‘৩০ শতাংশ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরি করতে চাচ্ছে’
Published: 19th, November 2025 GMT
মোবাইল ফোন বিক্রেতাদের সংগঠন মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘‘দেশের মোবাইল বাজারে নতুন সিন্ডিকেট গঠনের চেষ্টা চলছে। আর এ কারণে আমাদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পিয়াসকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা সংস্থা।’’
ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে এমনটি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির নেতারা। তাদের দাবি, ‘‘দেশের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ব্যবসায়ীকে বাদ দিয়ে মাত্র ৩০ শতাংশ প্রভাবশালী ব্যবসায়ী নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করতে চাইছে একটি চক্র।’’
এনইআইআর হলো জাতীয় ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার, যা মোবাইল ফোনের জন্য জাতীয় ডাটাবেস। এটি টেলিযোগাযোগ খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অবৈধ বা চুরি করা মোবাইল ফোনের ব্যবহার বন্ধ করতে সাহায্য করে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে চাচ্ছে সরকার। এতে শুধু বৈধভাবে আমদানি করা ও অনুমোদিত ফোনই দেশের নেটওয়ার্কে ব্যবহার করা যাবে।
আজ বুধবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘এনইআইআর বাস্তবায়ন: মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ ও করণীয়’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলন হয়। মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির যে সংবাদ সম্মেলন ‘ঠেকাতে’ দুজনকে ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ, সেই সংবাদ সম্মেলন করেছে মোবাইল ফোন বিক্রেতাদের সংগঠনটি। তাদের মধ্যে ভোরের কাগজের অনলাইন প্রধান মিজানুর রহমান সোহেলকে সকালে ছেড়ে দেওয়া হলেও কমিউনিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ পিয়াস ডিবি হেফাজতে রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি শামীম মোল্লা, কেন্দ্রীয় নেতা ও চট্টগ্রাম বিজনেস ফোরামের সভাপতি আরিফুর রহমান, শাহ আলম বোখারীসহ বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করেন, ‘‘আজকের প্রেস কনফারেন্সের কারণে মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) রাত ৩টায় মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক পিয়াসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুধু প্রেস কনফারেন্স ঠেকাতে এই গ্রেপ্তার। কিছু ব্র্যান্ড এবং বাজারনিয়ন্ত্রক স্বার্থগোষ্ঠী এ ঘটনায় জড়িত।’’
মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের নেতা আরিফুর রহমান বলেন, ‘‘ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী আইনসম্মতভাবে আনা মোবাইল সেট বাজারে বিক্রি করার সুযোগ না দিলে লাখো ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ৫৭ শতাংশ ট্যাক্স বাড়লে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ। এনইআইআর সিস্টেমে সম্ভাব্য ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত ট্যাক্স বৃদ্ধি মোবাইলের দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেবে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার ও শিক্ষার্থীরা।’’
তিনি জানান, ‘‘‘ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী দেশে আনা কম দামে ভালো কনফিগারেশনের ফোন মার্কেটে পাওয়ায় সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন উপকৃত হয়েছে। এআই নির্ভর ভবিষ্যতের যুগে মোবাইল ফোনের দাম বেড়ে গেলে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। ১৮ জনের লাইসেন্সে পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণযোগ্য নয়।’’
সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, ‘‘দেশের মোবাইল বাজার বর্তমানে মাত্র ১৮ জন লাইসেন্সধারীর হাতে কেন্দ্রীভূত। ২০ কোটি মানুষের দেশে মোবাইল ব্যবসার লাইসেন্স ১৮ জনের হাতে থাকতে পারে না। লাইসেন্স সংখ্যা অন্তত ৫ হাজার করতে হবে।’’
বিটিআরসি চেয়ারম্যানের মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে শামীম মোল্লা বলেন, ‘‘বিটিআরসি চেয়ারম্যানের ‘চোর’ মন্তব্যে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা অপমাণিত বোধ করেছেন। প্রশ্ন ব্যাগেজ রুলসে সরকার অনুমোদন দেওয়া পণ্য বিক্রি করলে তা কীভাবে অবৈধ হয়? আমরা প্রধান উপদেষ্টা ড.
ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, ‘‘‘এনইআইআর বাস্তবায়নে ‘সিন্ডিকেটের প্রভাবে’ এই সিদ্ধান্ত কোটি মোবাইল ব্যবহারকারীর ওপর প্রভাব ফেলবে। জনগণ ক্ষুব্ধ হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। জনগণকে ক্ষেপাবেন না। প্রয়োজন হলে গণআন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।’’
ঢাকা/নাজমুল/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস য় র স গঠন র
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিক মিজানুরকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
ভোরের কাগজের অনলাইন এডিটর মিজানুর রহমান সোহেলকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) জিজ্ঞাসাবাদে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ‘অসত্য’ তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে।
মিজানুর রহমানকে মঙ্গলবার মধ্যরাতে তাঁর ঢাকার বাসা থেকে তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ সকালে ছেড়ে দেওয়ার পর ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ জসীম উদ্দিনের মাধ্যমে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের বক্তব্য আসে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়বকে উদ্ধৃত করে মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো গণমাধ্যম আমার ওপর দায় চাপিয়েছে। তাদের উদ্দেশেই আমার বক্তব্য—এটা অনভিপ্রেত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কাজ করে। এখানে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকার অবকাশই নেই।’
মিজানুর রহমানকে তুলে নেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা নিয়ে আলোচনা ওঠে। তাতে এর সঙ্গে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও তোলা হয়। এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও।
১০ ঘণ্টা পর ছাড়া পেয়ে বাসায় ফিরে মিজানুর প্রথম আলোকে বলেন, ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) কার্যকরের প্রেক্ষাপটে আগামী ১৬ ডিসেম্বর মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ ও করণীয় বিষয়ে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। তিনি এর সঙ্গে যুক্ত। ডিবির কার্যালয়ে তাঁকে নিয়ে গিয়ে কর্মকর্তারা এই সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে কথা বলেন। ডিবির কর্মকর্তাদের কথায় তাঁর মনে হয়েছে, ওপরের মহলের নির্দেশনায় তাঁরা চান, এই সংবাদ সম্মেলন না হোক। এ জন্য তাঁকে একধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনসাংবাদিক মিজানুরকে মধ্যরাতে নিয়ে গিয়ে সকালে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে ডিবি১ ঘণ্টা আগেমিজানুর দেশের অনলাইন সংবাদমাধ্যম, পত্রিকা ও টেলিভিশনের অনলাইন ও ডিজিটাল বিভাগের প্রধানদের সংগঠন ‘অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স’-এর সাধারণ সম্পাদক।
মিজানুর রহমানের সঙ্গে ব্যক্তিগত বা পেশাগত কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই জানিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থেই আমরা এনইআইআর বাস্তবায়ন করছি। অবৈধ হ্যান্ডসেটের লাগাম টানতে সংক্ষুব্ধ পক্ষের সঙ্গে বিটিআরসি বৈঠকও করেছে।’
অনিবন্ধিত মুঠোফোন হ্যান্ডসেটের ব্যবহার রোধ ও টেলিযোগাযোগ খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে চালু হতে যাচ্ছে এনইআইআর ব্যবস্থা। এটি চালু হলে দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে নিবন্ধনবিহীন, চুরি হওয়া বা আমদানি অননুমোদিত ফোনের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ হবে বলে আশা করছে সরকার।
আরও পড়ুনঅনিবন্ধিত মুঠোফোনের ব্যবহার বন্ধে ১৬ ডিসেম্বর চালু হচ্ছে এনইআইআর২৯ অক্টোবর ২০২৫মিজানুরকে জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে এনইআইআর বাস্তবায়নের সঙ্গে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবকে জড়িয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ‘মনের মাধুরী মিশিয়ে সত্যের অপলাপ’ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এমন ‘প্রোপাগান্ডা’ মুক্তমত প্রকাশের স্বাধীনতাকেই ভুলুণ্ঠিত করছে। আমরা মনে করি, এ ধরনের অসত্য তথ্য প্রচার জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তাই আশা করি, এরপর আর কেউ এ ধরনের লেখায় বিভ্রান্ত হবেন না।’