যেভাবে হাতে হাতে পৌঁছে গেল রিদ্মিক কি-বোর্ড
Published: 9th, November 2025 GMT
২০১২ সাল। ঈদুল ফিতরের ছুটি চলছে। তখন আমি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ছুটিতে হাতে অনেক সময়, কিন্তু করার কিছু নেই। কম্পিউটারের সামনে বসে পর্দায় চোখ রেখে মনে হলো, এভাবে সময় নষ্ট না করে নতুন কিছু শেখা দরকার।
সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে জাভা প্রোগ্রামিং শেখানো হচ্ছিল। অনুশীলন শুরু করলাম। প্রতিদিন কম্পিউটার খুলে কোড লিখতাম, ছোট ছোট প্রোগ্রাম, অন্য ভাষায় করা কোড আবার জাভায় করা ইত্যাদি।
একদিন ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে একটি ওয়েবসাইট চোখে পড়ল। সেখানে যেকোনো ভাষার শব্দ টাইপ করলে ইউনিকোড, কোডপয়েন্ট, অন্যান্য ফরম্যাটসহ নানা আকারে দেখা যায়। এসব আমার কাছে একেবারেই নতুন। আগে ভাবতাম, বর্ণ মানে শুধুই বর্ণ। কিন্তু ওয়েবসাইটটি ঘাঁটাঘাঁটি করে বুঝতে পারলাম, প্রতিটি বর্ণের পেছনে লুকিয়ে আছে একটি কোড, একটি সংখ্যা।
প্রথমবার উপলব্ধি করলাম, ভাষা আর প্রযুক্তি একে অপর থেকে আলাদা নয়। যেখানে একটি বর্ণও কোডে রূপান্তরিত হয়, তারপর ফন্টের মাধ্যমে আবার চোখের সামনে ফিরে আসে।
সেখান থেকেই শুরু হলো ফোনেটিক কনভার্শনের জন্য কোড লেখা। বিষয়টা হলো কেউ যদি ইংরেজিতে ‘ami’ লেখেন, সেটা বাংলায় ‘আমি’ হয়ে যায়। প্রথম দিকে খুব সহজ কোড হলেও এরপর আসে যুক্তবর্ণ, রেফ, তিন বর্ণের যুক্তবর্ণ, র-এর সঙ্গে য-ফলা লেখার বিশেষ পদ্ধতি ছিল বেশ জটিল।
কখনো এক অক্ষর ঠিকভাবে পরিবর্তন হচ্ছিল না, কখনো পুরো শব্দ উল্টো দেখাচ্ছিল। কিন্তু প্রতিটি সমস্যার সমাধান মানে ছিল নতুন শেখা। ছোট ছোট সেই সাফল্যই আমাকে আরও গভীরে টেনে নিয়ে গেছে।
রিদ্মিক ল্যাবসে সহকর্মীদের সঙ্গে মো.শামীম হাসনাত
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ মিনারে প্রাথমিক শিক্ষকদের অবস্থান, ২ উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি
দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবিতে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এছাড়া, তাদের কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।
রবিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত শিক্ষক এলাকাভিত্তিক দলবদ্ধ হয়ে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। এসময় তাঁরা, 'শিক্ষকদের ওপর হামলা কেন, জবাব চাই জবাব চাই', 'শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি মেনে নাও নিতে হবে',' তুমি কে আমি কে শিক্ষক শিক্ষক' এমন স্লোগান দেন।
‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ এর সদস্য মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, “গতকাল আমাদের তিন দফা দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে শাহবাগে শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করছি। আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি চলবে। সরকারকে বলবো, শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি মেনে নেন।”
শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া শহীদ মিনারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে এসে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনকালে পুলিশ আক্রমণ চালিয়েছিল— এই কথা শুনে আমি ঠিক থাকতে পারিনি। কোনো সভ্য দেশে শিক্ষকদের উপর লাঠিচার্জ হয়নি। বিগত সময়ে আমি ৪০টি মামলার আসামি ছিলাম। এই হলো বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা।”
অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া বলেন, “১০ম গ্রেড একটা সামান্য দাবি, এই দাবিটাই পূরণ করতে পারেন না। শিক্ষকরা বিগত ১৭ বছরে অনেক হয়রানির শিকার হয়েছেন। আপনারা যারা উপদেষ্টা হয়েছেন তাদের চেনেই না অনেকে। কিন্তু আমাদের চেনে। টালবাহানা ছেড়ে দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি মেনে নেন। যদি না মানেন শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য জোট এই শিক্ষকদের দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছি। আমরা মাঠে আসার আগেই দাবি মেনে নেন।”
এর আগে বেতন গ্রেড বাড়ানোসহ তিন দফা দাবিতে শনিবার আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের মিছিল শাহবাগে গেলে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
শিক্ষকদের অভিযোগ, এ ঘটনায় অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন এবং কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। কর্মসূচি পালনে বাধা পেয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকরা আবার শহীদ মিনারে ফিরে গিয়ে সেখানে অবস্থান নেন। শনিবার সকাল থেকে তারা সেখানে অবস্থান করছিলেন। বিকেল ৪টার দিকে শিক্ষকরা মিছিল নিয়ে অগ্রসর হলে শাহবাগ থানার সামনে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পুলিশ বিনা উসকানিতে তাঁদের ওপর হামলা চালায় বলে দাবি করেন।
অন্যদিকে পুলিশ জানায়, শিক্ষকেরা বাধা উপেক্ষা করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে এগোতে চাইলে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ সদস্যরা পদক্ষেপ নেন। শিক্ষকদের হামলায় কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হন।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিনটি দাবি হলো- দশম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সমস্যার সমাধান এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি বাস্তবায়ন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৯টি। এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা তিন লাখ ৮৪ হাজারের বেশি। শিক্ষার্থী প্রায় এক কোটি।
ঢাকা/রায়হান/ইভা