Prothomalo:
2025-11-20@13:18:58 GMT

নোমোফোবিয়া থেকে বাঁচার উপায় কী

Published: 20th, November 2025 GMT

‘নো মোবাইল ফোবিয়া’ শব্দবন্ধের সংক্ষিপ্ত রূপ ‘নোমোফোবিয়া’। অর্থাৎ মোবাইল ফোনের অনুপস্থিতিতে মানুষের যখন মানসিক অস্থিরতা, ভয় বা উদ্বেগ তৈরি করে, তখনই সেটিকে ‘ফোবিয়া’ বলা হয়।

আর ফোন হারিয়ে গেলে বা ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেলে বা যেকোনো কারণে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে না পারলে যদি অনেক বেশি অস্থিরতা ও মানসিক চাপ তৈরি হয়, তাকে নোমোফোবিয়া বলা হয়।

সম্প্রতি যশোরের স্বনামধন্য পাঁচটি স্কুল ও কলেজের প্রায় ১০০ শিক্ষার্থীর ওপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, নোমোফোবিয়ার মতো মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত অর্ধেকের বেশি নবম, দশম ও একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

এর মধ্যে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমস্যাটি সবচেয়ে প্রকট। গবেষণায় নবম-দশম ও একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে মৃদু নোমোফোবিয়ায় আক্রান্ত ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ, মাঝারি নোমোফোবিয়ায় ৫৩ দশমিক ২ শতাংশ ও গুরুতর নোমোফোবিয়ায় আক্রান্ত শিক্ষার্থীর হার ২৮ দশমিক ১।

আরও পড়ুনডিজিটাল আসক্তি: তরুণ প্রজন্মের হারিয়ে যাওয়া সময়২৬ আগস্ট ২০২৫

গবেষণায় একটি ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে, শিক্ষার্থীরা নোমোফোবিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পেছনে দায়ী ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ মা-বাবা, ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ বন্ধুবান্ধব, ১১ দশমিক ৩ শতাংশ সামাজিক ও পরিবেশগত কারণ।

এ সমীক্ষায় আরও দেখা যায়, নিঃসঙ্গতা ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ, অনলাইন ক্লাস ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ, আত্মবিশ্বাসহীনতা ২১ দশমিক ৬ শতাংশ ও ২৮ দশমিক ১ শতাংশ মা-বাবার বিচ্ছেদের কারণে মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে এবং পরবর্তী সময়ে নোমোফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়।

২০১৯ সালে ব্রিটেনের ২ হাজার ১৬৩ জন মোবাইল ব্যবহারকারীর ওপর পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রায় ৫৩ শতাংশ ব্যবহারকারীর মোবাইল ফোন হারালে, ব্যাটারি বা ব্যালান্স শেষ হয়ে গেলে বা নেটওয়ার্ক না থাকলে অস্থির হয়ে পড়ে।

গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৫৮ শতাংশ পুরুষ ও ৪৭ শতাংশ নারীর ফোবিয়া ছিল এবং ৯ শতাংশ তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকলে অতিরিক্ত চাপ অনুভব করে।

আরও পড়ুনসামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্তি যে কারণে জুয়ার মতো ক্ষতিকর০৭ জুলাই ২০২৩

৫৫ শতাংশ ব্যবহারকারী জানিয়েছে, তারা বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে না পারায় উদ্বিগ্ন থাকে।

জার্মানির সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের নোমোফোবিয়া–সংক্রান্ত এক জরিপে প্রায় ৮০০ জন অংশগ্রহণ করে। অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেকই নোমোফোবিয়াতে ভুগছে। এ থেকে উদ্বেগ ও বিষণ্নতার মতো রোগের সৃষ্টি হতে পারে।

দক্ষিণ কোরিয়ার রেডিওলজির অধ্যাপক ইয়ং সুক হই এক গবেষণায় অভিমত দিয়েছেন, যেসব কিশোর-কিশোরী স্মার্টফোনে বেশি সময় কাটায়, তাদের মস্তিষ্কে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটার ফলে এ বিষয়ে আসক্তি রয়েছে বলে বাহ্যিক প্রতীয়মান হয়।

এতে তাদের মধ্যে হতাশা ও উদ্বেগ কাজ করে। এ ছাড়া মুঠোফোন সব সময় ঠিক জায়গায় আছে কি না, তা নিয়ে মন সব সময় সতর্ক থাকে। মোবাইল হারানো বা চুরির ভয় থেকে মনের মধ্যে একধরনের সমস্যা তৈরি হয়।

বিশেষত মার্কেটে কিংবা বাইরে গেলে প্রায়ই আমরা পকেটে কিংবা ব্যাগে হাত দিয়ে দেখতে থাকি যে মোবাইল ফোনটা যথাস্থানে আছে কি না।

আরও পড়ুনসামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্তি যেভাবে কেড়ে নিচ্ছে আমাদের সময়২২ মে ২০২৩

মোবাইল ব্যবহার অপরিহার্য হলেও এর অপব্যবহারে রয়েছে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক সমস্যাসহ নানাবিধ সমস্যা।

এতে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হয়, উদ্বেগ সৃষ্টি করে, ঘাড় ও মেরুদণ্ডে ব্যথা করে, চোখের সমস্যা হয়, আঙুল ও কবজিতে চাপ ব্যথা অনুভূত হয় এবং উৎপাদনশীলতা কমে যায়। মানসিক সমস্যা যেমন মনোযোগের অভাব, বিভ্রান্তি ও হতাশার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সামাজিক আচরণে পরিবর্তন ঘটে। অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা কমে যায় এবং সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। ঘুমের ব্যাঘাত যেমন অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। সময় অপচয় করা ইত্যাদি।

একটু সচেতনতা, একটু ত্যাগ, একটু মেনে নেওয়ার মাধ্যমে আমরা অনেক জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারি। এটিও তার ব্যতিক্রম নয়। এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে কয়েকটি কাজ করতে হবে—

১.

দিনের নির্দিষ্ট একটি সময় মোবাইল থেকে দূরে থাকতে হবে।

২. ঘুমানোর সময় মোবাইল বিছানায় রাখা যাবে না। সম্ভব হলে বন্ধ কিংবা সাইলেন্ট করে রাখতে হবে। ঘুমের ক্ষেত্রেও একটি নির্দিষ্ট সময় মেনে চলতে হবে।

৩. কার সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে, কোন কাজ করতে গেলে সময় কেটে যায়—এই মানুষ এবং কাজগুলোকে চিহ্নিত করে, সে ব্যাপারগুলো নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে।

৪. বাসায় কিছুক্ষণের জন্য ফোন রেখে বাইরে বের হওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

৫. মোবাইলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করতে হবে। ল্যাপটপ কিংবা ডেস্কটপের মতো মাধ্যমগুলো ব্যবহারের চেষ্টা করতে হবে। এতে সমস্যা একটু হলেও দূর হবে।

৬. দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ব্যবহারের পরিবর্তে দৈনিক কিছু বই পড়ার অভ্যাস করতে হবে।

৭. বন্ধু, আত্মীয়স্বজন বা প্রিয়জনের সঙ্গে ফোনে কথা বলা কমিয়ে দিয়ে মুখোমুখি দেখা করার সুবিধাজনক নিয়ম তৈরি করতে হবে।

অফলাইনে সামাজিক যোগাযোগ রাখার যে অভ্যাস করোনাকালে আমাদের চলে গিয়েছিল, সেটিকে আবার সজীব করতে হবে।

নোমোফোবিয়া আধুনিক যুগের একটি মরণব্যাধি। এটি মানবসভ্যতাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। মোবাইল ব্যবহারে সচেতনতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও বিকল্প ইতিবাচক ব্যবহারই পারে মানবসভ্যতাকে রক্ষা করতে।

ড. এস এম তাজউদ্দিন সহযোগী অধ্যাপক (ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ), ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, যশোর।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ব যবহ র উদ ব গ আসক ত দশম ক সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

নিজেকে বোরিং পারসন মনে করেন মুশফিক

রংচটা ক্যাপ, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির গল্প, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা—মুশফিকুর রহিমের প্রায় মিনিট বিশেকের সংবাদ সম্মেলনে উঠে এল পুরো ২০ বছরের পথচলাই। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলার উপলক্ষ ঘিরে গত কদিন ধরে তাঁর জন্য স্তুতিবাক্য ভেসে এসেছে সব জায়গা থেকেই।

সাবেক ও বর্তমান সতীর্থ, কোচ, ভক্ত, ক্রিকেট–সংশ্লিষ্ট সবার মুখেই মুশফিকের পরিশ্রম আর নিয়মানুবর্তিতার গল্প শোনা যাচ্ছে। শততম টেস্টের উপলক্ষের ম্যাচে মিরপুর টেস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে আরও রাঙিয়েছেন মুশফিক।
এরপর আজ সংবাদ সম্মেলনে এলে নিজের আয়নায় কেমন, তা জানতে চাওয়া হয় তাঁর কাছে। মুশফিকের উত্তরের প্রথম বাক্যটা হাসির রোলই ফেলে দেয় সংবাদ সম্মেলনে, ‘সত্যি কথা যদি বলি, আমি একজন বোরিং পারসন।’

কেন নিজেকে ‘বোরিং পারসন’ মনে করেন, সেটির একটি ব্যাখ্যাও দেন মুশফিক, ‘প্রতিদিন অনুশীলনে আমি একই কাজ বারবার করে যাই। ২০ বছর ধরে করছি, নাকি পরে আরও ৪০ বছর বেঁচে থেকে তা করব, এটা কোনো ব্যাপার নয়। যদি নিজের ও দলের জন্য তা দরকারের হয়, আমি এটা করে যেতে পারব। পেশাদারির জায়গায় কোনো ছাড় নেই। আমি শূন্য করলাম নাকি ১০০, এটা আমার সাফল্য নয়; কারণ, এটা আমার হাতে নেই। চেষ্টা, প্রসেস, সততাটা আমার হাতে আছে। আমার জীবনে এটাই একমাত্র মোটো। এটা শুধু ক্রিকেটে না, আমার জীবনের সবকিছুতেই।’

২০০৫ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয় মুশফিকের। মিরপুরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে পূর্ণ হয়েছে ১০০ টেস্ট। এই পথচলায় ৩টি ডাবল সেঞ্চুরির সঙ্গে ১২টি সেঞ্চুরি করেছেন, এই সংস্করণে রান করেছেন সাড়ে ছয় হাজারের বেশি।

পুরো পরিক্রমায় নাকি প্রক্রিয়াটা একই ছিল মুশফিকের, ‘আমি টিম হাডলেও (মাঠে ঢোকার আগের রিচুয়াল) একটা কথা বলেছি, ১০০ টেস্ট খেলেছি কিন্তু আমার মনে হচ্ছে প্রথম ম্যাচ খেলছি। একই রকম রোমাঞ্চ ছিল। প্রতিটা টেস্ট ম্যাচই আমার কাছে বিশেষ, প্রতিটা ম্যাচ যখন খেলতে যাই, আমি সেই প্রথমবারের মতোই প্রস্তুতি নেওয়ার চেষ্টা করি। নিজের সম্পর্কে এতটুকুই বলতে পারি।’

পুরো যাত্রায় অনেক ত্যাগও করতে হয়েছে মুশফিককে। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ক্রিকেটের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ কী ছিল তাঁর? এ প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য মুশফিক কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন স্ত্রী জান্নাতুল কিফায়াতের প্রতি।

মুশফিক বলেন, ‘সবচেয়ে বড় ত্যাগ আমার স্ত্রী করেছে। কারণ, আপনারাও হয়তো জানেন বা দেখেন যে আমি একটু অন্যদের তুলনায় বেশি অনুশীলন করি। কিন্তু এটা কখনো সম্ভব না, যদি আমার ঘরে এ রকম একটা পরিবেশ না থাকত।’

এরপর স্ত্রীর ত্যাগের উদাহরণও দেন মুশফিক, ‘আমরা জয়েন্ট ফ্যামিলি, দেখা যায় যে আমার স্ত্রীর ওপর যে প্রত্যাশা আছে এবং সবাইকে ওভাবে ম্যানেজ করা, কিছু হলেই ওকে ফোন দিয়ে এটা সমস্যা বা জরুরি টাকার দরকার হলে বলে। আমার দিকে না এনে ও সবকিছু করতে পারে।’

নিজের দুই সন্তানকে বড় করার ক্ষেত্রেও স্ত্রীর ভূমিকার কথা তুলে ধরেছেন মুশফিক, ‘আমার দুটো বাচ্চা আছে। রাতে স্বাভাবিক ছোট বাচ্চারা সারা রাত ঘুমায় না। কিন্তু আমার কখনো একটাও নির্ঘুম রাত কাটেনি। কারণ, সে পুরাটা সময় সেই রাত জেগে বাচ্চাদের মানুষ করেছে এবং আমাকে ওই টেনশন থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছে। যে জন্য আমি সব সময় তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।’

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে জান্নাতুল কিফায়াতকে বিয়ে করেন মুশফিক। তখন পর্যন্ত ৪০ ম্যাচের ৭৫ ইনিংসে ব্যাট করে ৩৩.৬০ গড়ে ২১৫২ রান করেন তিনি। তখনো সেঞ্চুরি ছিল মাত্র ৩টি। বিয়ের পর খেলা ৬০ টেস্টের ১০৮ ইনিংসে ৪১.৮৮ গড়ে ৪১০৫ রান করেছেন মুশফিক। এই সময়ে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ১০ সেঞ্চুরি।

এমন বদলে দেওয়ার পেছনে স্ত্রীর ভূমিকার জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান মুশফিক, ‘আমার প্রায় ১১ বছরের মতো হয়েছে সংসারজীবন। কিন্তু আমি মনে করি যে আমার ক্রিকেটে যদি আপনারা ২০১৪–এর পর থেকে দেখেন, অনেক বড় প্রভাব পড়েছে। তাই তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ