মুশফিক–লিটনের সেঞ্চুরির দিনে বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখলেন বোলাররাও
Published: 20th, November 2025 GMT
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৭৬। আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৯৮/৫।
দিনের সব আকর্ষণ যেন দ্বিতীয় ওভারেই শেষ! আরও নির্দিষ্ট করে বললে দিনের নবম বলে। আয়ারল্যান্ডের পেসার জর্ডান নিলের করা দিনের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলটিতে ১ রান নিয়েই ড্রেসিংরুমের দিকে ফিরে হেলমেট খুলে ব্যাট উঁচিয়ে ধরলেন মুশফিকুর রহিম, হাঁটু গেড়ে মাটিতে কপাল ঠেকালেন, আলিঙ্গনাবদ্ধ হলেন সঙ্গী ব্যাটসম্যান লিটন দাসের। গ্যালারির শ পাঁচেক দর্শকের প্রায় সবার মুঠোফোনেই তখন সক্রিয় হয়ে উঠেছে ক্যামেরা। মুশফিকের শততম টেস্টে শতরানের উদ্যাপনের মুহূর্তটাকে নিজের করে রাখতে চাইলেন সবাই।
কাল রাতটাও তাঁদের কেটেছে এই মুহূর্তের অপেক্ষাতেই। সবাই ধরেই নিয়েছিলেন ভাগ্য খুব বেশি খারাপ না হলে আগের দিন ৯৯ রানে অপরাজিত থাকা মুশফিক আর ১ রান করে নিজের শততম টেস্টটা আজ সেঞ্চুরি দিয়ে উদ্যাপন করবেন। তবে মুশফিক অপেক্ষায় রাখলেন দিনের প্রথম ওভারটা। ম্যাথু হামফ্রির করা পুরো ওভার একাই খেলেও কোনো রান নেননি। অপেক্ষার আনন্দময় অবসান ঘটেছে পরের ওভারে। ২১৪ বলে ১০৬ রানের ইনিংসে মুশফিকের বাউন্ডারি আগের দিনের পাঁচটিই।
দিনের নবম ও ইনিংসের ৯৯তম ওভারে স্লিপে অ্যান্ডি বলবার্নির ক্যাচ হয়ে ফিরেছেন তিনি। বাঁহাতি আইরিশ স্পিনার ম্যাথু হামফ্রিসের বলটিতে বাড়তি বাউন্স ছিল, ছিল টার্নও। মুশফিক তাতেই বিভ্রান্ত। তাঁর ব্যাটে লেগে যাওয়া বলটা দ্বিতীয় স্লিপে দারুণভাবে এক হাতে ধরে ফেলেন আইরিশ অধিনায়ক। ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে আয়ারল্যান্ডের খেলোয়াড়েরাও হাত মিলিয়ে অভিবাদন জানিয়েছেন মুশফিককে, করতালিতে অভিনন্দিত করেছেন গ্যালারির দর্শকেরা।
শততম টেস্ট বলেই মুশফিকের সেঞ্চুরি নিয়ে আলোচনাটা বেশি। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে একশতম টেস্ট খেলছেন, সেটিও উদযাপন করলেন সেঞ্চুরি দিয়ে। ক্যারিয়ার জুড়ে খেলাটার প্রতি তাঁর যে আত্মনিবেদন, সেটারই পুরস্কার এই অর্জন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে শততম টেস্টে এটি ১২তম সেঞ্চুরির কীর্তি, যে সেঞ্চুরি দিয়ে বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ ১৩টি সেঞ্চুরির রেকর্ডে মুশফিক ছুঁয়ে ফেলেছেন সতীর্থ মুমিনুল হককে।
অবশ্য তাঁর কীর্তিময় শতরানের পাশেই জ্বলজ্বল করছে ৪৭ রানে অপরাজিত থেকে প্রথম দিন শেষ করা লিটনের টেস্টে পঞ্চম সেঞ্চুরিটাও। মজার ব্যাপার হলো, মিরপুর টেস্টটি যেমন মুশফিকের শততম টেস্ট, লিটনও এই টেস্ট দিয়েই খেলছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের তাঁর শততম ম্যাচ।
বাংলাদেশের ৪৭৬ রানের ইনিংসে আয়ারল্যান্ডের অফ স্পিনার অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন একাই ৬ উইকেট নিয়েছেন। বাংলাদেশ শেষ ৫ উইকেট হারিয়েছে ৪৩ রানে। তবু প্রথম ইনিংসের ওই ৪৭৬ রানই অনেক বড় মনে হচ্ছে আয়ারল্যান্ডের জন্য। ৪১ রানের ওপেনিং জুটির পরও তারা দিন শেষ করেছে ৫ উইকেটে ৯৮ রানে। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের চেয়ে এখনও তারা পিছিয়ে ৩৭৮ রানে। ফলোঅন এড়াতে দলটিকে আরও করতে হবে ১৭৯ রান। সিলেটের পর মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদ ১০ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটার এমনিতে তেমন কোনো আবেদন ছিল না। সিলেটের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের ইনিংস জয়ের পর তো আরও নয়। তবু মুশফিকের শততম টেস্ট বলেই মিরপুর টেস্ট নিয়ে বাড়তি আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। মুশফিকের সেঞ্চুরি সে আলোচনায় নিয়ে আসে বাড়তি উদ্দীপনা।
অবশ্য বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসটা অন্য কারণেও এখন আলোচনায়। টেস্টে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এক ইনিংসে তিনটি শত রানের জুটি পেল বাংলাদেশ। জুটি তিনটি এসেছে চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ উইকেটে। চতুর্থ উইকেট জুটিতে মুশফিক–মুমিনুলের ১০৭ রান, পঞ্চম উইকেটে মুশফিক–লিটনের ১০৮ আর ষষ্ঠ উইকেটে লিটন–মিরাজের ১২৩। শেষ দিকের বিপর্যয়টা না হলে সিলেটের মতো মিরপুরেও বাংলাদেশের রানটা পাঁচ শ ছাড়িয়ে যেতে পারত।
সেটি না হলেও ব্যাটসম্যানদের পর বোলাররাও প্রত্যাশা মেটানোয় মুশফিকের শততম টেস্ট বাংলাদেশেরই নিয়ন্ত্রনে। বোলিংটা এরকমই হতে থাকলে কে জানে, কাল তৃতীয় দিনেই হয়তো ২–০তে সিরিজ জয়ের উৎসব করে ফেলবে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে)বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৪১.১ ওভারে ৪৭৬ (লিটন ১২৮, মুশফিক ১০৬, মুমিনুল ৬৩, মিরাজ ৪৭; ম্যাকব্রাইন ৬/১০৯)। আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩৮ ওভারে ৯৮/৫ (স্টার্লিং ২৭, বলবার্নি ২১; মুরাদ ২/১০, মিরাজ ১/১১, খালেদ ১/৩০, তাইজুল ১/৩২)।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শততম টেস্টে শতভাগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মুশফিকের
মুশফিকুর রহিমের বক্তব্য দীর্ঘ হলো না এক মিনিটও। কৃতজ্ঞতার লম্বা তালিকাটা তিনি গেঁথে রেখেছিলেন মনে। উপস্থিত সবাইকে দিয়ে শুরু; মা–বাবা, স্ত্রী, কোচ, সতীর্থ হয়ে ধন্যবাদের জানানোর খাতায় থাকলেন তাঁর ভক্তরাও।
কৃতজ্ঞতা জানানোর সেই পর্বজুড়েই তাঁর মুখে ছিল হাসি। আবেগও ছিল, তবে সংযত। মুশফিকের শেষ দিকের কথাগুলোই যেন হয়ে থাকল তাঁর ২০ বছরের ক্যারিয়ারের প্রতিচ্ছবি, ‘আমি বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানাই। আমিও বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এক শ ভাগ দেব, যেমনটা সব সময় চেষ্টা করি।’
বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আজ শততম টেস্ট খেলছেন মুশফিক। তাঁকে ঘিরে কাল একটা উৎসবের আবহই তৈরি হয়েছিল মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে। সতীর্থদের সঙ্গে মুশফিক ড্রেসিংরুম থেকে বেরও হন তেমন আবহ সঙ্গী করেই।
আজ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনে তাঁকে ঘিরে আয়োজনের শুরুটা হয় মাঠে সাজানো ছোট্ট একটা টেবিলের সামনে। গ্যালারিতে তখন একই রঙের জার্সি পরে মুশফিকের জন্য হাজির হয়েছিলেন কিছু দর্শক। অনুষ্ঠান মঞ্চে হাজির মুশফিকের পরিবারের সদস্য ও সাবেক সতীর্থরা।
মুশফিককে বিশেষ ক্যাপ পরিয়ে দেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার