না থাকে, ভালো পরিবেশ দিয়ে কী হবে। মাসে অন্তত একটা ভালো ছবি থাকলেও টিকে থাকা যায়। কিন্তু পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, শুধু মনিহার নয়, সব হল মালিকই ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হবেন।”

তিনি আরো বলেন, “চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য মালিকপক্ষ সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। সাফটা চুক্তির আওতায় সিনেমা আমদানি না করতে পারলে হল টিকবে না।”

ঢাকা/রিটন/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মণ হ র স ন ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলকে মোকাবিলায় উপসাগরীয় দেশগুলোর আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কতটা শক্তিশালী

গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) যৌথ প্রতিরক্ষা পরিষদ গত বৃহস্পতিবার কাতারের রাজধানী দোহায় জরুরি বৈঠক করেছে। এর উদ্দেশ্য ছিল কাতারে ইসরায়েলের হামলার পর এ অঞ্চলের জরুরি নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা। সম্প্রতি দোহায় হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ছয়জন নিহত হন।

জিসিসির মহাসচিব জাসেম মোহাম্মদ আল-বুদাইউই বলেন, কাতারের ওপর এ হামলাকে সব জিসিসি সদস্যদেশের ওপর হামলা হিসেবে দেখা যেতে পারে।

আল–বুদাইউই জানান, সদস্যদেশগুলো যৌথ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় করবে, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় জোরদার করবে, আকাশ প্রতিরক্ষায় সমন্বয় করবে, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে আগাম সতর্কতামূলক বার্তাব্যবস্থা চালু করবে ও যৌথ মহড়া চালাবে। এর মধ্যে একটি আঞ্চলিক বিমানবাহিনী মহড়াও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

এ বছর শুরু হওয়ার পর থেকে কাতার হলো সপ্তম দেশ, যেখানে ইসরায়েল বোমা হামলা চালিয়েছে।

মানচিত্রে উপসাগরীয় ছয় আরব দেশ

সম্পর্কিত নিবন্ধ