ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেছেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেবল গাজা ইস্যুতে সমালোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তারা সন্ত্রাসী এবং বিখ্যাত আইন লঙ্ঘনকারী ইসরাইল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। গাজা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আইন প্রশ্নবিদ্ধ। কেননা গাজায় ইসরায়েলের ব্যাপক ও অবিশ্বাস্যভাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার  আইন (আইএইচএল) লঙ্ঘন, পরবর্তী দিনগুলোতে এর প্রয়োগ ও অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলে।”

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) তুরস্কের চাংকিরি কারাতেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স হলের রেক্টরেট ভবনে ‘গাজা কনফ্লিক্ট: এ ডাইং ডিক্লারেশন অফ ইন্টারন্যাশনাল ল’ (গাজা সংঘাত: আন্তর্জাতিক আইনের মৃত্যুকালীন জবানবন্দী) শীর্ষক শিরোনামে আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন। 

আরো পড়ুন:

‘সাজিদ হত্যার ৯০তম দিন, এরপর কি আমি?’

ইবি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ, রেহায় পায়নি রোগীরা

তিনি অক্টোবরে গাজার সীমান্ত এলাকায় হামাসের আক্রমণের বৈধতা, গাজার উপর ইসরায়েলের আক্রমণ এবং এর বৈশিষ্ট্য, ইসরায়েলের আক্রমণ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে ইসরায়েলের আচরণ নিয়ে আলোচনা করেন। 

উপাচার্য বলেন, “১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের একটি চক্রান্তের ফলে ইসরায়েল অবৈধভাবে জন্মগ্রহণকারী একটি রাষ্ট্র। গাজা সংঘাতে ইসরায়েলের আচরণ আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের অভূতপূর্ব লঙ্ঘন। ২০২৩ সাল থেকে গাজা সংঘাতে ইসরায়েলের আচরণ আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের ভিত্তি ধ্বংস করে দিয়েছে।”

আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও ফৌজদারি আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণকে বৈধ দাবি করে তিনি বলেন, “গাজা উপত্যকা একটি দখলকৃত অঞ্চল এবং এর জনগণ আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের অধিকারী (বিখ্যাত ফিলিস্তিনের প্রাচীর মামলায় আইসিজে-র উপদেষ্টা মতামত)। হামাসের আক্রমণ দখলদার ইসরাইলের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে ছিল এবং তাই জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদের অধীনে ‘আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগে’ বলা যেতে পারে। স্থায়ী দখলদারিত্ব আত্মরক্ষার অধিকারের চিরস্থায়ী চরিত্রের জন্ম দেয়।”

এ ক্ষেত্রে ইসরাইলের আচরণ মূল্যায়নে তিনি বলেন, “গাজার উপর ইসরাইলের আক্রমণ আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগে পাল্টা আক্রমণ বা আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হয় না। কারণ ইসরাইল দখলদার শক্তি। আইসিজের মতামত হল- আন্তর্জাতিক আইনে ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার ৫১ অনুচ্ছেদের অধিকার নেই। এটি জাতিসংঘ সনদের অনুচ্ছেদ ২(৪) লঙ্ঘন করে একটি নতুন আক্রমণ।”

উপাচার্য বলেন, “আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন (আইএইচএল) অনুসারে ইসরায়েলের আক্রমণ নিষিদ্ধ শ্রেণীর কর্মকাণ্ডের আওতায় পড়ে। এতে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে আক্রমণ, নির্বিচারে আক্রমণ, বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুর (বাসস্থান, বাজার, দোকান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য) বিরুদ্ধে আক্রমণ, মানবিক সাহায্যের উপর স্বেচ্ছাচারী বিধিনিষেধের মাধ্যমে অনাহারকে যুদ্ধের উপায় হিসেবে ব্যবহার করা, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য জিনিসপত্র ধ্বংস করা, মানবাধিকার কর্মীদের উপর আক্রমণ, সুরক্ষিত ব্যক্তিদের, সাংবাদিকদের হত্যা, নির্যাতন, নারীদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা, বিশ্বাসঘাতক যুদ্ধ, সম্মিলিত শাস্তি, যুদ্ধবন্দীদের হত্যা, ঘোড়া-বিধ্বংসী যুদ্ধ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ও যুদ্ধে সন্ত্রাস ইত্যাদি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন (আইএইচএল) লঙ্ঘনের শামিল।”

অনুষ্ঠান শেষে সফরের বিষয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি খুবই অবাক হয়েছি যে বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০০৭ সালে শুরু হয়েছিল। এত অল্প সময়ের মধ্যেই এটি আশ্চর্যজনকভাবে এগিয়েছে। বিশাল ও অটল প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি বিশ্ববিদ্যালয় কতদূর এগিয়ে যেতে পারে। এটিই তার বাস্তব উদাহরণ। এটি বেশ আশ্চর্যজনক যে, এই সময়ের মধ্যে আপনি আপনার শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাপকভাবে প্রসারিত করেছেন এবং আপনার দেশের বাইরে থেকে অনেক শিক্ষার্থীকে আকৃষ্ট করেছেন।”

ইবি উপাচার্য তুরস্কের চাংকিরি কারাতেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইরাসমাস+ কেএ১৭১ আন্তর্জাতিক ক্রেডিট মবিলিটি প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণভিত্তিক ভ্রমণে অংশ নেন। ইরাসমাস সমন্বয় অফিস থেকে পাঠানো আমন্ত্রণপত্রে উপাচার্যকে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ভ্রমণে অংশগ্রহণের কথা বলা হয়েছে।

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব শ বব দ য ল র আচরণ উপ চ র য ক রমণ র উপর ইসর য ক আইন

এছাড়াও পড়ুন:

ভোটার তালিকা নিয়ে অভিযোগ ছাত্রদলের, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে শিবির

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে শুরু হওয়া এই ভোট চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

বেলা ১১টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে। তবে ছবিসহ ভোটার তালিকা এজেন্টরা দেখতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রদলের ভিপি (সহসভাপতি) প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন (আবির)। অন্যদিকে ছাত্রশিবিরের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান (জাহিদ) বলছেন, ‘নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ নেই৷ আমরা (পরিস্থিতি) পর্যবেক্ষণে রাখছি৷ আমরা প্রশাসনকে বলব, কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ যেন না করা হয়।’

আজ সকাল ৯টার পর জুবেরী ভবন কেন্দ্রের সামনে আসেন ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন। সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। এরপর তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন।

শেখ নূর উদ্দিন বলেন, ‘আমার পোলিং এজেন্টরা ফোন করে জানাচ্ছেন, কেন্দ্রগুলোয় তাঁদের ছবিসহ ভোটার তালিকা দেখতে দেওয়া হচ্ছে না। তালিকায় ছবি থাকলেও সেটা শুধু রিটার্নিং কর্মকর্তারা দেখতে পারছেন। ছবিসহ ভোটার তালিকা যদি এজেন্টরা দেখতে না পান, তাহলে তাঁরা কীভাবে ভোটার শনাক্ত করবেন। জাল ভোট হচ্ছে কি না, সেটা কীভাবে শনাক্ত করবেন?’

ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আরও বলেন, ‘বিষয়টা নিয়ে আমি রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার এফ নজরুল ইসলাম স্যারের সঙ্গে কথা বললাম। তিনি বললেন যে এটা তিনি ব্যবস্থা করছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর পরও কোনো পক্ষ বা প্রার্থী ক্যাম্পাসে বহিরাগত ঢোকানোর চেষ্টা করলে আমরা অবশ্যই প্রতিহত করব। শিক্ষার্থীরা সেটা মেনে নেবে না।’

আজ সকাল পৌনে ১০টার দিকে জুবেরী ভবনে স্থাপিত সৈয়দ আমীর আলী হলের কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন শিবিরের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান। তিনি ভোট দিয়ে বের হন ১০টা ৮ মিনিটে। পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।
মোস্তাকুর রহমান বলেন, ‘আশা করি সব শিক্ষার্থী উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেবে। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের প্রতি আমার আহ্বান, আজ সারা দিন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে তারা যেন বিমাতাসুলভ আচরণ না করে এবং সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেয়।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে স্থাপিত সৈয়দ আমীর আলী হলের কেন্দ্রে ভোট দেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান (জাহিদ)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মারওয়ান বারঘুতিকে মুক্তি দিতে ইসরায়েল কেন ভয় পায়
  • ‘জুলাই বিপ্লবীদের’ প্রতি সুবিচারে সরকার ব্যর্থ: জামায়াত আমির
  • ভোটার তালিকা নিয়ে অভিযোগ ছাত্রদলের, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে শিবির