অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার পেছনে দেশি-বিদেশি শক্তির ইন্ধন ছিল না। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আজ রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ জেরার জবাবে এ কথা বলেন।

এই মামলার পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো.

আমির হোসেন জেরা করেন নাহিদ ইসলামকে। জেরার জবাবে ট্রাইব্যুনালে নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশি-বিদেশি শক্তির ইন্ধন ছিল বিধায় তাঁরা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, এ কথা সত্য নয়।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ রোববার শেষ হয়েছে।

শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলার বাকি দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে এই মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

জেরার জবাবে ট্রাইব্যুনালে নাহিদ ইসলাম বলেন, এটা সত্য নয় যে ৩ আগস্ট সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি তাঁদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার ফলশ্রুতি। এও সত্য নয় যে তাঁদের আন্দোলনের পেছনে দেশি-বিদেশি শক্তির হাত ছিল। দেশি-বিদেশি শক্তির ইন্ধন ছিল বিধায় তাঁরা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, এ কথাও সত্য নয়।

এ সময় প্রসিকিউশনের (রাষ্ট্রপক্ষ) পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, সরকার পরিবর্তনকে কোনো চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, এর সঙ্গে এটা প্রাসঙ্গিক।

পরে জেরার জবাবে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘এটা সত্য নয় যে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেন নাই। এটাও সত্য নয় যে শেখ হাসিনা বাধ্য হয়ে ভারতে চলে যান নাই।’

আরও পড়ুন৪ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসকে নতুন সরকারের প্রধান হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়: নাহিদ ইসলাম১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এর আগে জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে তাঁরা নতুন সরকার গঠনের জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগেই তাঁরা তাঁকে নতুন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব পালনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে যান। গত বছরের ৮ আগস্ট ফ্রান্স থেকে দেশে ফেরেন শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। সেদিনই তাঁর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র প রস ত ব দ ন হ দ ইসল ম আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

টাইমড আউট: বছর পেরিয়ে দিনটি ফিরে আসে…

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ‘টাইমড আউট’ হয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার অ‌্যাঞ্জেলো ম‌্যাথুজ। ক্রিকেট অভিধানে এই আউট ছিল লম্বা সময়। কিন্তু ব‌্যবহার করেননি কেউ। 

২০২৩ সালের আজকের দিন, অর্থ‌্যাৎ ৬ নভেম্বর দিল্লিতে বাংলাদেশ টাইমড আউট করেছিল ম‌্যাথুজকে। সেটি ছিল ওয়ানডে ক্রিকেটের ৪ হাজার ৬৯৫তম ম‌্যাচ। এর আগে কখনো টাইমড আউট ব‌্যবহার করেননি কোনো দল। বিশ্বকাপের মঞ্চে দিল্লিতে যে আউট নিয়েছিলেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান। এরপর তো গোটা ক্রিকেট দুনিয়া তোলপাড় হয়েই গেল। 

নিরুত্তাপ ম্যাচে উত্তাপ ছড়ায় শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক ম্যাথুজের আউটকে কেন্দ্র করে। কোনো বল না খেলেই টাইমড আউট হয়েছেন তিনি। সাকিবের বলে সামারাবিক্রমা ৩টা ৪৯ মিনিটে আউট হয়েছিলেন। পরের ২ মিনিটে নতুন ব্যাটসম্যান ম্যাথুজকে পরের বল খেলতে হতো। কিন্তু হেলমেটের উটকো ঝামেলায় খেলতে পারেননি ম‌্যাথুজ। বাংলাদেশ সেই সুযোগটি নিয়ে ম্যাথুজের আউটের আবেদন করেন। তাতেই মেলে সাফল্য।

নিয়মের মধ‌্যে থাকায় সাকিবের আউটের সিদ্ধান্তের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন অনেকে। আবার ক্রিকেটীয় চেতনার কথা চিন্তা করে সাকিবের সিদ্ধান্তের বিপক্ষেও লোকের অভাব ছিল না। 

সেদিন যা হয়েছিল…

দিল্লির অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ৩৮তম ম্যাচ চলছিল বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার। সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে যাওয়া দুই দল কেবল লড়ছিল চ্যাম্পিয়নস ট্রফির টিকিট নিশ্চিতে। ম্যাচে কোনো বল না খেলেই টাইমড আউট হয়েছেন ম্যাথুজ। 

সাকিবের বলে সামারাবিক্রমা ৩টা ৪৯ মিনিটে আউট হয়েছিলেন। পরের ২ মিনিটে নতুন ব্যাটসম্যান ম্যাথুজকে পরের বল খেলতে হতো। কিন্তু হেলমেটের উটকো ঝামেলায় খেলতে পারেননি। বাংলাদেশ সেই সুযোগটি নিয়ে ম্যাথুজের আউটের আবেদন করেন। তাতেই মেলে সাফল্য।

ক্রিকেটীয় আইনে আম্পায়াররা ম্যাথুজকে আউট দিলেও, বাংলাদেশের আবেদন এবং আম্পায়ারের ভূমিকা নিয়ে প্রবল সমালোচনা হচ্ছে। কেননা ম্যাথুজ সময় মতোই ক্রিজে পৌঁছে গিয়েছিলেন। ব্যাটিংয়ের জন্য প্রস্তুতও ছিলেন। ক্রিজে প্রণাম করে বল খেলার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু মাথার হেলমেট ঠিক করতে গিয়ে স্ট্রিপে টান দিলে তা ছিঁড়ে যায়। ম্যাথুজ নতুন হেলমেট আনার জন্য ড্রেসিংরুমে ইঙ্গিত করেন।

বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব সময় নষ্টের জন্য ম্যাথুজের আউটের আবেদন করেন। পাশেই ছিলেন সহ-অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। শুরুতে আম্পায়ার ইরাসমাসের সঙ্গে সাকিবের আলোচনা দেখে মনে হচ্ছিল, টাইমড আউট নিয়ে দুজন কেবল কথা বলছেন। কিন্তু সাকিবের সিরিয়াস আবেদনে ইরাসমাস সঙ্গে থাকা আরেক আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওয়ার্থের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান। এ সময়ে বলও দিয়ে দেন আম্পায়ারকে।

তাতেই বোঝা যাচ্ছিল, ম্যাথুজের আউট নিয়ে বাংলাদেশ সিরিয়াস। নতুন হেলমেট নিয়ে ম্যাথুজ ব্যাটিংয়ের জন্য প্রস্তুত হলেও আম্পায়ার তাকে আউটের সিদ্ধান্ত জানান। তখন ম্যাথুজ বাংলাদেশের অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান। নিজের প্রতিক্রিয়াও দেখান। কিন্তু সাকিব হাসি দিয়ে তাকে ক্রিকেটের নিয়মের কথা মনে করিয়ে দেন। তাদের আলোচনায় বোঝা যাচ্ছিল, হেলমেটের স্ট্রিপ ছিঁড়ে যাওয়ার দুর্ঘটনার কথাই বলা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ নিজেদের আবেদনে ছিল স্থির। ক্রিকেটের নিয়মে এই আউট থাকায় ম্যাথুজ টাইমড আউট হন।

টাইমড আউট নিয়ে এমসিসি’র আইন

‘‘উইকেটের পতন বা একজন ব্যাটসম্যান রিটায়ার্ড হওয়ার পর, নতুন ব্যাটসম্যানকে, সময় না বলা পর্যন্ত, বল খেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বা অন্য ব্যাটসম্যানকে আউট হওয়ার ২ মিনিটের মধ্যে পরবর্তী বল গ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এই প্রয়োজনীয়তা পূরণ না হলে, নতুন ব্যাটসম্যান আউট হবেন, টাইমড আউট।’’

ম‌্যাথুজের কড়া সমালোচনা…

‘‘আজকের (গতকাল) দিন পর্যন্ত তার (সাকিব) ও বাংলাদেশ দলের জন্য আমার সর্বোচ্চ সম্মানটাই ছিল। আমরা সবাই জেতার জন্যই খেলি এবং সেটা নিয়মের ভেতরে থেকেই জেতার চেষ্টা করি। কিন্তু আজ (গতকাল) আমার ঘটনায় নিয়মই বলছে, আমি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই (ক্রিজে) ছিলাম। আমাদের কাছে ভিডিও আছে। আমরা এ নিয়ে পরে বিবৃতি দেব। ভিডিও থেকে ফুটেজের প্রমাণও আছে। আমি এখানে শুধু কথার কথা বলছি না, প্রমাণ নিয়েই বলছি।’’

‘আমি ভুল কিছু করিনি। নিজেকে তৈরি করে ক্রিজে যাওয়ার জন্য আমার হাতে ২ মিনিট সময় ছিল এবং সেটা আমি করেছি। আমার (হেলমেট) সরঞ্জামে সমস্যা হয়েছিল। আমি জানি না কাণ্ডজ্ঞান কোথায় হারাল। অবশ্যই সাকিব ও বাংলাদেশের জন্য এটা লজ্জাজনক। যদি ওরা এভাবেই খেলতে চায় এবং এত নিচে নামে, আমার মনে হয় ওদের কোথাও একটা বড়সড় ঝামেলা আছে।’

‘‘হেলমেটটা ভেঙে যাওয়ার পরও হাতে ৫ সেকেণ্ডের মতো সময় ছিল। আমি বোঝাতে চাইছি, আমি শুধু হেলমেটটা পাল্টাতে চাইছিলাম। তাই এটা একদমই কাণ্ডজ্ঞানের (কমন সেন্স) ব্যাপার। আমি মানকাডিং কিংবা অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড নিয়ে কথা বলছি না। এটা একদমই কাণ্ডজ্ঞানের ব্যাপার, যেটার অনুপস্থিতি খেলাটায় অসম্মান বয়ে এনেছে। এটা ভীষণ লজ্জার।’’

সাকিব কী জবাব দিয়েছিলেন?

‘‘আমার মনে হয়েছে আমি যুদ্ধে ছিলাম, আমার যেটাই করার দরকার ছিল, সেটা করেছি। কোনো দুঃখ প্রকাশ নেই। আইসিসির উচিত আইনটা দেখা এবং নিয়ম পরিবর্তন করা (যদি ক্রিকেটের স্পিরিট ভঙ্গ হয়)।’’

‘‘অ্যাঞ্জেলোকে আমি লম্বা সময় ধরে চিনি সেই ২০০৬ থেকে। দূর্ভাগ্যজনক। কিন্তু আইনেই এটা আছে। আমি সতর্ক থাকবো যেন এটা আমার সঙ্গে না হয়।’’ 

‘‘আমরা দুজন দুজনের সঙ্গে ২০০৬ সাল থেকে খেলছি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও প্রচুর খেলেছি। আমি তাকে খুব ভালোভাবে চিনি। সেও আমাকে খুব ভালোভাবে চেনে। সে আমাকে এসে জিজ্ঞেস করেছিল, আমি আবেদন তুলে নেব কিনা? আমি জানিয়েছি, ‘‘আমি তোমার পরিস্থিতি বুঝতে পারছি। এটা আনফরচুনেট। কিন্তু আমি চাই না।’’

কে পক্ষে ছিলেন, কে বিপক্ষে?

ওয়াসিম আকরাম বলেছিলেন, ‘‘এ নিয়ে হয়তো বিতর্ক চলতেই থাকবে। (টাইমড আউটের) সময় পার হয়ে গেছে কি যায়নি, এর সঠিক উত্তরও হয়তো পাওয়া যাবে না। কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো সাকিবের এই আবেদন কি তুলে নেওয়া উচিত ছিল নাকি সাকিবের আবেদন করাই ঠিক হয়নি? আমি অধিনায়ক হলে আমার মাথায় এ ধরনের চিন্তা আসতই না।’’

হার্শা ভোগলে বলেছিলেন, ‘‘ক্রিকেটীয় চেতনার বিষয়টি ছেড়ে দিন। এটি একটি দুর্বল যুক্তি। যারা অজ্ঞ বা ভুল করে, তারা প্রায়ই এই যুক্তি তুলে ধরে। আইন আছে মানে, আপনি আইনের মধ্যে থেকেই খেলছেন। ম্যাথুজ ও শ্রীলঙ্কার সমর্থকেরা হতাশ কিংবা ক্ষুব্ধ হতে পারেন। কিন্তু খেলার নিয়ম অনুযায়ী তিনি আউট ছিলেন।’’

মার্ক ওয়াহ বলেছিলেন, ‘‘ক্রিকেটের আইন ও চেতনা ভুলে যান। একজন ন্যায্য মনের ক্রিকেটার কীভাবে এই আউটের জন্য আবেদন করার কথা ভাবতে পারেন, আউটটি তো পরের ব্যাপার।’’

ওয়াকার ইউনিস বলেছিলেন, ‘‘এটা ক্রিকেটের জন্য ভালো কিছু নয়। এটা ক্রিকেটীয় চেতনার পরিপন্থী।’’

ডেল স্টেইন, ‘‘এটা ভালো কিছু হলো না।’’

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ