Prothomalo:
2025-11-18@05:55:20 GMT

এ দেশের যত গুলিন্দা পাখি

Published: 18th, November 2025 GMT

১৫ মার্চ ২০১৪। ভোর থেকে সুন্দরবনের কটকার জামতলা খালে সুন্দরী হাঁস খুঁজতে খুঁজতে বেশ ক্লান্ত। সকাল ১০টা নাগাদ কটকা বিট অফিসের সামনে নোঙর করা ছোট্ট লঞ্চ ‘রাজকন্যা’য় এসে পৌঁছলাম। প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত। ডিমভাজা দিয়ে ভুনা খিচুড়ি খেলাম ভরপেট। এরপর খানিকটা বিশ্রাম। তারপর লঞ্চে বাঁধা কোষা নৌকা নিয়ে কটকা খালপাড় ধরে পাখি-প্রাণী খুঁজতে থাকলাম।

খালপাড়ে বানর ও হরিণের সহাবস্থান ভালো লাগল। কেওড়াগাছের ডালে বসা সিতকণ্ঠী ও মাথাকালো মাছরাঙার ছবি তুলতে তুলতে হঠাৎই ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে কাস্তের মতো বাঁকানো ও লম্বা ঠোঁটের একটি পাখিকে শূলাময় (শ্বাসমূল) কাদা পাড়ে হাঁটতে দেখলাম। ৭ ডিসেম্বর ২০১০-এর পড়ন্ত বিকেলে একই প্রজাতির ২০ থেকে ২৫টি পাখির একটি ঝাঁককে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের ওপর দিয়ে উড়ে যেতে দেখেছিলাম। ওটাই ছিল প্রথমবারের মতো এই পাখি দেখা। দুপুর ১২টা ৭ মিনিট ১৫ সেকেন্ড থেকে ১২টা ৮ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড পর্যন্ত ছবি তোলার সুযোগ দিয়ে পাখিটি উড়াল দিল।

ঠিক ছয় মিনিট পর লম্বা ও বাঁকানো ঠোঁটের আরেকটি পাখি শূলাময় কাদায় নামল। দ্রুত ওর কিছু ছবি তুলে রিভিউ করতেই মনটা খুশিতে নেচে উঠল। আরে, এর ঠোঁট তো আরও লম্বা ও বাঁকানো; আকারেও কিছুটা বড়! বহুদিন ধরে ওকে খুঁজছি! মনের আনন্দে ওর প্রতিটি পদক্ষেপের ছবি তুললাম। বেশ সময় দিল ও। শেষটায় দিল অতি সুন্দর এক উড়ন্ত ছবি। ৮ জানুয়ারি ২০১৬-এ দমার চরে এই প্রজাতির পাখির বেশ কটি ঝাঁক দেখেছিলাম। একই বছর চট্টগ্রামের ফইল্লাতলী সৈকতে একসঙ্গে ছোট ও বড় দুই প্রজাতিই দেখেছিলাম। এর পর থেকে ওদেরকে নিয়মিত দেখছি কক্সবাজারের সোনাদিয়া ও সুন্দরবনে কটকা ও কচিখালিতে।

এতক্ষণ যে দুই প্রজাতির পাখির গল্প বললাম, ওরা স্কোলোপ্যাসিডি বা আরামুখ গোত্রভুক্ত নিচ দিকে বাঁকানো ঠোঁটের পাখি গুলিন্দা। এই গোত্রের বেশির ভাগ পাখির ঠোঁটই সোজা ও লম্বা। তবে কিছু প্রজাতির ঠোঁট ওপর বা নিচ দিকে বাঁকানো। এরা প্রধানত স্বাদুপানির জলাভূমি ও উপকূলীয় এলাকায় বিচরণ করে। বিশ্বব্যাপী আট প্রজাতির গুলিন্দার অস্তিত্ব থাকলেও এস্কিমো ও সরুঠোঁটি গুলিন্দা সম্ভবত হারিয়ে গেছে। বাকি ছয়টির মধ্যে শীতে পরিযায়ী হয়ে দুটি প্রজাতি নিয়মিত ও একটি অনিয়মিতভাবে এ দেশে আসে। এখানে এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো।

কটকা খালপাড়ের ওপর একটি উড়ন্ত ছোট গুলিন্দা.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবন থেকে আমাজন বন ঝাঁঝরা কেন 

পর্তুগিজ উপনিবেশের সময় তৈরি বেলেম শহরের দালানগুলো যেন সকালের রোদে গনগন করছে। আমাজন অঞ্চলের প্রথম ঔপনিবেশিক শহর এটি। আমাদের জন্য আমাজনীয় নাশতার আয়োজন হলো ১৩ তারিখ সকালে। টাপিওকা পাটিসাপটা, ম্যানিওক আলু সেদ্ধ, আচায়ে ফল, পাকা আম, টুকুপি ও পেয়ারার শরবত। আমাজন বনের ফল আচায়ে আজ ‘সুপারফুড’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। 

নাশতা খেতে খেতে ব্রাজিল, পেরু ও ইকুয়েডরের আমাজন অঞ্চলের বন্ধুরা বিশ্বের বড় বনের নিদারুণ দশা বর্ণনা করছিলেন। জঙ্গলজুড়ে বাণিজ্যিক খনন, পরিবেশ-হত্যা, বন নিধন, আদিবাসী বসতি উচ্ছেদ, বন্য প্রাণী পাচার, লুটতরাজ, প্রাণ ডাকাতি চলছে প্রশ্নহীনভাবে। বাংলাদেশের সুন্দরবনসহ লাউয়াছড়া, রেমা-কালেঙ্গা, সাতছড়ি, লাঠিটিলা, রাতারগুল, পাবলাখালী, সাঙ্গু, সিংড়া, আলতাদীঘি কিংবা মধুপুর শালবনের ওপর লাগাতার উন্নয়ন আঘাতের গল্পগুলোও সকালের নাশতার টেবিলে নিয়ে আসি। বিশ্বজুড়ে সব বনের গল্পই রক্তাক্ত, নয়া উদারবাদী আগুনে চূর্ণবিচূর্ণ। 

বেলেম সম্মেলনের প্রথম চার দিনের বহু অধিবশনে বনকে কেবল কার্বন-শোষণাগার হিসেবে না দেখে জীবনপ্রবাহ হিসেবে দেখার দাবি উঠেছে। বনের ওপর সব ধরনের অন্যায় বাণিজ্যিক নিপীড়ন বন্ধ করার দাবি উঠেছে। আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য সনদ (১৯৯২) কিংবা গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনে গৃহীত বন ও বৃক্ষ সুরক্ষার ঘোষণার (২০২১) বাস্তবায়ন হয়নি এখনো। তাহলে বছরের পর বছর  জলবায়ু সম্মেলনের কী দরকার? যখন দিনদুপুরে বিশ্বনেতাদের সামনে খুন হচ্ছে আমাজন। 

পাভেল পার্থ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবন থেকে আমাজন বন ঝাঁঝরা কেন