মহড়াসহ সব প্রস্তুতি নেওয়া হলো, কিন্তু ‘দরিয়া–ই–নূর’ হীরার প্যাকেট খোলা হলো না
Published: 12th, October 2025 GMT
এবারও আটকে গেছে সোনালী ব্যাংকের ভল্টে থাকা ঢাকার নবাব পরিবারের ‘দরিয়া–ই–নূর’ হীরার প্যাকেট খোলার উদ্যোগ। হীরা যাচাইয়ে গঠিত কমিটির চলতি সপ্তাহে সোনালী ব্যাংকের ভল্ট পরিদর্শন করার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়েছে। তবে কী কারণে স্থগিত করা হলো, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কমিটির সদস্যরা। এতে হীরা থাকা না থাকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে সংশয় চলে আসছে, তা আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
ভূমি সংস্কার বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১১ অক্টোবর (রোববার) মন্ত্রিপরিষদ সচিব আব্দুর রশীদের নেতৃত্বে গঠিত একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটির সোনালী ব্যাংকের ভল্টে থাকা দারিয়া-ই-নূর পরিদর্শন এবং উন্মুক্তকরণে যাওয়ার কথা ছিল। তবে কোনো কারণ না জানিয়েই ৯ অক্টোবর এই কার্যক্রম স্থগিত করে ভূমি সংস্কার বোর্ড। কী কারণে স্থগিত করা হয়েছে জানতে চাইলে ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান এ জে এম সালাহউদ্দীন নাগরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারণ আমি ঠিক বলতে পারব না। এটা ওপর থেকে ডিসিশন (সিদ্ধান্ত) হয়েছে।’ কোনো আইনগত জটিলতা রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনগত কোনো জটিলতা নেই।
১১৭ বছর ধরে অন্ধকার কুঠুরিতে পড়ে আছে ঢাকার নবাব পরিবারের ১০৯ ধরনের রত্ন। ব্রিটিশ ভারতে যার মূল্য ধরা হয়েছিল ১০ লাখ ৯ হাজার ৮৩৫ টাকা। তবে ১৯০৮ সালের পর থেকে ‘কোহিনূর হীরার আত্মীয়’ হিসেবে খ্যাত দরিয়া-ই-নূর হীরার অবস্থান এক রহস্যের জালে বন্দী। সরকারি নথি অনুযায়ী, দরিয়া-ই-নূরের বর্তমান অবস্থান হওয়ার কথা সোনালী ব্যাংকের ভল্ট। তবে বাস্তবে এর অস্তিত্ব নিয়ে আছে ঘোর অনিশ্চয়তা। ভল্টে হীরা আছে কি না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা। হীরা পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারেনি সরকারের ভূমি সংস্কার বোর্ডও। এ নিয়ে চলতি বছরের ১২ মে একটি সংবাদ প্রকাশ করে প্রথম আলো। এরপর ২৬ মে দরিয়া-ই-নূরসহ নবাব পরিবারের মোট ১০৯ ধরনের রত্নালংকার উন্মুক্তকরণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে সভাপতি করে গঠিত কমিটির তথ্য জানিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন শাখা। কমিটির সদস্যসচিব করা হয় ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যানকে। কমিটির বাকি ৯ সদস্য হলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও একজন রত্নবিশেষজ্ঞ।
কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কমিটি ঢাকা নওয়াব এস্টেটের অস্থাবর সম্পত্তি দরিয়া-ই-নূরসহ ১০৯ ধরনের রত্নের তালিকা তৈরি করবে এবং সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত যত্নসহকারে রক্ষণাবেক্ষণের নির্দেশনা দেবে।
এরপর বেশ কয়েক মাস কমিটির কোনো কার্যক্রম না থাকলেও সম্প্রতি তারা দুটি বৈঠক করে। বৈঠকের পর কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, তারা প্যাকেটটি খুলে দেখবে এবং জাতির সামনে সত্য প্রকাশ করা হবে। ১১ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে হীরার প্যাকেট উন্মুক্ত করার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। রত্নবিশেষজ্ঞ হিসেবে ফাহাদ কামাল নামে একজনকে কমিটিতে যুক্ত করা হয়।
কমিটির একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, যেহেতু এটি স্পর্শকাতর এবং ঝুঁকিপূর্ণ প্রক্রিয়া, তাই ৫ অক্টোবর সোনালী ব্যাংকে ছয় সদস্যের একটি উপকমিটি মহড়া চালায়, যাতে মূল পরিদর্শনের সময় কোনো গাফিলতি না হয়। সূত্র আরও জানায়, পুরো প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য পুরো প্রক্রিয়াটি ক্যামেরায় রেকর্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে না। আর গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে শুধু বিটিভিকে রাখা হবে এবং অন্য গণমাধ্যমগুলোকে পরবর্তী সময়ে ব্রিফ করা হবে।
আরও পড়ুনঢাকার নবাবদের ‘দরিয়া-ই-নূর’ হীরা কি সোনালী ব্যাংকের ভল্টে আছে১২ মে ২০২৫তবে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হলেও গত বৃহস্পতিবার ভূমি সংস্কার বোর্ডের এক চিঠির মাধ্যমে হঠাৎ সেই কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, ‘আগামী ১১ অক্টোবর ২০২৫ খ্রি.
জানতে চাইলে ওই কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবের ওই দিন উপস্থিত থাকার কথা ছিল। তবে তাঁর হঠাৎ ব্যস্ততার কারণে ওই তারিখে কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে হীরা যাচাই কমিটির সভাপতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব আব্দুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কয়েকজন সদস্য ঢাকার বাইরে মিটিংয়ে গিয়েছিলেন বলে ওটা স্থগিত করা হয়েছে।’ দ্রুত পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আরও পড়ুন'দরিয়া-এ নূর' ও নবাব সলিমুল্লাহর দেনার দায়২৯ জানুয়ারি ২০১৮উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক কম ট র স উন ম ক ত সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার চট্টগ্রাম নগরের বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তির নাম ফরিদ আহমেদ (৩৯)। আজ সোমবার দুপুরে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহত ফরিদ নগরের বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা। ১৫ নভেম্বর তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। ডেঙ্গুর পাশাপাশি তাঁর শ্বাসকষ্ট ও কিডনি জটিলতাও ছিল। এ নিয়ে চট্টগ্রামে এ বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৫–এ। এর আগে গত শনিবার একই হাসপাতালে নাহিদা আক্তার (২৭) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। তিনি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৯ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন পুরুষ, ৪ জন শিশু ও ৫ জন নারী। এ নিয়ে পুরো বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৬০। নভেম্বরে ২৪ দিনে আক্রান্ত ৮৫৫ জন। এ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন পাঁচজন।