গ্রামাঞ্চলে নারীর কর্মসংস্থান: ক্ষুদ্র উদ্যোগ, নাকি বড় চ্যালেঞ্জ
Published: 28th, November 2025 GMT
সকালের উনুনে জ্বলা আগুনের দিকে তাকিয়ে থাকা গ্রামীণ নারীর জীবনও ঠিক ওই আগুনের মতোই। কখনো ইচ্ছা হয় তুমুল সম্ভাবনা নিয়ে জ্বলে ওঠার, আবার সেই ইচ্ছা নিভেও যায় নানা বাধায়। সংসারের কাজ সামলে তাঁরা চেষ্টা করেন পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা বাড়াতে। কিন্তু অবহেলার কারণে গ্রামীণ নারীর পরিশ্রম ও সম্ভাবনা সমাজে যথেষ্ট গুরুত্ব পায় না।
এ দেশের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা নারী। এ তথ্যই বলে দেয় তাঁদের অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ কতটা জরুরি। শহরে নারীর কর্মসংস্থান তুলনামূলকভাবে বাড়লেও গ্রামে এ অগ্রগতি এখনো ধীর। দেশের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হলে গ্রামীণ নারীর কর্মসংস্থানের প্রতি গুরুত্বারোপ করা ছাড়া বিকল্প নেই।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, বাংলার বাণিজ্য, তাঁতশিল্প, কুটিরশিল্প—সবকিছুর ভিত্তিই গড়ে উঠেছিল গ্রামীণ নারীর হাতের বুননে। কৃষির সূচনাতেও নারীর অবদান ছিল অপরিসীম।
আজও গ্রামীণ নারীদের বেশির ভাগই কৃষিকাজে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। বীজ বপন, ফসল প্রক্রিয়াকরণ, বিপণন, গবাদিপশু পালন থেকে শুরু করে অসংখ্য কাজ তাঁরা নীরবে করে থাকেন। যদি তাঁদের যথাযথ অর্থায়ন, প্রশিক্ষণ ও বাজার-সংযোগ নিশ্চিত করা যায়, তবে কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বাড়বে, খাদ্যনিরাপত্তা আরও দৃঢ় হবে।
অন্যদিকে কর্মসংস্থানের অভাবে অনেক নারী ঘরে বসেই নকশিকাঁথা, বেত-বাঁশের কারুশিল্প, মৃৎশিল্পসহ নানা পণ্য উৎপাদন করেন। কেউ কেউ প্রসাধনী দোকান, পারলার কিংবা মোবাইল সার্ভিস সেন্টারেও কাজ করেন। তাঁদের এ আগ্রহ প্রমাণ করে, সুযোগ দিলে তাঁরা সক্ষমতার নতুন দিগন্ত তৈরি করতে পারেন। প্রয়োজন কেবল সঠিক প্রশিক্ষণ, বাজারজ্ঞান ও আর্থিক সহায়তা।
আত্মনির্ভরতা নারীর আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এতে নিজ সিদ্ধান্ত গ্রহণে, সন্তান লালন কিংবা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য নিয়ে তাঁরা আরও সচেতন হয়ে ওঠেন। তাঁদের সৃজনশীলতা বিকাশের সুযোগ পেলে এ ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
উদ্যোক্তা হতে হলে প্রয়োজন হিসাবরক্ষণ, বিপণন দক্ষতা, ডিজিটাল সাক্ষরতা ও প্রযুক্তি ব্যবহারের জ্ঞান, যার অনেকটাই গ্রামীণ নারী পান না। ফলে তাঁদের মানসম্মত পণ্য শহরের বড় বাজারে পৌঁছায় না। অনেক ব্যাংকও নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে দ্বিধাবোধ করে। বিআইজিডির তথ্য বলছে, স্মার্টফোন হাতে থাকলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণ নারীর হাতে থাকে না। তা ছাড়া ইন্টারনেট সুবিধার অভাব তাঁদের উদ্যোগ সম্প্রসারণের পথও আটকে দেয়। ফলে কম লাভ ও বাজার সংকোচনের কারণে অনেক উদ্যোগ ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে ডিজিটাল সাক্ষরতা, কারিগরি শিক্ষায় প্রবেশাধিকার ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে গ্রামীণ নারী এখনো শহুরে নারী-পুরুষের তুলনায় খুব পিছিয়ে।
তবু আশা আছে। নারীর ক্ষুদ্র উদ্যোগ দেশের বড় অর্থনৈতিক সাফল্য বয়ে আনতে পারে যদি আমরা তাঁদের সামান্য সহায়তাও নিশ্চিত করি। যেসব নারী অদৃশ্য শ্রমের ভেতরে থেকেও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছেন, তাঁদের গল্পগুলো সামনে আনতে হবে, বাধাগুলো দূর করতে হবে। গ্রামীণ নারীর জীবনের উনুনে জ্বলতে থাকা ছোট্ট ইচ্ছাশিখাকে স্থায়ী অগ্নিশিখায় পরিণত করাই আমাদের দায়িত্ব। যা শুধু নারী নয়, দেশের সার্বিক উন্নয়নকেও ত্বরান্বিত করবে।
লাবনী আক্তার শিমলা শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র উদ য গ
এছাড়াও পড়ুন:
ফুটবলে ম্যাচে মারামারির ঘটনায় ১৭ লাল কার্ড
বলিভিয়ার বার্ষিক কাপ প্রতিযোগিতা কোপা বলিভিয়া। দেশটির শীর্ষ লিগের ১৬টি দল এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। গত পরশু কোয়ার্টার ফাইনাল ফিরতি লেগে জেসুস বারমুদেজ স্টেডিয়ামে স্বাগতিক হয়ে ব্লুমিংয়ের মুখোমুখি হয় রিয়াল অরুরো। প্রথম লেগ ২-১ গোলে জেতায় ফিরতি লেগ ২-২ গোলে ড্র করেও দুই লেগ মিলিয়ে শ্রেয়তর গোল ব্যবধানে সেমিফাইনালে ওঠে ব্লুমিং। কিন্তু এই ম্যাচের ফল ছাপিয়ে আলোচনায় দুই দলের খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফদের মারামারির ঘটনা এবং ১৭টি লাল কার্ড!
বলিভিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘এল পোতোসি’ জানিয়েছে, ফিরতি লেগের ম্যাচ শেষে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। স্বাগতিক দল রিয়াল অরুরোর খেলোয়াড় এবং স্টাফরা মারামারি শুরু করেন। পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে।
অফিশিয়াল সম্প্রচারকদের ফুটেজ থেকে সংবাদমাধ্যমটি আরও জানায়, রিয়াল অরুরোর খেলোয়াড় সেবাস্তিয়ান জেবায়োস, হুলিও ভিলা ও কোচ মার্সেলো রোবলেদো ম্যাচ শেষে পাশের অ্যাথলেটিক ট্র্যাকে প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড় ও স্টাফদের ওপর চড়াও হন। জেবায়োসকে ব্লুমিংয়ের খেলোয়াড়েরা শান্ত করার চেষ্টা করেন। কোচ রোবলেদো বলিভিয়া জাতীয় দলের এক অফিশিয়ালের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ান। ভিলা ঘুষি মারেন ব্লুমিংয়ের খেলোয়াড়কে।
মারামারি লাগার সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। এল পোতোসির অনলাইন প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফিরতি লেগের ফল মেনে নিতে পারেনি রিয়াল অরুরোর খেলোয়াড়েরা। মেজাজ হারিয়ে তারা এই কাণ্ড ঘটান।
আরও পড়ুনকাতারে ছোটদের বিশ্বকাপ জিতল পর্তুগাল, রোনালদোর অভিনন্দন২ ঘণ্টা আগেদুই পক্ষকে শান্ত করতে ২০ জন পুলিশ মাঠে ঢুকে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেন। কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘মিরর’ জানিয়েছে, অফিশিয়াল ম্যাচ প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্লুমিংয়ের ৭ জন খেলোয়াড়কে লাল কার্ড দেখান রেফারি। রিয়াল অরুরোর ৪ জন খেলোয়াড়কে লাল কার্ড দেখানো হয়। দুই দলের কোচিং স্টাফ থেকে আরও ৬ জনকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। সব মিলিয়ে মোট ১৭ জন লাল কার্ড দেখেন।
মিরর আরও জানিয়েছে, ব্লুমিংয়ের অন্তত ছয়জন খেলোয়াড় লাল কার্ড দেখার নিষেধাজ্ঞার কারণে এবারের কাপ প্রতিযোগিতায় দলটির পরবর্তী ম্যাচগুলোয় খেলতে পারবেন না। তবে রেফারি রেনান কাস্তিয়ো ম্যাচের সম্পূরক প্রতিবেদন বলিভিয়ার স্পোর্টস ডিসিপ্লিনারি ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর পর শাস্তি আরও বাড়তে পারে। বলিভিয়ান অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘ভিশন৩৬০’ জানিয়েছে, রিয়াল অরুরোর কোচ রোবলেদো কাঁধে আঘাত পেয়েছেন এবং তাঁকে হাসপাতালেও যেতে হয়।
আরও পড়ুনফিফার ‘সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না’ নীতি—রোনালদোর শাস্তি স্থগিতের আসল গল্প৫ ঘণ্টা আগে