সাধারণত হাওর এলাকার জলমহালগুলোয় মাছ ধরা শেষ হলে ইজারাদারের পক্ষ থেকে আশপাশের গ্রামের লোকজনকে এক দিন পলো দিয়ে মাছ ধরার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু এবার ইজারাদারদের আগেই সুনামগঞ্জের বিভিন্ন জলমহালে মানুষজন ‘পলো বাওয়া’ উৎসবের নামে মাছ লুট করে নিয়ে গেছেন। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শুরুতে অনেকটা অসহায় ছিল।

জেলায় উৎসবের আমেজে জলমহালে এভাবে মাছ লুটের ঘটনা নিয়ে নানা মহলে আলোচনা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, যেভাবে হাজার হাজার মানুষ নেমে মাছ লুট করে নিয়ে গেছেন, এর আগে কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি। শুরুর দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানুষজনকে আটকাতে পারেনি। পরে মামলা ও গ্রেপ্তার এবং কঠোর হওয়ায় গত শনিবার থেকে আর কোনো জলমহালে মাছ লুটের ঘটনা ঘটেনি। এটি ভবিষ্যতের জন্য জলমহাল ব্যবসায়ীদের চিন্তার বিষয় বলে মনে করা হচ্ছে। যে কারণে ইজারা কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এতে সরকার রাজস্ব হারাবে, পাশাপাশি স্থানীয় মানুষজনও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া।

প্রশাসন, পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত ১৫ বছর জেলার বেশির ভাগ জলমহালই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। গত বছরের ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তাঁদের অনেকে আত্মগোপনে আছেন। দেশে চলমান ‘অস্থিরতার’ সুযোগ নিয়েছে একটি পক্ষ। ওই পক্ষ স্থানীয় জেলে-কৃষকদের উসকে দিয়েছে। আবার ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বও রয়েছে। কিছু লোক নিজেদের স্বার্থে উসকানি দিয়ে সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করেছে। আবার ইজারাদারদের লোকদের দীর্ঘদিনের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভও ছিল। সেটিরও বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

এদিকে ‘উৎসব করে’ মাছ লুটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলায় প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। শনিবার দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর উপজেলার ধনু নদের রসুলপুর এলাকা থেকে নিখোঁজ তিন ব্যক্তির মরদেহ সোমবার বিকেলে উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন স্থান থেকে মাছশিকারিরা সংঘবদ্ধ হয়ে খালিয়াজুরী উপজেলার বিভিন্ন জলমহালে পলো দিয়ে মাছ শিকার করছিলেন। শনিবার সকালে সহস্রাধিক মাছশিকারি পলো ও লাঠিসোঁটা নিয়ে একটি জলমহালের মাছ শিকার করতে যান। মাছশিকারিরা ধনু নদের রসুলপুর ঘাটে ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও পিকআপ রেখে নদ পার হতে ফেরি নৌকায় যেতে চাইলে রসুলপুর গ্রামের লোকজন তাঁদের বাধা দেন।

এর জেরে মাছশিকারিরা প্রথমে রসুলপুর বাজারে এবং পরে গ্রামের বাড়িঘরে হামলা করেন। তখন গ্রামবাসী সংগঠিত হয়ে তাঁদের প্রতিহত করতে এগিয়ে এলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে প্রতিপক্ষের ধাওয়ায় বেশ কয়েকজন মাছশিকারি প্রাণ বাঁচাতে ধনু নদে ঝাঁপ দেন। তাঁদের মধ্যে চারজন নিখোঁজ হন। তিনজনের মরদেহ উদ্ধার হলেও এখনো একজন নিখোঁজ আছেন বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুননেত্রকোনায় মাছ ধরা নিয়ে সংঘর্ষ, গ্রামবাসীর হামলায় নিখোঁজ ৩ জেলের লাশ উদ্ধার১০ মার্চ ২০২৫

হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের জলমহালগুলো বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের লোকদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে কিছু জলমহালে নানাভাবে বিএনপির লোকজনও অংশীদার ছিলেন। নীতিমালা অনুযায়ী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে জলমহাল ইজারা নিতে হয়। কিন্তু জলমহাল ব্যবস্থাপনার যে খরচ ও শক্তি দরকার সেটি সমিতির সাধারণ মৎস্যজীবীদের থাকে না। তাই পেছনে থাকে রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী শক্তি। প্রতিটি জলমহালের নির্ধারিত সীমানা থাকে। কিন্তু বর্ষায় পুরো হাওর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন ইজারাদারের লোকজন। স্থানীয় বাসিন্দা, দরিদ্র জেলে ও কৃষকদের হাওরের নামতে কিংবা ভাসান পানিতে মাছ ধরতে বাধা দেন তাঁরা। কথা না শুনলে তাঁদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে। এ নিয়ে ইজারাদারের প্রতি স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ রয়েছে।

আবার ইজারা না পাওয়া অন্য রাজনৈতিক দলের লোকজনেরও ক্ষোভ রয়েছে। এই সুযোগ নিয়েছে একটি পক্ষ। তারা পেছন থেকে লোকজনকে উসকানি দিয়েছে। আবার স্থানীয় লোকজনও সুযোগটি হাতছাড়া করতে চাননি।

শাল্লা উপজেলার সতোয়া বিলে দ্বিতীয় দফায় মাছ লুট করতে না পেরে বিলের খলায় আগুন দিয়ে চলে যান লোকজন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক ইজ র দ র র ল কজন জলমহ ল স ঘর ষ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

যে কারণে সালাহ-ফন ডাইকদের কাছে এই শিরোপা বিশেষ

একসময় ইংলিশ ফুটবলের রাজা তারাই ছিল। ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে আশির দশকের শেষ পর্যন্ত তো বলতে গেলে লিভারপুলেরই একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগে। তখন অবশ্য নামটা প্রিমিয়ার লিগ ছিল না, ছিল প্রথম বিভাগ লিগ। ১৯৯২ সালে প্রিমিয়ার লিগ নাম হওয়ার পর থেকে যেন লিভারপুলের দুর্ভাগ্যের শুরু। প্রথম বিভাগ যুগে ১৮টি লিগ জেতা লিভারপুল প্রিমিয়ার লিগ যুগে এসে জিততেই ভুলে গেল!

প্রিমিয়ার লিগে শুরু হলো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একচ্ছত্র রাজত্ব। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের অধীন ১৩বার লিগ জিতে ইউনাইটেডের মোট লিগ শিরোপা হয়ে গেল ২০টি। লিভারপুলকে পেরিয়ে তারা হয়ে গেল ইংল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ক্লাব।

ইউনাইটেডের সেই আধিপত্যও শেষ হলো ২০১৩ সালে ফার্গুসনের অবসরের পর। কিন্তু রাজত্ব ফিরে পেল না লিভারপুল। ইংলিশ ফুটবলের নতুন রাজা হয়ে ওঠল ম্যানচেস্টার সিটি। পেপ গার্দিওলার অধীন সর্বশেষ সাত মৌসুমে ছয়বার শিরোপা জিতে সিটি একের পর এক নতুন রেকর্ড গড়তে থাকল।

আরও পড়ুনলাল সমুদ্রে গোল উৎসবে চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল১১ ঘণ্টা আগে

মাঝে ২০১৯-২০ মৌসুমে ৩০ বছর পর লিভারপুল পেল ইংলিশ লিগের শিরোপার স্বাদ। তবে পৃথিবী তখন করোনা মহামারি চলছে। শিরোপা উৎসব হলো না লিভারপুলের মনের মতো।

এবার আর্নে স্লটের অধীন প্রথম মৌসুমেই আবার চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল। সেটাও কী রাজকীয়ভাবে! চার ম্যাচ হাতে রেখে, নিজেদের মাঠ অ্যানফিল্ডে, ভরা গ্যালারির সামনে। লিভারপুলের এটি ২০তম লিগ শিরোপা, ইউনাইটেডের সঙ্গে যৌথভাবে তারাও এখন ইংল্যান্ডের সবচেয়ে সফল ক্লাব।

ইতিহাস গড়া এই ট্রফি জেতার পর কী বলছেন লিভারপুলের খেলোয়াড়েরাকোডি গাকপোর উদ্‌যাপন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জবি ছাত্রীর আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় আটক তরুণ
  • সুইডেনে বন্দুকধারীর হামলায় নিহত ৩
  • চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও লিভারপুলের কোন খেলোয়াড়েরা পদক পাবেন না
  • বিশ্বের বড় বড় উৎসব কোথায় হয়
  • প্রাগে পুরস্কৃত ‘নট আ ফিকশন’,অনলাইনে মুক্তি ১ মে
  • ফসলের ক্ষেতে আশার আলো
  • কানে ‘আলী’, দায়িত্ব নিলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়
  • এবার লন্ডনে পুরস্কার জিতল ‘প্রিয় মালতি’
  • আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে চকলেট
  • যে কারণে সালাহ-ফন ডাইকদের কাছে এই শিরোপা বিশেষ