প্লাস্টিক গ্রহণের ফলে বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যুর হার বাড়ছে। এ জন্য বিজ্ঞানীরা প্রায় ১০ হাজার সামুদ্রিক প্রাণীর ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বিশ্লেষণ করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, সামুদ্রিক পাখিরা মাত্র ২৩ টুকরা প্লাস্টিক গিলে ফেললে চরম বিপদের সম্মুখীন হয়। এতে তাদের মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে ৯০ শতাংশ। সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীরা ২৯ টুকরা প্লাস্টিক গ্রহণে একই বিপদের মুখে পড়ে। আর সামুদ্রিক কচ্ছপদের একই মাত্রার ঝুঁকির জন্য প্রায় ৪০৫ টুকরা প্লাস্টিক গ্রহণ করতে হয়।

প্লাস্টিকের সামান্য পরিমাণ বিপজ্জনক হতে পারে। আয়তনের দিক থেকে একটি ফুটবলের চেয়ে কম পরিমাণ নরম প্লাস্টিক একটি ডলফিনের জন্য মারাত্মক হতে পারে। অন্যদিকে একটি সামুদ্রিক পাখি মটরশুঁটির আকারের চেয়ে ছোট কয়েকটি রাবারের টুকরা গিলে ফেলেই মারা যেতে পারে। গবেষকেরা বলছেন, নতুন এই তথ্য বন্য প্রাণী রক্ষায় বৈশ্বিক প্রচেষ্টাকে নতুন রূপ দিতে সহায়তা করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশবাদী গোষ্ঠী ওশেন কনজারভেন্সির প্রধান গবেষক এরিন মারফি বলেন, প্লাস্টিক দূষণ সমুদ্রে প্রাণীর জন্য অস্তিত্বের হুমকি সৃষ্টি করে। সিল, সি লায়ন ও ডলফিনের মতো সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী, সামুদ্রিক কচ্ছপ ও সামুদ্রিক পাখিদের বিশ্বব্যাপী সংগৃহীত ময়নাতদন্তের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। অধ্যয়ন করা সামুদ্রিক কচ্ছপদের প্রায় অর্ধেক, সামুদ্রিক পাখিদের এক–তৃতীয়াংশ ও সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীদের প্রতি ১০টির মধ্যে একটি প্লাস্টিক খেয়েছে বলে দেখা গেছে।

গবেষকেরা সামুদ্রিক প্রাণীর প্রতিটি গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক গিলে ফেলার ফলে মৃত্যুর ঝুঁকি কতটুকু, তা অনুমান করেছেন। প্লাস্টিকের ধরন বিপদের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। রাবার সামুদ্রিক পাখিদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক। নরম প্লাস্টিক ও মাছ ধরার সরঞ্জাম থেকে তৈরি আবর্জনা সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীদের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি তৈরি করে। শক্ত ও নরম উভয় প্রকার প্লাস্টিকই কচ্ছপদের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে।

এ গবেষণায় শুধু প্রাণীদের পাকস্থলীর মধ্যে পাওয়া প্লাস্টিক পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে রাসায়নিক প্রভাব বা প্লাস্টিকে জড়িয়ে যাওয়ার মতো বিষয় মূল্যায়ন করা হয়নি। যে কারণে ক্ষতির প্রকৃত মাত্রা আরও বেশি বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। দেখা যায়, শত শত সামুদ্রিক প্রজাতির দেহে প্লাস্টিক আছে। পাখিরা প্রায়ই প্লাস্টিকের টুকরা গিলে ফেলে। কচ্ছপেরা প্লাস্টিকের ব্যাগকে জেলিফিশ ভেবে ভুল করে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত বিভিন্ন আকারের প্রাণীর জন্য ঠিক কতটুকু প্লাস্টিক প্রাণঘাতী, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যের অভাব ছিল।

বিজ্ঞানী মারফি বলেন, ‘প্লাস্টিক দূষণের মোকাবিলা করতে হলে আমাদের অবশ্যই প্লাস্টিক উৎপাদন কমাতে হবে। সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহারের উন্নতি করতে হবে। এরই মধ্যে ছড়িয়ে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে।’ নতুন গবেষণা প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যবসায়ী শওকত আলী চৌধুরীর বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ, তথ্য চেয়ে দুদকের চিঠি

চট্টগ্রামের জাহাজভাঙা শিল্পের ব্যবসায়ী শওকত আলী চৌধুরী, তাঁর স্ত্রী-সন্তান ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই অংশ হিসেবে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সংস্থাটি তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যাংক হিসাব থেকে ‘অস্বাভাবিক লেনদেন’ এবং ঋণপত্রের (এলসি) মাধ্যমে জাহাজ ভাঙা ব্যবসার আড়ালে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ তুলেছে।

আজ বুধবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম। তিনি বলেন, তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

দুদকের অভিযোগ, শওকত আলী চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবগুলোতে বিপুল অঙ্কের অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। একই সঙ্গে এলসির মাধ্যমে জাহাজ ভাঙার নামে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগের সত্যতা যাচাই প্রয়োজন।

অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে দুদক সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট রেকর্ডপত্র চেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শওকত আলী চৌধুরী, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের নামে থাকা বা তাঁদের মালিকানাধীন বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা যেকোনো হিসাব বা স্কিমের ফরম ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র, হিসাবগুলোতে সব লেনদেনের বিবরণী, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্র, টিআইএন ও পাসপোর্টের কপি, তাঁদের নামে বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া ঋণের আবেদন, শাখার প্রস্তাব, অনুমোদন–সংক্রান্ত সব রেকর্ড এবং ঋণ হিসাবের তথ্য।

দুদক বলছে, অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে এসব রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। অনুসন্ধান পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, সম্পদ জব্দসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ