যে জমিতে ঘাস জন্মায় না, সেখানে আমি সোনা ফলাই
Published: 19th, November 2025 GMT
দৃঢ় মনোবল আর প্রচেষ্টা থাকলে কোনো বাধা পেরোনোই কঠিন নয়। দরকার ইচ্ছাশক্তি, আত্মবিশ্বাস আর কঠোর পরিশ্রম। আমাদের আশপাশে এমন অনেকেই আছেন যাঁরা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নিজেদের জীবনগাথায় লিখে চলেছেন অদম্য জয়ের গল্প। তাঁদের সেই সাফল্য ব্যক্তিগত অর্জনের সীমানা পেরিয়ে সমাজের নানাবিধ প্রতিবন্ধকতাকেও চ্যালেঞ্জ করেছে। তেমনই কয়েকজনের গল্প নিয়ে ধারাবাহিক এ আয়োজন। আজ জানব পটুয়াখালীর কুয়াকাটার বাসিন্দা মো.
সাগরপাড়ের মানুষ আমি মো. আল আমিন শিকদার। পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় সাগরতীরে বাড়ি আমার। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। তবে সাগরের কাছে জমিতে নোনা পানির প্রভাব এতটাই বেশি যে, কৃষিকাজে কখনো লাভের মুখ দেখা যেত না। শুধু বর্ষা মৌসুমে ধান চাষের সুযোগ পেতাম। বছর শেষে যে ফসল পেতাম তাতে খরচ উঠত না। অন্যান্য মৌসুমি ফসল যে চাষ করব, সেটিও সাহসে কুলাতো না। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে অন্যান্য ফসলও এখানে ঠিকমতো জন্মায় না।
বছরের পর বছর এ রকমই চলছে—এই দুরবস্থা শুধু আমার একার না। সাগরপাড়ের সব কৃষকই কমবেশি এ সমস্যা মোকাবিলা করছে। ফলে আমার উপার্জন দিন দিন কমে যাওয়ায় হতাশায় ডুবে যাচ্ছিলাম। একদিন গ্রামের কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে জানতে পারলাম, আলীপুরে ব্র্যাকের একটা অফিস আছে। সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সময়োপযোগী ফসলের চাষাবাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এটা শোনার পর আমার মনে আশার সঞ্চার হলো। আমরা কয়েকজন মিলে যোগাযোগ করলাম।
তারপর একদিন ব্র্যাকের কয়েকজন ভাই আমাদের গ্রামে আসলেন। সব সমস্যা শুনে আমাদের অভয় দিলেন। বললেন, লবণাক্ত জমির কারণে এই এলাকায় চাষাবাদের পদ্ধতি বদলাতে হবে। নতুন ফসল চাষ করলে লাভবান হওয়া যাবে। তারা পরামর্শ দিলেন জমিতে সূর্যমুখী ফুল আর ভুট্টা চাষের, পাশাপাশি চাষের নিয়মও দেখালেন। তাদের থেকেই জানলাম—সূর্যমুখী ফুল থেকে বীজ হয়, সেটি মণ হিসাবে বিক্রি হয়। আর বীজ থেকে তেল হয়। ভুট্টা থেকে হাঁস-মুরগি আর গরুর খাবার হয়। এগুলোর চাহিদা সারা বছরই থাকে। তাদের এসব কথায় সাহস পেলাম।
ব্র্যাক থেকে আমাদের চাষপদ্ধতি শেখানোর পাশাপাশি সারও দেওয়া হয়, এমনকি জমিতে পানি দেওয়ার জন্য সেচযন্ত্রও দেওয়া হয়। কিন্তু আমার মনের মধ্যে একটু দ্বিধা কাজ করল, আসলেই কি এই চাষপদ্ধতি কাজে লাগবে? পরিশ্রম কি বৃথা যাবে? কিন্তু চেষ্টা না করলে তো ফলাফল জানা যাবে না। আল্লাহর ভরসায় জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করলাম। কিছুদিন বাদে সূর্যমুখী গাছের বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমার হতাশাও কমতে থাকল। পুরো জমি সূর্যমুখী ফুলে ভরে গেল। অনেক বছর বাদে আমি আশার আলো দেখলাম। প্রথম ফলনে বেশ কয়েক মণ বীজ পেলাম।
কিন্তু কিছুদিন বাদেই নতুন সমস্যার মুখোমুখি হলাম। বীজ থেকে তেল বের করতে হবে। এতে লাভ বেশি। কিন্তু তেল ভাঙাতে যেতে হয় বাজারে। সে তো অনেক দূর। যাওয়া-আসা মিলিয়ে অনেক অসুবিধা। বাধ্য হয়ে আবার ব্র্যাক অফিসের সাহায্য চাইলাম। বললাম, আমাকে যদি একটা তেল ভাঙানোর মেশিনের ব্যবস্থা করেন, তাহলে আমার সঙ্গে গ্রামের অনেক কৃষকেরও উপকার হবে।
মো. আল আমিন শিকদারের নানা চড়াই-উতরাই পেরোনোর এ যাত্রায় পাশে ছিল তাঁর স্ত্রী। আর তাঁদের পাশে ছিল ব্র্যাকউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুরে কয়েল কারখানায় আগুন, সাড়ে তিন ঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে
গাজীপুর সদর উপজেলার শিরিরচালা এলাকায় কয়েল তৈরির একটি কারখানায় লাগা আগুন প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে এনেছে ফায়ার সার্ভিস। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কারখানা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল।
আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রতিষ্ঠানটির গুদামে থাকা রাসায়নিক থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা ফায়ার সার্ভিসের।
কারখানার শ্রমিক, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশেই শিরিরচালা এলাকায় স্ট্যান্ডার্ড ফিনিস অয়েল কোং (ইউনিট-২) নামের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা এলাকায় ফিনিস কয়েল কারখানা নামে পরিচিত।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ করে কারখানার রাসায়নিকের গুদাম থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে কারখানার অন্যান্য স্থাপনায়। সেখানে কেরোসিনসহ দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আশপাশের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন। তবে দুপুরের খাবারের সময় আগুন লাগায় কারখানার শ্রমিকেরা বাইরে ছিলেন। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
আশপাশের লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। খবর পেয়ে জয়দেবপুর, রাজেন্দ্রপুর ও শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। কারখানা ও আশপাশে পানিসংকটের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে অনেকটা বেগ পেয়ে হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টার চেষ্টায় বিকেল চারটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
কারখানার শ্রমিক খায়রুল ইসলাম বলেন, দুপুরের খাবারের জন্য সাড়ে ১২টার দিকে তাঁরা কারখানা থেকে বের হন। বাড়িতে গিয়ে হঠাৎ খবর পান, কারখানায় আগুন লেগেছে। পরে খাবার না খেয়ে কারখানায় ফিরে আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সহায়তা করেন।
অপর শ্রমিক নাইমুল ইসলাম বলেন, অনেকেই দুপুরে খেতে গেলেও তিনিসহ অনেক শ্রমিক কারখানাতেই অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ সাড়ে ১২টার দিকে কারখানার ফায়ার অ্যালার্ম বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে সব শ্রমিক বের হয়ে যান। আগুন শুরুতে গুদামে লাগে, পরে পাশের টিনশেড ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভবনে মূলত দোকানপাটে বিক্রি করা পণ্যের সঙ্গে দেওয়ার জন্য রাখা উপহারসামগ্রী ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কারখানার পাশেই একটি পেট্রলপাম্প এবং চারপাশে জনবসতি থাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই তাঁদের বাড়ি থেকে মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে নিরাপদে অবস্থান করেন। এ সময়ে আগুনের তাপে পাশের একটি ভবনের জানালা ও দরজার কাচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মোহাম্মদ মামুন জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে পুরোপুরি নেভাতে আরও সময় লাগবে।