যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের বাংলাদেশি অধ্যুষিত ইস্ট লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপল পাতাল রেলস্টেশন থেকে বের হলে হাতের ডানে-বাঁয়ে সারিবদ্ধ খাবারের রেস্তোরাঁ। এখানকার প্রায় প্রতিটি রেস্তোরাঁই বাংলাদেশি মালিকানাধীন। রমজান মাসজুড়ে রেস্তোরাঁগুলোর সামনে শামিয়ানা টানিয়ে বাহারি পদের ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেন রেস্তোরাঁর কর্মীরা।
২২ মার্চ বিকেলের দিকে সেখানে পৌঁছে দেখা গেল, সামনে সারি করে ক্রেতারা পছন্দের ইফতারি কিনছেন। শেফরা প্রস্তুত করছেন গরম গরম মুখরোচক খাবার। আর ওয়েটাররা বুকিং করা গ্রাহকদের জন্য টেবিল প্রস্তুত, আনুষঙ্গিক গোছগাছ ও খাবার পরিবেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
একই চিত্র প্রতিটি রেস্তোরাঁয়। স্টেশন থেকে বের হয়ে ডান পাশের ফিস্ট অ্যান্ড মিস্ট রেস্তোরাঁয় ঢুকতেই একজন ওয়েটার এসে জানতে চাইলেন বুকড করা আছে কি না। ‘না’ উত্তর দিলে তিনি জানিয়ে দিলেন কোনো সিট খালি নেই, বুকিং দিয়ে আসতে হবে।
ইস্ট লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপল রোডের বুফে রেস্তোরাঁগুলোর মধ্যে বেঙ্গল টাইগার, ফিস্ট অ্যান্ড মিস্ট, সোনারগাঁ ও গ্র্যান্ড রসই বেশ প্রসিদ্ধ। শতাধিক আসনবিশিষ্ট এসব রেস্তোরাঁয় ইফতারের আগে তিলধারণের জায়গা থাকে না। রেস্তোরাঁগুলোতে দেশি খাবার পরিবেশনের মাধ্যমে মেটানোর চেষ্টা করা হয় গ্রাহকের রসনাবিলাস। তা ছাড়া পঞ্চখানা, আল হামরা, ঢাকা বিরিয়ানির ইফতারিও বেশ প্রসিদ্ধ। ব্রিকলেনের ক্যাফে গ্রিল ও গ্রামবাংলা রেস্তোরাঁয়ও ইফতারের সময় চোখে পড়ার মতো ভিড় দেখা যায়।
বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে থাকলেও ইফতারে বাংলা খাবারের স্বাদ নিতে চান বিলেতপ্রবাসী বাংলাদেশিরা। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী পাতলা খিচুড়ি থেকে শুরু করে শাহি জিলাপি, ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, গ্রিলড চিকেন, তন্দুরি চিকেন, হালিম, সমুচা, বিরিয়ানি, চিকেন টিক্কা, ল্যাম চপ, চিকেন উইংসহ নানা পদের দেশি পদ দিয়ে ইফতারি সাজান রেস্তোরাঁ মালিকেরা। পাশাপাশি থাকে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর বাহারি ফল ও জুসের সমাহার। প্রবাসী বাংলাদেশি আসাদ মিয়া বলছিলেন, দেশি খাবার ছাড়া ইফতার করে তৃপ্তি পান না। তাই তো রেস্তোরাঁ কিংবা বাসায় দেশি খাবার বেছে নেন।
হোয়াইটচ্যাপলের বেঙ্গল টাইগার রেস্তোরাঁর পরিচালক নাসির আহমদ শাহীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একজন রোজাদার ব্যক্তির চাহিদা বিবেচনা করে তাদের রেস্তোরাঁয় দেশীয় ঐতিহ্যবাহী মুখরোচক ও স্বাস্থ্যকর খাবারের সমন্বয়ে ইফতারে বুফে সুবিধা রেখেছেন। একজন গ্রাহক ১৪ দশমিক ৯৯ পাউন্ডে এখানে ইফতার করতে পারছেন। তবে আসন পেতে দু–তিন দিন আগে বুকিং দিয়ে রাখতে হচ্ছে।
স্টেপনিগ্রিন রোডের গ্র্যান্ড রসই রেস্তোরাঁয় ১৭ দশমিক ৯৫ পাউন্ডে পছন্দসই খাবার দিয়ে ইফতার করতে পারছেন রোজাদাররা। এখানে ১১ বছরের কম বয়সীদের জন্যও রয়েছে ৯ দশমিক ৯৫ পাউন্ড খরচ করে ইফতার করার সুযোগ।
হোয়াইটচ্যাপলের নিউ রোডে সলিসিটর ইমতিয়াজ আহমেদের অফিস। প্রায়ই তিনি তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে ইফতার করেন বুফে রেস্তোরাঁগুলোর কোনো একটিতে। ইমতিয়াজ আহমেদ বললেন, স্বাদ ও সাধ্যের মধ্যে ইফতারে তাঁর পছন্দ বুফে ইফতার। কারণ, এখানে অনেকগুলো আইটেম থেকে নিজের পছন্দের খাবার দিয়ে ইফতার করা যায়। ছুটির দিনগুলোতে পরিবার নিয়ে তিনি এসব রেস্তোরাঁয় ইফতার করেন।
২০২১ সালের জনশুমারি অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে সাড়ে ছয় লাখের বেশি বাংলাদেশি বাস করেন, যা সে দেশের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ। বর্তমানে সংখ্যাটি সাত লাখের বেশি হবে। অনিয়মিত অভিবাসীরা এর আওতাভুক্ত নন। এখানকার বাংলাদেশিদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ইস্ট লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসহ লন্ডনের বিভিন্ন এলাকায় আবাস গড়েছেন। অন্যান্য শহরের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশি বাস করেন বার্মিংহাম, ওল্ডহাম, ম্যানচেস্টার, লোটন, নিউক্যাসল, কার্ডিফ, গ্লাসগো ও এডিনবরায়। তা ছাড়া যুক্তরাজ্যের প্রতিটি ছোট শহরেও বাংলাদেশিদের অবস্থান আছে।
ইফতার পার্টি সংস্কৃতি
রমজান মাসজুড়ে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর আয়োজনে চলে ইফতার পার্টি। ধর্মীয় মূল্যবোধ, সামাজিক সম্প্রীতি ও বিদেশে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রয়াস থেকেই এসব ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়ে থাকে। উপস্থিতির সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে ঠিক করা হয় ভেনু৵। কেউ কেউ রেস্তোরাঁর হলরুম, কেউ কেউ বড় কোনো হল ভাড়া করে আয়োজন করেন ইফতার অনুষ্ঠান।
ফ্রেন্ডস হেল্পিং সোসাইটি নামের একটি সামাজিক সংগঠনের সভাপতি শামীম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু আমরা ভিনদেশে থাকি এবং সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করছি, তাই সমাজের পরিচিতজনদের নিয়ে একসঙ্গে ইফতার আয়োজন আমাদের সামাজিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স ক্যাথলিক গির্জার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে কোনো একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। নিজের এ মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বিশাল এক পোস্ট দিয়েছেন তিনি।
জেডি ভ্যান্স বলেন, তাঁর যে মন্তব্য নিয়ে কথা হচ্ছে, সেটি মূল বক্তব্য থেকে কেটে নেওয়া একটি অংশ। কোন প্রসঙ্গে তিনি ওই মন্তব্য করেছেন, সেটা দেখানো হয়নি।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যে তরুণদের সংগঠন ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ’র একটি অনুষ্ঠানে এক তরুণীর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত উষা হিন্দু সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছেন।
স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।
স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়া পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।জবাব দিতে এক্স পোস্টে ভ্যান্স বলেন, একটি পাবলিক ইভেন্টে তাঁকে তাঁর আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি ওই প্রশ্ন এড়িয়ে যেত চাননি, উত্তর দিয়েছেন।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘প্রথমেই বলি, প্রশ্নটি আসে আমার বাঁ পাশে থাকা একজনের কাছ থেকে, আমার আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে। আমি একজন পাবলিক ফিগার, লোকজন আমার ব্যাপারে জানতে আগ্রহী এবং আমি প্রশ্নটি এড়িয়ে যেতে চাচ্ছিলাম না।’
এ বছর জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে জেডি ভ্যান্স ও তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স