চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ একচেটিয়া বিজয় পেয়েছে। ২৬ পদের মধ্যে ২৪টি পদ দখল করেছেন সংগঠনটির প্রার্থীরা। সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে নির্বাচিত সাঈদ বিন হাবিব। তিনি ৮ হাজার ৩১ ভোট পেয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের মো.

শাফায়াত হোসেনের (২ হাজার ৭২৪ ভোট) চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি ভোট পেয়েছেন তিনি।

দ্বিতীয় সর্বাধিক ভোট পেয়েছেন সহসভাপতি (ভিপি) পদে ছাত্রশিবিরের মো. ইব্রাহিম হোসেন। তিনি ৭ হাজার ৯৮৩ ভোট পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের সাজ্জাদ হোসেন ৪ হাজার ৩৭৪ ভোট পেয়েছেন। অর্থাৎ দেড় গুণের বেশি ব্যবধানে জিতেছেন ইব্রাহিম।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ছাত্রদলের আইয়ুবুর রহমান জয়ী হয়েছেন ৭ হাজার ১৪ ভোট পেয়ে। তিনি ছাত্রশিবিরের প্রার্থী সাজ্জাত হোছনকে ১ হাজার ৯৬৯ ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন।

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর গত বুধবার অনুষ্ঠিত সপ্তম চাকসু নির্বাচনে ভোট পড়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশ। মোট ভোটার ছিলেন ২৭ হাজার ৫১৬। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১৭ হাজার ৮৫৫ জন। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ও অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও নির্বাচন ছিল মোটাদাগে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর।

সম্পাদকীয় পদেও শিবিরের দাপট

সম্পাদকীয় পদগুলোর ২২টিতেই জয় পেয়েছেন ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্রার্থীরা। তবে কিছু আসনে ব্যবধান ছিল অল্প। আবার একটি পদে জিতেছেন অন্য সংগঠনের প্রার্থীও।খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে মাত্র ৩৮২ ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন ছাত্রশিবিরের মোহাম্মদ শাওন (৪ হাজার ৬৩৫ ভোট)। প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আজহারুল ইসলাম পেয়েছেন ৪ হাজার ২৫৩ ভোট। এই পদে তুমুল লড়াই হয়েছিল।
অন্যদিকে সহ–খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে চমক দেখিয়েছেন ‘বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য’র তামান্না মাহবুব। শিবিরের বাইরে তিনিই একমাত্র বিজয়ী। তিনি পেয়েছেন ৪ হাজার ৯২৪ ভোট, যেখানে শিবিরের মো. শাহ পরাণ পেয়েছেন ৪ হাজার ৪৯৪ ভোট। তামান্না ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য।

সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে শিবিরের হারেজুল ইসলাম জয়ী হয়েছেন ৫ হাজার ৩২২ ভোট পেয়ে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তানজির রহমানের ভোট ২ হাজার ৫৭৪। সহসাহিত্য সম্পাদক পদেও শিবিরের জিহাদ হোসাইন বিপুল ব্যবধানে জয় পেয়েছেন—৬ হাজার ৭৮১ বনাম ৩ হাজার ১৭৬। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পার্থ চৌধুরী পেয়েছেন ৩ হাজার ১৭৬ ভোট। পার্থ ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেলের প্রার্থী।

দপ্তর সম্পাদক পদে নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি লড়াই হয়েছে। শিবিরের আবদুল্লাহ আল নোমান জয়ী হয়েছেন মাত্র ২২ ভোটের ব্যবধানে। নোমান পেয়েছেন ৩ হাজার ২৫৮ ভোট। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী (স্বতন্ত্র) মো. হাবিবুর রহমান পেয়েছেন ৩ হাজার ২৩৬ ভোট।
কিন্তু সহদপ্তর সম্পাদক পদে ব্যবধান ছিল বিপরীতরূপে বিশাল। জান্নাতুল আদন নুসরাত পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৮২ ভোট। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের শাহরিয়ার উদ্দিন পেয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৮২৭ ভোট। অর্থাৎ সাড়ে তিন গুণের বেশি ব্যবধান।

ছাত্রী কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক পদে নাহিমা আক্তার পেয়েছেন ৬ হাজার ১৬৫ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সুমাইয়া শিকদারের (৩ হাজার ৮৬২ ভোট) চেয়ে ২ হাজার ৩০০ ভোটের বেশি ব্যবধানে জিতেছেন। সহ–ছাত্রী কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদাউস পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৩৬ ভোট। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী মাইশা মেহজাবিন পেয়েছেন ৩ হাজার ১১০ ভোট। মাইশা ‘সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল থেকে নির্বাচন করেছেন।

ফলাফল ঘোষণার পর চাকসুর নতুন ভিপি মো. ইব্রাহিম হোসেন (সাদা পাঞ্জাবি) ও জিএস সাঈদ বিন হাবিব। ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবন, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র জয় প য় ছ ব যবধ ন

এছাড়াও পড়ুন:

চাকসু নির্বাচন: চার হলের ভিপি-জিএস হলেন যারা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হয়েছে।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে এ গণনার কার্যক্রম শুরু হয়। গণনার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ হচ্ছে সিসি ক্যামেরায়, প্রদর্শন করা হচ্ছে সব কেন্দ্রের এলইডি স্কিনে।

আরো পড়ুন:

প্রাণ ফিরে পেতে যাচ্ছে রাকসু, রাত পোহালেই ভোট

চাকসুর ফল: এক কেন্দ্রে ভিপি-এজিএসে এগিয়ে ছাত্রদল, জিএসে বাম

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ি, পাঁচটি কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার তথা ডিন কার্যালয়ে ভোট গণনা শেষে সেখান থেকেই আলাদাভাবে হল সংসদের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। আর চাকসুর ফল ঘোষণা হবে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ মিলনায়তনে।

নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন বলেছিলেন, “ভোট গণনার পুরো বিষয়টি সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিটি কেন্দ্রের এলইডি স্কিনে প্রদর্শন করা হচ্ছে। কোনো কারণে স্কিন বন্ধ হয়ে গেলে ভোট গণনাও বন্ধ রাখা হবে।”

তিনি বলেন, “ওএমআর পদ্ধতিতে ভেন্ডর মেশিন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল- এই দুই প্রক্রিয়ায় ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। পুরোদমে ভোট গণনার কাজ চলছে। যত দ্রুত সম্ভব ফলাফল ঘোষণা করা হবে।”

ইতোমধ্যে হল সংসদের ভোটের ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়েছে।

মাস্টার দ্য সূর্যসেন হল

চাকসু নির্বাচনে মাস্টার দ্য সূর্যসেন হল সংসদের ফলাফল রাত পৌনে ১টায় ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
ফলাফলে ১৮২ ভোট পেয়ে সহ-সভাপতি (ভিপি) হয়েছেন তাজিন ইবনে হাবিব, ১৪৪ ভোট পেয়ে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হয়েছেন সাদমান আল-তাছিন এবং ২৯০ ভোট পেয়ে সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) হয়েছেন শাখাওয়াত হোসেন।

হলটিতে মোট ভোটার ছিলেন ৫১৬ জন। হলটির কেন্দ্র ছিল বিজ্ঞান অনুষদে।

সোহরাওয়ার্দী হল

সোহরাওয়ার্দী হল সংসদের ফলাফল রাত ১টার পর ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

ঘোষিত ফলাফলে ভিপি হয়েছেন নেয়ামত উল্লাহ ফারাবি, জিএস হয়েছেন নুরন্নবী সোহান এবং এজিএস হয়েছেন রেসালাতুর রহমান।

এ হলে ছাত্রশিবিরের পুরো প্যানেল বিজয়ী হয়েছে।

এফ রহমান হল

এরপর এফ রহমান হল সংসদের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, ৩৬৯ ভোট পেয়ে ভিপি হয়েছেন শাহরিয়ার সোহাগ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রবিউল পেয়েছেন ৩৪৩ ভোট।

৩৭৯ ভোট পেয়ে জিএস হয়েছেন মো. তামিন চৌধুরী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. জাবের আহমদ পেয়েছেন ৩২ ভোট।

এছাড়া ২৯৮ ভোট পেয়ে এজিএস হয়েছেন সাইদুল ইসলাম। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাইফুর রহমান পেয়েছেন ২৬০ ভোট।

শাহজালাল হল

শাহজালাল হল সংসদের ফলাফল রাত দেড়টার দিকে ঘোষণা করা হয়েছে।

ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, হলটিতে ভিপি পদে ৯৩৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন আলাউদ্দিন। তার নিকতম প্রতিদ্বন্দ্বী মামুনুর রশিদ পেয়েছেন ৭৩৪ ভোট।

৬৯৭ ভোট পেয়ে জিএস হয়েছেন রায়হান চৌধুরী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়াহিদুল ইসলাম পেয়েছেন ৬৭৩ ভোট।

এছাড়া ১১০১ ভোট পেয়ে এজিএস হয়েছেন ইমতিয়াজ জাবের। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুল্লাহ আল নোমান পেয়েছেন ৫৯১ ভোট।

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাকসুতে ভিপি, এজিএসসহ ২০টি পদে শিবিরজয়ী
  • ভিপি-এজিএস পদে শিবিরের মোস্তাকুর-সালমান, জিএসে সাবেক সমন্বয়ক আম্মার জয়ী
  • চাকসুর ফলাফল: ২ জন বাদে সবাই শিবিরের
  • ৪৪ বছর পর চাকসুর নেতৃত্বে ফিরল ছাত্রশিবির
  • চাকসু নির্বাচন: চার হলের ভিপি-জিএস হলেন যারা
  • চাকসুর ফল: এক কেন্দ্রে ভিপি-এজিএসে এগিয়ে ছাত্রদল, জিএসে বাম