কখনো শাবানার প্রেমিক, কখনো ভাই; ভিলেন থেকে নায়ক জসীম
Published: 8th, October 2025 GMT
খলনায়ক হিসেবেই যাত্রা শুরু। তারপর একসময় নায়ক হয়ে জয় করে নিলেন দর্শকের হৃদয়। ঢাকাই চলচ্চিত্রে যিনি একাধারে খলনায়ক ও নায়ক—দুই ভূমিকাতেই সমান উজ্জ্বল, তিনি চিত্রনায়ক জসীম। ১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর মাত্র ৪৮ বছর বয়সে চলে যান এই কিংবদন্তি অভিনেতা। আজ তাঁর প্রয়াণের ২৭ বছর পূর্ণ হলো। চলচ্চিত্র সমালোচকদের মতে, বাংলাদেশ আর বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যত দিন থাকবে, তত দিন এই বাংলার মানুষ চিত্রনায়ক জসীমকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। তাঁকে ভুলে যাওয়া কঠিন।
জসীম সাহেবের হাতে ফাইট শিখেছি
অল্পদিনের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের প্রিয় নায়ক হন তিনি। তিনি একমাত্র নায়ক, যিনি একাধারে ধুন্ধুমার অ্যাকশন দৃশ্য করে হাততালি কুড়িয়ে নিতেন, আবার নায়ক হয়ে দর্শকদের আবেগে জড়াতেন। তাঁর নীরব অশ্রুবিয়োগের অভিনয় ঢাকাই ছবির দর্শকের মনে গেঁথে আছে আজও।
মানুষটি গত শতকের সত্তর দশকে বর্তমান বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অ্যাকশন ধারার প্রবর্তক। ঢাকাই চলচ্চিত্রে ‘ফাইটিং গ্রুপ’-এর শুরুটা হয়েছিল জসীমের হাত ধরেই। আজকের অনেক ফাইট ডিরেক্টর ও স্টান্টম্যান ছিলেন তাঁর ছাত্র। যাঁরা এখনো চলচ্চিত্রে কাজ করেন, তাঁরা গর্বের সঙ্গে বলেন, ‘আমরা জসীম সাহেবের হাতে ফাইট শিখেছি।’
জসীমের আসল নাম ও চলচ্চিত্রযাত্রা
১৯৫০ সালের ১৪ আগস্ট ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বক্সনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। আসল নাম আবদুল খায়ের জসীম উদ্দিন। ছোটবেলা থেকেই দুঃসাহসী ছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেন ২ নম্বর সেক্টরে। যুদ্ধফেরত এই তরুণই পরবর্তীকালে ঢাকাই সিনেমায় আনলেন বীরত্ব, অ্যাকশন ও লড়াইয়ের নতুন ধারাবাহিকতা।
জসীম চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন ১৯৭২ সালে ‘দেবর’ ছবির মাধ্যমে। তবে আলোচনায় আসেন ১৯৭৩ সালে প্রয়াত জহিরুল হকের ‘রংবাজ’ চলচ্চিত্রে খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করে।
এ ছবির অ্যাকশন দৃশ্যগুলো করেছিল তাঁর নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা জ্যাম্বস ফাইটিং গ্রুপ। এই ছবির মাধ্যমেই ঢাকাই সিনেমার প্রযোজক-পরিচালকদের নজরে আসেন জসীম। মূল পরিচিতি পান দেওয়ান নজরুল পরিচালিত ‘দোস্ত দুশমন’ ছবিতে অভিনয় করে। এটি ছিল হিন্দি ‘শোলে’ ছবির রিমেক, যেখানে তিনি গব্বর সিংয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। সেই চরিত্রে এমন বাস্তবতা ও ভয় জড়িয়েছিলেন যে দর্শকেরা সিনেমা হলে ঢোকার সময় বলতেন, ‘আজ জসীমের মাইর খেতে যাচ্ছি।’
ভারতীয় অভিনেতা আমজাদ খান পর্যন্ত প্রশংসা করেছিলেন জসীমের অভিনয়ের। একসময় ‘আসামি হাজির’ ছবিতে ওয়াসিমের সঙ্গে তাঁর লড়াই দেখতে দর্শকেরা সিনেমা হলের দরজা ভেঙে ঢুকে পড়েছিলেন, এমন ঘটনাও ঘটেছিল।শাবানার সঙ্গে জসীমের জুটি ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মৌলভীবাজারের গ্রামটি ক্রমে হয়ে উঠছে ‘লতির গ্রাম’
সব সময়ই গ্রামে বিচ্ছিন্নভাবে কমবেশি ফসলটির চাষ হয়েছে। অন্য ফসলের পাশাপাশি দুই-তিন বিঘা জমিতে চাষ করেছেন কৃষক। এতে চাষিদের নিজেদের চাহিদা মিটেছে, উদ্বৃত্ত ফসল স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেছেন। তবে দুই-তিন বছর ধরে তা আর অল্প কিছু মানুষের চাষাবাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ক্রমে ফসলটি বাণিজ্যিক উৎপাদনের দিকে মোড় নিয়েছে। ভরা মৌসুমে গ্রামটিতে এখন প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে চাষ হচ্ছে লতি–কচুর।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর গ্রামের লতি–কচু এখন একটি সমৃদ্ধ ফসল। অনেকেরই বাড়তি আয়ের পথ তৈরি করে দিয়েছে ফসলটি। এই গ্রামের ‘লতি’ এখন শুধু স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করছে না, দেশের বিভিন্ন শহরেও সরবরাহ করা হচ্ছে।
গিয়াসনগর গ্রামের হাবিবুর রহমান নতুন জাতের কিছু পেলেই চাষ করেন। এ বছর তিনি নতুন করে যুক্ত হয়েছেন লতি–কচু চাষে। তিনি এ বছর ২১ শতাংশ জমিতে লতিরাজ বারি কচু-১ রোপণ করেছেন। অর্গানিক চাষাবাদের দিকেই তাঁর ঝোঁক। তিনি তাঁর কচুখেতে জৈব সার ব্যবহার করেছেন। রাসায়নিক সার ব্যবহার এড়িয়ে গেছেন। এতে তাঁর লতির উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে। এ নিয়ে অবশ্য তাঁর কোনো আফসোস নেই।
হাবিবুর জানান, ভাদ্র মাসে চারা রোপণ করেছেন। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে লতি তোলা শুরু করেছেন। ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি ধরে লতি বিক্রি করছেন। এখন লতির মৌসুম শেষের পথে। কিছুদিন পর লতির দাম আরও বাড়বে। এখন সপ্তাহে ৭০ থেকে ৭৫ কেজি লতি তুলতে পারছেন। কোনো রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভবিষ্যতে সপ্তাহে ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি লতি তুলতে পারবেন বলে আশা করছেন। তা ছাড়া লতি–কচুর চারা বিক্রি থেকেও তাঁর আয় হবে। এ পর্যন্ত তাঁর বিনিয়োগ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। তাঁর আশা, বালাইনাশক, শ্রমিক খরচসহ সব খরচ বাদ দিয়ে এই কচুর লতি বিক্রি করে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাভ হবে।
গ্রামের আবদুল আজিজ জানিয়েছেন, তিনি এ বছর ১ কিয়ার (৩০ শতাংশ=১ কিয়ার) জমিতে লতি–কচুর চাষ করেছেন। এবার আমন ধান কাটার পর আরও ১৫ শতাংশ জমিতে নতুন করে চারা লাগাবেন।
গ্রামের মিলন মিয়া ৪ কিয়ার, কাজিম মিয়া আড়াই কিয়ার, আফাই মিয়া ৪ কিয়ার জমিতে লতির চাষ করেছেন। তাঁদের মতো আরও অনেকে আছেন, যাঁরা লতি কচু চাষ করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
লতি–কচুর চাষি আমির হোসেন বলেন, ‘সিজনে (ভরা মৌসুমে) নিচে ১৫০ কিয়ার জমিতে লতার (লতি) চাষ অয় (হয়)। প্রতিদিন এক-দুই ট্রাক করে লতা (লতি) সিলেটে যায়। গ্রামে এখন লতা চাষে নতুন নতুন কৃষক বাড়ছে। এবার আরও নতুন খেত বাড়ব (চাষ হবে)।’
গিয়াসনগর গ্রামের ‘লতি’ এখন শুধু স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করছে না, দেশের বিভিন্ন শহরেও সরবরাহ করা হচ্ছে