ফেনীতে রূপালী ব্যাংকে থেকে গ্রাহকের ১৯ লাখ টাকা উধাও, ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ
Published: 3rd, December 2025 GMT
ফেনীর সোনাগাজীতে রূপালী ব্যাংকের একই পরিবারের তিন গ্রাহকের হিসাব থেকে তাঁদের অজান্তে ১৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ওই টাকা ভিন্ন কয়েকটি ব্যাংক হিসাবে জমা করা হয়। রূপালী ব্যাংকের সোনাগাজীর আমির উদ্দিন মুন্সিরহাট শাখা থেকে এই টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনার দুই সপ্তাহের বেশি সময় পার হলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গ্রাহককে টাকা ফেরত দিতে পারেনি। ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা ব্যাংকের ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে রূপালী ব্যাংকের আমির উদ্দিন মুন্সিরহাট শাখার গেটে তালা লাগিয়ে সামনের সড়কে মানববন্ধন করেন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক ও তাদের স্বজনরা। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে দ্রুত তালা খুলে নেওয়া হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রূপালী ব্যাংকের সোনাগাজীর আমির উদ্দিন মুন্সিরহাট শাখার গ্রাহক আবুল বশরের হিসাব থেকে ৩৩ হাজার টাকা, তাঁর বড় ছেলে মনসুর আলমের হিসাব থেকে ১৮ লাখ ৫ হাজার টাকা ও ছোট ছেলে ইফতেখার আলমের হিসাব থেকে ৯৫ হাজার টাকা ইসলামী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকের কয়েকটি শাখার বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর (ট্রান্সফার) করা হয়।
গত ১২ নভেম্বর অস্বাভাবিক টাকা ট্রান্সফারের বিষয়টি প্রথমে টের পান ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এরপর হিসাবধারী আবুল বশরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো টাকা লেনদেন করেননি বলে জানান। বিষয়টি শাখা ব্যবস্থাপক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। ইতিমধ্যে প্রধান কার্যালয়ের একটি দল ওই শাখা পরিদর্শন করেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক আবুল বশর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার চার ছেলে মালয়েশিয়াপ্রবাসী। আমার একটি ও আমার দুই ছেলের আরও দুটি অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে তিনটি অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরানোর ঘটনায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের যোগসাজশ থাকতে পারে। ব্যাংক ম্যানেজার আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন, লুট হওয়া ছয় লাখ টাকা ফেরত আনা হয়েছে, যা আদৌ সত্য নয়। আমাকে বিগত এক মাস টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে হয়রানি করা হচ্ছে।’
আবুল বশর আরও বলেন, ‘আমাদের হিসাবের টাকার পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব ছিল ব্যাংকের। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাকে সহযোগিতা না করে থানায় মামলা করার জন্য পরামর্শ দিয়ে দায় মুক্ত হতে চাইছে। আমি সহায়তা চেয়ে ব্যাংকে ও থানায় গেলে দফায় দফায় আমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অর্থ আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে মামলা না করে উল্টো গ্রাহককে মামলা করতে বলছে। আমি গতকাল মঙ্গলবার রাতে সোনাগাজী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। আমি এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত চাই, দোষীদের বিচার চাই এবং আমাদের আত্মসাৎ করা সব টাকা ফেরত চাই।’
রূপালী ব্যাংক আমির উদ্দিন মুন্সিরহাট শাখার ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) দিদারুল আলম বলেন, ‘তিনটি অ্যাকাউন্ট থেকে ট্রান্সফার হওয়া টাকাগুলো অ্যাপসের মাধ্যমে ট্রান্সফার করা হয়েছে। অ্যাপসের লেনদেন হেড অফিস সরাসরি তদারকি করে। এই লেনদেনে আমি বা আমার শাখার কারও দায় নেই। বিষয়টি তদন্তের পর্যায়ে আছে। আমরা থানা-পুলিশকেও এ বিষয়ে সহযোগিতা করছি।’
দিদারুল আলম আরও বলেন, তিনটি অ্যাকাউন্ট থেকে ২৭ বার টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে। প্রতিবার টাকা ট্রান্সফারের আগে গ্রাহক আবুল বাশরের মোবাইল ওটিপি নম্বর যায়। তিনি ওটিপি কনফার্ম করার পরে টাকাগুলো উত্তোলন হয়। এখন তিনি ওটিপি ব্যবহার করেছেন, না তাঁর পরিবারের কেউ ওটিপি ব্যবহার করেছেন এটি তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
ব্যাংকার্স ফোরাম সোনাগাজী উপজেলা শাখার সভাপতি ও ইসলামী ব্যাংক পিএলসি সোনাগাজী শাখার ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) মনসুরুল আলম বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করে একটি প্রতারক চক্র এসব কাজ করে থাকে। ঘটনাটির পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পর প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকেরা সোনাগাজী মডেল থানায় গতকাল রাতে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বলে জানান। তবে আজ বুধবার দুপুরে সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, তাঁরা কোনো জিডি পাননি। তবে প্রতিবেদকের হাতে থাকা জিডির কপিতে সোনাগাজী মডেল থানার ডিউটি অফিসার পদুমুত্তর বড়ুয়ার স্বাক্ষর রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অ য ক উন ট থ ক কর মকর ত গ র হক র ব যবস থ কর ছ ন ল আলম তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় শিশু নিহত
রাজশাহীতে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে এক শিশু নিহত হয়েছে। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে শহরের লিলিহল মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ লোকজন রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। প্রায় এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ থাকায় দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয় এবং ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
নিহত সাদ আলী (১০) লালমনিরহাট জেলার লিয়াকত আলী লিটনের সন্তান।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, দুপুরে মোটরসাইকেলে করে বাবার সঙ্গে আমচত্বর এলাকা থেকে কাশিয়াডাঙ্গার দিকে যাচ্ছিল সাদ আলী। লিলিহল মোড়ে পৌঁছালে পেছন দিক থেকে আসা একটি ট্রাক মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে সাদ আলী মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে সড়কে পড়ে যায় এবং ওই ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার পর চালক দ্রুত ট্রাকটি নিয়ে পালিয়ে যায়।
কাশিয়াডাঙ্গা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল বারী জানান, ট্রাকটি শনাক্তে পুলিশ কাজ করছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
তিনি আরো জানান, দুপুর দেড়টা থেকে পৌঁনে ৩টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরুদ্ধ ছিল। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং যান চলাচল শুরু হয়।
ঢাকা/কেয়া/শাহেদ