বেবি শার্ক গান বানিয়ে কোম্পানির বাজার মূলধন প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা
Published: 19th, November 2025 GMT
যাদের বাসায় এখন ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশু আছে, তাঁরা জানেন, গত এক দশকে সেই শিশুরা কোন কোন ছড়া/গান শুনেছে। এ প্রজন্ম ইউটিউব ভিডিওর সঙ্গে বেড়ে উঠেছে। ফলে এই বয়সী শিশুদের জন্য কনটেন্ট বানিয়ে অনেকেই বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন।
বিষয়টি হলো ‘বেবি শার্ক’ নামের ৯০ সেকেন্ডের এক শিশুতোষ গানের ভিডিও এখন ইউটিউবের সর্বাধিক দেখা কনটেন্ট, ভিউ ছাড়িয়েছে ১৬ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৬০০ কোটি। ২০২০ সালেই এটি ইউটিউবের সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিও কনটেন্টের স্বীকৃতি পায়। এরপর তা থেমে থাকেনি—অগ্রগতি চলছেই।
ফলে এই ভিডিও যারা বানিয়েছে, অর্থাৎ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান পিংকফংয়ের বাজার মূলধন ৪০০ মিলিয়ন ডলার বা ৪০ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ৯০৩ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ার শেয়ারবাজারে পিংকফংয়ের লেনদেন শুরু হয়। প্রথম দিনেই শেয়ারের দাম ৯ শতাংশ বেড়ে যায়। এর মূল কারণ যে এই বেবি শার্ক ডু ডু ডু, তা নিশ্চয়ই আর বলার অপেক্ষা রাখে না। খবর বিবিসি।
এর জনপ্রিয়তা কেমন, সে বিষয়ক এক বাস্তব উদাহরণ দেওয়া যাক। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের এক মা ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, সন্তানকে ঘুম পাড়ানোর পর বা অনেক ক্ষেত্রে কাজের সময় তাঁর কানে যেন এক শিশুতোষ ছড়াগান বাজতে থাকে। সেটি হলো, বেবি শার্ক ডু ডু ডু, বেবি শার্ক। যাদের বাড়িতে ইন্টারনেট এবং ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশু আছে, তাঁদের মধ্যে খুব কম মানুষই আছেন, যিনি এই গান শোনেননি। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, যাদের বাড়িতে ইন্টারনেট আছে, সেই বাড়ির ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুরা এই গান শোনেনি, এমন নজির খুঁজে পাওয়া কঠিন।
এই ভিডিও দুনিয়াজোড়া ঠিক কেমন আলোড়ন তুলবে, সেটি নিশ্চিতভাবেই কেউ আগে ভাবেননি। ২০১৬ সালের জুনে ভিডিওটি প্রকাশের অনুমতি দেন পিংকফংয়ের প্রধান নির্বাহী কিম মিন-সিওক। তিনি বলেন, ‘আমরা ভাবিনি, এটি অন্য কনটেন্ট থেকে আলাদা কিছু হবে। পরে বুঝেছি, এটি আমাদের বৈশ্বিক যাত্রাপথের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।
২০১০ সালে ‘স্মার্টস্টাডি’ নামে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি মূলত ১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করত। মাত্র তিনজন কর্মচারী নিয়ে শুরু করে পরবর্তীকালে ছোট শিশুদের দিকে মনোযোগ দিয়ে কনটেন্টে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। একপর্যায়ে কর্মীর সংখ্যা ১০০ জনে পৌঁছায়। এরপর তারা সহজ, শিক্ষাভিত্তিক গেম ও কনটেন্টকে অগ্রাধিকার দেয় এবং তখনই বেবি শার্কের বাজার মাত করে।
ব্রিটিশ মিডিয়া বিশ্লেষক কেভিন চিউর মতে, বেবি শার্ক গানটি ‘শিশুদের কাছে আকর্ষণীয়, যদিও প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে সম্ভবত বিরক্তিকর। তবে কিম মিন-সিওকও এই গানে আসক্তি ধরানোর ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত। তিনি বলেন, ‘এটি কে-পপ গানের মতো—খুব দ্রুতলয়ের ও ছন্দময়। ফলে আসক্তি তৈরি করতে পারে।’
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শিশুদের মধে৵ এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। অনলাইনে এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে বেবি শার্ক গানটি ইউটিউবের সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিওর স্বীকৃতি অর্জন করে। এমনও হয়েছে, ভিডিওটি প্রকাশের পর প্রথম দিকে এই কোম্পানি যত আয় করেছে, তার প্রায় অর্ধেক এসেছে এই গান থেকে। সেই সঙ্গে নিত্যনতুন কনটেন্ট তো তারা বানিয়েছে।
একটি গাননির্ভর নয়২০২২ সাল থেকে পিংকফং কোম্পানির অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি যেমন বেবেফিন ও সিলুকেরও দ্রুত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তবে কোরিয়া ইউনিভার্সিটির প্রভাষক মিন জাং কিম বলেন, কোম্পানিকে প্রমাণ করতে হবে, এই সফলতা শুধু বেবি শার্কের ওপর নির্ভরশীল নয়।
কিম মিন-সিওকের জোর দাবি, বেবি শার্ক ছাড়া অন্যান্য কনটেন্ট থেকেও তাদের ব্যবসা বাড়ছে। বর্তমানে পিংকফংয়ের আয়ের প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসছে বেবি শার্ক থেকে। বেবেফিন থেকে আসছে কোম্পানির আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ।
স্টক মার্কেটে অভিষেক থেকে প্রায় ৫২ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ২০ লাখ ডলার সংগ্রহ করেছে পিংকফং। কিম জানান, এই অর্থ কনটেন্ট ও চরিত্রের উন্নয়নে ব্যবহৃত হবে।
উদ্ভাবনে পিছিয়ে থাকতে চায় না তারা। মানুষের পছন্দ কী, সে বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করে প্রযুক্তিভিত্তিক কনটেন্ট বানাতে চায় তারা। কিম বলেন, অনেক নির্মাতা সারা জীবন ধরে যে স্বপ্ন দেখেন, পিংকফং এরই মধ্যে তা অর্জন করে ফেলেছে। এখন বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে হবে, তারা কেবল একটি হিট গান–নির্ভর কোম্পানি নয়।
আইনি চ্যালেঞ্জপিংকফংয়ের যাত্রাপথ একেবারে কণ্টকমুক্ত ছিল না। ২০১৯ সালে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। অভিযোগ—এক মার্কিন সংগীতজ্ঞের সুর তারা নকল করেছে; কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার সুপ্রিম কোর্ট এই অভিযোগ খারিজ করে দেয়। আদালত বলেন, জনপরিসরে প্রচলিত লোকগান থেকে তারা সুর নিয়েছে।
আদালতের এই রায়ে তারা জোর পায়। সেই ধারাবাহিকতায় এখন তারা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলো।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বছর বয়স কনট ন ট এই গ ন
এছাড়াও পড়ুন:
স্বামীর জন্য পাঞ্জাবির নকশা করতে গিয়ে শুরু, এখন তিনি সফল উদ্যোক্তা
অবসর পেলেই বারান্দায় বসেন শারমিন আক্তার (২৯)। তুলির আঁচড়ে একের পর এক নকশা ফুটিয়ে তোলেন নির্জীব কাপড়ে। আঁকেন ফুল, পাতাসহ রংবেরঙের চিত্র। হ্যান্ড পেইন্টের এ কাজ করেই এখন গৃহিণী থেকে সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন শারমিন।
শ্বশুরবাড়িতেই স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকেন শারমিন। চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে তিন কিলোমিটার উত্তরে বার আউলিয়া গেট। সেখান থেকে আরও আট কিলোমিটার পূর্বে চরম্বা ইউনিয়নের মাইজবিলা গ্রামের মধু ফকির পাড়ায় শারমিনের শ্বশুরবাড়ি। পাঁচ বছর আগেও শারমিন ছিলেন পুরোপুরি গৃহিণী। এখন একদিকে সংসার, অন্যদিকে সামলান নিজের ব্যবসা। সবকিছু মিলে মাসে আয় করেন ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির বারান্দায় বসে একটি পাঞ্জাবিতে নকশা বুনন করছেন শারমিন। সাদা রঙের পাঞ্জাবিটিতে ফুটে উঠছে নীল রঙের পাতার বাহার। কাজের এক ফাঁকে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পাঞ্জাবি, থ্রি–পিস, কুর্তি থেকে শুরু করে বাচ্চাদের জামা—সব ধরনের পোশাকেই হাতের কাজ করেন তিনি। মুঠোফোনে তিনি এসব নকশার অর্ডার নেন। এরপর চাহিদামতো ঢাকার পোশাক কারখানা থেকে কুরিয়ারে কাপড় আনেন। কাজ শেষে ছবি তুলে নিজের ফেসবুক পেজে প্রচার করেন। এভাবেই দিন যায় তাঁর।
‘বিভিন্ন অজুহাতে নারীদের ঘরবন্দী না করে তাঁদের প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ দেওয়া উচিত। শারমিনের আগ্রহ ও দক্ষতা দেখে তাঁর পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।’আবদুল্লাহ আল মামুন, শারমিনের স্বামী।শারমিনের দুই সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে বড় সন্তান রাওয়াহা তাফান্নুমের বয়স চার আর রুফাইদা তারান্নুমের বয়স এক বছর। তাঁর স্বামী আবদুল্লাহ আল মামুন পেশায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনিই এ উদ্যোগে শারমিনকে সহায়তা করেন।
শারমিন জানান, ২০২০ সালে তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের পরের বছর ঈদে স্বামীর জন্য একটি পাঞ্জাবি পেইন্ট করতে গিয়ে এই উদ্যোগের কথা মাথায় আসে। পরে একই সময়ে আরও ১৫টিতে হাতে নকশা করেন তিনি। এরপর তাঁর স্বামী মামুন বিক্রির জন্য এসব পাঞ্জাবির ছবি ফেসবুকে প্রচার করেন। এক সপ্তাহেই সব পাঞ্জাবি বিক্রি হয়। মাত্র ১২ হাজার টাকার পুঁজিতে সেবার ৮ হাজার টাকা লাভ করেন তিনি।
ঈদের আগের এ ছোট্ট উদ্যোগের পর শারমিনের কাজের সুনাম আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। একে একে ফরমাশ বাড়তে থাকে। ২০২২ সালে ‘শারমিনস্ হ্যান্ড পেইন্ট’ নামে ফেসবুক পেজ খোলেন তিনি। সেখান থেকেই এখন নিয়মিত অর্ডার পান। এখন তিনি মাসে গড়ে ৫০টি পোশাক পেইন্ট করেন। তবে পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের মৌসুমে কাজের পরিমাণ আরও বাড়ে তাঁর।
গত বছর ঈদে ১৫০টিরও বেশি পোশাকের অর্ডার পেয়েছিলেন শারমিন। এতে তাঁর আয় হয় প্রায় ৭০ হাজার টাকা। শারমিন বলেন, ‘নিজের ইচ্ছাশক্তি ও পরিবার থেকে সহযোগিতা পেলে নারীরা অনেক কিছু করতে পারেন। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ উদ্যোগ আরও বড় করতে পারব, যাতে অবহেলিত নারীরাও স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পান।’
নকশার পর বাড়ির উঠানেই কাপড় শুকাতে দিয়েছেন শারমিন আক্তার। সম্প্রতি তোলা