দিনাজপুরের বীরগঞ্জে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী ‘আদিবাসী মিলন মেলা’ বা ‘জীবনসঙ্গী খোঁজার মেলা’।

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) বিকাল তিনটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে এই মিলন মেলার আয়োজন করা হয়।

প্রতিবছর দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর পরদিন আদিবাসীদের এই মিলন মেলার আয়োজন করা হয়। আদিবাসী তরুণ-তরুণীরা নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরার পাশাপাশি একে অপরকে পছন্দ করে বিবাহের প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ পান বলেই মেলাটি সমাজে ‘জীবনসঙ্গী খোঁজার মেলা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

মেলায় ঐতিহ্যবাহী বাঁশের বাঁশি, ঢোল, মাদলসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সুরে পরিবেশ মুখরিত হয়ে ওঠে। আদিবাসী যুবক-যুবতীদের নাচগানে মাতোয়ারা হন দর্শনার্থীরাও। পাশাপাশি হস্তশিল্প, খেলনা ও খাদ্যপণ্যের দোকান মেলাকে আরো রঙিন করে তোলে।

এদিন আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজারো আদিবাসী নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে মেলাটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। তারা নিজেদের ঐতিহাসিক নৃত্য, গান ও বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে সংস্কৃতি তুলে ধরেন। মাঠজুড়ে বসে যায় পোশাক, খেলনা, খাবার এবং হস্তশিল্পের পসরা।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সম্মতির আহ্বায়ক জোসেফ হেমব্রম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু।

দিনাজপুর কাঞ্চনপুর গ্রামের তরুণী মেরিনা টুডু বলেন, “এই মেলায় এসে আমরা আমাদের নাচ-গান পরিবেশন করতে পারি, যা আমাদের সংস্কৃতির প্রাণ। একই সঙ্গে নতুন বন্ধু পাওয়া যায়, কেউ কেউ জীবনসঙ্গীও খুঁজে নেয়। এজন্য আমাদের সমাজে এই মেলা গুরুত্বপূর্ণ।”

নবাবগঞ্জের যুবক মার্কিন হেমব্রম বলেন, “আমরা সারা বছর কঠোর পরিশ্রম করি। এই মেলাই আমাদের আনন্দের সবচেয়ে বড় উপলক্ষ। এখানে এসে আমরা শুধু আনন্দই করি না, বরং আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্য অন্যদের কাছে তুলে ধরতে পারি।”

দিনাজপুর সদরের সুনীতা মুর্মু বলেন, “আমি চাই আমাদের ছেলে-মেয়েরা এই মেলার মাধ্যমে নিজেদের সংস্কৃতির সাথে যুক্ত থাকুক। এখনো আমাদের সমাজে এই মিলন মেলা পারিবারিক বন্ধন ও বিবাহের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।”

বীরগঞ্জের আদিবাসী প্রবীণ নেতা রবার্ট বাস্কে বলেন, “আমাদের সময়েও এই মেলা ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব। তখনও তরুণ-তরুণীরা এখানে পরিচিত হতো, বিয়ের সিদ্ধান্ত নিত। আজও সেই ধারাবাহিকতা বজায় আছে দেখে আমরা গর্বিত।”

বোচাগঞ্জ থেকে আসা আদিবাসী তরুণী এলিনা সরেন বলেন, “এই মেলায় আসা মানেই আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সাথে দেখা করা। একই সঙ্গে নাচ, গান আর আনন্দে ভরপুর সময় কাটানো। আমি চাই এই মেলা আরো বড় আকারে অনুষ্ঠিত হোক।”

প্রধান অতিথি মনজুরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, “আদিবাসী সমাজের এই ঐতিহ্যবাহী মিলন মেলা শুধু বিনোদন নয়, বরং সংস্কৃতি সংরক্ষণের একটি জীবন্ত মাধ্যম। এখানে তরুণ-তরুণীরা নিজেদের সংস্কৃতির শিকড়ের সাথে পরিচিত হয়। একই সঙ্গে পারস্পরিক পরিচয় ও বিবাহবন্ধনের সুযোগ তৈরি হয়। আমি চাই এই মেলা ভবিষ্যতেও একইভাবে অনুষ্ঠিত হোক এবং সরকারসহ সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে সহযোগিতা বাড়ানো হোক।”

তিনি আরো বলেন, “এ ধরনের আয়োজন আদিবাসী সমাজকে একত্রিত করে এবং নতুন প্রজন্মকে নিজেদের ঐতিহ্য লালন করতে উৎসাহিত করে।”

মেলায় দিনাজপুর জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পুলিশ প্রশাসন বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়।

ঢাকা/মোসলেম/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ষ ঠ ত হ জ বনসঙ গ আম দ র স এই ম ল উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

দাপুটে জয়ে ক্যাম্প ন্যুতে বার্সেলোনার প্রত্যাবর্তন

ফেরান তোরেসের দুর্দান্ত জোড়া গোল আর শুরুর দিকেই রবার্ট লেভানদোভস্কির আঘাত; সব মিলিয়ে দুই বছর পর ন্যু ক্যাম্পে ফিরে এসে একেবারে রাজকীয় ভঙ্গিতেই নিজেদের উপস্থিতি জানান দিল বার্সেলোনা। ১০ জনের বিলবাওকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে লা লিগায় টানা তিন জয়ের আনন্দে ভাসল কাতালানরা।

নবায়ন কাজের কারণে দীর্ঘ বিরতির পর ন্যু ক্যাম্পে এটি ছিল বার্সার প্রথম ম্যাচ। শুরুতেই যেন সেই অপেক্ষার সব ক্ষত মুছে দিলেন লেভানদোভস্কি। ম্যাচের মাত্র চার মিনিটে প্রতিপক্ষের বক্সের বাইরে বল কাড়ার পর নিচু শটে উনাই সিমোনকে পরাস্ত করেন তিনি।

আরো পড়ুন:

দ্রুততম ৪৪ গোলে রোনালদোর রেকর্ড ভাঙলেন এমবাপ্পে

মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে বার্সেলোনাকে হারাল রিয়াল

এরপর দানি ওলমোর প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেয় বিলবাওয়ের রক্ষণ দেয়াল। লামিন ইয়ামালের শটও রুখে দেন সিমোন। অন্যদিকে আক্রমণে উঠেও সুযোগ নষ্ট করেন উনাই গোমেজ ও নিকো উইলিয়ামস। আয়েরিক লাপোর্তের হেডও পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়।

এরপর ফেরান তোরেস ও ফিরমিন লোপেজও গোলের খোঁজে সক্রিয় হন। গার্সিয়া চোট কাটিয়ে একাদশে ফিরেই বিলবাওয়ের নিশ্চিত গোল ঠেকান।

হাফটাইমের ঠিক আগে ইয়ামালের দারুণ বাঁকানো পাসে সুযোগ পান তোরেস। নিচু শটে সিমোনকে পরাস্ত করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন তিনি। সিমোন ছুঁয়ে দিলেও গোল ঠেকাতে পারেননি।

বিরতির পর মাত্র তিন মিনিটের মাথায় লোপেজ দারুণ এক প্রচেষ্টায় সোজা শটে তৃতীয় গোলটি করেন। ৫৪ মিনিটে লোপেজের ওপর বিপজ্জনক ট্যাকল করে ওইহান সানসেট লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে বিলবাওয়ের দুর্ভাগ্য আরও ঘনীভূত হয়।

এরপর ডানি ভিভিয়ান হুমকি তৈরি করলেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। পাল্টা আক্রমণে ওলমোর শটও অল্পের জন্য বাইরে যায়। ভিভিয়ান পরে আরেকবার হেডে গোল করতে উদ্যত হয়েছিলেন, তবে গার্সিয়ার গ্লাভসে আটকে যায় বল।

অবশেষে ৯০ মিনিটে ইয়ামালের সূক্ষ্ম পাস ধরে ঠান্ডা মাথার ফিনিশিংয়ে ম্যাচের শেষ শব্দটি লিখে দেন ফেরান তোরেস।

দুই বছর পর ঘরের মাঠে ফিরল বার্সেলোনা। আর তোরেস-ইয়ামালরা যেন সেই আনন্দকে ফুটিয়ে তুললেন মাঠজুড়ে গোলের আতশবাজিতেই।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ