আইফোনের ব্যাটারির চার্জ দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক ব্যবহারকারী। আইফোনে কাজ না করলেও ব্যাটারির চার্জ হঠাৎ শেষ হয়ে যাওয়ার অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ। ব্যবহারকারীদের দাবি, আইফোনের ব্যাটারি চার্জ দ্রুত শেষ হওয়ার পেছনে গুগলের ক্রোম ব্রাউজার অ্যাপ দায়ী। অ্যাপটি ব্যবহারের সময় তো বটেই, এমনকি ব্যবহার না করলেও গোপনে ব্যাটারি খরচ করছে। এর ফলে অনেকেই অ্যাপটি মুছে ফেলে বিকল্প ব্রাউজারের দিকে ঝুঁকছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রেডিট ও গুগল ক্রোমের সহায়তা ফোরামে অসংখ্য আইফোন ব্যবহারকারী অভিযোগ করে লিখেছেন, ক্রোম ব্রাউজার অ্যাপ ব্যবহার করার সময় ব্যাটারি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক দ্রুত শেষ হয়ে যায়। এমনকি ব্যবহার না করলেও ব্রাউজারটি পটভূমিতে (ব্যাকগ্রাউন্ডে) সক্রিয় থেকে ব্যাটারি খরচ করে। এ বিষয়ে একজন লিখেছেন, ‘ক্রোম চালু থাকলে প্রতি মিনিটে ব্যাটারির চার্জ ১ শতাংশ করে কমে।’ অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে ক্রোম একাই আইফোনের প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যাটারি খরচ করেছে।’

প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট স্ল্যাশ গিয়ারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রোম ব্রাউজার মূলত অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের জন্য তৈরি হওয়ায় এটি আইওএসে ততটা কার্যকর নয়। ফলে অ্যাপলের তৈরি বিভিন্ন যন্ত্রে ক্রোম অ্যাপ প্রায়ই অতিরিক্ত ব্যাটারি খরচ করে ফেলে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রোম ব্রাউজারের ক্রমাগত সিঙ্কিং প্রক্রিয়ার কারণেই ব্যাটারির চার্জ বেশি খরচ হয়। গুগল অ্যাকাউন্টের বুকমার্ক, ট্যাব ও ব্রাউজিং হিস্ট্রি সব সময় আপডেট রাখতে গিয়ে অ্যাপটি পটভূমিতে সব সময় কাজ করে এবং এতে অপ্রয়োজনীয়ভাবে ব্যাটারি খরচ হয়। এমনকি ব্যবহারকারী ব্রাউজ না করলেও এই প্রক্রিয়া চালু থাকে। ফলে ব্যাটারির ওপর বাড়তি চাপ পড়ে।

আরও পড়ুনআইফোনের ব্যাটারির স্থায়িত্ব দ্বিগুণ করতে অ্যাপলের ৩ পরামর্শ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

প্রসঙ্গত, আইওএস প্ল্যাটফর্মে তৃতীয় পক্ষের কোনো ব্রাউজারকে নিজস্ব ইঞ্জিন ব্যবহার করার অনুমতি দেয় না অ্যাপল। ফলে ক্রোম বা ফায়ারফক্সের মতো অ্যাপগুলো বাধ্য হয়ে অ্যাপলের ওয়েবকিট ইঞ্জিন ব্যবহার করে, যা তাদের কার্যকারিতা সীমিত করে দেয়। অন্যদিকে অ্যাপলের নিজস্ব ব্রাউজার সাফারি আইফোনের হার্ডওয়্যারের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে মানানসই হওয়ায় ব্যাটারি সাশ্রয়ে এটি অনেক বেশি কার্যকর।

সূত্র: ইকোনমিক টাইমস

আরও পড়ুনআইফোনে মুছে ফেলা অ্যাপ দেখা যাচ্ছে, কারণ কী০২ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইফ ন র ব য ট র অ য পল র ব যবহ র খরচ কর করল ও

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীরের কান্না ও একজন বাবার আত্মাহুতির গল্প

১৫ নভেম্বরের কথা, শ্রীনগরে বিলাল আহমেদ বিলালের বাড়িতে অভিযান চালায় জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। তারা তুলে নিয়ে যায় বিলালের ছেলে জাসির বিলাল ও ভাই নবীল আহমদকে। দিল্লিতে সাম্প্রতিক বোমা বিস্ফোরণে ১৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনার সঙ্গে কয়েকজন কাশ্মীরির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কাশ্মীরে ধারাবাহিক অভিযান চলছে। তাদের গ্রেপ্তার সেই অভিযানেরই অংশ। পুলিশ কাশ্মীরজুড়ে প্রায় দেড় হাজার মানুষকে নির্বিচার আটক করেছে। যা উপত্যকাজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছে আতঙ্ক।

ছেলে ও ভাই আটক হওয়ার খবর শুনে ৫০ বছর বয়সী বিলাল থানায় যান; কিন্তু তাঁকে তাদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। এ ঘটনা তাঁকে ভীষণভাবে নাড়িয়ে দেয়। বাড়ি ফিরে তিনি প্রচণ্ড উদ্বেগে ভুগছিলেন। পরিবার জানায়, তিনি ঠিকমতো হাঁটতেও পারছিলেন না। গত রোববার তিনি নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন। তাঁকে শ্রীনগরের শ্রী মহারাজা হরি সিং হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা সোমবার তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

বেশির ভাগ বিবরণ অনুযায়ী, বিলালের আত্মাহুতি ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে এ ধরনের প্রথম ঘটনা। তবে এ ঘটনা ভারতের জনমনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনি।

এর আগে দুঃশাসনের দমবন্ধ পরিবেশে নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে আত্মহুতি দিয়েছিলেন তিউনিসিয়ার বুয়াজিজি। বুয়াজিজির আত্মাহুতি দিয়েছিল আরব বসন্তের। বুয়াজিজির মতো বিলালও ফল বিক্রেতা ছিলেন। বুয়াজিজির মতো তিনিও এমন এক দমবন্ধ শাসনে বাস করতেন। বুয়াজিজির মতোই ধারাবাহিক অবমাননা ও নির্যাতনের পর বিলালও চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। তবে তিউনিসিয়ায় বুয়াজিজির আত্মাহুতি যেখানে আরব বসন্তের জন্ম দিয়েছিল, কাশ্মীরে বিলালের গল্প সেখানে প্রায় চাপা পড়ে গেছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে, বিশেষ করে ২০১৯ সালে দিল্লি কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অবসান ঘটানোর পর থেকে কাশ্মীরে কথা বলা, একত্র হওয়া বা বিতর্ক করার ক্ষমতাই যেন হারিয়ে গেছে। ভারত সরকার শুধু ‘উন্নয়ন’কে হাতিয়ার বানিয়ে রাজ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণই জোরদার করছে না, তারা জমির আইন পুনর্লিখন করছে, হাজার হাজার ভারতীয় সেটেলার আনছে, মানুষের জীবিকা নষ্ট করছে এবং রাজ্যের জনসংখ্যাগত কাঠামো বদলে ফেলছে। দিন দিন বাড়তে থাকা নজরদারির জালে মানুষ যে শ্বাসরুদ্ধ পরিবেশে বাস করছে, তা কল্পনাতীত।

কাশ্মীরি চিকিৎসকদের ‘হোয়াইট কলার টেরর মডিউল’-এর সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এতে করে হাসপাতালগুলোতে অভিযান চালানোকে ন্যায়সংগত দেখানো যায়, এমনকি চিকিৎসকদের দেওয়া সাক্ষ্য–প্রমাণকেও অগ্রাহ্য করা যায়। গবেষক-শিক্ষকেরা চাকরি হারাচ্ছেন বা হুমকির মুখে পড়ছেন; সাংবাদিকদের পুলিশ ডেকে পাঠিয়ে তাঁদের প্রতিবেদন ব্যাখ্যা করতে বলছে। বেতনের রসিদ দেখাতে বাধ্য করা হচ্ছে, এমনকি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রমাণ করতে বলা হচ্ছে।

গত ছয় বছরে ভারত নানা ঔপনিবেশিক কৌশল ব্যবহার করে কাশ্মীরের ওপর তার দখল আরও কঠোর করেছে। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক স্থবিরতা সৃষ্টি, জমি দখল এবং সমষ্টিগত শাস্তি দেওয়া।

ফসল তোলায় বাধা আর ‘উন্নয়ন’-এর নামে জমি বাজেয়াপ্ত হওয়ায় আপেলচাষিদের জীবিকা তলানিতে ঠেকেছে। এসব পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে ভয় ও অনিশ্চয়তার মানচিত্রে পরিণত করেছে। ভয় ও অনিশ্চয়তার উদ্দেশ্য কাশ্মীরিদের রাজনৈতিক শক্তিকে দুর্বল করা এবং অঞ্চলটিকে ভারতের শর্তে পুনর্গঠিত করা।

বিলাল বুঝেছিলেন, তাঁর ছেলে ও ভাই ভারতের কারাগারের অন্ধকার গহ্বরে হারিয়ে যেতে পারেন। সেখানে ন্যায়বিচার নেই, নেই সুষ্ঠু বিচারপ্রক্রিয়ার নিশ্চয়তা। হাজার হাজার কাশ্মীরিকে ভিত্তিহীন অভিযোগে আটক করে রেখেছে ভারত। তাঁদের মধ্যে আছেন সাংবাদিক ইরফান মেহরাজ, যিনি আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে বন্দি; আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকারকর্মী খুররম পারভেজ, চার বছর ধরে আটক; আরও আছেন গবেষক শফাত বিলাল এবং আইনজীবী মিয়ান আবদুল কাইয়ুম, যাদের কারাবাস সাত মাস ও দেড় বছর ছাড়িয়েছে।

রাষ্ট্র যাদের বিদ্রোহীদের পরিবার বা সন্দেহভাজন বলে মনে করে, তাদের পরিবারগুলোকে নিয়মিত অপমানিত করা হয়, তাদের বাড়িঘর ভেঙে ফেলা হয়। লিগ্যাল ফোরাম ফর কাশ্মীর (এলএফকে)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতীয় বাহিনী কমপক্ষে ১ হাজার ১৭২টি বেসামরিক বাড়ি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছে। চলতি বছরের শুরুতে পেহেলগামে ভারতীয় পর্যটকদের ওপর হামলার পর, সন্দেহভাজন বিদ্রোহীদের পরিবারের অন্তত ১০টি বাড়ি ধ্বংস করা হয়।

পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট (পিএসএ) এবং আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্টের (এএফএসপিএ) মাধ্যমে কাশ্মীরে আইনের শাসনহীনতার মাত্রা এত গভীর যে দায়মুক্তিই সেখানে একমাত্র স্থায়ী নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এখন আবার চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ‘জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ করার অভিযোগ তুলছে ভারত সরকার। এর মাধ্যমে ভারত সরকার মূলত ডানপন্থীরা বহু বছরের বয়ান, তথাকথিত ‘হোয়াইট কলার সন্ত্রাসী’ আতঙ্ক সামনে নিয়ে আসছে। এতে বোঝানো হচ্ছে, গরিব শ্রমজীবী পাথর নিক্ষেপকারী থেকে শুরু করে পেশাদার চিকিৎসক, লেখক, গবেষক—পুরো সমাজই নাকি ভারত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সহিংসতার পরিকল্পনা করছে।

কাশ্মীরি চিকিৎসকদের ‘হোয়াইট কলার টেরর মডিউল’-এর সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এতে করে হাসপাতালগুলোতে অভিযান চালানোকে ন্যায়সংগত দেখানো যায়, এমনকি চিকিৎসকদের দেওয়া সাক্ষ্য–প্রমাণকেও অগ্রাহ্য করা যায়। গবেষক-শিক্ষকেরা চাকরি হারাচ্ছেন বা হুমকির মুখে পড়ছেন; সাংবাদিকদের পুলিশ ডেকে পাঠিয়ে তাঁদের প্রতিবেদন ব্যাখ্যা করতে বলছে। বেতনের রসিদ দেখাতে বাধ্য করা হচ্ছে, এমনকি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রমাণ করতে বলা হচ্ছে।

অন্যদের ভ্রমণ স্বাধীনতা বজায় রাখতে বন্ডে সই করতে বাধ্য করা হচ্ছে। বিদেশে থাকা কাশ্মীরিরা যদি রাষ্ট্রীয় বয়ান অমান্য করেন, কাশ্মীরে থাকা তাঁদের পরিবারকে উদ্বেগজনক বার্তা পাঠানো হচ্ছে।

তাঁদের সতর্ক করা হচ্ছে, যেন তাঁরা কোনোভাবেই ‘জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে’ কোনো লেখা বা কনটেন্ট তৈরি না করে। আর অবাধ্যতার মূল্য যে কত কঠিন, তা স্পষ্টভাবে দেখা যায় সেসব কাশ্মীরি সাংবাদিকদের মধ্যে, যাঁরা আর লিখতে পারেন না বা যাঁদের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

বিলাল আগুন ধরানোর মুহূর্তে ঠিক কী ভাবছিলেন, তা কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে না পারলেও যে পরিস্থিতি তাঁকে এই হতাশার দিকে ঠেলে দিয়েছে, তা স্পষ্ট।

কাশ্মীরে বিলালের মৃত্যু কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি সেই বাস্তবতার ফল, যা ভারত তৈরি করেছে। ওটা এমন এক জগৎ, যেখানে ন্যায়বিচারের ক্ষীণতম আশা থেকেও হতাশা অনেক বেশি।

আজাদ ঈসা, সাংবাদিক ও বৈদেশিক নীতি, আরব সম্প্রদায়, ভারত ও হিন্দু জাতীয়তাবাদ বিশ্লেষক

• মিডিল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মামদানির হাত চাপড়ে, মজার ছলে ঘুষি দিয়ে কী বোঝালেন ট্রাম্প
  • কাশ্মীরের কান্না ও একজন বাবার আত্মাহুতির গল্প