আধা লিটার পানির দামে এক কেজি আলু, আলুচাষির কী হবে
Published: 9th, November 2025 GMT
আধা লিটার বোতলজাত পানির দামে আপনি এখন এক কেজি আলু পাবেন। আলুর দাম পড়ে গেছে। পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে বড় বিপণিবিতানগুলোয় ৫০০ মিলিলিটার বা আধা লিটারের যে পানির বোতল পাওয়া যায়, সেগুলোর দাম এখন ২০ টাকা। আর বাজারে খুচরা পর্যায়ে এক কেজি আলু বিক্রি হয় ১৮ থেকে ২০ টাকায়। অর্থাৎ আধা লিটার পানির দামেই পাওয়া যাচ্ছে এক কেজি আলু।
সাধারণত ‘পানির দামে’ বলতে খুব সস্তা দাম বা অত্যন্ত কম দাম বোঝায়। এখন এই রূপক অর্থই যেন সত্যি হলো। এতে আলুচাষিদের জন্য করুণ বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ অনেকটা ‘পানির দামেই’ আলু বিক্রি করছেন আলুচাষিরা।
শুধু আধা লিটারের পানির বোতলই নয়; বাজারে উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো সবজিও এত কম দামে কেনা যায় না। বর্তমানে সবচেয়ে সস্তা সবজির একটি হচ্ছে পেঁপে; সেটির কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। যেকোনো ধরনের এক আঁটি শাকের দামও ১৫ থেকে ২০ টাকা বা এর কাছাকাছি দামে বিক্রি হয়।
অথচ গত বছর অনেকটাই ভিন্ন চিত্র ছিল আলুর বাজারে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের এই সময়ে বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। এখন সেই দাম ১৮ থেকে ২০ টাকা। আর উৎপাদন এলাকায় খুচরা বাজারে ১৪ থেকে ১৫ টাকা দরেও আলু বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম দুই-তৃতীয়াংশ বা তিন গুণের বেশি কমে গেছে।
লোকসানে কৃষকেরাআলুর দাম কম থাকায় ক্রেতা, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষেরা খুশি। তবে কৃষকেরা লাভ করতে পারছেন না। আলুর এমন দরপতনে উৎপাদন খরচই উঠছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। এ ছাড়া লোকসানে পড়েছেন আলু ব্যবসার সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও।
সাধারণত দেখা যায়, যে বছর কৃষকেরা কোনো ফসল চাষ করে লোকসানে পড়েন, পরবর্তী বছর বা মৌসুমে ওই ফসল উৎপাদন কমিয়ে দেন তাঁরা। আগামী মৌসুমেও এমন পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
দেশে বছরে আলুর চাহিদা প্রায় ৯০ লাখ টন। সরকারি হিসাবে, গত অর্থবছর মোট ১ কোটি ২৯ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আলু উৎপাদিত হয়েছিল ১ কোটি ৬ লাখ টন। অর্থাৎ আলুর উৎপাদন বেড়েছে। মূলত গত দু-তিন বছরে বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় আলু চাষ করে লাভবান হয়েছিলেন কৃষকেরা। এতে তারা গত মৌসুমেও আলু চাষ বাড়িয়ে দেন। কিন্তু চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম পড়ে যায়।
দেশে আলুর উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয় মুন্সিগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী, নওগাঁ ও জয়পুরহাট জেলায়। প্রতিটি স্থানেই আলুচাষিরা এবার কম দাম পেয়েছেন। যেমন সর্বশেষ মৌসুমে মুন্সিগঞ্জে এক কেজি আলু উৎপাদন ও হিমাগারে সংরক্ষণে মোট খরচ হয়েছে ২৬ থেকে ২৮ টাকা। সেই আলু বিক্রি করে প্রতি কেজিতে তাঁদের হাতে থাকছে মাত্র ৫২ থেকে ৬৮ পয়সা। অনেক কৃষকের লোকসানও হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের হামিদপুর এলাকার কৃষক আহসান উল্লাহ সরকার প্রায় তিন দশক ধরে আলু চাষ করেন। গত মৌসুমে তিনি ১৩ একর জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন বলে জানান তিনি।
আহসান উল্লাহ সরকার বলেন, ‘সর্বশেষ মৌসুমে আলুর আবাদ করে লাখ টাকার বেশি লোকসান গুনতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সামনে আলুর আবাদ কিছুটা কমিয়ে ফেলার চিন্তা রয়েছে। আমার এলাকার অন্য যেসব কৃষক আলু চাষ করে লোকসানে পড়েছেন, তাঁরাও আলুর আবাদ কমিয়ে অন্য সবজি আবাদের চিন্তা করছেন।’
হিমাগারে আলু পড়ে আছেসাধারণত নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে বাজারে নতুন আলু আসতে শুরু করে। আর হিমাগার থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব পুরোনো আলু বের করে দেওয়া হয়। এরপর হিমাগারের রক্ষণাবেক্ষণকাজ শেষ করে ফেব্রুয়ারির শেষ দিক থেকে নতুন মৌসুমের আলু সংরক্ষণ শুরু হয়। কিন্তু এ বছর আলুর দাম কম থাকায় কৃষকেরা খুবই কম পরিমাণে আলু হিমাগার থেকে বের করছেন। অনেকে হিমাগারে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন। তাতে নভেম্বরের মধ্যে সব আলু হিমাগার থেকে খালাস না হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জের নিপ্পন কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম বলেন, হিমাগারে যাঁরা আলু রেখেছেন, তাদের অনেকের পুঁজি ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তাঁরা আলু খালাস না করলে চুক্তি অনুসারে এসব আলু হিমাগারের মালিকেরা বিক্রি করে হিমাগারের খরচ তুলবেন। কিন্তু বাজারে আলুর দাম তো কম। ফলে সব আলু বিক্রি করেও হিমাগারের ভাড়া তোলা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সব মিলিয়ে আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারের মালিক—সব পক্ষেরই লোকসানের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গত কয়েক মাসে এলাকাভেদে হিমাগারের গেটে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ১৩ থেকে ১৫ টাকায়। আলুর দাম কম থাকায় গত আগস্ট মাসে কৃষি মন্ত্রণালয় হিমাগারের গেটে ন্যূনতম ২২ টাকা কেজি দরে ৫০ হাজার টন আলু কেনার ঘোষণা দিয়েছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে এসব আলু কেনার কথা ছিল। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া এখনো চিঠিপত্র চালাচালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে আছে।
এ বিষয়ে টিসিবির মুখপাত্র ও উপপরিচালক শাহাদত হোসেন জানান, আলু কেনার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কোন পদ্ধতিতে আলু কেনা ও বিক্রি করা হবে তা নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে টিসিবির পত্রালাপ চলছে। এ আলোচনা শেষ পর্যায়ে আছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল র দ ম এক ক জ পর য য় আল চ ষ ২০ ট ক অর থ ৎ চ ষ কর ব যবস সরক র উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
আকবরের শেষ ওভারে ৫ ছক্কা, হংকংয়ের কাছে হার বাংলাদেশের
ম্যাচের শেষ ৩ বলে স্বাগতিক হংকংয়ের দরকার ছিল ১৭ রান। বাংলাদেশ অধিনায়ক আকবর আলীর তিনটি বলেই ছক্কা মেরে দিলেন আইজাজ খান। একই ওভারে আইজাজ ছক্কা মেরেছেন প্রথম দুই বলেও।
লাগাতার ছক্কা হজমের মধ্যেই আকবর দিয়েছেন দুটি ওয়াইড। সব মিলিয়ে ম্যাচের শেষ ওভারে ৫ ছক্কাসহ ৩২ রান হজম করে ম্যাচটা হেরে গেল বাংলাদেশ।
সিক্স–এ–সাইড টুর্নামেন্ট হংকং সিক্সেসে এটি ছিল প্লেট পর্বের ফাইনাল। কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যাওয়া চার দলের মধ্যকার স্থান নির্ধারণী এই ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে ১ উইকেটে।
হংকংয়ের মিশন রোড গ্রাউন্ডে টসে হারা বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করে ৬ ওভারে ৫ উইকেটে তোলে ১২০ রান।
অধিনায়ক আকবর ১৩ বলে উপহার দেন ৫১ রানের ঝোড়ো ইনিংস। ৭ ছক্কা ও ১ চারের ইনিসংটি শেষ হয় রানআউটে। অন্যদের মধ্যে আবু হায়দার ৮ বলে ৪ ছক্কা ও ১ চারে ২৮, জিশান আলম ৭ বলে ৩ ছক্কা ও ২ চারে ২৭ রান করেন।
রান তাড়ায় হংকংকে একাই টেনেছেন আইজাজ খান। শেষ ওভারে আকবরকে পাঁচ ছক্কা মারা এই ব্যাটসম্যান ২১ বলে ৮৫ রানে অপরাজিত থাকেন। ছক্কা মেরেছেন ১১টি, চার ৪টি।
১২ দলের টুর্নামেন্টে আজ মোট তিনটি ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গ্রুপ পর্বের খেলায় তৃতীয় হওয়া চার দল খেলেছে বোল পর্বে। আরব আমিরাত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভারতকে নিয়ে হওয়া এই পর্বে বোল ফাইনাল জিতেছে শ্রীলঙ্কা, রানার্সআপ সংযুক্ত আরব আমিরাত।
গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করেছে, কিন্তু সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি—এমন চার দল নিয়ে হয়েছে প্লেট পর্ব। এই অংশে বাংলাদেশ দল দক্ষিণ আফ্রিকাকে এবং হংকং আফগানিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ হয়েছে প্লেট রানার্সআপ।
আর পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও কুয়েতের মধ্যকার কাপ পর্বে ফাইনালে উঠেছে পাকিস্তান ও কুয়েত। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পাকিস্তানের ৩ উইকেটে ১৩৫ রান তাড়া করতে নেমে কুয়েত ৩.৩ ওভারে তুলতে পেরেছে ৩ উইকেটে ৬৬।