রাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেলের ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা
Published: 20th, September 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে। এতে নারীর নিরাপত্তা, আবাসন, গবেষণা, আধুনিকায়ন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের অধিকারসহ নানা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে লিচুতলায় এ ইশতেহার ঘোষণা করেন প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান (জাহিদ)। ইশতেহারে সাতটি বিষয়কে ‘হ্যাঁ’ ও সাতটি বিষয়কে ‘না’ হিসেবে উল্লেখ করেছে প্যানেলটি। এ ছাড়া তারা ছাত্র সংসদের মেয়াদের ১২ মাসে ২৪টি সংস্কার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ইশতেহারে শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ, আবাসনসংকট নিরসন, মানসম্মত খাবার নিশ্চিতকরণ, নিরাপদ ক্যাম্পাস, তথ্যসেবা ও আধুনিকায়ন, সব অংশীজনের মধ্যে সুসম্পর্ক বৃদ্ধি ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতকরণকে ‘হ্যাঁ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে ৫০ টাকা হল ফি; হল দখল ও আসন–বাণিজ্য; ট্যাগিং ও ফ্রেমিংয়ের রাজনীতি; স্লাটশেমিং, সাইবার বুলিং ও শারীরিক নির্যাতন; ধর্মবিদ্বেষ; মাদক ও ছিনতাই এবং সন্ত্রাস ও সহিংসতাকে ইশতেহারে ‘না’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেলের দেওয়া ২৪টি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি হলো জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে রাকসু নির্বাচনকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্তকরণ, জুলাইয়ের হামলাকারীদের বিচার, জাদুঘর স্থাপন ও ১৬ জুলাইকে ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস’ ঘোষণা করা; ক্যাম্পাসে মানসম্মত খাবারের নিশ্চয়তা প্রদানে ডাইনিং, ক্যানটিনসহ অন্যান্য জায়গায় স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা ও মূল্য নির্ধারণ করা।
অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের অধিকার সংরক্ষণে শতভাগ আবাসিকতার রোডম্যাপ ঘোষণা এবং এর আগপর্যন্ত আবাসন ভর্তুকি দেওয়া; শিক্ষা ও গবেষণায় গুরুত্বারোপ করতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গবেষণা বৃত্তি দেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো; লাইব্রেরি ও রিডিং রুম সম্প্রসারণ ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার শীতাতপনিয়ন্ত্রণে আনা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ অন্যান্য আধুনিক সুবিধা নিশ্চিত করা; শিক্ষা কারিকুলাম আন্তর্জাতিকীকরণে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এমওইউ চুক্তি করা ও শিক্ষক বিনিময় প্রথা চালু করা।
প্রশাসনিক কার্যক্রম আধুনিকায়নে একটি অ্যাপের মাধ্যমে সব সুবিধা নিশ্চিত করা এবং টিএসসিসি ও মিলনায়তনের ভাড়া শিক্ষার্থীদের সাধ্যের মধ্যে আনা; চিকিৎসাকেন্দ্রের আধুনিকায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারকে ২০ শয্যাবিশিষ্ট করা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া; নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট–সেবা দেওয়া; ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ও আলোকবাতির ব্যবস্থা করা।
পরিবহনব্যবস্থা উন্নত করতে ক্যাম্পাসের ভেতরে চলাচলকারী গাড়ির নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা এবং বাসের ট্রিপ বাড়ানো; নারী শিক্ষার্থীদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে সার্বক্ষণিক হেল্পলাইনের আওতায় আনা, ক্লাস-পরীক্ষা ও প্রেজেন্টেশনে হিজাব-নিকাব ব্যবহারের অধিকার নিশ্চিত করা এবং ‘চাইল্ড ডে–কেয়ার’ স্থাপনসহ বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করা; শিক্ষক মূল্যায়নব্যবস্থা চালু করা; তথ্যসেবা নিশ্চিতকরণে একটি অ্যাপ চালু করা এবং শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন কোর্স চালু করা; শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন অন ক্যম্পাস জব নিশ্চিত করা; পূর্ণাঙ্গ টিএসসিসি বাস্তবায়ন করা।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় লিফট, ব্রেইল পদ্ধতি, অডিও বুক, বিশেষ বাথরুম–সুবিধা ও নানা প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা; ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকার রক্ষায় উপাসনালয় ও ধর্মীয় উৎসবে নিরাপত্তা বাড়ানো; সংস্কৃতির বৈচিত্র্য বাড়াতে হামদ, নাত, কাওয়ালি ইসলামি দর্শনভিত্তিক নানা আয়োজন করা এবং এর সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা; স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়া; ক্রীড়া উন্নয়নে বাজেট বাড়ানো ও ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট সুবিধার বৃহৎ সংস্কার করা। সাহিত্য, প্রকাশনা ও সামাজিক সংগঠনের উন্নয়নে বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করা; পরিচ্ছন্ন ও সবুজ ক্যাম্পাসের জন্য প্রকৃতি রক্ষা কমিটির মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়া; অপরাধ দমনে অনলাইন-অফলাইনে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া এবং দলীয় শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করা।
ইশতেহার ঘোষণা শেষে প্যানেলের জিএস প্রার্থী ফাহিম রেজা বলেন, ‘এটি আকাশকুসুম কোনো প্রস্তাব নয়। আমরা এ সংস্কার বাস্তবায়ন করব। এ ছাড়া জবাবদিহির জন্য আমরা চার্ট টাঙানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সেখানে কোন কাজ কতটুকু হলো, তা উল্লেখ করা থাকবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর র ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
বরফ গলে মেরু এলাকায় নতুন বাস্তুতন্ত্রের খোঁজ
তাপপ্রবাহ, ওজোন গ্যাসের উপস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে পৃথিবীর দুই মেরু এলাকার বরফ গলে যাচ্ছে। তবে উত্তর মেরুর আর্কটিক সাগরের গলিত বরফ ভিন্ন ধরনের লুকানো বাস্তুতন্ত্র প্রকাশ করছে। সেখানে ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন গ্যাসকে পুষ্টিতে রূপান্তরিত করে শৈবালের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে দেখা গেছে। পুরু বরফের নিচে এই প্রক্রিয়া অসম্ভব বলে মনে করা হলেও এখন আর্কটিকের খাদ্যশৃঙ্খল ও বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন শোষণের জন্য এই প্রক্রিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এখন নতুন বাস্তুতন্ত্র জলবায়ুগত সুবিধা দেবে নাকি নতুন অনিশ্চয়তা নিয়ে আসবে, তা নিয়ে গবেষণা করছেন।
আর্কটিক মহাসাগরকে দীর্ঘকাল ধরে হিমায়িত ও প্রাণহীন একটি সীমান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যখন এই অঞ্চলের সমুদ্রের বরফ গলতে শুরু করেছে, তখন পানির নিচ থেকে আশ্চর্যজনক নতুন নতুন সব তথ্য জানা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা দেখছেন, গলিত বরফ আসলে শৈবালের বৃদ্ধি বাড়িয়ে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে উৎসাহিত করতে পারে। এই শৈবালই মহাসাগরের খাদ্যশৃঙ্খলের ভিত্তি তৈরি করে। সেখানকার নতুন পরিবেশ আমাদের গ্রহের সংবেদনশীল জলবায়ু ভারসাম্যের জন্য সহায়ক হবে নাকি ক্ষতিকারক হবে, তা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
জার্মানির আলফ্রেড ওয়েগেনার ইনস্টিটিউট ও কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফল আর্কটিক মহাসাগর সম্পর্কে আমাদের পূর্বের ধারণাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে। কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া পুরু আর্কটিক বরফের নিচে ঘটতে পারে না। এই প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন গ্যাসকে জীবনের সহায়ক রূপে রূপান্তর করে। এই রূপান্তরের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার জন্য সেখানকার পরিস্থিতিকে খুব চরম বলে মনে করা হতো। নতুন গবেষণা ভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছে। মধ্য আর্কটিক বরফের নিচে দেখা গেছে, নাইট্রোজেন ফিক্সেশন বা বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া কেবল ঘটছে তা নয়, বরং এটি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বিস্তৃত হতে পারে। অন্যান্য সব সমুদ্রে সাধারণত সায়ানোব্যাকটেরিয়া দেখা গেলেও, আর্কটিকে নন-সায়ানোব্যাকটেরিয়া নামে পরিচিত একটি ভিন্ন দলের উপস্থিতি দেখা যায়। ভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্রবীভূত জৈব পদার্থ খেয়ে বেঁচে থাকে ও নাইট্রোজেন যৌগ মুক্ত করে যা শৈবালকে পুষ্টি জোগায়।
আর্কটিক এলাকাকে একসময় প্রাকৃতিক কার্যকলাপের জন্য খুব অনুর্বর বলে মনে করা হতো। গবেষণায় দেখা গেছে, গলে যাওয়া সমুদ্রের বরফের কিনারা বরাবর নাইট্রোজেনের বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া সবচেয়ে শক্তিশালী। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে সূর্যের আলো, পানি ও পুষ্টির উপাদান মিশে গেছে, যা ব্যাকটেরিয়া ও শৈবাল উভয়ের জন্যই আদর্শ পরিবেশ। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে আর্কটিকের নাইট্রোজেনচক্র নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হবে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী লিসা ডব্লিউ ভন ফ্রাইসেন বলেন, আর্কটিক মহাসাগরে সহজলভ্য নাইট্রোজেনের পরিমাণ অনুমান করা হয়নি এখনো। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে শৈবাল উৎপাদনের সম্ভাবনা কেমন হবে তা এখনো জানা যায়নি। শৈবাল আর্কটিক খাদ্যশৃঙ্খলের জন্য অপরিহার্য। তারা আণুবীক্ষণিক ক্রাস্টেসিয়ানদের খাবার হিসেবে কাজ করে, যা পরবর্তী সময়ে ছোট মাছ এবং সিল ও তিমির মতো বড় শিকারি প্রাণীরা খায়। আরও শৈবাল এই শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করতে পারে, যা সম্ভাব্যভাবে আর্কটিক সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
সাধারণভাবে শৈবাল কেবল সামুদ্রিক প্রাণীদের খাদ্য জোগায় না। তারা সালোকসংশ্লেষণের সময় বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইডও শোষণ করে। যখন শৈবাল মরে যায়, তখন এই কার্বনের কিছু অংশ সমুদ্রের তলদেশে ডুবে যায়। বিজ্ঞানীরা প্রায়শই শৈবালকে প্রাকৃতিক কার্বন সিংক বা মহাসাগরের নিজস্ব ভ্যাকুয়াম ক্লিনার হিসেবে বর্ণনা করেন। নতুন তথ্য থেকে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া যদি শৈবালের বৃদ্ধিকে বাড়িয়ে তোলে, তবে আর্কটিক মহাসাগর আরও বেশি কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করতে পারবে। বিষয়টি একদিক থেকে জলবায়ুর জন্য সুসংবাদ বলে মনে করা হচ্ছে। শৈবালের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি বৈশ্বিক কার্বন মাত্রাকে সামান্য হলেও প্রশমিত করতে পারে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে জানিয়েছেন, বিষয়টি এত সরল নয়। সামুদ্রিক সিস্টেম অত্যন্ত সংবেদনশীল। অন্যান্য পরিবেশগত পরিবর্তন এই ইতিবাচক প্রভাবকে দুর্বল করে দিতে পারে।
বিজ্ঞানী ল্যাসে রিম্যান বলেন, ফলাফল জলবায়ুর জন্য উপকারী হবে কি না, তা আমরা এখনো জানি না। তবে এটি স্পষ্ট যে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে আগামী কয়েক দশকে আর্কটিক মহাসাগরের কী হবে, তা অনুমান করার সময় আমাদের নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াকে সমীকরণে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়তে থাকায়, আর্কটিক পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় প্রায় চার গুণ দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে। এই দ্রুত পরিবর্তন কেবল বরফের ওপর নির্ভরশীল প্রজাতিদেরই নয়, বরং মহাসাগর কীভাবে কার্বন সঞ্চয় ও নির্গত করে, তারও পরিবর্তন ঘটায়। নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার ভূমিকা বোঝা গেলে বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতের জলবায়ু ধরন সম্পর্কে আরও নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম হবেন বলে আশা করছেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া