গকসু নির্বাচন: জাহিদের প্রচারণায় সবুজের ডাক
Published: 20th, September 2025 GMT
৭ বছরের দীর্ঘ নীরবতা শেষে আবারো সরগরম হয়ে উঠেছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) ক্যাম্পাস। ৩২ একরের সবুজ চত্বরে এখন নির্বাচনী হাওয়া বইছে।
আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গকসু) নির্বাচনের চতুর্থ কার্যনির্বাহী পরিষদের ভোটগ্রহণ। ইতোমধ্যেই প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন ভোটারদের মন জয় করার প্রচারে। প্রার্থী-সমর্থকদের দৌড়ঝাঁপ, লিফলেট ছড়াচ্ছে, স্লোগান ভেসে আসছে চারদিক থেকে। শিক্ষার্থীরা কেউ সমর্থনে শ্লোগান দিচ্ছে, কেউবা চুপচাপ তাকিয়ে দেখছে প্রার্থীদের কর্মযজ্ঞ।
আরো পড়ুন:
ইবিতে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু বৈদ্যুতিক শাটলের
পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা ঢাবি হল সংসদ নেতাসহ ৬ শিক্ষার্থী
এই কোলাহলের ভিড়েই ব্যতিক্রম মো.
প্রথমে অনেকে অবাক হয়েছেন। লিফলেট খুলতেই ভেতরে জড়িয়ে আছে কচি সবুজ বীজ। সঙ্গে লেখা এক টুকরো বার্তা, “এই লিফলেটে বীজ আছে, দয়া করে ভিজে মাটিতে ফেলবেন। আমি এজিএস হই আর না হই, এই বীজ থেকে অন্তত একটা গাছ হোক। যেটা ছায়া দেবে, অক্সিজেন দেবে, আর বলবে একজন শিক্ষার্থী একদিন স্বপ্ন দেখেছিল পরিবর্তনের।”
কথাগুলো পড়ে চুপ হয়ে গেছেন অনেকেই। সাধারণত হ্যান্ডবিল পড়ে শেষ হলে তা ছুড়ে ফেলা হয় মাটিতে। ময়লায় ভরে যায় ক্যাম্পাস। কিন্তু বীজসংবলিত এই লিফলেট তো আর বর্জ্য নয়, এটা ভবিষ্যতের এক সম্ভাবনা। এতে শুধু ভোটারদের মনোযোগই আকৃষ্ট হচ্ছে না, ছড়িয়ে পড়ছে পরিবেশ সচেতনতার বার্তাও। ফলে তার প্রচারণা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
জাহিদ বলেন, “সাধারণ প্রচারপত্র পড়ার পর তা বর্জ্যে পরিণত হয়। কিন্তু বীজযুক্ত প্রচারপত্র ফেলে না দিয়ে শিক্ষার্থীরা তা রোপণ করতে পারবেন, যা ভবিষ্যতে ফলপ্রসূ হবে। পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। আমি চাই, আমার প্রচারণা শুধু ভোটের জন্য না হয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনায় নতুন দিশা আনুক। পরিবর্তনের শুরুটা হোক এক টুকরো সবুজ থেকে।”
তার কথা শোনার পর অনেকে মুগ্ধ হয়েছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, এই তরুণের স্বপ্ন হয়তো সত্যিই একদিন বড় পরিবর্তন ডেকে আনবে। যেখানে অন্যরা স্লোগানে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, সেখানে তিনি দিচ্ছেন এক খণ্ড সবুজের আশ্বাস। অনেকে বলছেন, ‘স্মার্ট ক্যাম্পেইন’।
শুধু বীজ বিলি করেই থেমে থাকেননি জাহিদ। তার মুখে শোনা যায় দৃঢ় উচ্চারণ—“আমি নির্বাচিত হলে ছাত্র সংসদে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স থাকবে। আর যদি সেটা না পারি, তবে আমি নিজেই পদত্যাগ করব।”
ক্যাম্পাসজুড়ে তার এই ঘোষণা ছড়িয়ে পড়েছে ঝড়ের মতো। শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে লিখছেন, “এমন প্রার্থীই জিতে যাক।”
জাহিদের এই প্রচারণা যেন নির্বাচনী উত্তেজনার ভিড়ে একটুকরো নির্মল বাতাস। যেখানে অন্য প্রার্থীরা লিফলেট আর শোডাউনে ব্যস্ত, সেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন বীজ।
অনেকেই বলছেন, জাহিদ হাসানের উদ্যোগকে অনেকেই ভবিষ্যতের রাজনীতির জন্য এক ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখছেন। কারণ, রাজনৈতিক প্রচারণায় পরিবেশবান্ধব চিন্তার এমন প্রয়োগ দেশে খুব একটা দেখা যায় না। তার এই ছোট উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মনে এক বড় পরিবর্তনের বার্তা ছড়িয়েছে।
নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। প্রচারের শব্দ আরো তীব্র হচ্ছে। কিন্তু এর মাঝেও শিক্ষার্থীরা যখন সেই বীজ হাতে মাটিতে ফেলছেন, তখন যেন ভেতরে ভেতরে বুনছেন আরেক রকম স্বপ্ন।
হয়তো জাহিদ জয়ী হবেন, হয়তো হবেন না। কিন্তু তার হাত থেকে ছড়িয়ে পড়া এই বীজগুলো একদিন অঙ্কুরিত হবে, বেড়ে উঠবে। আর প্রতিটি গাছ সাক্ষী হয়ে থাকবে—একজন শিক্ষার্থী একসময় স্বপ্ন দেখেছিল, পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে একটুখানি সবুজ থেকেই।
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব শ ল ফল ট
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার একটি বাড়িতে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার মশিপুর ইউনিয়নের ছোট ইতালি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
বিস্ফোরণে আতাউর রহমান (৩৫) নামের একজন গুরুতর আহত হন। তাঁকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আতাউর কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রামপ্রসাদের চর গ্রামের বাসিন্দা। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।।
গতকালের ওই ঘটনার পরপরই ছোট ইতালি গ্রামের বিস্ফোরণস্থল ঘিরে ফেলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও ডিবি সদস্যরা। উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকটি তাজা হাতবোমা। বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা এসে উদ্ধার হওয়া হাতবোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করেন। পরে বাড়িটি সিলগালা করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে আতাউর রহমানসহ কুমিল্লা থেকে আসা চার ব্যক্তি ছোট ইতালি গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেনের বাড়িতে ওঠেন। মুক্তারের স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৪৫) মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মুক্তারের বাড়ির ভেতরে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হন। পরে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে রক্তাক্ত অবস্থায় আতাউর রহমানকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশকে খবর দেওয়ার পর মুক্তার হোসেনের তিন সহযোগী দ্রুত পালিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন আহত আতাউরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেরাজুল হক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত হাতবোমা ও কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। বাগবাড়ি তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাদিক বাদী হয়ে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন। মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ঘটনার সঙ্গে আগামী নির্বাচনে নাশকতার পরিকল্পনার যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।