দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার হাজার হাজার পর্যটকের আনাগোনায় সারা বছর মুখর থাকে। কিন্তু এই সৈকতের নিরাপত্তাব্যবস্থা যে কতটা ভঙ্গুর, তা আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তহবিলের অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘সি-সেফ লাইফগার্ড’-এর কার্যক্রম। এ কারণে সৈকতে গোসলে নামা পর্যটকদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে। যেখানে পর্যটকদের থেকে বছরে হাজারো কোটি টাকা আয় হয়, সেখানে তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে, তা কোনোভাবেই মানা যায় না।

এক যুগ ধরে সি-সেফ লাইফগার্ড কক্সবাজারের মাত্র পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিয়ে আসছে। তাদের সাহসী কর্মকাণ্ডের কারণে প্রায় ৮০০ পর্যটকের প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। এই লাইফগার্ড কর্মীরা শুধু জীবন বাঁচাননি, স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া পর্যটকদের মরদেহও উদ্ধার করেছেন। অথচ এমন একটি অপরিহার্য সেবা আজ অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা দীর্ঘ ১২ বছর এই ব্যয় বহন করে আসছিল, কিন্তু এখন তাদের তহবিল শেষ।

প্রশ্ন হলো, বছরে মাত্র দেড় কোটি টাকা খরচ করে ৭০ লাখ পর্যটকের জীবন রক্ষা করা কি রাষ্ট্রের জন্য অসম্ভব? জেলা প্রশাসন হোটেলমালিকদের ওপর এই দায়িত্ব চাপিয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু হোটেল মালিক সমিতির বক্তব্য, তাদের পক্ষে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ জোগান দেওয়া সম্ভব নয় এবং এতে কেউ সাড়া দিচ্ছে না। এই পারস্পরিক দায় এড়ানোর খেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ পর্যটকেরা। ফলে মাত্র পাঁচ কিলোমিটারের বাইরে বিশাল সমুদ্রসৈকতের বাকি অংশগুলোয় পর্যটক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি। যে কারণে প্রতিবছর অনেক পর্যটক গোসলে নেমে মৃত্যুর শিকার হচ্ছেন। 

এখন লাইফগার্ড না থাকলে এই মৃত্যুর সংখ্যা যে আরও বহুগুণ বেড়ে যাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কেন এ বিষয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই? পর্যটন খাত থেকে সরকার যে বিপুল রাজস্ব আয় করে, তার একটি ক্ষুদ্র অংশও কি মানুষের জীবন রক্ষায় ব্যয় করা উচিত নয়? তা ছাড়া যাঁরা এক যুগ ধরে লাইফগার্ড হিসেবে কাজ করেছেন, এই প্রশিক্ষিত কর্মীরাও বেকার হয়ে পড়বেন। পরিবার নিয়ে তাঁরাও অনিশ্চয়তায় পড়তে যাচ্ছেন।

পর্যটন খাতকে কেবল আয়ের উৎস হিসেবে দেখলে হবে না, বরং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও সরকারের নৈতিক ও আইনগত
দায়িত্ব। এই পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত জরুরি ভিত্তিতে লাইফগার্ড সেবার জন্য স্থায়ী সরকারি বরাদ্দ নিশ্চিত করা। একে শুধু রাষ্ট্রীয় খরচ হিসেবে দেখলেই হবে না, এটি অপরিহার্য বিনিয়োগও। তাই কক্সবাজারের অরক্ষিত বিশাল সৈকতের নিরাপত্তায় একটি সুনির্দিষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতেই হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ইফগ র ড পর যটক র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মেঘমুক্ত আকাশে উঁকি দিল কাঞ্চনজঙ্ঘা

টানা কয়েকদিন ধরে মেঘলা ছিল আকাশ। আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালটা ছিল একেবারেই ভিন্ন। ভোর থেকেই স্বচ্ছ নীল আকাশ। এর মধ্যেই পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে স্পষ্ট দেখা গেছে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা।

ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে দিগন্ত জোড়া সাদা রূপালি চূড়া যেন নতুন দিনের সৌন্দর্যে যোগ করেছে অন্য রকম আবেশ। আকাশ পরিষ্কার থাকায় সকাল থেকেই মানুষ ভিড় করছেন তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলো এলাকাসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করছেন, ক্যামেরা বন্দি করেছেন মুহূর্তটিকে।

কাঞ্চনজঙ্ঘা ঘিরে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় প্রতি বছর পর্যটকের আগমন ঘটে। বিনা পাসপোর্টে ভারত-নেপালে না গিয়েই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাওয়ায় পর্যটন অঞ্চল হিসেবে সমৃদ্ধ হয়েছে তেঁতুলিয়া। এই এলাকার পর্যটন স্পট ডাকবাংলোর পিকনিক কর্ণার ও মহানন্দা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। 

কাঞ্চনজঙ্ঘা হিমালয়ের পূর্বাংশে নেপাল ও ভারতের সিকিম রাজ্যের সীমান্তে অবস্থিত। এর উচ্চতা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার (২৮ হাজার ১৬৯ ফুট), যা এভারেস্ট ও কে-টু’র পর বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। 

স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়টি পর্যটকদের কাছে পঞ্চগড় ভ্রমণের উপযুক্ত সময় হিসেবে বিবেচিত হয়। ইতোমধ্যে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা বুকিং দিচ্ছেন হোটেল ও রিসোর্টগুলোতে।

স্থানীয় সাংবাদিক মোবারক হোসেন বলেন, “কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতটি বাংলাদেশের একমাত্র পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এলে পরিষ্কার দেখা যায়। প্রতি বছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্বতটি পরিষ্কার দেখা যায়। ছবির মতো ভেসে ওঠা শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য। ছাড়াও দেখা মেলে প্রতিবেশী দেশ ভারতের দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চল।”

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, “গত কয়েকদিন ধরে আকাশে মেঘ ছিল। আজ সকালে উত্তরাঞ্চলে ঠান্ডা হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছে, বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় আকাশ পরিষ্কার হয়েছে। এই অবস্থায় তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা সম্ভব হয়েছে।”

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, “তেঁতুলিয়া একটি পর্যটন এলাকা। এখানে খুব কাছ থেকে হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। পর্যটকদের জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন- এ জন্য আমরা সার্বক্ষণিক সচেষ্ট আছি।”

ঢাকা/নাঈম/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেঘমুক্ত আকাশে উঁকি দিল কাঞ্চনজঙ্ঘা