কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপত্তার কী হবে
Published: 21st, September 2025 GMT
দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার হাজার হাজার পর্যটকের আনাগোনায় সারা বছর মুখর থাকে। কিন্তু এই সৈকতের নিরাপত্তাব্যবস্থা যে কতটা ভঙ্গুর, তা আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তহবিলের অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘সি-সেফ লাইফগার্ড’-এর কার্যক্রম। এ কারণে সৈকতে গোসলে নামা পর্যটকদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে। যেখানে পর্যটকদের থেকে বছরে হাজারো কোটি টাকা আয় হয়, সেখানে তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে, তা কোনোভাবেই মানা যায় না।
এক যুগ ধরে সি-সেফ লাইফগার্ড কক্সবাজারের মাত্র পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিয়ে আসছে। তাদের সাহসী কর্মকাণ্ডের কারণে প্রায় ৮০০ পর্যটকের প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। এই লাইফগার্ড কর্মীরা শুধু জীবন বাঁচাননি, স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া পর্যটকদের মরদেহও উদ্ধার করেছেন। অথচ এমন একটি অপরিহার্য সেবা আজ অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা দীর্ঘ ১২ বছর এই ব্যয় বহন করে আসছিল, কিন্তু এখন তাদের তহবিল শেষ।
প্রশ্ন হলো, বছরে মাত্র দেড় কোটি টাকা খরচ করে ৭০ লাখ পর্যটকের জীবন রক্ষা করা কি রাষ্ট্রের জন্য অসম্ভব? জেলা প্রশাসন হোটেলমালিকদের ওপর এই দায়িত্ব চাপিয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু হোটেল মালিক সমিতির বক্তব্য, তাদের পক্ষে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ জোগান দেওয়া সম্ভব নয় এবং এতে কেউ সাড়া দিচ্ছে না। এই পারস্পরিক দায় এড়ানোর খেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ পর্যটকেরা। ফলে মাত্র পাঁচ কিলোমিটারের বাইরে বিশাল সমুদ্রসৈকতের বাকি অংশগুলোয় পর্যটক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি। যে কারণে প্রতিবছর অনেক পর্যটক গোসলে নেমে মৃত্যুর শিকার হচ্ছেন।
এখন লাইফগার্ড না থাকলে এই মৃত্যুর সংখ্যা যে আরও বহুগুণ বেড়ে যাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কেন এ বিষয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই? পর্যটন খাত থেকে সরকার যে বিপুল রাজস্ব আয় করে, তার একটি ক্ষুদ্র অংশও কি মানুষের জীবন রক্ষায় ব্যয় করা উচিত নয়? তা ছাড়া যাঁরা এক যুগ ধরে লাইফগার্ড হিসেবে কাজ করেছেন, এই প্রশিক্ষিত কর্মীরাও বেকার হয়ে পড়বেন। পরিবার নিয়ে তাঁরাও অনিশ্চয়তায় পড়তে যাচ্ছেন।
পর্যটন খাতকে কেবল আয়ের উৎস হিসেবে দেখলে হবে না, বরং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও সরকারের নৈতিক ও আইনগত
দায়িত্ব। এই পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত জরুরি ভিত্তিতে লাইফগার্ড সেবার জন্য স্থায়ী সরকারি বরাদ্দ নিশ্চিত করা। একে শুধু রাষ্ট্রীয় খরচ হিসেবে দেখলেই হবে না, এটি অপরিহার্য বিনিয়োগও। তাই কক্সবাজারের অরক্ষিত বিশাল সৈকতের নিরাপত্তায় একটি সুনির্দিষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতেই হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল ইফগ র ড পর যটক র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
রাতারগুলের বর্ণনা দিয়ে, গজল গেয়ে পর্যটক টানেন সিফত মাঝি
‘একটু পরই আমরা ঢুকে যাব রাতারগুল জলাবনে। আপনারা পানিতে ভাসতে ভাসতে দেখতে পাবেন গাছগাছালির অপূর্ব সৌন্দর্য। ভাগ্য ভালো থাকলে পাখির ওড়াউড়ি আর মাছের লাফালাফিও দেখতে পাবেন।’ ভরাট কণ্ঠে একনাগাড়ে প্রতিদিন পর্যটকদের উদ্দেশে এভাবে বলতে থাকেন মাঝি মো. সিফত উল্লাহ।
মিঠাপানির জলাবন রাতারগুলে পর্যটকদের আনা-নেওয়া করেন সিফত উল্লাহ। এখানকার আরও অনেক মাঝির মতোই পঞ্চাশ পেরোনো সিফত নৌকায় করে পর্যটকদের বনের ভেতরে নিয়ে যান আর চারপাশ ঘুরিয়ে দেখান। আর এ সময়েই তাঁর ভরাট কণ্ঠের এ বার্তা শুনতে পান পর্যটকেরা। পানিতে ভাসতে থাকা হিজল, করচ আর মূর্তাগাছের সবুজ স্নিগ্ধতার সঙ্গে তিনি পর্যটকদের পরিচয় করিয়ে দেন। ফাঁকে ফাঁকে গজলও গেয়ে শোনান।
রাতারগুল বন ভ্রমণপিপাসুদের হাতছানি দেয়