চবির দেড় হাজার শিক্ষার্থীকে কোরআন দিল ‘মিনার’
Published: 4th, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘মিনার’ অর্থসহ কোরআন বিতরণ কর্মসূচি পালন করেছে।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে ‘আল কোরআন একাডেমি লন্ডন’ এর সৌজন্যে অন্তত প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থীদের মাঝে এ কোরআন বিতরণ করা হয়।
মিনারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন, মিনারের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইব্রাহীম। প্রধান আলোচক ছিলেন, আল কোরআন একাডেমি লন্ডনের চেয়ারম্যান হাফেজ ড. মুনির উদ্দিন আহমদ।
অন্যদের মাঝে আরো বক্তব্য দেন, বাইতুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ ড. সাইয়্যেদ মুহাম্মদ আবু নোমান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ আলী, পিএসসিজি শিক্ষাবিদ গবেষক ও কবি কর্নেল (অব.) আশরাফ আল দীন, ইমপ্রেস নিউটেক্স কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেডের পরিচালক মাওলানা নুরুল আমিন মাহদী, চবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ আবু দাউদ মুহাম্মদ মামুন প্রমুখ।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আল কোরআন একাডেমি লন্ডনের চেয়ারম্যান ড. মুনির উদ্দিন আহমদ বলেন, “কোরআনের সঙ্গে যারাই সম্পৃক্ত ছিল তারাই শ্রেষ্ঠ হয়েছে। আগামীদিনে এ জাতির পরিবর্তনের জন্য তোমাদের হাতে একটি অস্ত্র প্রয়োজন, সেই অস্ত্রের নাম কোরআন। এ কোরআনকে তোমাদের হাতে দিয়ে তোমাদের উপর একটি দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছি। এ কোরআন দিয়ে তোমরা এ দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করে দেবে।”
মিনারের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, “গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোডাকটিভ রমাদান নামে একটা প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ করে। বর্তমানে এ রকম প্রোগ্রামে হামলার কোন সম্ভাবনা নেই। মিনার আপনাদের জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসবে। তবে আমাদের একার পক্ষে পৌঁছানো সম্ভন নয়। আপনাদের সকলের প্রচেষ্টা ও সহযোগিতা থাকতে হবে।”
তিনি বলেন, “অনুবাদসহ এই কোরআন পড়ে আপনারা বুঝতে পারবেন, কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা। আমাদের এ সময়টা যৌবনের সময়, যে ব্যক্তি এ যৌবনের সুরক্ষা দিবে আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করবেন। মিনার প্রতি বছর এরকম অনুষ্ঠান করবে।”
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, “কোন ধর্মের প্রতি আমাদের বিদ্বেষ নেই, সব ধর্মের মর্যাদা সমান। আপনাদের কোরআন দেওয়া হলে ঘরে সাজিয়ে রাখেন। এটা না করে কোরআন পড়ে এর মর্ম ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। এতে করে নৈতিকতা উন্নত হলে সমাজে বিশৃঙ্খলা থাকবে না।”
তিনি বলেন, “এখন হলগুলোতে দখলদারিত্বের অবসান হয়েছে। ক্যাম্পাসে সব ধর্ম বাধাহীনভাবে পালন করতে পারছে শিক্ষার্থীরা। ইসলাম এমন ধর্ম, যেখানে সব ধর্ম নিরাপদে থাকে। আমাদের ধর্ম সবচেয়ে বেশি কল্যাণময়। আমাদের দেশের বাস্তবতা হলো- নিয়মিত নামাজ পড়ে, অথচ অফিসে টাকার জন্য ফাইল আটকায় রাখে।”
তিনি আরো বলেন, “প্রকৃত ধর্মচর্চা করলে এমন হওয়ার কথা না। আমাদের মাঝে যে জ্ঞান রয়েছে তা আল্লাহ তায়ালার দেওয়া। দুর্নীতিবাজদের ধর্মের মাধ্যমে সরল সঠিক পথে আনতে হবে। আপনাদের হাতে তুলে দেওয়া কোরআন নিয়মিত পড়বেন।”
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আপন দ র ক রআন
এছাড়াও পড়ুন:
জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিতে ব্রাজিল যাচ্ছে সাতক্ষীরার নওশীন ও নুর
জাতিসংঘের জলবায়ু-সংক্রান্ত ৩০তম সম্মেলন বা কপ-৩০ শুরু হচ্ছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের বেলেম শহরে। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু ঝুঁকিতে বিপর্যস্ত পৃথিবীকে রক্ষার অঙ্গীকারে জড়ো হচ্ছেন ১৫০ দেশের ১২ হাজারের বেশি প্রতিনিধি। এই মঞ্চে বাংলাদেশ থেকে শিশু প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিচ্ছে সাতক্ষীরার দুই শিক্ষার্থী।
এই দুজন হলো নওশীন ইসলাম ও নুর আহমদ। উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বাস্তবতা তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়েই আজ সোমবার রাত একটার দিকে তাদের বেলেমের পথে রওনা হওয়ার কথা।
নওশীন আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও প্রতাপনগর ইউনাইটেড বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা শহীদুল ইসলাম ও মা জেসমিন দুজনই শিক্ষক। নওশীন ২০২১ সাল থেকে উপকূলের শিশুদের অধিকার ও জলবায়ু ন্যায়ের আন্দোলনে যুক্ত। বর্তমানে সে ‘উপকূলীয় শিশু ফোরাম’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ এবং আশাশুনি উপজেলার সভাপতি।
অন্যদিকে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের যতীন্দ্রনগর গ্রামের বাসিন্দা নুর আহমদ সুন্দরবন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা জি. এম. রইসউজ্জামান ও মা লায়েকা খানম শিক্ষক। নুর উপকূলীয় শিশু ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি ও উপজেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে কাজ করছে।
এই দুই শিশু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার বাসিন্দা, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত অনেক বেশি। তাদের কপ-৩০-এ অংশ নেওয়ার সুযোগ এসেছে বেসরকারি সংস্থা জাগ্রত যুব সংঘের (জেজেএস) ‘স্ট্রেংদেনিং চিলড্রেনস ভয়েস অ্যান্ড লিডারশিপ ইন অ্যাড্রেসিং ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডিজাস্টার রিস্ক ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের মাধ্যমে।
প্রকল্পটির প্রকল্প ব্যবস্থাপক নবকুমার সাহা জানান, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটের ১০টি উপজেলায় শিশুদের নেতৃত্ব ও কণ্ঠস্বর শক্তিশালী করতে কাজ করছে জেজেএস। শিশুরা নিজেরাই তাদের সমস্যা ও সমাধান নির্ধারণে অংশ নিক, তাদের কণ্ঠস্বর যেন স্থানীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে শোনা যায়।
একই রকম প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করে নওশীন ইসলাম বলে, ‘উপকূলের শিশুদের দুঃখ-দুর্দশা তুলে ধরতেই ব্রাজিল যাচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়, খাবারের অভাব হয়, বাল্যবিবাহ বাড়ে। আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়া সবার দায়িত্ব। আমি চাই উন্নত দেশের নেতারা ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের শিক্ষা, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের বিষয়ে আরও আন্তরিক হোক।’
নুরের কণ্ঠেও শোনা যায় একই রকম দৃঢ়তা। সে বলে, ‘বিশ্বনেতারা নিজেদের অতীতের ভুলের দায় আমাদের ওপর যেন চাপিয়ে না দেন। যারা বেশি কার্বন নিঃসরণ করছে, তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করব।’
সন্তানদের এমন ভূমিকায় গর্বিত বলে জানিয়েছেন নওশীন ও নুরের মা-বাবা। নুরের মা লায়েকা খানম বলেন, ‘আমাদের সন্তানেরা যেন নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে পারে—এই তো সবচেয়ে বড় অর্জন।’