বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, আমি হব সকাল বেলার পাখি/সবার আগে কুসুমবাগে/উঠব আমি ডাকি! সুয্যি মামা জাগার আগে/উঠব আমি জেগে।...

সূর্যকে কাব্য–সাহিত্যে মামা হিসেবে ডাকার চল আছে। সেই সূর্য মামা আফ্রিকার দেশ জাঞ্জিবারে সূর্য মা হিসেবে ভিন্নরূপে দেখা যাচ্ছে। জাঞ্জিবারের প্রত্যন্ত এলাকায় ধোঁয়াযুক্ত প্রদীপ প্রতিস্থাপন করে স্থানীয় নারীরা সৌরশক্তির মাধ্যমে আলোকিত করার কাজ করছেন।

আগে যখন অন্ধকার নামত, তখন সঙ্গে আসত ধোঁয়া। এখন সেই পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। তানজানিয়ার আধা স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপপুঞ্জ জাঞ্জিবারের ২০ লাখ মানুষের কাছে সূর্য মা হিসেবে নারীরা আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন। সেখানকার বাসিন্দা হামনা সিলিমা ন্যায়ঙ্গের মতো প্রায় অর্ধেক মানুষের বাড়িতে বিদ্যুৎ–সংযোগ ছিল না। সূর্যাস্তের পরে হামনা তাঁর আটটি সন্তানের পড়াশোনার জন্য আলো হিসেবে ধোঁয়াযুক্ত তেলের প্রদীপ জ্বালাতেন।

হামনা সিলিমা ন্যায়ঙ্গে বলেন, ‘প্রদীপের আলো খুব দুর্বল। প্রদীপের ধোঁয়ায় আমার চোখ জ্বালা করত। একদিন প্রতিবেশী তাতু ওমারি হামাদ সৌর প্যানেল ও বাতি স্থাপন করেন।’ ভারত মহাসাগরের উপকূল বরাবর শক্তিশালী সূর্যের আলো ব্যবহার করে প্রতিবেশীর বাড়ি আলোকিত হয়। সেই আলোই ব্যবহার করছেন ন্যায়ঙ্গে ও তাঁর পরিবার। ন্যায়ঙ্গে বলেন, ‘আজ আমাদের যথেষ্ট আলো আছে।’

প্রতিবেশী তাতু ওমারি হামাদ এমন কয়েক ডজন সূর্য মা বা সোলার মামাকে (ইংরেজিতে মাকে মামা ডাকেন অনেকে) নিয়ে কাজ করছেন। বেয়ারফুট কলেজ ইন্টারন্যাশনাল জাঞ্জিবারে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামীণ সম্প্রদায়ের কাছে সৌর আলো ব্যবহারের কৌশল শেখানো হচ্ছে। স্থানীয় নারীদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করছে। জাঞ্জিবারে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৮৪৫টি বাড়ি সূর্য মায়েরা আলোকিত করেছেন।

বিদ্যুৎহীন গ্রামের মধ্যবয়সী নারীদের সেখানে ছয় মাস ধরে সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তিবিদ হওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আফ্রিকার সোলার সিস্টারের মতো কয়েকটি স্বল্পসংখ্যক কর্মসূচির মধ্যে এটি একটি। প্রশিক্ষণ শেষে নারীরা এলাকায় ফিরে যান। তাঁদের কমপক্ষে ৫০টি পরিবারের জন্য সৌর প্যানেল কিট দেওয়া হয়। বেয়ারফুট কলেজ ইন্টারন্যাশনাল জাঞ্জিবারের পরিচালক ব্রেন্ডা জিওফ্রে বলেন, ‘আমরা এমন নারীদের প্রশিক্ষণ দিতে চাই, যাঁরা পরিবর্তনের কারিগর হয়ে উঠবেন। জাঞ্জিবার ক্যাম্পাসে স্থানীয় নারীদের ১০ বছরের মতো প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’

খাদিজা ঘারিব ইসা এ কার্যক্রমে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি একটি কাজ পেয়েছি। থাকার জায়গা পেয়েছি। আগে আমার তা ছিল না। সোলার মামারা ক্ষতিকারক আলোর উৎস, যেমন কেরোসিন প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অনুঘটক হিসেবে কাজ করেন।’ স্থানীয় ক্লিনিকের এক স্বাস্থ্যকর্মী জ্যাকব ডিয়াঙ্গা বলেন, কেরোসিন ব্যবহারের অনেক সমস্যা রয়েছে। এই জ্বালানি চোখে জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে। আর ধোঁয়া শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করলে দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের ক্ষতি হতে পারে। এ ছাড়া ঠাসাঠাসি বাড়ি ও দোকানে এটি অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি তৈরি করে। শিশুরা কেরোসিনকে পানীয় ভেবে ভুল করে পান করলে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। আলো ছড়ালেও অনেক নারী আবার স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রতিরোধের মুখে পড়ছেন। নারী প্রযুক্তিবিদদের সহজে মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। কিছু পরিবারের পুরুষ সদস্যরা তাঁদের নারীদের প্রশিক্ষণ নেওয়া থেকে বিরত রেখেছেন।

এমন কার্যক্রম আফ্রিকার অন্য কয়েকটি দেশে দেখা যাচ্ছে। মাদাগাস্কার ও সেনেগালে কার্যক্রম চলছে। মালাউই ও সোমালিল্যান্ড থেকে নারীরা জাঞ্জিবারে এসে প্রশিক্ষণ নেন। কিছু নারীকে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র থেকে নিয়োগ করা হচ্ছে।

সূত্র: ইউরোনিউজ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র ক জ কর র জন য করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমার ভাইডারে ভালোভাবে ইতালি নিয়ে গেল না, পথেই মাইরা ফালাইল’

মাদারীপুর সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাস করার পরও ভালো চাকরি হচ্ছিল না ইমরান খানের (২৫)। স্বপ্ন দেখেছিলেন, ইতালি গিয়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী চাকরি করবেন। তবে অবৈধভাবে সেখানে যাওয়ার পথে প্রাণ হারান তিনি।

পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, গতকাল মঙ্গলবার তাঁরা এক দালালের মাধ্যমে জেনেছেন, ১ নভেম্বর লিবিয়ার উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নৌকায় জলদস্যুদের গুলিতে নিহত হন ইমরান। পরে তাঁর লাশ সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।

ইমরান মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের আদিত্যপুর গ্রামের মো. তৈয়ব আলী খানের ছেলে। পরিবারের বড় ছেলে কয়েক বছর আগে মারা যাওয়ায় তিনিই ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম।

আজ বুধবার সকালে ইমরানের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে অনেক লোকজন। প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব—সবাই ইমরানের খোঁজ নিতে বাড়ি এসেছেন। ইমরানের বাবা তৈয়ব আলী (৮০) বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। প্রতিবেশীরা তাঁকে ঘর থেকে বের করে আনতেই হাউমাউ করে কান্না করে দিলেন। ছেলের কথা জিজ্ঞাসা করতেই ভাঙা ভাঙা গলায় বললেন, ‘ছেলের মুখটা দালালে আমাগো দেহায় নাই। খালি বলছে, মারা গেছে।’

তৈয়ব আলীর পাশেই ছিলেন তাঁর স্ত্রী রেহেনা বেগম (৬৫)। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে গতকাল রাত থেকে তিনি টানা আহাজারি করছেন। বৃদ্ধ মা–বাবাকে সামলাতে গিয়ে নিজেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন ইমরানের বোন ফাতেমা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার দুই ভাই ছিল। দুইটা ভাই–ই মইরা গেল। এখন আমার মা–বাবা কীভাবে বাঁচবে? এই শিপন খান দালাল আমাদের চাপ দিয়া, ভয় দেখাইয়া টাকা নিছে। বাবার যত জমিজমা ছিল সব বিক্রি করে শিপনকে প্রথমে ২২ লাখ, পরে আরও ২০ লাখ টাকা দিছে। তবুও ওরা আমার ভাইডারে ভালোভাবে ইতালি নিয়ে গেল না। পথেই মাইরা ফালাইল।’

তৈয়ব আলী ও রেহেনা বেগম দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে রায়হান খান সাত বছর আগে মারা গেছেন।

বৃদ্ধ মা–বাবাকে সামলাতে গিয়ে নিজেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন ইমরানের বোন ফাতেমা বেগম

সম্পর্কিত নিবন্ধ