ফরিদপুরের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব বিস্তার করা আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ভোটের মাঠে অনুপস্থিতি নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে। ইতিমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা। দুই দলের প্রার্থীরা নিয়মিত গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ করে নির্বাচনী মাঠ গুছিয়ে নিচ্ছেন।

ফরিদপুরের চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। দলীয় কোন্দলের কারণে একটিতে প্রার্থী দেয়নি। এর মধ্যে একটিতে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি তুলেছে একাংশের নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে আগেভাগে চারটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে তৎপরতা চালাচ্ছে জামায়াত। ইসলামি দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ পৃথকভাবে প্রচার চালাচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা না করলেও দুটি আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কয়েকজন প্রচারণা চালাচ্ছেন। আলোচনায় আছেন সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) এ কে আজাদ।

বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে দুটি আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। ৫ আগস্টের পর ফরিদপুরে জাতীয় পার্টির (জাপা) কার্যক্রম নেই বললেই চলে। নির্বাচন নিয়ে দলটির নেতাদের মধ্যে সংশয় আছে।

ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী)

এ আসনে ২০০৫ সালের উপনির্বাচন ছাড়া কখনো জিততে পারেনি বিএনপি। স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ‘কোন্দল’ থাকায় এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। আসনটিতে ঢাকা জেলা জামায়াতের শুরা সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান মো.

ইলিয়াস মোল্লাকে মনোনয়ন দিয়েছে জামায়াত।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আছেন কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম, বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুদ্দীন মিয়া ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মনিরুজ্জামান মৃধা। মনোনয়ন নিয়ে তাঁদের কোন্দল চরমে। গত ২৩ অক্টোবর তিন উপজেলা ও তিনটি পৌরসভায় কমিটি গঠন নিয়ে তাঁদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। এর পর থেকে নাসিরুল হক ও শামসুদ্দীন মিয়ার পক্ষের অনুসারীরা পৃথক কর্মসূচি করে আসছেন। ৭ নভেম্বর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষও হয়।

খন্দকার নাসিরুল হক বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা ধৈর্য ধরতে বলেছেন। শামসুদ্দীন মিয়া বলেন, ‘কমিটি বাতিলের জন্য আন্দোলন করছি। এ কারণে প্রার্থী ঘোষণা বন্ধ রাখা হতে পারে।’

বিএনপি-দলীয় সাবেক এমপি শাহ মো. আবু জাফর ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনএম নামের দল গঠন করে নির্বাচন করে পরাজিত হন। তিনি বলেন, বিএনপি তাঁকে মনোনয়ন দিলে কিংবা বিএনপি-সমর্থিত জোটের প্রার্থী হতে পারলে তিনি নির্বাচন করবেন।

দীর্ঘদিন আগে থেকে তিন উপজেলায় সভা-সমাবেশের পাশাপাশি ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন জামায়াতের প্রার্থী মো. ইলিয়াস মোল্লা। এ ছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি শারাফাত হোসাইন, ইসলামী আন্দোলনের ওয়ালিউর রহমান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের অর্থ সম্পাদক মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী ও এনসিপির হাসিবুর রহমান মাঠে তৎপর আছেন।

ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা ও সালথা)

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য প্রয়াত সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত কে এম ওবায়দুর রহমানের এলাকা হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে এখানে এমপি হন ওবায়দুর রহমান। অন্য নির্বাচনগুলোতে জয় পান সাজেদা চৌধুরী। এবার বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন ওবায়দুর রহমানের মেয়ে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। শামা ওবায়েদ বলেন, তাঁর বাবাকে এ অঞ্চলের মানুষ অনেক শ্রদ্ধা করেন। তিনি এলাকার উন্নয়নে অনেক ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর মেয়ে হিসেবে তিনি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চান।

বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালাচ্ছেন নগরকান্দা উপজেলা জামায়াতের আমির সোহরাব হোসেন। এ ছাড়া খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় অভিভাবক সদস্য শাহ আকরাম আলী আলোচনায় আছেন। এনসিপির কোনো নেতা-কর্মীর তৎপরতা দেখা যায়নি।

ফরিদপুর-৩ (সদর)

১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগপর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে এখানে বিএনপির হয়ে জয় পেয়েছেন প্রয়াত চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। এবার তাঁর মেয়ে মহিলা দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক নায়াব ইউসুফকে বিএনপি মনোনয়ন দেওয়ার পর দলের একাংশের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। মনোনয়ন চেয়েছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া। ইতিমধ্যে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে জনসভা করেছেন মোদাররেছ আলীর সমর্থকেরা।

মোদাররেছ আলী বলেন, দলীয় মনোনয়নে তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন না করলে কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। নেতৃত্ব ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। মাঠ থেকে সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় নেতা সৃষ্টি হয়।

নায়াব ইউসুফ বলেন, ‘আমার পরিবার মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করে আসছে। আমি সেই ধারার উত্তরাধিকারী। অতীতে বাবাকে মানুষ যেভাবে সহযোগিতা করেছে, আমিও সেভাবে সহযোগিতা পাব আশা করি।’

বিএনপির শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাবেক এমপি এ কে আজাদ। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে এ কে আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফরিদপুরে বর্তমানে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই। লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। তবে আমি আশাবাদী, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হলে এ পরিস্থিতির অবসান হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি বিজয়ী হব। বেকারত্ব দূর করতে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করব, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে যা যা প্রয়োজন, তা করব। কোনোরকম চাঁদাবাজি হতে দেব না।’

এ ছাড়া জামায়াতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য আবদুত তাওয়াব, খেলাফত মজলিসের জেলা সভাপতি মাওলানা আমজাদ হোসাইন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মুফতি কামরুজ্জামান, ইসলামী আন্দোলনের ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম সারোয়ার, সিপিবির কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রফিকুজ্জামান, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফ খান প্রার্থী হিসেবে মাঠে তৎপর আছেন।

ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন)

এ আসনটিতে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ছাড়া কখনো জেতেনি বিএনপি। এবার কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলামকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। ফরিদপুর-২ আসনের এই বাসিন্দা শামা ওবায়েদের কারণে দলীয় সিদ্ধান্তে ফরিদপুর-৪ আসনে কাজ করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ভাঙ্গা উপজেলার আমির সরোয়ার হোসেনকে প্রার্থী করেছে জামায়াত। তিনি সভা-সমাবেশ করে ভোটারদের মন জোগানোর চেষ্টা করছেন।

শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার স্বপ্ন এখানে বিএনপির বিজয় নিশান ওড়ানো। ইতিমধ্যে তিন উপজেলায় বিএনপির দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া নেতাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ শুরু করেছি।’ জামায়াত নেতা সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন জামায়াতকে শক্তিশালী করতে কাজ করছি। সাধারণ লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, আমি মানুষের মধ্যে জায়গা করে নিতে পেরেছি।’

এ ছাড়া খেলাফত মজলিসের জেলা সহসভাপতি মো. মিজানুর রহমান মোল্লা, ইসলামী আন্দোলনের ইসাহাক হোসেন, সিপিবির ভাঙ্গা উপজেলা সভাপতি আতাউর রহমান মাঠে তৎপর আছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দল র ক ন দ র য় দ বন দ ব র রহম ন এনস প র ব এনপ র উপজ ল ইসল ম সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

২৩ মাস পর দলে ফিরলেন মুকুল শকু মুরাদ

দীর্ঘ ২৩ মাস পর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান মুকুল, মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য শওকত হাসেম শকু এবং বন্দরের ২০ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ও মহানগর বিএনপি’র সাবেক সদস্য মো. গোলাম নবী মুরাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে দল।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।r

রিজভী জানান, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কার্যকলাপের জন্য নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান যুগ্ম আহবায়ক মো. আতাউর রহমান মুকুল, মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য শওকত হাসেম শকু, নাসিকের ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি ও মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য মো. গোলাম নবী মুরাদকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। আবেদনের প্রেক্ষিতে দলীয় সিদ্ধান্তে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে প্রাথমিক সদস্য পদ ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।

এর আগে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম ওসমানের নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উঠলে আতাউর রহমান মুকুল, শওকত হাসেম শকু ও মো. গোলাম নবী মুরাদকে বহিষ্কার করে বিএনপি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতার ইসলামী আন্দোলনে যোগদান
  • বিএনপির মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে মশালমিছিল ও সমাবেশ
  • ২৩ মাস পর দলে ঠাই ফেলেন মুকুল শকু মুরাদ
  • ২৩ মাস পর দলে ফিরলেন মুকুল শকু মুরাদ
  • বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে: দীপেন দেওয়ান
  • বরিশালে মিষ্টি বিতরণ অনুষ্ঠানে ছাত্রদল নেতা খুনের নেপথ্যে আধিপত্যের দ্বন্দ্ব
  • নেত্রকোনায় সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন