আমরা ট্রানজিশনাল পিরিয়ডে আছি, একটা দোলাচল চলছে: মির্জা ফখরুল
Published: 19th, November 2025 GMT
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ‘ট্রানজিশনাল পিরিয়ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, নির্বাচন সামনে হলেও এটি কোনো শেষ লক্ষ্য নয়। বরং দেশকে গণতন্ত্রে ফেরানোটাই, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলাটাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে বিএনপি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজক বিএনপি ও ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ সেন্টার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল। অনুষ্ঠানে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে আমরা একটা ট্রানজিশনাল পিরিয়ডে আছি। একটা দোলাচল চলছে। নির্বাচনের সময় ঘোষণা হয়েছে। এখনো শিডিউল হয়নি। হবে আশা করছি। নির্বাচন কিন্তু সব শেষ নয়। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা ডেমোক্রেসিতে ফিরে যাওয়া এবং ডেমোক্রেটিক কালচার গড়ে তোলা—এটাই সবচেয়ে বড় অভাব।’
মির্জা ফখরুল মনে করেন, টেকসই রাষ্ট্র গড়তে হলে বিচার বিভাগ, সংসদ, গণমাধ্যম ও প্রশাসনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করতে হবে।
বিগত ১৬ বছরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হওয়া দমনপীড়ন, গুম-খুন ও মিথ্যা মামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বিএনপি একটি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। তিনি জানেন না, পৃথিবীর কোনো লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এইরকম অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন-হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে গেছে কি না। ৬০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। ২০ হাজারের মতো নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন। এগুলো ইতিহাসে আনতে হবে, ডকুমেন্টে আনতে হবে। এসব ঘটনা গবেষণার মাধ্যমে নথিভুক্ত করতে নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সংস্কার নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির দীর্ঘদিনের প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেন দলটির মহাসচিব। তিনি বলেন, আজকে সংস্কারের কথা বলা হয় জোরেশোরে। অথচ তাঁরা আগেই সংস্কারের দাবি তুলেছিলেন। সংস্কারের দাবিকে কেউ ব্যক্তিগত অর্জন হিসেবে উপস্থাপন করলে তা হবে সংকীর্ণতা।
বিএনপি বিপ্লবী দল নয়, বরং লিবারেল ডেমোক্র্যাট হিসেবে সব ধর্ম-বর্ণ-মতের মানুষকে নিয়ে ‘রেইনবো স্টেট’ গঠনের লক্ষ্যে এগোচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বিএনপির অবস্থান পুরোপুরি পরিষ্কার—‘উই আর লিবারেল ডেমোক্র্যাটস।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশে একদিকে শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে মবক্রেসি ভায়োলেন্স চলছে। এটা কীসের আলামত, তা তিনি জানেন না। তিনি মনে করেন, এই রায়ের গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়ার জন্য একটা বিশেষ মহল বিশ্বদৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য এই কাজগুলো করে। এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। কোনো মহল সচেতনতার সঙ্গে, অত্যন্ত ধূর্ততার সঙ্গে, চালাকির সঙ্গে এটা করার চেষ্টা করছে কি না, দেখা উচিত। কোনো মহল বিভক্তি সৃষ্টি করছে কি না, তা দেখা উচিত।
গণতন্ত্রের বাস্তব চর্চার অভাবকে দেশের দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক সংকটের মূল কারণ বলে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের মূল কথাটা হচ্ছে—‘আমি তোমার সঙ্গে একমত না হতে পারি, কিন্তু তোমার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করব।’ দুর্ভাগ্যক্রমে এখানে অনেকে অন্যের মতকে সহ্য করতে চান না।
গণতন্ত্রের পক্ষে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবস্থানের কথা স্মরণ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার ছোট্ট বিবৃতিতেই দল ও জাতির জন্য পথনির্দেশনা আছে-‘প্রতিশোধ নয় প্রতিহিংসা নয়, আসুন আমরা গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে সবাই একযোগে কাজ করি।’ বিদেশে থাকা তারেক রহমানও গণতন্ত্রের পক্ষে জনগণকে সংগঠিত করতে ভূমিকা রাখছেন বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জিয়া পরিষদ নেতা অধ্যাপক বি এম নাগিব হোসেন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে বিএনপি’ বইয়ের সম্পাদক বাবুল তালুকদার। অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিনসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণতন ত র র অন ষ ঠ ন ব এনপ র ফখর ল
এছাড়াও পড়ুন:
প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন অ্যাপ উদ্বোধন, ‘নতুন অধ্যায়’ বললেন সিইসি
প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন অ্যাপ ‘পোস্টাল ভোট বিডি’র উদ্বোধন করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। এই অ্যাপে নিবন্ধিত প্রবাসী ভোটাররা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবন মিলনায়তনে অ্যাপটি উদ্বোধন করেন সিইসি। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছি, যেখানে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ভৌগোলিক নয়, বৈশ্বিক। পোস্টাল ভোট বিডি আমাদের সেই বৈশ্বিক গণতন্ত্রের দরজা খুলে দিচ্ছে।’
নাসির উদ্দীন বলেন, ‘বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি বাংলাদেশি বিদেশে বসবাস করছেন। বিভিন্ন পেশায় কর্মরত আছেন। এত দিন এই প্রবাসীরা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। আজকের এই উদ্যোগ সেই বঞ্চনার অবসান ঘটাল।’
অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মোহাম্মদ সানাউল্লাহ জানান, পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করতে নির্বাচন কমিশনের ব্যয় হবে মাথাপিছু ৭০০ টাকা। অন্য মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করতে গেলে মাথাপিছু ৫ হাজার টাকা খরচ হতো।
তবে এ উদ্যোগ ঝুঁকিমুক্ত নয় বলেও উল্লেখ করেন এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, নানা কারণে ব্যালট নষ্ট হতে পারে। সেটা সময়ের অভাবে হতে পারে। ভুল ঠিকানার কারণে হতে পারে। ভোটারের অসাবধানতার কারণে হতে পারে। এ ছাড়া সাইবার নিরাপত্তাও একটা বড় ঝুঁকি বলে উল্লেখ করেন এই নির্বাচন কমিশনার।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, একটি পূর্ণাঙ্গ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন এই অ্যাপের উদ্বোধন করেছে। এর মাধ্যমে দেশের ভেতরে ও প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা ভোট দিতে পারবেন। নির্বাচন কমিশনের এ উদ্যোগ বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি মাইলফলক।
অনুষ্ঠানে পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপে নিবন্ধন ও ভোট দেওয়ার ওপর একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনের আউট অব কান্ট্রি ভোটিং দলের লিডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সালিম আহমেদ। পরে অ্যাপে নিবন্ধন ও ডাকযোগে ভোট দেওয়ার ওপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিভিন্ন মেয়াদে পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপে নিবন্ধন করতে পারবেন। মধ্য এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকায় অবস্থানরত প্রবাসীরা ১৯ থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন।
উত্তর আমেরিকা ও ওশেনিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিবন্ধন করতে পারবেন ২৪ থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত। ইউরোপে অবস্থানরত প্রবাসীরা নিবন্ধনের জন্য ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় পাবেন।
দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিবন্ধন করতে পারবেন ৯ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সৌদি আরবে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিবন্ধন করতে পারবেন ৪ থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিবন্ধন করতে পারবেন ৯ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সৌদি আরব ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিবন্ধন করতে পারবেন ১৪ থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
এ ছাড়া তালিকায় নাম নেই, এমন দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৯ থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন। যেসব প্রবাসী বাংলাদেশি নির্দিষ্ট সময়ে নিবন্ধন করতে পারবেন না, তাঁরাও এ সময় নিবন্ধন করতে পারবেন। সব মিলিয়ে ৪০ দিনে ১৪৩টি দেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিবন্ধন করতে পারবেন।
আগ্রহী ব্যক্তিরা ‘গুগল প্লে স্টোর’ অথবা ‘অ্যাপল স্টোর’-এ গিয়ে পোস্টাল ভোট বিডি লিখে সার্চ করে অ্যাপটি ডাউনলোড করতে পারবেন। মোট সাতটি ধাপে আগ্রহীরা নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা ও বিদেশি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুনপ্রবাসীদের ভোটার হতে যেসব দলিল লাগবে২০ আগস্ট ২০২৫