পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনুসঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি গোল্ডেন হারভেস্টের অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পরিদর্শন করে বেশ কিছু গুরুতর অনিয়ম এবং আর্থিক প্রতিবেদনে মিথ্যা ও জাল তথ্য উপস্থানের প্রমাণ পেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আর আর্থিক প্রতিবেদনে ভুল ও অসত্য তথ্য শনাক্ত না করে প্রকাশ করার সুযোগ করে দিয়েছে কোম্পানির নিরীক্ষক ম্যাবস অ্যান্ড জে পার্টনার্স চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস।

তাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের আস্থাকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান ও এর অংশীদারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলকে (এফআরসি) অনুরোধ জানিয়েছে বিএসইসি।

আরো পড়ুন:

সাপ্তাহিক দাম কমার শীর্ষে প্রাইম ফাইন্যান্স কোম্পানি

ডিএসইতে সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষে খান ব্রাদার্স

সম্প্রতি কমিশন থেকে এফআরসির চেয়ারম্যানের এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, কোম্পানির সম্পর্কিত এবং অ-সম্পর্কিত উভয় ধরনের পক্ষের সঙ্গে কিছু লেনদেন দেখিয়েছে, যেগুলো বাস্তবে ঘটেনি বা জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া কোম্পানির আর্থিক বিবরণীতে প্রকৃত সম্পদের চেয়ে বেশি বা বিভ্রান্তিকর সম্পদমূল্য দেখানো হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের ভুল ধারণা দিতে পারে। একই সঙ্গে এসব মারাত্মক ধরনের ভুল ও জালিয়াতি শনাক্ত করা ও আপত্তি তোলার দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও নিয়োগপ্রাপ্ত নিরীক্ষক তা শনাক্ত পারেননি বা ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করেছেন।

বিগত সরকারের আমলে আইন বা বিধি-বিধান লঙ্ঘন করা কোম্পানি ও তাদের নিয়োগপ্রাপ্ত নিরীক্ষদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন কোম্পানি ও নিরীক্ষদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএসইসি তার নিয়ন্ত্রক কার্যাবলী বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে গোল্ডেন হারভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানা ও অফিস প্রাঙ্গণ, হিসাবের বই এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য সশরীরে পরিদর্শন করেছে। এ পরিদর্শন কার্যক্রেমে কোম্পানির গুরুতর অনিয়ম এবং আর্থিক প্রতিবেদনে অসত্য তথ্য শনাক্ত করেছে, যা কোম্পানির প্রকাশিত আর্থিক বিবরণীর নির্ভরযোগ্যতায় বাস্তব ও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

যেসব তথ্য মিথ্যা বলে জানা গেছে সেগুলো হলো-কোম্পানির সাথে সম্পর্কিত এবং সম্পর্কহীন উভয় পক্ষের সাথে মিথ্যা এবং জাল লেনদেনের তথ্য দিয়েছে। এছাড়া আর্থিক বিবরণীতে বিভ্রান্তিকর সম্পদ অবস্থান প্রদর্শন করা হয়েছে। স্বতন্ত্রভাবে নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য আইনানুগ নিয়োজিত করা হলে আর্থিক প্রতিবেদনে উপস্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ অসত্য তথ্য সনাক্ত করা ও আপত্তি জানাতে নিরীক্ষক ব্যর্থ হয়েছেন। এই ধরনের অনিয়ম কেবল নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই ক্ষুন্ন করে না বরং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী ও স্টেকহোল্ডারদের আস্থাকেও বিরূপভাবে প্রভাবিত করে।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, এজন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বিধিমালা, ২০২০ এর রুলস ১৪(৫) অনুসারে, গোল্ডেন হারভেস্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের পরিদর্শন প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি এবং আর্থিক প্রতিবেদনের প্রাসঙ্গিক তথ্য সংযুক্ত করে পাঠানো হয়েছে।

অনুসন্ধানের গুরুত্ব বিবেচনা করে গোল্ডেন হারভেস্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা ও অফিস প্রাঙ্গণের পরিদর্শন প্রতিবেদন এবং ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনগুলোও পর্যালোচনা করুন। পর্যালোচনায় যদি সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান বা তাদের অংশীদারদের কাজে অবহেলা বা সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়, তবে প্রযোজ্য আইন ও মানদণ্ড অনুযায়ী প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদনে জালিয়াতি বা বিভ্রান্তিকর তথ্য থাকলে তা বিনিয়োগকারীদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে নিরীক্ষকরা যদি দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হন, তবে বাজারে আস্থার সংকট দেখা দিতে পারে।

বিএসইসি বলছে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা এবং শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। এ কারণে বিষয়টি এফআরসির দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

ঢাকা/এনটি/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইন ড স ট র জ ব যবস থ ব এসইস র জন য ক ত কর

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বড় বিনিয়োগকারীদের মুনাফার তথ্য চেয়ে সকালে চিঠি, বিকেলে না
  • জেনেক্স ইনফোসিসের নয় পরিচালককে সোয়া ৯ কোটি টাকা জরিমানা
  • রিয়াজ-শিবলীকে পুঁজিবাজারে আজীবন নিষিদ্ধসহ কঠোর সুপারিশ
  • বিনিয়োগকারীদের সচেতনতায় নির্দেশিত প্রোগ্রাম প্রচারের অনুরোধ
  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ