‘উসকানি দিয়ে’ একের পর এক হাওরের জলমহালে মাছ লুটের ‘উৎসব’
Published: 12th, March 2025 GMT
সাধারণত হাওর এলাকার জলমহালগুলোয় মাছ ধরা শেষ হলে ইজারাদারের পক্ষ থেকে আশপাশের গ্রামের লোকজনকে এক দিন পলো দিয়ে মাছ ধরার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু এবার ইজারাদারদের আগেই সুনামগঞ্জের বিভিন্ন জলমহালে মানুষজন ‘পলো বাওয়া’ উৎসবের নামে মাছ লুট করে নিয়ে গেছেন। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শুরুতে অনেকটা অসহায় ছিল।
জেলায় উৎসবের আমেজে জলমহালে এভাবে মাছ লুটের ঘটনা নিয়ে নানা মহলে আলোচনা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, যেভাবে হাজার হাজার মানুষ নেমে মাছ লুট করে নিয়ে গেছেন, এর আগে কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি। শুরুর দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানুষজনকে আটকাতে পারেনি। পরে মামলা ও গ্রেপ্তার এবং কঠোর হওয়ায় গত শনিবার থেকে আর কোনো জলমহালে মাছ লুটের ঘটনা ঘটেনি। এটি ভবিষ্যতের জন্য জলমহাল ব্যবসায়ীদের চিন্তার বিষয় বলে মনে করা হচ্ছে। যে কারণে ইজারা কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এতে সরকার রাজস্ব হারাবে, পাশাপাশি স্থানীয় মানুষজনও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া।
প্রশাসন, পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত ১৫ বছর জেলার বেশির ভাগ জলমহালই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। গত বছরের ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তাঁদের অনেকে আত্মগোপনে আছেন। দেশে চলমান ‘অস্থিরতার’ সুযোগ নিয়েছে একটি পক্ষ। ওই পক্ষ স্থানীয় জেলে-কৃষকদের উসকে দিয়েছে। আবার ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বও রয়েছে। কিছু লোক নিজেদের স্বার্থে উসকানি দিয়ে সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করেছে। আবার ইজারাদারদের লোকদের দীর্ঘদিনের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভও ছিল। সেটিরও বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
এদিকে ‘উৎসব করে’ মাছ লুটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলায় প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। শনিবার দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর উপজেলার ধনু নদের রসুলপুর এলাকা থেকে নিখোঁজ তিন ব্যক্তির মরদেহ সোমবার বিকেলে উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন স্থান থেকে মাছশিকারিরা সংঘবদ্ধ হয়ে খালিয়াজুরী উপজেলার বিভিন্ন জলমহালে পলো দিয়ে মাছ শিকার করছিলেন। শনিবার সকালে সহস্রাধিক মাছশিকারি পলো ও লাঠিসোঁটা নিয়ে একটি জলমহালের মাছ শিকার করতে যান। মাছশিকারিরা ধনু নদের রসুলপুর ঘাটে ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও পিকআপ রেখে নদ পার হতে ফেরি নৌকায় যেতে চাইলে রসুলপুর গ্রামের লোকজন তাঁদের বাধা দেন।
এর জেরে মাছশিকারিরা প্রথমে রসুলপুর বাজারে এবং পরে গ্রামের বাড়িঘরে হামলা করেন। তখন গ্রামবাসী সংগঠিত হয়ে তাঁদের প্রতিহত করতে এগিয়ে এলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে প্রতিপক্ষের ধাওয়ায় বেশ কয়েকজন মাছশিকারি প্রাণ বাঁচাতে ধনু নদে ঝাঁপ দেন। তাঁদের মধ্যে চারজন নিখোঁজ হন। তিনজনের মরদেহ উদ্ধার হলেও এখনো একজন নিখোঁজ আছেন বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুননেত্রকোনায় মাছ ধরা নিয়ে সংঘর্ষ, গ্রামবাসীর হামলায় নিখোঁজ ৩ জেলের লাশ উদ্ধার১০ মার্চ ২০২৫হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের জলমহালগুলো বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের লোকদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে কিছু জলমহালে নানাভাবে বিএনপির লোকজনও অংশীদার ছিলেন। নীতিমালা অনুযায়ী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে জলমহাল ইজারা নিতে হয়। কিন্তু জলমহাল ব্যবস্থাপনার যে খরচ ও শক্তি দরকার সেটি সমিতির সাধারণ মৎস্যজীবীদের থাকে না। তাই পেছনে থাকে রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী শক্তি। প্রতিটি জলমহালের নির্ধারিত সীমানা থাকে। কিন্তু বর্ষায় পুরো হাওর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন ইজারাদারের লোকজন। স্থানীয় বাসিন্দা, দরিদ্র জেলে ও কৃষকদের হাওরের নামতে কিংবা ভাসান পানিতে মাছ ধরতে বাধা দেন তাঁরা। কথা না শুনলে তাঁদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে। এ নিয়ে ইজারাদারের প্রতি স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ রয়েছে।
আবার ইজারা না পাওয়া অন্য রাজনৈতিক দলের লোকজনেরও ক্ষোভ রয়েছে। এই সুযোগ নিয়েছে একটি পক্ষ। তারা পেছন থেকে লোকজনকে উসকানি দিয়েছে। আবার স্থানীয় লোকজনও সুযোগটি হাতছাড়া করতে চাননি।
শাল্লা উপজেলার সতোয়া বিলে দ্বিতীয় দফায় মাছ লুট করতে না পেরে বিলের খলায় আগুন দিয়ে চলে যান লোকজন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক ইজ র দ র র ল কজন জলমহ ল স ঘর ষ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।
কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।
এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।
একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’