জুলাই হত্যা মামলায় ফেনীতে কারাগারে থাকা প্রবাসীর জামিন
Published: 13th, November 2025 GMT
ফেনীতে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানকালে দুটি হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় কারাগারে থাকা প্রবাসী নজরুল ইসলাম হাজারী ওরফে সাদ্দাম জামিন পেয়েছেন। জামিন চেয়ে তাঁর করা আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি কে এম জাহিদ ও বিচারপতি মো. সাইফুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
চলতি বছরের ১৭ জুন ফেনী থেকে নজরুল ইসলাম হাজারীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দুটি হত্যাচেষ্টা চালানোর অভিযোগে করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই দুই মামলায় নিম্ন আদালতে বিফল হয়ে উচ্চ আদালতে জামিন চান তিনি। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট রুল দিয়ে ছয় মাসের জামিন দেন। এই জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। এর শুনানি ২৮ আগস্ট আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের জামিন স্থগিত করেন। গত ১৫ অক্টোবর চেম্বার আদালত হাইকোর্টে এ–সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করতে বলেন। এর ধারাবাহিকতায় শুনানি শেষে রুল যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনআসামি না হয়েও জুলাই হত্যা মামলায় কারাগারে প্রবাসী, পাচ্ছেন না জামিন১৬ অক্টোবর ২০২৫নজরুল ইসলাম হাজারীকে নিয়ে ১৬ অক্টোবর ‘আসামি না হয়েও জুলাই হত্যা মামলায় কারাগারে প্রবাসী, পাচ্ছেন না জামিন’ শিরোনামে প্রথম আলোর অনলাইনে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। রুল শুনানিতে প্রতিবেদনটি হলফনামা আকারে দাখিল করেন আবেদনকারীর আইনজীবী। নজরুল ইসলাম হাজারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রুকসানা পারভীন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেদওয়ান আহমেদ রানজিব, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নুরুল হুদা ও মো.
দুই মামলায় জামিন হওয়ায় নজরুল ইসলাম হাজারীর কারামুক্তিতে আইনগত কোনো বাধা নেই বলে জানান তাঁর আইনজীবী রুকসানা পারভীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নজরুল একজন প্রবাসী, গত বছরের ৫ আগস্টের পর তিনি দেশে আসেন। এরপর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাচেষ্টার অভিযোগের দুটি মামলায় নজরুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে রিয়াদ হিসেবে। অথচ প্রকৃত আসামি মো. নুরুল হুদা ওরফে রিয়াদ ফেনী পৌর যুবলীগের সহসম্পাদক। তাঁর বাবার নামের সঙ্গে নজরুলের বাবার নামের আংশিক মিল রয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁকে মামলাগুলোতে জড়ানো হয়।
গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর মহিউদ্দিন বাদী হয়ে ফেনী সদর মডেল থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। ওই মামলার এজাহার পর্যালোচনা করে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহিপাল এলাকায় অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন মহিউদ্দিন। এ সময় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে মহিউদ্দিন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি করা হয় ১৫৫ জনকে। এজাহারভুক্ত ১৪ নম্বর আসামির নাম রিয়াদ (৩৪)। যার বাবার নাম মৃত আবুল খায়ের, ঠিকানা মাধ্যম ধলিয়া, ফেনী সদর।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নজর ল ইসল ম হ জ র হত য চ ষ ট প রব স আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
বর্তমান সংবিধান মানলে পরবর্তী নির্বাচন ২০২৯ সালে: ফরহাদ মজহার
দেশে এখন যাঁরা সংবিধানের দোহাই দিয়ে নির্বাচনের দাবি করছেন, তাঁরা দেশে গৃহযুদ্ধ বাঁধানোর চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, সংবিধানে লেখা আছে, নির্বাচন হবে পাঁচ বছর পরে; ২০২৪–এর পরের নির্বাচন ২০২৯ সালে।
কোন সাংবিধানিক যুক্তির ভিত্তি থেকে নির্বাচন চাওয়া হচ্ছে, সে প্রশ্নও তোলেন ফরহাদ মজহার। দেশের প্রচলিত আইন মানার বাধ্যবাধকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যদি আপনারা মনে করেন ঠিক আছে উপদেষ্টার সরকার (অন্তর্বর্তী সরকার) শেখ হাসিনার সংবিধান মেনেছে, তাহলে ২০২৯ সালের নির্বাচন আপনাকে মেনে নিতে হবে।’
‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৬: জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক এক নির্বাচনী সংলাপে আলোচকের বক্তব্যে ফরহাদ মজহার এ কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে এ সংলাপের আয়োজন করে ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (এফএসডিএস)।
অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৪ সালের নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা না করায় সমালোচনা করেন এই কবি ও চিন্তক। তিনি বলেন, ‘প্রথমত আমাদের একটি ইলেকশন তো হয়ে গেছে ২০২৪ সালে। এই উপদেষ্টা সরকারের প্রধান তো এখন পর্যন্ত সেই নির্বাচনকে অবৈধ বলেন নাই। তাঁর যে কনস্টিটিউটিং পাওয়ার (সাংবিধানিক ক্ষমতা) গণ–অভ্যুত্থানের মধ্যে হাজির হয়েছিল, এটা তিনি নিজেই নস্যাৎ করেছেন শেখ হাসিনার সংবিধানকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে।’
এখন অন্তর্বর্তী সরকারকে পুরোনো সংবিধান অনুযায়ী চলতে হবে মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘যদি আমরা আইন না মানি, তাহলে সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করবার, আগামী দিনে সংঘাত তৈরি করবার, আগামী দিনে বাংলাদেশকে বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়ার দাবি হচ্ছে নির্বাচন।...বাংলাদেশকে আমরা অত্যন্ত দ্রুতবেগে একটা বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছি।’
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আপনারা যদি আইন না মানেন, রাজনৈতিক দল যদি আইন না মানে; তাহলে বাংলাদেশকে যে বিশৃঙ্খলা এবং গৃহযুদ্ধের দিকে আপনারা ঠেলে দেবেন, তাঁর দায়দায়িত্ব আপনারা নেবেন।’ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবর্তে গণপরিষদ নির্বাচনে যেতে অসুবিধা কী, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সেই প্রশ্নও রাখেন তিনি।
সংলাপে স্বাগত বক্তব্যে এফএসডিএসের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বলেন, ‘আমরা আজ জাতীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক অবস্থান নির্ধারিত হবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু, অবাধ এবং অংশগ্রহণমূলক হবে তার ওপর।’
সংলাপে আসন্ন নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব তুলে ধরে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী। সংলাপ সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য মামুন আহমেদ।
এ সংলাপে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আশরাফুল হুদা, আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, প্রতিদিনের বাংলাদেশের সম্পাদক মারুফ কামাল খান প্রমুখ। সংলাপে উপস্থিত ছিলেন বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত প্রমুখ।