ধামরাইয়ের একটি ইটভাটায় দুপুরের রোদ গায়ে নিয়ে উবু হয়ে ইট সাজাচ্ছিল মহররম। বয়স মাত্র ১০ বছর। সকাল ৬টায় কাজ শুরু, শেষ রাত ৮টায়। মাঝে শুধু খাওয়ার বিরতি। ছয় মাসের চুক্তিতে পাবে ২৬ হাজার টাকা- মাসে চার হাজার টাকার সামান্য বেশি। মজুরির অঙ্ক শুনলে মনে হয়, যেন বড় কোনো শ্রমিকের কাজ। অথচ শ্রমিকটি একটি শিশু।
মহররমের মতো আরো অনেক শিশুকে ধামরাইয়ের বিভিন্ন ইটভাটায় প্রতিদিনই ভারী কাজ করতে দেখা যায়। মাটি-বালু বহন, কাঁচা ইট তৈরি, ইট সাজানো-সবই তাদের দায়িত্বে। আইন থাকলেও শিশুদের সুরক্ষা বা পুনর্বাসনে উল্লেখযোগ্য কোনো সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ নেই। ফলে ভাটার আগুনে ইটের সঙ্গে সঙ্গে পুড়ছে তাদের শৈশবও।
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী, ১৪ বছরের কম বয়সীদের কাজে নেওয়া নিষিদ্ধ। ১৪ থেকে ১৮ বছরের কিশোর-কিশোরীরা কেবল ‘হালকা কাজ’ করতে পারে। কিন্তু ইটভাটায় বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই। শিশুদেরই সেখানে প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকের মতো কাজ করতে দেখা যায়।
ধামরাই উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির তথ্য বলছে, উপজেলায় প্রায় ১৮২টি ইটভাটা রয়েছে, যার মধ্যে ১২০টির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে। প্রতিটি ভাটায় ২৫০–৩০০ শ্রমিক কাজ করেন। তবে কত শিশু কাজ করছে- এ বিষয়ে সমিতির কাছে কোনো তথ্য নেই।
রোয়াইল ইউনিয়নের খড়ারচর এলাকার এবিসি ব্রিকসে দেখা মিলল মহররমের। খুলনার কয়রা থেকে সর্দারের মাধ্যমে এসেছে। একই ভাটায় কাজ করা ১৬ বছর বয়সী বাদশা জানায়, অভাবের সংসারে পড়াশোনা আর চালিয়ে যাওয়া হয়নি তার। ছয় মাসে ৫০ হাজার টাকার চুক্তিতে কাজ করছে সে।
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ২০২৫ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়, শিশুরা প্রতিদিন ৮-১২ ঘণ্টা ধুলো-ধোঁয়া, তীব্র তাপ, কয়লার ধূলিকণা এবং ভারী কাজের ঝুঁকিতে থাকে। হাঁপানি, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, ত্বকের রোগ, পেশির ব্যথা, এমনকি টিবির লক্ষণও দেখা যায় অনেকের মধ্যে। দীর্ঘদিন ভার বহনের কারণে মেরুদণ্ড বিকৃতি এবং পুষ্টিহীনতাও দেখা দেয়।
২০১৪ সালের আইএলও-ইউনিসেফ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার শিশু ইটভাটায় কাজ করে-যা অনানুষ্ঠানিক শিশু শ্রমের অন্যতম বড় খাত। অধিকাংশই স্কুল থেকে ঝরে পড়ে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, ‘‘শিশু শ্রমের পেছনে দারিদ্র্য বড় কারণ। কিন্তু একই কাজের জন্য শিশু শ্রমিককে তিন ভাগের এক ভাগ মজুরি দেওযা হয়-এ কারণেও শিশুরা শোষিত হয়। মালিকদের সচেতন হতে হবে, রাষ্ট্রকেও পুনর্বাসনে এগোতে হবে।’’
ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা.
ঢাকা জেলা প্রশাসক ও জেলা শিশু শ্রম মনিটরিং কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘‘শিশু শ্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যেখানে শিশু শ্রম আছে, তা শনাক্তের কাজ চলছে। পুনর্বাসনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/সাব্বির/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ইটভাটায় পুড়ছে তাদের শৈশব
ধামরাইয়ের একটি ইটভাটায় দুপুরের রোদ গায়ে নিয়ে উবু হয়ে ইট সাজাচ্ছিল মহররম। বয়স মাত্র ১০ বছর। সকাল ৬টায় কাজ শুরু, শেষ রাত ৮টায়। মাঝে শুধু খাওয়ার বিরতি। ছয় মাসের চুক্তিতে পাবে ২৬ হাজার টাকা- মাসে চার হাজার টাকার সামান্য বেশি। মজুরির অঙ্ক শুনলে মনে হয়, যেন বড় কোনো শ্রমিকের কাজ। অথচ শ্রমিকটি একটি শিশু।
মহররমের মতো আরো অনেক শিশুকে ধামরাইয়ের বিভিন্ন ইটভাটায় প্রতিদিনই ভারী কাজ করতে দেখা যায়। মাটি-বালু বহন, কাঁচা ইট তৈরি, ইট সাজানো-সবই তাদের দায়িত্বে। আইন থাকলেও শিশুদের সুরক্ষা বা পুনর্বাসনে উল্লেখযোগ্য কোনো সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ নেই। ফলে ভাটার আগুনে ইটের সঙ্গে সঙ্গে পুড়ছে তাদের শৈশবও।
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী, ১৪ বছরের কম বয়সীদের কাজে নেওয়া নিষিদ্ধ। ১৪ থেকে ১৮ বছরের কিশোর-কিশোরীরা কেবল ‘হালকা কাজ’ করতে পারে। কিন্তু ইটভাটায় বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই। শিশুদেরই সেখানে প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকের মতো কাজ করতে দেখা যায়।
ধামরাই উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির তথ্য বলছে, উপজেলায় প্রায় ১৮২টি ইটভাটা রয়েছে, যার মধ্যে ১২০টির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে। প্রতিটি ভাটায় ২৫০–৩০০ শ্রমিক কাজ করেন। তবে কত শিশু কাজ করছে- এ বিষয়ে সমিতির কাছে কোনো তথ্য নেই।
রোয়াইল ইউনিয়নের খড়ারচর এলাকার এবিসি ব্রিকসে দেখা মিলল মহররমের। খুলনার কয়রা থেকে সর্দারের মাধ্যমে এসেছে। একই ভাটায় কাজ করা ১৬ বছর বয়সী বাদশা জানায়, অভাবের সংসারে পড়াশোনা আর চালিয়ে যাওয়া হয়নি তার। ছয় মাসে ৫০ হাজার টাকার চুক্তিতে কাজ করছে সে।
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ২০২৫ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়, শিশুরা প্রতিদিন ৮-১২ ঘণ্টা ধুলো-ধোঁয়া, তীব্র তাপ, কয়লার ধূলিকণা এবং ভারী কাজের ঝুঁকিতে থাকে। হাঁপানি, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, ত্বকের রোগ, পেশির ব্যথা, এমনকি টিবির লক্ষণও দেখা যায় অনেকের মধ্যে। দীর্ঘদিন ভার বহনের কারণে মেরুদণ্ড বিকৃতি এবং পুষ্টিহীনতাও দেখা দেয়।
২০১৪ সালের আইএলও-ইউনিসেফ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার শিশু ইটভাটায় কাজ করে-যা অনানুষ্ঠানিক শিশু শ্রমের অন্যতম বড় খাত। অধিকাংশই স্কুল থেকে ঝরে পড়ে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, ‘‘শিশু শ্রমের পেছনে দারিদ্র্য বড় কারণ। কিন্তু একই কাজের জন্য শিশু শ্রমিককে তিন ভাগের এক ভাগ মজুরি দেওযা হয়-এ কারণেও শিশুরা শোষিত হয়। মালিকদের সচেতন হতে হবে, রাষ্ট্রকেও পুনর্বাসনে এগোতে হবে।’’
ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আহমেদুল হক তিতাস বলেন, ‘‘ইটভাটার পরিবেশ শিশুদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ধোঁয়া-ধুলায় শ্বাসকষ্ট থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত ঝুঁকি থাকে।’’
ঢাকা জেলা প্রশাসক ও জেলা শিশু শ্রম মনিটরিং কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘‘শিশু শ্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যেখানে শিশু শ্রম আছে, তা শনাক্তের কাজ চলছে। পুনর্বাসনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/সাব্বির/এস