গণসংযোগ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে এক সপ্তাহ আগে মৃত্যু হয় টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হকের। স্বামী হারানোর এক সপ্তাহ পর আজ সোমবার গণসংযোগ শুরু করেছেন তাঁর স্ত্রী নূরুন্নাহার হক।

নূরুন্নাহার হক ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনের (ভাষা মতিনের) ছোট বোন। তিনি টাঙ্গাইল জেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

হামিদুল হক টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। ১২ অক্টোবর থেকে তিনি গণসংযোগ শুরু করেছিলেন। ২০ অক্টোবর সন্ধ্যায় গণসংযোগ শেষে অসুস্থ হয়ে পড়েন। টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

আজ সোমবার সকালে নূরুন্নাহার হক দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। এ সময় প্রয়াত হামিদুল হকের অনুসারী নেতা-কর্মী ও তাঁর ছেলেমেয়েরা সঙ্গে ছিলেন।

নূরুন্নাহার হক বলেন, ‘আমার স্বামী দলের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জনগণের মাঝে প্রচার করতে বের হয়েছিলেন। প্রচার করতে করতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। তাঁর স্ত্রী হিসেবে আমি বসে থাকতে পারি না। তাই তাঁর মতো আমিও জনগণের মাঝে ৩১ দফা প্রচারণা করতে মাঠে নেমেছি।’

হামিদুল হকের বড় ছেলে মিল্টন হক বলেন, ‘আমার বাবা আজীবন রাজনীতি করেছেন। রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। টাঙ্গাইল নাগরিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি। মা নূরুন্নাহার হকও রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি বাবার সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে পাশে থাকতেন। তাই বাবার অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে শোক ভুলে রাজনীতির মাঠে নেমেছেন।’

নূরুন্নাহার হক পাথরাইল থেকে গণসংযোগ শুরু করে পথে বিভিন্ন স্থানে বিএনপির ৩১ দফা সংস্কারের লিফলেট বিতরণ করেন। দুপুরে দেলদুয়ার উপজেলা সদরে দলীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এম ফেরদৌস আহমেদ, সহসভাপতি আজাদ মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম নজরুল ইসলাম প্রমুখ। পরে ফাজিলহাটি, লাউহাটি, এলাসিনসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ন ন হ র হক গণস য গ শ র হ ম দ ল হক ব এনপ র র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসংহতি আন্দোলনের ১১ দফা প্রস্তাব

আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ১১ দফা প্রস্তাব দিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। দলটি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) স্বাধীন ও শক্তিশালী করা, ব্যাংক খাতের সংস্কার এবং সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর হাতিরপুলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষে প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন দলটির নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল। প্রস্তাবে অর্থনীতির উৎপাদনশীল রূপান্তরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির বিকাশ, বখরাতন্ত্রের বিদায় এবং কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে তরুণদের শ্রম ও মেধাকে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির কাজে লাগানোর কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক খাত পরিচালনায় সুনির্দিষ্ট আইনগত ব্যবস্থার দাবি জানানো হয়।

প্রস্তাবে দুর্নীতি দমন কমিশনকে একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী সংস্থায় পরিণত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, দুদককে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপমুক্ত তদন্তের সুযোগ দিতে হবে। এ জন্য পর্যাপ্ত বাজেট, প্রযুক্তি ও জনবল নিশ্চিত করতে হবে।

আর্থিক খাত নিয়ে প্রস্তাবে বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইনসহ আর্থিক খাতের সব আইন সংস্কার করতে হবে। এ খাতে জমিদারিসুলভ কর্তৃত্বের অবসান ঘটাতে হবে এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক বরাদ্দ বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে স্বাধীনভাবে অডিট নিষ্পত্তি এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরির বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করে শাস্তির বিধান করতে হবে।

টেন্ডার ও ক্রয়প্রক্রিয়ায় ই-টেন্ডার বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়ে গণসংহতি আন্দোলন বলেছে, ক্রয়সংক্রান্ত সব তথ্য ওপেন ডেটা পোর্টালে প্রকাশ করতে হবে এবং বড় প্রকল্পে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অডিট ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

সরকারি কর্মচারীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করে প্রস্তাবে বলা হয়, পদোন্নতি ও বদলি হতে হবে মেধা ও কর্মদক্ষতা অনুযায়ী। দুর্নীতির অভিযোগে সুস্পষ্ট শাস্তির বিধান করতে হবে। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিচারক ও জনপ্রতিনিধিদের (স্ত্রী-সন্তানসহ) সম্পদের বিবরণ দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে গণসংহতি আন্দোলন বলেছে, জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন ছাড়া অফিশিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের নামে তথ্য গোপন করার আইন বাতিল করতে হবে। সরকারি কাজের তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে এবং নাগরিক সমাজকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ দিতে হবে।

সেবা প্রদান ডিজিটাল করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রস্তাবে বলা হয়, লাইসেন্স, অনুমোদন ও জমি রেজিস্ট্রির মতো সেবা ডিজিটাল করতে হবে। ঘুষ নেওয়ার সুযোগ কমাতে মানবসম্পৃক্ততা হ্রাস করতে হবে এবং নাগরিক সেবাকেন্দ্রগুলোতে এক টেবিল সেবা চালু করতে হবে। দুর্নীতি সম্পর্কে তথ্যদাতাকে আইনগত সুরক্ষা দেওয়ার প্রস্তাবও করেছে দলটি। বলা হয়েছে, তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রেখে তদন্ত করতে হবে এবং তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় আইন বদলে, খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা বদলে, ইনডেমনিটি দিয়ে দুর্নীতির দ্বার অবারিত করা হয়। টাকা পাচার সব রেকর্ড অতিক্রম করে। এতে আরও বলা হয়, খেলাপি ঋণ বেড়ে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়, যার সঙ্গে অবলোপণকৃত ও পুনঃ তফসিলকৃত ঋণ যুক্ত হলে এটি দাঁড়ায় চার লাখ কোটি টাকা।

প্রস্তাবে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের পর জনগণের ভেতরে আশার সঞ্চার হয়েছিল—লুণ্ঠনকারীদের বিচারের সম্মুখীন করা হবে, পাচার হয়ে যাওয়া টাকা ফেরত আনতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দলটি মনে করে, দুর্নীতি রোধে সরকার প্রশাসনের সব স্তরে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে, এমন আশা থাকলেও কার্যত এসব বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি ঘটেনি।

এ ছাড়া বিচারব্যবস্থা সংস্কার করে আদালতকে রাজনৈতিক চাপমুক্ত রাখা, বড় দুর্নীতির মামলা পৃথক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে পরিচালনা করা এবং সাইবার ফরেনসিক ও আর্থিক তদন্তে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সব সরকারি অফিসে নাগরিকের হয়রানিমুক্ত সেবা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে অভিযোগ বক্স চালু এবং তার দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থার কথাও বলা হয়। পাশাপাশি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় নৈতিকতা ও দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করে দুর্নীতিকে সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য করে তোলার প্রস্তাবও দিয়েছে দলটি।

গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য জুলহাসনাইন বাবুর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, মনিরুল হুদা, আমজাদ হোসেন, গোলাম মোস্তফা, জাহিদ সুজন প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করার আহ্বান ইসলামী ফ্রন্টের
  • তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
  • ‘নির্বাচন সহজ হবে না, পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নামতে হবে’
  • আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে পুরোপুরিভাবে জয়লাভ করতে হবে: নেতাদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল
  • বাবুগঞ্জে এবি পার্টির ফুয়াদের বিরুদ্ধে ঝাড়ুমিছিল
  • নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত জেলেনস্কি
  • সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরবে: গয়েশ্বর
  • যেকোনো মূল্যে ধানের শীষকে জেতাতে হবে: তারেক রহমান 
  • মেগা প্রকল্প মানেই মেগা দুর্নীতি: তারেক রহমান
  • দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসংহতি আন্দোলনের ১১ দফা প্রস্তাব