মাদারীপুরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের শাটডাউন কর্মসূচি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে একাধিক গাছ কেটে ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করা হয়েছে। এ সময় মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভও করেন দলটির কর্মীরা। আজ রোববার সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে গোপালপুর এলাকায় এ অবরোধ শুরু হয়। এতে মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

প্রায় চার ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর সকাল সাড়ে নয়টায় কালকিনি ও ডাসার থানার পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছ সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শাটডাউন কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুক এবং কালকিনি পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র এনায়েত হোসেন হাওলাদার।

পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোর থেকে গোপালপুর বাসস্ট্যান্ডের উত্তর পাশে জড়ো হন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। পরে যন্ত্র দিয়ে ১০ থেকে ১২টি গাছ কেটে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখেন তাঁরা। এতে উভয় পাশে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। দূরপাল্লার যাত্রী ও চালকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ সময় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন নেতা-কর্মীরা এবং নানা স্লোগান দেন। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তাঁরা সরে যান।

শাটডাউন কর্মসূচিতে মহাসড়কে একটি ভ্যান এনে সেটিকে মঞ্চের মতো সাজিয়ে বক্তব্য দেন মীর গোলাম ফারুক ও এনায়েত হোসেন হাওলাদার। বক্তব্যে তাঁরা বলেন, শেখ হাসিনাকে ফাঁসি দেওয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে শাটডাউন কর্মসূচি চলছে। কর্মসূচি সফল করায় নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান তাঁরা।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি নিজে ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। ফায়ার সার্ভিসসহ স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় কাটাগাছগুলো অপসারণ করেছি। সকাল সাড়ে নয়টা থেকে যান চলাচল শুরু হয়েছে।’

দীর্ঘ সময় যান চলাচল বন্ধ থাকার বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজন একাধিক বড় গাছ কেটে মহাসড়কে ফেলে রাখেন। গাছগুলো অপসারণে সময় বেশি লেগেছে। ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি। আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

আল্লাহর কাছে নবীজির (সা.) দোয়া কবুলের কয়েকটি ঘটনা

দোয়া মুমিনের হাতিয়ার। আর যখন দোয়া করেন মহানবী নিজে (সা.), তখন তা হয়ে ওঠে অলৌকিকতার প্রতীক। আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীর দোয়া কবুল করেন তৎক্ষণাৎ, যা নবুয়তের সত্যতার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। আলমেগণ বলেন, ‘নবীর দোয়া কবুল হওয়া তাঁর নবুয়তের সুস্পষ্ট চিহ্ন। আল্লাহ মিথ্যাবাদীর দোয়া কবুল করেন না।’

নবীজির দোয়া কবুলের ঘটনা অসংখ্য। এখানে কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে দেখব, কীভাবে আল্লাহ তাঁর দোয়া শুনেছেন।

বৃষ্টির জন্য দোয়া: মেঘের পাহাড় উঠে আসা

মদিনায় দীর্ঘ খরা। সম্পদ নষ্ট হচ্ছে, শিশুরা ক্ষুধায় কাঁদছে। জুমার খুতবায় এক বেদুঈন দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আল্লাহর রাসুল, সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে, পরিবার ক্ষুধায় কাতরাচ্ছে। আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।’

আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, নবীজি হাত তুললেন। আকাশে মেঘের টুকরোটিও ছিল না। কিন্তু হাত নামানোর আগেই মেঘ জমতে শুরু করল পাহাড়ের মতো। মিম্বর থেকে নামার আগেই বৃষ্টি পড়তে লাগল নবীজির দাড়িতে। সেই দিন, পরের দিন, তারপরের দিন—পুরো সপ্তাহ বৃষ্টি হল।

পরের জুমায় সেই বেদুঈন বা অন্য কেউ বললেন, ‘বাড়ি ধসে পড়ছে, সম্পদ ডুবে যাচ্ছে। দোয়া করুন।’ নবীজি হাত তুলে বললেন, ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়া লা আলাইনা’ (হে আল্লাহ, আমাদের চারপাশে, আমাদের ওপর নয়)।

আনাস বলেন, যে দিকে ইশারা করতেন, সে দিকের মেঘ সরে যেত। মদিনা যেন একটা গর্তের মতো হয়ে গেল, চারপাশে বৃষ্টি, মাঝে শুকনো। ওয়াদি কানাত এক মাস বইল। বাইরে থেকে যারা আসত, সবাই প্রচুর বৃষ্টির কথা বলত। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,০১৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৯৭)

আরও পড়ুনঅলসতা দূর করার জন্য নবীজির শেখানো দোয়া২১ অক্টোবর ২০২৫আবু হুরাইরার মায়ের হেদায়াত

আবু হুরাইরা (রা.)-এর মা মুশরিক ছিলেন। তিনি তাঁকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন, কিন্তু তিনি প্রত্যাখ্যান করতেন এবং নবীজির বিরুদ্ধে কটু কথা বলতেন। একদিন আবু হুরাইরা কাঁদতে কাঁদতে নবীজির কাছে গেলেন।

বললেন, ‘আমি মাকে দাওয়াত দিই, তিনি আপনার বিরুদ্ধে খারাপ বলেন। আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, তিনি হেদায়াত পান।’ নবীজি বললেন, ‘আল্লাহুম্মাহদি উম্মা আবি হুরাইরাহ’ (হে আল্লাহ, আবু হুরাইরার মাকে হেদায়াত দান করো)।

আবু হুরাইরা আনন্দে বাড়ি ফিরলেন। দরজায় পৌঁছে শুনলেন, দরজা বন্ধ। মা বললেন, ‘অপেক্ষা করো।’ তিনি পানির শব্দ শুনলেন। তারপর মা গোসল করে দরজা খুলে বললেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।’

আবু হুরাইরা আনন্দে কাঁদতে কাঁদতে নবীজির কাছে গেলেন। বললেন, ‘সুসংবাদ, আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করেছেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৯১)।

আরেকবার আবু হুরাইরা বললেন, ‘আপনার অনেক হাদিস শুনি, ভুলে যাই।’ নবীজি বললেন, ‘চাদর বিছাও।’ তিনি হাতে কিছু নিয়ে চাদরে ঢেলে দিয়ে বললেন, ‘জড়াও।’ তারপর থেকে কিছু ভোলেননি। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১১৯)

ইবনে আব্বাসের জন্য ফিকহ ও তাফসির

ইবনে আব্বাস (রা.) নবীজির ওজুর পানি প্রস্তুত করে দিলেন। নবীজি বললেন, ‘আল্লাহুম্মা ফাককিহহু ফিদ দিন’ (হে আল্লাহ, তাকে দ্বীনের ফকিহ বানান)। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৪৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৪৭৭)

আরেক বর্ণনায় আছে, তিনি কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘আল্লাহুম্মা ফাককিহহু ফিদ দিন ওয়া আল্লিমহুত তা’ওয়িল’ (হে আল্লাহ, তাকে দ্বীনের ফকিহ বানান এবং তাকে কোরআনের তাফসির শেখান)। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস: ২,৩৯৩)।

ইবনে আব্বাস হলেন উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ মুফাসসির।

আরও পড়ুনসাহসী সাহাবি হজরত যুবাইর (রা.)০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫সাইব ইবনে ইয়াজিদের দীর্ঘায়ু ও স্বাস্থ্য

সাইবকে নবীজির কাছে নিয়ে গেলেন তাঁর খালা। বললেন, ‘আমার ভাগ্নে অসুস্থ।’ নবীজি মাথায় হাত বুলিয়ে বরকতের দোয়া করলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৭৩৬)।

সাইব ৯৪ বছর বাঁচলেন, সুস্থ, সবল। বলতেন, ‘আমার কান-চোখের শক্তি নবীজির দোয়ার ফল।’

আবু কাতাদার যৌবন ও স্বাস্থ্য

জু-কারদ যুদ্ধে আবু কাতাদা (রা.) মুসআদাকে হত্যা করেন। নবীজি বললেন, ‘আল্লাহ তোমার চুল-চামড়ায় বরকত দিন। তোমার চেহারা সফল হোক।’ তীরের আঘাতে জখম হলে থুতু লাগিয়ে দিলেন—কখনো ব্যথা হয়নি।

৭০ বছরে ১৫ বছরের যুবকের মতো দেখাতেন। (দালাইলুন নুবুওয়াহ লিল বাইহাকি, ৬/১০৮, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরুত, ১৯৯৬)

দাওস গোত্রের হেদায়াত

তুফাইল ইবনে আমর আদ-দাওসি (রা.) গোত্রকে দাওয়াত দিলেন, কিন্তু তারা অস্বীকার করল। নবীজির কাছে এসে বললেন, ‘তারা ব্যভিচারে লিপ্ত। তাদের বিরুদ্ধে দোয়া করুন।’

নবীজি বললেন, ‘আল্লাহুম্মাহদি দাওসা’ (হে আল্লাহ, দাওসকে হেদায়াত দাও)। তারপর বললেন, ‘ফিরে যাও, দাওয়াত দাও, নম্র হও।’ তুফাইল ফিরে গেলেন, দাওয়াত দিতে থাকলেন। খাইবারে ৭০-৮০ ঘর মুসলিম হয়ে নবীজির কাছে গেলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪,৩৯৩)।

এই ঘটনাগুলো দেখায়, নবীজির দোয়া কখনো বিফল হয়নি।

বৃষ্টি, হেদায়াত, স্মৃতি, স্বাস্থ্য, শক্তি সবকিছুতে আল্লাহ তাঁর দোয়ায় সাড়া দিয়েছেন। এটি নবুয়তের প্রমাণ। আমরা নবীজির সুন্নাহ অনুসরণ করে দোয়া করি, আল্লাহ আমাদেরও কবুল করুন।

আরও পড়ুনসাহাবিরা যেভাবে মহানবী (সা.)-কে মানতেন২৪ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ