স্ত্রীর মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ডের আশায় দেড় বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে আট হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন এক অটোরিকশাচালক। দীর্ঘদিনেও কার্ড না হওয়ায় সেই টাকা ফেরত চাওয়ায় তাঁকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার সকালে আহত ভুক্তভোগী মো.

রশিদুল কাজী (৩৭) ওই ইউপির চেয়ারম্যান আল ইবাদত হোসেনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সয়ার ইউনিয়নের দামোদরপুর সরকারপাড়ার অটোরিকশাচালক মো. রশিদুল কাজী তাঁর স্ত্রী রাবেয়া বেগমের মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড করার জন্য দেড় বছর আগে ইউপি চেয়ারম্যান আল ইবাদত হোসেনকে আট হাজার টাকা দেন। তবে দীর্ঘদিনেও ভাতার কার্ড না করায় রশিদুল টাকা ফেরত চাইলে চেয়ারম্যান নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।

রশিদুল কাজীর অভিযোগ, গত মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে চেয়ারম্যান টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তাঁকে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে নেন। সেখানে উপস্থিত হলে চেয়ারম্যান আল ইবাদত হোসেন, আকবার হোসেন ও সাদেকুল মিলে ইউনিয়ন পরিষদের কক্ষে তাঁকে বেদম মারধর করেন। এ সময় ইউনিয়ন পরিষদের কিছু চৌকিদারও মারধরে অংশ নেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন তিনি।

ভুক্তভোগী রশিদুল কাজী বলেন, ‘আমি একজন অটোচালক। স্ত্রীর জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড করতে গেলে আট হাজার টাকা নেন চেয়ারম্যান। কিন্তু দীর্ঘদিনেও কার্ড করে দেননি। টাকা চাওয়ায় আমাকে মারধর করেছেন। প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আল ইবাদত হোসেন বলেন, ‘মঙ্গলবার ইউনিয়ন পরিষদের কোর্ট চলছিল, সেখানে হুট করে ঢুকে রশিদুল আমার চেয়ারের কাছে দাঁড়ায়। আমি তাকে পরে ডেকে নেব বলে বসতে বলি। এরপর সে উত্তেজিত হয়ে আমাকে গালিগালাজ করে। সহ্য করতে না পেরে একটা থাপ্পড় মেরেছি। এরপর চৌকিদাররা তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় সিঁড়িতে পড়ে আঘাত পায়। তাকে চিকিৎসকও দেখিয়েছি। সে ও চিকিৎসক দুজনই বলেছে, কোনো সমস্যা নেই। ঝামেলা সেদিনই মিটে গেছে। আর টাকা নেওয়ার যে অভিযোগ করেছে, তা ঠিক নয়।’

এ বিষয়ে তারাগঞ্জের ইউএনও রুবেল রানা বলেন, অভিযোগ পেয়েছেন। চেয়ারম্যানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী চাইলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারেন।

তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়িত্বরত কর্মকর্তার কাছে এনেছিলেন ওই ব্যক্তি। অভিযোগটি ইউএনও বরাবর হওয়ায়, সেটি ইউএনওকে দিতে বলা হয়। থানায় অভিযোগ দিলে বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি জমি মাপজোখে বাধা ও মারধর, যুবদল নেতার কারাদণ্ড

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি জায়গা মাপজোখে বাধা দেওয়া ও সার্ভেয়ারকে মারধরের অভিযোগে যুবদলের এক নেতাকে এক দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ সময় তাঁকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সোমবার রাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত মো. ইশতিয়াক ভূঁইয়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এই কারাদণ্ড দেন।

কারাদণ্ড পাওয়া যুবদলের নেতার নাম সোহেল জাহান (৩৫)। তিনি জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। জেলা শহরের গোকর্ণ ঘাটের বাসিন্দা হলেও সোহেল পরিবার নিয়ে শহরের কাজীপাড়ায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের কাজী মাহমুদ শাহ সড়কসংলগ্ন কাজীপাড়ার উত্তর দিকের ১ নম্বর খাত খতিয়ানভুক্ত ১৫ শতাংশ জায়গা রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) একটি প্রকল্প থেকে একটি ভবন নির্মাণ করা হবে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার বেলা দেড়টার দিকে সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সার্ভেয়ার রফিকুল ইসলাম, জারিকারক বোরহান উদ্দিন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জায়গাটি মাপজোখ করতে যান। যুবদল নেতা সোহেল জাহান ঘটনাস্থলে গিয়ে মাপজোখে বাধা দেন। সেখানে নিজের জায়গা রয়েছে বলে সার্ভেয়ার রফিকুল ইসলাম ও জারিকারক বোরহান উদ্দিনকে জানান সোহেল। বাধা উপেক্ষা করে মাপজোখ করতে গেলে সার্ভেয়ার ও জারিকারকের সঙ্গে সোহেল জাহানের কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে জারিকারক বোরহান উদ্দিনের সঙ্গে যুবদল নেতা সোহেলের হাতাহাতি হয়। এতে বোরহান উদ্দিন আহত হন।

বিষয়টি জেনে সোমবার সন্ধ্যায় ইউএনও সিফাত মো. ইশতিয়াক ভূঁইয়া কাজীপাড়া গিয়ে একটি ভাড়া বাসা থেকে যুবদল নেতা সোহেল জাহানকে আটক করেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাঁকে এক দিনের কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা করেন।

ইউএনও সিফাত মো. ইশতিয়াক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি কর্মচারী জায়গা মাপতে গেলে বাধা প্রদান করা হয়। সরকারি কাজে বাধা প্রদানসহ সরকারি কর্মকারীকে মারধর করে আহত করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আটক করা সোহেলকে দণ্ডবিধি ১৮৬০–এর ১৮৬ ধারায় এক দিনের কারাদণ্ড প্রদানসহ এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সার্ভেয়ার রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, কাজীপাড়ার জায়গাটি মাপজোখ করতে গেলে সেখানে বাধা দেন সোহেল জাহান। একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে জারিকারক বোরহান উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর হাতাহাতি হয়। বোরহান উদ্দিনের শার্টের বোতাম ছিঁড়ে ফেলা হয় এবং তাঁকে আহত করা হয়।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি জায়গা মাপজোখে বাধা দেওয়াসহ সার্ভেয়ারের সঙ্গে সোহেল জাহানের হাতাহাতি হয়েছে। এ ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাঁকে এক দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি জমি মাপজোখে বাধা ও মারধর, যুবদল নেতার কারাদণ্ড