বাউল–বিরোধিতার আড়ালে চলছে গ্রামের অর্থনীতি দখলের লড়াই
Published: 3rd, December 2025 GMT
অগ্রহায়ণ মাস চলছে। গ্রামীণ সংস্কৃতিতে মাসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসেই দেশের প্রান্তিক কৃষকেরা মাঠের ধান গোলায় তোলেন। হাটে-বাজারে সেই ধান বিক্রি করে একসঙ্গে বেশ কিছু টাকা হাতে আসে কৃষকদের। চাকরিজীবীদের জীবনে ঈদের মাসে যেমন একসঙ্গে বেশ কিছু টাকা হাতে আসে, কৃষকদের জীবনে অগ্রহায়ণ মাস তেমনই। এই সময়ই তাঁরা বাড়িতে স্বজনদের দাওয়াত দেন, পিঠাপুলি বানান, নবান্ন উৎসব করেন এবং নানান সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও আয়োজন করেন।
অগ্রহায়ণের শুরুতেই সাধারণত গ্রামবাংলায় শীত নেমে আসে। দিন ছোট এবং রাত দীর্ঘ হয়। দীর্ঘ রাতগুলোকে উদ্যাপন করতে আবহমানকাল ধরেই নানান সাংস্কৃতিক উৎসব করে আসছেন গ্রামবাংলার লোকেরা। এসব উৎসবে বাউলগান, পালাগান, গাজির গান, যাত্রাপালা, জলসা কিংবা মাজারগুলোতে ওরস শরিফের প্রভাব একসময় ছিল সবচেয়ে বেশি। গ্রামের বাজার অর্থনীতিতে এসব সাংস্কৃতিক ধারার মানুষদের মধ্যে বিতর্ক ও বিরোধিতা যেমন ছিল, একই সঙ্গে আবার ছিল সহাবস্থানও। ১৯৯০–এর দশক থেকে ওয়াজ মাহফিলও এই তালিকায় জায়গা করে নিতে থাকে এবং ধীরে ধীরে প্রতাপশালী হয়ে ওঠে।
মতাদর্শিক কারণেই ওয়াজ মাহফিল ওপরের সব কটি সাংস্কৃতিক ধারার বিরোধী। আর সেই বিরোধিতা প্রকাশে ওয়াজের বক্তারা কখনো রাখঢাক করেননি। শীতের মৌসুমে ওয়াজগুলোতে বাউলগান, ওরস, জলসা কিংবা যাত্রাপালার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার বিগত দশকগুলোর নিয়মিত ঘটনা। তবু এই বিরোধ বা বিষোদ্গার ছিল সামাজিক বোঝাপড়ার স্তরেই। মাঝেমধ্যে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কেউ মামলা–মোকদ্দমা বা সংগঠিত হামলার প্রয়োজন বোধ করেনি। কিন্তু এখন সেটা করছে। কেন?
আরও পড়ুনবাউল-পালাকার-বয়াতিরা কাদের শত্রু২৩ নভেম্বর ২০২৫২.সর্বশেষ ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী দেশে মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। সেটা এখন হয়তো আরও বেড়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন বলছে, শুধু রাজধানী ঢাকাতেই বাস করে ৩ কোটি ৬৬ লাখ মানুষ। অন্যান্য বিভাগীয় শহরের (মহানগর) জনসংখ্যাও সব মিলিয়ে ২ কোটির কাছাকাছি। এ ছাড়া দেড় কোটির মতো প্রবাসী ছড়িয়ে রয়েছেন বিশ্বের নানান প্রান্তে। মানে দেশের মোট জনসংখ্যার অন্তত ৪১ শতাংশ লোক নিশ্চিতভাবেই গ্রামে থাকেন না। থাকেন মহানগরীগুলোতে ও প্রবাসে। বাকি যাঁরা গ্রামে থাকেন, তাঁদের ভেতর নারী ও শিশুর হার বেশি। সামাজিক বাস্তবতায় গ্রামের রাত্রিকালীন আয়োজনে তাঁদের অংশগ্রহণের সুযোগ কম।
ফলে নবান্ন বা শীতের মৌসুমে এখন দেশের ৮৭ হাজার ১৯১টি গ্রামে পালাগান, ওরস শরিফ কিংবা ওয়াজ মাহফিল যা–ই হোক, তা হয় খুব অল্পসংখ্যক মানুষকে কেন্দ্র করে। ফলে এসব অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অর্থনীতির যে চাকাটি চলমান ছিল সেটি খুবই সংকুচিত হয়ে এসেছে। এই ক্ষুদ্র অর্থনীতি আর অল্প লেনদেনের ভেতরে তীব্র হয়ে উঠেছে বিবিধ সাংস্কৃতিক ধারার প্রতিযোগিতা!
দেশের অর্থনীতির শক্তিশালী ভিতগুলো এখন আর গ্রামকেন্দ্রিক নেই। অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তির আসনে বসে আছে তৈরি পোশাকশিল্প ও প্রবাসী আয়। ফলে গ্রামের উৎসবগুলো বহু আগেই লোকবল ও অর্থনৈতিক শূন্যতায় জৌলুশ হারিয়েছে। সীমিত পরিসরে তবু নানা ধারার সাংস্কৃতিক আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। মাজারগুলোতে ওরস শরিফ ও ওয়াজ মাহফিল ছাড়া প্রায় সব কটি সাংস্কৃতিক ধারাই চলছিল ধুঁকে ধুঁকে।
অবশ্য এই পরিবর্তন শুধু জনসংখ্যা বা বাজার অর্থনীতির কারণই হয়নি। টেলিভিশন ও তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্বায়িত নতুন বিনোদনের দুনিয়াও গ্রামীণ বিনোদনের পুরোনো সাংস্কৃতিক ধারাকে অনেকটা হটিয়ে দিয়েছে। টেলিভিশন আর ইন্টারনেটের পর্দা মাঠঘাটে সংস্কৃতির অর্থনৈতিক সংগ্রামকে আরও তীব্রতর করে তুলেছে। প্রতিযোগিতার এই তীব্রতা বিবিধ ধারা সংস্কৃতির মধ্যেকার অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বকে আর বিষোদ্গারের সীমানায় আটকে রাখতে পারছে না। সম্প্রতি সেই সীমানা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। দ্বন্দ্বগুলো এখন রূপান্তরিত হয়েছে সহিংসতায়। এই সহিংসতা দেশকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সাংস্কৃতিক বিভাজনের পথে।
স্কুলশিক্ষার্থীরা পালা উপভোগ করছেউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেমিকের সঙ্গে বিদেশে অবসর যাপন, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অকপট তারা
‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’খ্যাত বলিউড অভিনেত্রী তারা সুতারিয়া। জোর গুঞ্জন উড়ছে, নতুন প্রেমে মজেছেন তিনি। তার প্রেমিক অন্য কেউ নন, ভারতের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্ডের নাতি, অভিনেতা বীর পাহাড়িয়া।
তারা-বীরের প্রেম নিয়ে ফিসফাস অনেক দিন ধরেই চলছে। কয়েক মাস আগে প্রমোদতরীতে একসঙ্গে ছুটি কাটান এই যুগল। কয়েক দিন আগে প্রেমিকের সঙ্গে মালদ্বীপে জন্মদিন উদযাপন করে হইচই ফেলে দেন এই অভিনেত্রী।
আরো পড়ুন:
ভয়াবহ সেই সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন পবনদীপ
শাহরুখের নম্বরপত্র ভাইরাল, কোন বিষয়ে কত পেয়েছেন?
তারা-বীরের বিদেশে ছুটি কাটানোর নানা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবে এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই তারা-বীরের। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা সুতারিয়া। এ অভিনেত্রী বলেন, “আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনের ব্যাপারে খুবই রক্ষণশীল; যা শেয়ার করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করি, কেবল তাই শেয়ার করি, বাকি সব আমি রেখে দিই।”
২০১৯ সালে বলিউডে অভিষেক হয় তারা সুতারিয়ার। বিগত সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছেন, সবকিছু ব্যক্তিগতভাবে নিতে নেই। এ অভিনেত্রী বলেন, “আমি খ্যাতির সঙ্গে আসা নজরদারি ও মনোযোগকে সৌজন্য ও দূরদৃষ্টির সঙ্গে সামলাই। আমি শিখেছি সবকিছু ব্যক্তিগতভাবে নিতে হয় না, তবে মনোযোগটা ভালোবাসার দিকে দিতে হয়।”
জনসাধারণের মনোযোগ অত্যধিক হলে পরিবার ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা তাকে সাহায্য করেন। এ তথ্য উল্লেখ করে তারা সুতারিয়া বলেন, “এ পরিস্থিতিতে একটু দূরে সরে আসি, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই এবং নিজের কেন্দ্রে ফিরে আসি। এ সময়ে আমার পরিবার, ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাই আমাকে স্থির ও সুস্থ রাখে।”
এর আগে দ্য ফ্রি প্রেস জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানায়, চলতি বছরের মার্চ মাসে ল্যাকমে ফ্যাশন উইকে শো-স্টপার হয়ে প্রথমবার একসঙ্গে র্যাম্পে হাঁটেন তারা-বীর। এ মঞ্চে তাদের মাঝে প্রেমের ঝলক দেখা দেয়। গত জুলাই মাসের দিকে টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে জানায়, বীর-তারা দুই মাসের বেশি সময় ধরে প্রেমের সম্পর্কে রয়েছেন।
এর আগে অভিনেতা আদর জেইনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তারা সুতারিয়া। সুযোগ পেলেই এ জুটি ছুটি কাটাতে উড়ে যেতেন বিদেশে। ছুটি কাটানোর ছবিও ভাইরাল হয়েছিল অন্তর্জালে। তবে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ভেঙে যায় এই সম্পর্ক। এরপর গুঞ্জন চাউর হয়, ‘জিসম টু’খ্যাত অভিনেতা অরুণোদয় সিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন তারা। যদিও এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি এই যুগল।
ঢাকা/শান্ত