হবিগঞ্জে ঘুষ দাবির অভিযোগে আটক ভ্যাট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের স্মারকলিপি
Published: 27th, March 2025 GMT
হবিগঞ্জ শহরে একটি বিপণিবিতানে ভ্যাট–সংক্রান্ত মামলার ভয় দেখিয়ে ঘুষ দাবির অভিযোগে আটক ভ্যাট পরিদর্শক শামীম আল মামুনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ। উল্টো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে থানায় সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ওই কর্মকর্তা। এসব ঘটনার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে হবিগঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
স্মারকলিপিতে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, শামীম আল মামুন গত এক সপ্তাহে শহরের বড় কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভ্যাট–সংক্রান্ত মামলার ভয় দেখিয়ে ঘুষ দাবি করেছেন। এ নিয়ে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকদের সঙ্গে তাঁর কথা–কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়েছে। তাঁর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। এরপরও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ভ্যাট বিভাগ। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, ওই কর্মকর্তা হবিগঞ্জে থাকলে ব্যবসায়ীরা শঙ্কামুক্ত হয়ে ব্যবসা করতে পারবেন না। তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
পুলিশ ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কাস্টমস কর্মকর্তা শামীম আল মামুন গত সোমবার রাতে শহরের ঘাটিয়াবাজার এলাকার এসডি প্লাজায় যান। প্রতিষ্ঠানটি হবিগঞ্জের সবচেয়ে বড় বিপণিবিতান। এ সময় এসডি প্লাজার স্বত্বাধিকারী শংকর দাস প্রতিষ্ঠানে ছিলেন না। ওই কর্মকর্তা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে ভ্যাটের কাগজপত্র যাচাই–বাছাইয়ের নামে হয়রানি শুরু করেন। একপর্যায়ে শংকর দাসের ছেলে শুভ দাসকে মামলার ভয় দেখিয়ে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। এ নিয়ে শামীম আল মামুনের সঙ্গে শুভ দাসের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এ সময় দোকানে থাকা ক্রেতারা ভ্যাট কর্মকর্তার আচরণের প্রতিবাদ করেন। বিষয়টি নিয়ে হট্টগোল শুরু হলে আশপাশের অন্য ব্যবসায়ী ও পথচারীরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। একপর্যায়ে ওই কর্মকর্তাকে আটক করে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ তাঁকে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন বেলা তিনটা পর্যন্ত তাঁকে থানায় আটক রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কেউ অভিযোগ না দেওয়ায় শামীম আল মামুনকে সন্ধ্যার দিকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
শুভ দাস প্রথম আলোকে বলেন, ভ্যাট পরিদর্শক শামীম আল মামুন ঘুষ দাবি করায় তাঁর বিরুদ্ধে তাঁরা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্তু পুলিশ এখনো মামলা নেয়নি। এখন ভ্যাট কর্মকর্তা নিজে একটি রাজনৈতিক দলের নেতা ছিলেন দাবি করে ব্যবসায়ীদের ভয় দেখাচ্ছেন এবং মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে থানায় মামলা করার চেষ্টা করছেন।
কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের হবিগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো.
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর কবির প্রথম আলোকে বলেন, ভ্যাট কর্মকর্তা সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকের পক্ষ থেকে ঘুষ দাবি ও মামলার ভয় দেখানোর অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ দুটি অভিযোগই তদন্ত করছে। তাই কারও মামলা এখনো নেওয়া হয়নি।
হবিগঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান বলেন, ওই কর্মকর্তা হবিগঞ্জে যোগদানের পর ঢালাওভাবে ঘুষ–বাণিজ্য শুরু করেন। প্রতিদিন রাত ১১টার পর শহরের বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হানা দিয়ে ভ্যাট–সংক্রান্ত মামলার ভয় দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করে আসছেন। অসংখ্য ব্যবসায়ী তাঁদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। হাতেনাতে তাঁকে আটক করে পুলিশে দেওয়ার পর পুলিশ কেন তাঁকে ছাড়ে দিল। এ জন্য আজ জেলা প্রশাসককে বিস্তারিত জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিলে সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে তাঁরা আন্দোলনে নামবেন।
আরও পড়ুনমামলার ভয় দেখিয়ে অর্থ দাবি, কাস্টমস কর্মকর্তাকে আটকের পর ছেড়ে দিল পুলিশ২৫ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ য ট কর মকর ত শ ম ম আল ম ম ন স ম রকল প ক স টমস ব যবস থ ব যবস য়
এছাড়াও পড়ুন:
পটিয়ায় বিএনপির প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে তারেক রহমানকে ৪ নেতার চিঠি
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে দলীয় প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে চিঠি দিয়েছেন দলটির চার নেতা। গত বুধবার চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির প্যাডে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ চিঠি দেওয়া হয়। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়। চিঠিতে এই চারজন দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনেছেন।
চিঠিতে স্বাক্ষর করা বিএনপির এই চার নেতা হলেন পটিয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোহাম্মদ ইদ্রিচ মিয়া এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ও সাইফুদ্দিন সালাম।
পটিয়া আসনের বিএনপির দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে এনামুল হককে। তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনেও বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুনএস আলমের গাড়ি–কাণ্ড: চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪জানতে চাইলে দলীয় প্রার্থী পুনর্বিবেচনা চেয়ে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিচ মিয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এনামুল হকের সঙ্গে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের অনেকেই চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এটি বিভিন্ন পত্রিকায় এসেছে আবার এলাকার লোকজনের মধ্যে মুখে মুখে আলোচনা হচ্ছে।
ইদ্রিচ মিয়া আরও বলেন, এস আলম গ্রুপের জন্য বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এনামের। এ কারণে দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাই তাঁরা প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবি করেছেন। তবে দল যাঁকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে, তাঁরা তাঁর পক্ষে কাজ করবেন।
এস আলমের গাড়ি-কাণ্ড নিয়ে যত আলোচনা
গত বছরের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামের একটি কারখানা থেকে বিলাসবহুল কয়েকটি গাড়ি বের হওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, একটি কারখানা থেকে একের পর এক দামি গাড়ি বের হচ্ছে। সেখানে কয়েকজন ব্যক্তি তা তদারক করছেন।
আরও পড়ুনএকের পর এক বিলাসবহুল গাড়ি বের হওয়ার ভিডিও, যা জানা গেল৩১ আগস্ট ২০২৪যাঁরা ভিডিওটি শেয়ার করেছেন, তাঁদের ভাষ্য, গত বছরের ২৯ আগস্ট সন্ধ্যার পর গাড়িগুলো বের হয়। এগুলো বিতর্কিত শিল্প গ্রুপ এস আলমের গাড়ি এবং যাঁরা তত্ত্বাবধানে আছেন, তাঁরা বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত।
এ ঘটনা নিয়ে সমালোচনা হওয়ার পর বিএনপির তিন নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় কেন্দ্র। এতে তৎকালীন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হকও ছিলেন। তাঁর সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলমের (মাসুদ) মেয়ের শ্বশুর মীর গ্রুপের আবদুস সালাম সম্পর্কে এনামুল হকের মামাতো ভাই। কারখানাটি থেকে যে গাড়িগুলো বের হয়েছিল, সেটি মীর গ্রুপের। এ ঘটনার প্রায় ৪ মাস পর ২৫ ডিসেম্বর এনামুল হকসহ তিন নেতার পদ ফিরিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্র।
তবে এস আলম–সংশ্লিষ্টতা নিয়ে চার নেতার অভিযোগ অস্বীকার করেন এনামুল হক। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ৩ নভেম্বর তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার পর পটিয়ার জনগণ উৎফুল্ল।
এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোনয়ন দেওয়ার আগে অনেক যাচাই–বাছাই ও জরিপ করে যাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে, তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছেন। মনোনয়ন দেওয়ার আগে সবাইকে ডেকে বলেছেন, প্রত্যেকের দলের মধ্য অবদান রয়েছে; কিন্তু দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তাঁর সঙ্গে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এ সময় উপস্থিত সবাই একমত পোষণ করেছেন। এর পরও অনেকের মান–অভিমান থাকতে পারে।’