হবিগঞ্জ শহরে একটি বিপণিবিতানে ভ্যাট–সংক্রান্ত মামলার ভয় দেখিয়ে ঘুষ দাবির অভিযোগে আটক ভ্যাট পরিদর্শক শামীম আল মামুনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ। উল্টো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে থানায় সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ওই কর্মকর্তা। এসব ঘটনার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে হবিগঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

স্মারকলিপিতে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, শামীম আল মামুন গত এক সপ্তাহে শহরের বড় কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভ্যাট–সংক্রান্ত মামলার ভয় দেখিয়ে ঘুষ দাবি করেছেন। এ নিয়ে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকদের সঙ্গে তাঁর কথা–কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়েছে। তাঁর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। এরপরও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ভ্যাট বিভাগ। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, ওই কর্মকর্তা হবিগঞ্জে থাকলে ব্যবসায়ীরা শঙ্কামুক্ত হয়ে ব্যবসা করতে পারবেন না। তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

পুলিশ ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কাস্টমস কর্মকর্তা শামীম আল মামুন গত সোমবার রাতে শহরের ঘাটিয়াবাজার এলাকার এসডি প্লাজায় যান। প্রতিষ্ঠানটি হবিগঞ্জের সবচেয়ে বড় বিপণিবিতান। এ সময় এসডি প্লাজার স্বত্বাধিকারী শংকর দাস প্রতিষ্ঠানে ছিলেন না। ওই কর্মকর্তা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে ভ্যাটের কাগজপত্র যাচাই–বাছাইয়ের নামে হয়রানি শুরু করেন। একপর্যায়ে শংকর দাসের ছেলে শুভ দাসকে মামলার ভয় দেখিয়ে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। এ নিয়ে শামীম আল মামুনের সঙ্গে শুভ দাসের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এ সময় দোকানে থাকা ক্রেতারা ভ্যাট কর্মকর্তার আচরণের প্রতিবাদ করেন। বিষয়টি নিয়ে হট্টগোল শুরু হলে আশপাশের অন্য ব্যবসায়ী ও পথচারীরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। একপর্যায়ে ওই কর্মকর্তাকে আটক করে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ তাঁকে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন বেলা তিনটা পর্যন্ত তাঁকে থানায় আটক রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কেউ অভিযোগ না দেওয়ায় শামীম আল মামুনকে সন্ধ্যার দিকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

শুভ দাস প্রথম আলোকে বলেন, ভ্যাট পরিদর্শক শামীম আল মামুন ঘুষ দাবি করায় তাঁর বিরুদ্ধে তাঁরা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্তু পুলিশ এখনো মামলা নেয়নি। এখন ভ্যাট কর্মকর্তা নিজে একটি রাজনৈতিক দলের নেতা ছিলেন দাবি করে ব্যবসায়ীদের ভয় দেখাচ্ছেন এবং মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে থানায় মামলা করার চেষ্টা করছেন।

কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের হবিগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো.

সোহানুর রহমান দাবি করেন, ওই কর্মকর্তা কোনো অপরাধে অভিযুক্ত নন; বরং ব্যবসায়ীরা তাঁকে মারধর করে সরকারি কাজে বাধা দিয়েছেন। এ বিষয়ে তাঁরা থানায় অভিযোগ করেছেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের অভিযোগ এখনো আমলে নেয়নি।

সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর কবির প্রথম আলোকে বলেন, ভ্যাট কর্মকর্তা সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকের পক্ষ থেকে ঘুষ দাবি ও মামলার ভয় দেখানোর অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ দুটি অভিযোগই তদন্ত করছে। তাই কারও মামলা এখনো নেওয়া হয়নি।

হবিগঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান বলেন, ওই কর্মকর্তা হবিগঞ্জে যোগদানের পর ঢালাওভাবে ঘুষ–বাণিজ্য শুরু করেন। প্রতিদিন রাত ১১টার পর শহরের বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হানা দিয়ে ভ্যাট–সংক্রান্ত মামলার ভয় দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করে আসছেন। অসংখ্য ব্যবসায়ী তাঁদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। হাতেনাতে তাঁকে আটক করে পুলিশে দেওয়ার পর পুলিশ কেন তাঁকে ছাড়ে দিল। এ জন্য আজ জেলা প্রশাসককে বিস্তারিত জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিলে সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে তাঁরা আন্দোলনে নামবেন।

আরও পড়ুনমামলার ভয় দেখিয়ে অর্থ দাবি, কাস্টমস কর্মকর্তাকে আটকের পর ছেড়ে দিল পুলিশ২৫ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ য ট কর মকর ত শ ম ম আল ম ম ন স ম রকল প ক স টমস ব যবস থ ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

কুড়িল থেকে সদরঘাট হয়ে মিরপুরে বাসে যেতে কত সময় লাগে

ঢাকার কুড়িল থেকে সদরঘাটের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার; এক বিকালে গুগল ম্যাপে দেখাচ্ছিল যানজট ধরে গাড়িতে এই পথ পাড়ি দিতে ১ ঘণ্টা ২৪ মিনিট লাগবে, আর যানজট না থাকলে পৌঁছনো সম্ভব ৩১ মিনিটেই। এই পথ বাসে যেতে কত সময় লাগে, বুঝতে চাইলাম এক কর্মদিবসে।

৯ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার; সকাল ৮টায় কুড়িল থেকে চাপলাম বাসে। ভিক্টর ক্ল্যাসিক নামে বাসটিতে ওঠার পর মনে হলো, প্রাচীনকালের এক যানবাহনে উঠেছি; যাত্রীসেবা দিতে দিতে গাড়িটি তার নিজের অবস্থার কোনো উন্নতি করতে পারেনি। বাসের ভেতরে পেছনের দিকে জানালার পাশে একটি ফাঁকা আসন পেলাম, বসতে যেতেই হাঁটু ঠেকে গেল সামনের আসনের সঙ্গে। কোনোমতে জড়োসড়ো হয়েই বসতে হলো।

সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে, রাজধানীতে চলাচল করা মিনিবাসের আসনসংখ্যা হবে চালকেরটিসহ ৩১টি। কিন্তু এই বাসে মোট ৩৯টি আসন। ফলে জড়োসড়ো হয়েই বসতে হচ্ছে যাত্রীদের। এর বাইরে দাঁড়িয়ে ও বাসে ওঠার প্রবেশমুখেও ছিল কর্মস্থলমুখী মানুষের পথ পাড়ি দেওয়ার লড়াই।

ঢাকায় চলাচলরত অধিকাংশ বাসের বাইরে যেমন রংচটা, ভেতরটাও অপরিচ্ছন্ন। আসনের কভারগুলোও ময়লা জমে জমে তেল–চিটচিটে। ‘লক্কড়ঝক্কড়’ এই বাস নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হলেও চিত্র বদলায়নি। পুরোনো এসব গাড়ির মান উন্নত না হওয়ার জন্য মালিক এবং সরকারি কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবকেই কারণ হিসেবে দেখা হয়।

আরও পড়ুনমিরপুরে সুখবর, ৬০ ফিট সড়কের ‘চিকেন নেকে’ সমাধান আসছে১৬ অক্টোবর ২০২৫ঢাকায় চলাচলরত অধিকাংশ বাসের বাইরে যেমন রংচটা, ভেতরটাও অপরিচ্ছন্ন। আসনের কভারগুলোও ময়লা জমে জমে তেল–চিটচিটে। ‘লক্কড়ঝক্কড়’ এই বাস নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হলেও চিত্র বদলায়নি।স্টপেজ ৩টি, বাস থামল ১১ বার

কুড়িল থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত নির্ধারিত স্টপেজ তিনটি। কিন্তু এ পথটুকুতে বাসটি থেমেছে ১১ বার। যাত্রীরা যেখানে নামতে ছেয়েছেন, নামিয়েছে। আর যাত্রী ওঠাতে দাঁড়িয়েছিল দীর্ঘক্ষণ। এমন চিত্র অবশ্য রাজধানী ঢাকার সব সড়কেই, তা যানজটের বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বাসে পাশের আসনে বসে সদরঘাট যাচ্ছিলেন ঢাকার খিলক্ষেতের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. বেলাল হোসেন। গল্প–আলাপে জানলাম, খিলক্ষেতে তার একটি গাড়ি সারাইয়ের ছোট দোকান আছে। তারই কিছু যন্ত্রাংশ বানিয়ে আনতে ধোলাইখাল যাচ্ছেন তিনি। কথায় কথায় যানজটের প্রসঙ্গ এলে তিনি বলেন, সকাল সকাল রওনা দিয়েছেন যেন জ্যামে পড়তে না হয়। কিন্তু তাতেও যানজট এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। তাঁর মতে, বাসগুলো নিয়ম মেনে চললে আরও তাড়াতাড়ি গন্তব্যে সহজে পৌঁছানো যেত।

কুড়িল থেকে প্রগতি সরণি হয়ে ব্যস্ত এই সড়কে বাস থামার নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থান নির্ধারিত থাকলেও তা মানা হয় না। কখনো কখনো ট্রাফিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকলে কালেভদ্রে আইন মানতে চান বাসচালকেরা। এই বাসটিও ইচ্ছেমতো যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী উঠা–নামা করেই সামনে এগিয়ে চলছিল।

নতুন বাজার থেকে থেমে থেমেই গেছি সদরঘাটে। সকাল আটটার দিকে রওনা দিয়ে কর্মব্যস্ত দিনের সকালে সদরঘাট পৌঁছাতে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা। এর মধ্যে বড় ধরনের যানজটে পড়তে হয়েছে বাড্ডা লিংক রোড, রামপুরা ব্রিজ এলাকা, আবুল হোটেল, কাকরাইল, গুলিস্তান, সুরিটোলা, তাঁতীবাজার, বংশাল ও জনসন রোডে। রিকশার দখল এবং বাসচালকদের সড়ক আটকে যাত্রী উঠানামা করার কারণেই এই যানজট; কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘ সিগন্যালও যানজট বাড়িয়ে তোলে।

আরও পড়ুনঢাকার পরিবহনব্যবস্থার সংকটের কারণ কী১০ অক্টোবর ২০২৫ভিক্টর ক্ল্যাসিকের এই বাসের মতো ঢাকার অধিকাংশ বাসই রংচটা

সম্পর্কিত নিবন্ধ