‘আবার এল যে সন্ধ্যা’—যে গানে লুকিয়ে আছে এক অসমাপ্ত জীবনের গল্প
Published: 12th, October 2025 GMT
রাতের আকাশে চাঁদ উঠেছিল ঠিকঠাক, অথচ কারও মনে ছিল না উচ্ছ্বাস। ১৯৮৭ সালের শীতের এক সন্ধ্যায় হঠাৎ থেমে যায় এক সুরের জীবন। মাত্র ২৭ বছর বয়সে শেষ হয় হ্যাপী আখান্দে্র সংগীতের ভ্রমণ।
‘আবার এল যে সন্ধ্যা’ গানের শুরুটা যেমন সৌন্দর্যে ভরা, তেমনি বিষণ্নও। বাংলা গানের ইতিহাসে এমন কিছু সুর আছে, যেগুলো একবার শুনলেই হৃদয়ে থেমে থাকে, কণ্ঠে লেগে যায়, সময়ের সঙ্গে মিশে অমর হয়ে যায়। ‘আবার এল যে সন্ধ্যা’ তেমনই এক গান। প্রজন্ম পেরিয়ে প্রজন্ম গেয়ে চলেছে। গানের মালিক কে, তা অনেকেই জানে না, কিন্তু সুরের মায়া কার হাতে জন্ম নিয়েছিল, সেই নাম আমাদের সংগীতজগতের অমূল্য সম্পদ—হ্যাপী আখান্দ্।
জিমি হেনড্রিক্স, কার্ট কোবেইন, ব্রায়ান জোন্স, জ্যানিস জপলিন, অমর সিং চমকিলাসহ ৭০ জনের বেশি সংগীতশিল্পী, অভিনয়শিল্পী ও কবির মতোই হ্যাপী ছিলেন এক ক্ষণজন্মা প্রতিভা। তাঁরা অপার সম্ভাবনা নিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন মাত্র ২৭ বছরে। এই গোষ্ঠীকে বলা হয় কিংবদন্তি ‘ক্লাব টোয়েন্টি সেভেন’। চাইলেই এই ক্লাবের সদস্য হওয়া যায় না; সেখানে পৌঁছাতে হয় মৃত্যুতে। হ্যাপী আখান্দ্ও যেন এই ক্লাবের এক অলিখিত সদস্য। উইকিপিডিয়ার তালিকায় তাঁর নাম নেই, কিন্তু শ্রোতাদের হৃদয়ের খাতায় তিনি অমর—বাংলা সংগীতের এক চিরসবুজ দীর্ঘশ্বাস।
পাতলা খান লেনের মিউজিক্যাল পরিবার
আজ ১২ অক্টোবর হ্যাপী আখান্দে্র জন্মদিন। আজ বেঁচে থাকলে ৬৫ পূর্ণ করতেন। ১৯৬০ সালের এই দিনে পুরান ঢাকার পাতলা খান লেনের আখান্দ্ পরিবারে জন্ম তাঁর। কেতাবি নাম জিয়া হাসান আখান্দ্। তাঁদের পূর্বপুরুষ ছিলেন পারসি, পদবি ছিল ‘আখান্দ্জাদে’। সংগীত তাঁদের ঘরে যেন বংশানুক্রমিক উত্তরাধিকার। বড় ভাই লাকী আখান্দ্ ছিলেন তাঁর শিক্ষক, বন্ধু ও পথপ্রদর্শক। হ্যাপীর জন্মের পরই লাকী তাঁর হাতে এক পয়সা গুঁজে দেন। কয়েক দিন পর হাসপাতাল থেকে ফেরার সময় সেই পয়সাটিই তাঁর মুঠোয় পাওয়া গিয়েছিল। যেন সুরের উত্তরাধিকার প্রতীকীভাবে হস্তান্তরিত হয় সেদিনই!
পুরোনো কাগজেও হ্যাপী আখান্দে্র তেমন কোনো সাক্ষাৎকার বা তাঁকে নিয়ে লেখা পাওয়া যায় না। যেটুকু তথ্য, তা লাকী আখান্দে্র সঙ্গে কথা বলেই জানা যায়। নিজের শেষ সময়ে আরমানিটোলার বাসায় অসুস্থ অবস্থায় দেয়ালে টাঙানো ছবির দিকে অপলক তাকিয়ে থেকে আদরের ছোট ভাইটির স্মৃতিচারণা করেন অগ্রজ। সেদিন তাঁর চোখে দেখেছিলাম হ্যাপীকে, তাঁর মুখে শুনেছিলাম হ্যাপীকে। বড় ভাই লাকী আখান্দে্র সঙ্গে তাঁর ছিল আত্মার সম্পর্ক। জীবনকালে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপচারিতায় লাকী আখান্দ্ বলেন, ‘বাবার কাছ থেকে যা জেনেছি, হ্যাপীকে শিখিয়েছি। হ্যাপীকে আমি অনেক দুঃখ দিয়েছি। তখন আমাদের অনেক অভাব ছিল, দুঃখ–যন্ত্রণা ছিল। তবে সংসারে যদি অভাব না থাকত, আমাদের ভেতরে যদি কষ্ট না থাকত, তাহলে আমাদের ভেতরে মিউজিক ঢুকত না।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কঠিন পথ মাড়িয়ে সাফল্যের খোঁজে বাংলাদেশ
কে বলবে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টি আজ, বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। কোনো হাক-ডাক নেই, কোনো উত্তেজনা নেই। অথচ সন্ধ্যা ৬টায় দুই দল মাঠে নামবে টি-টোয়েন্টি খেলতে।
টেস্ট সিরিজে আয়ারল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার পর টি-টোয়েন্টিতে ভালো করার প্রত্যাশা আকাশচুম্বি। সেই প্রত্যাশা হয়তো লিটন অ্যান্ড কোং পূরণ করতে পারবেন। তবে মাঠে নিজেদের সেরাটা দিয়েই সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। শক্তিমত্তা, পরিসংখ্যান বা অভিজ্ঞতা—সব দিক থেকেই এগিয়ে বাংলাদেশ। তবে টেস্টে যেভাবে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে সফরকারী দল, টি-টোয়েন্টিতে এত সহজে হাল ছাড়ার দল নয় তারা।
দুই বছর আগে চট্টগ্রামে দুই দলের সর্বশেষ দ্বিপক্ষীয় সিরিজটি বাংলাদেশ জিতলেও ছেড়ে কথা বলেনি আয়ারল্যান্ড। শেষ টি-টোয়েন্টিতে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন পল স্টার্লিংরা। দলটির একাধিক ক্রিকেটার এখন নিয়মিত বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে খেলেন। বাংলাদেশকে তাই সতর্ক থাকতেই হবে।
সঙ্গে চট্টগ্রামে সবশেষ সিরিজটি একটুও ভালো যায়নি বাংলাদেশের। একমাস আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে লিটনের দল। গত জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কা সফর থেকে শুরু করে আইরিশ সিরিজের আগ পর্যন্ত পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজের চারটি জিতেছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এটাই নিজেদের শেষ আন্তর্জাতিক সিরিজ। এরপর বিপিএল খেলবে। তবে প্রস্তুতির বড় সুযোগ এই সিরিজই। তাইতো অধিনায়ক লিটনের চাওয়া, ২২ গজে কঠিন সময় আসুক তাদের জন্য।
‘‘আমি চাই, আমাদের খেলোয়াড়েরা কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ুক। কিন্তু যে জিনিসটা হয়েছে, শেষ সিরিজে আমরা জিততে পারিনি। এবার চেষ্টা করব কঠিন সময় থেকে বের হয়ে যেন ম্যাচগুলো জিততে পারি।’’
দলীয় সাফল্যে বাংলাদেশ এই ফরম্যাটে এখন আত্মবিশ্বাসী তবে ভাবনা বাড়াচ্ছে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স। বিশেষ করে মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স বেশ ভোগাচ্ছে দলকে। এর মধ্যে শামীম হোসেন পাটোয়ারীকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়াতে দুই মেরুতে চলে গেছেন অধিনায়ক ও নির্বাচক। নতুন করে দলে যুক্ত করা হয়েছে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে। তার ওপর এখন রাজ্যের সব চাপ।
তবে লিটনের আশা দল ঘুরে দাঁড়াবে, ‘‘খুব একটা চিন্তিত না মিডল অর্ডার নিয়ে। অবশ্যই আমাদের খেলোয়াড়েরা শেষ দুয়েকটা সিরিজে আশানুরূপ পারফরম্যান্স করতে পারেনি। কিন্তু তারা সবাই প্রুভেন। আমি আশাবাদী, তারা এই সিরিজে ঘুরে দাঁড়াবে।’’
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ৮ ম্যাচ খেলে ৫টিতে জিতেছে বাংলাদেশ। নিজেদেরকে ফেভারিট মেনেই আজ বন্দরনগরীতে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামার অপেক্ষায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
ঢাকা/ইয়াসিন