আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খোলা রাখার দাবিতে বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রক্টরের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বচসার এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি হয়। এর আগে মঙ্গল ও বুধবার শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেন। 

সম্প্রতি প্রাধ্যক্ষ পরিষদ নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে এবারের ঈদে আবাসিক হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। ২৮ মার্চ থেকে আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত হল বন্ধ থাকবে। ৪ এপ্রিল সকাল ১০টায় আবাসিক হল খুলে দেওয়া হবে। এ ঘোষণার পর থেকে তিন দিন ধরে শিক্ষার্থীরা ‘শিক্ষক কোয়ার্টার খোলা রেখে হল বন্ধ কেন?’, ‘আবাসিক হল বন্ধ করা চলবে না’, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কি বন্ধ’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করেন। 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সকাল ১০টা থেকে কর্মসূচি পালন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর ১২টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব কার্যালয়ে আসেন। তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা না বলে ভেতরে চলে যান। আন্দোলনকারীরা ভবনের ফটক তালাবদ্ধ করে কর্মসূচি চালিয়ে যান। এতে উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, উপ-উপাচার্যসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ হয়ে যান। দুপুর দেড়টার সময় প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি শিক্ষার্থীদের সরিয়ে তালা খুলতে গেলে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে তালা খুলে অবরুদ্ধ কর্মকর্তাদের অবমুক্ত করেন প্রক্টর। মুক্ত হয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর উচ্চবাচ্য করেন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ। 

কর্মসূচি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রাকিব হোসেন বলেন, আমরা প্রশাসন ভবনে অবস্থান নিই। উপাচার্য স্যার আমাদের ডিঙিয়ে কক্ষে যাচ্ছিলেন; কোনো কথা বলেননি। এ কারণে আমরা তালা মারতে বাধ্য হই। দুপুর দেড়টার দিকে প্রক্টর এসে ধস্তাধস্তি করে তালা ভাঙতে যান। এতে আমাদের একজন আহত হয়েছেন। আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন প্রক্টর। 

প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক বায়তুল মোকাদ্দেসুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তারা কথা না শুনে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের সমস্যা থাকতেই পরে। সমস্যা সমাধানে হল প্রাধ্যক্ষরা সভা করতেই প্রশাসনিক ভবনে যাচ্ছিলেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা ভবনে তালা দিয়ে আমাদের কাজ ব্যাহত করেছে। তালা খুলতে অনুরোধ বললেও তারা শোনেনি। তখন তাদের কাছে থেকে চাবি ছিনিয়ে নিতে কিছুটা ধস্তাধস্তি হয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ধস ত ধস ত উপ চ র য অবস থ ন আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

মধ্যপ্রদেশে ইউরিয়া সারের তীব্র সংকট, হয়েছে লুট, দুজন কৃষকের মৃত্যু

ভারতের মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় সারের সংকট তীব্র হয়েছে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও প্রয়োজনীয় সার পাচ্ছেন না কৃষকেরা। এতে অসন্তোষ ছড়িয়েছে। বিক্ষোভ হয়েছে। এমনকি ইউরিয়া সারের ট্রাক লুটের মতো ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে বিতরণ কেন্দ্রে সারের জন্য সারিতে দাঁড়ানো আরেকজন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যটিতে গত দুই সপ্তাহের মধ্যে সার সংকট ঘিরে এটা দ্বিতীয় মৃত্যুর ঘটনা। 

গত সোমবার মধ্যপ্রদেশের টিকামগড় জেলার বাদোরাঘাট সার বিতরণ কেন্দ্রে সারিতে দাঁড়ানো অবস্থায় ৫২ বছর বয়সের যমুনা কুশওয়াহা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। কারি বাজরুয়া গ্রামের এ কৃষক দুই বস্তা ইউরিয়া সার পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে পরপর তিন দিন লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

স্বজনেরা জানান, ওইদিন যমুনা না খেয়েই সকালেবেলা গ্রাম থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরের সার বিতরণ কেন্দ্রে যান। সেখানে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দুপুরের দিকে অসুস্থ হয়ে পড়ে যান। পরে দ্রুত জেলা হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। কর্মকর্তারা জানান, ময়নাতদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, যমুনা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

বিতরণ কেন্দ্রে বাইরে অসুস্থ হয়ে পড়া কৃষখ যমুনাকে সরকারি গাড়িতে হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয় তহশিলদার সত্যেন্দ্র গুর্জরই। স্থানীয় দেহাত থানা–পুলিশের স্টেশন হাউস অফিসার চন্দ্রজিৎ যাদব নিশ্চিত করেন, যমুনার মৃত্যু হৃদরোগে হয়েছে।

এর আগে গত ২৬ নভেম্বর রাজ্যের গুনা জেলার একটি সার বিতরণ কেন্দ্রের বাইরে পরপর দুই দিন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর মারা যান ৪৫ বছরের ভূরি বাঈ।

টিকামগড়ের সহকারী কৃষি পরিচালক (ডিডিএ) অশোক শর্মা জানান, ১৯ হাজার টন ইউরিয়া সার বিতরণ করা হয়েছে। আরও ২ হাজার ৮০০ টন ইউরিয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

তবে অশোক শর্মা দাবি করেন, টোকেনে থাকা সময় ধরেই সার বিতরণ করা হচ্ছে। বাদোরাঘাট সার বিতরণ কেন্দ্রের বাইরে কারও মারা যাওয়ার তথ্য তাঁর কাছে নেই।

যদিও কৃষকেরা ভিন্ন কথা বলছেন। তাঁদের অভিযোগ, টোকেন ন্যায্যভাবে দেওয়া হচ্ছে না। অনেক সময় কয়েক ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এরপরও অনেককেই সার না পেয়ে দিনশেষে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।

মধ্যপ্রদেশের টিকামগড় এবং আশপাশের জেলাগুলোয় সার সংকট নিয়ে কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে গত সোমবার কয়েক শ কৃষক সেখানকার প্রধানতম একটি মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এর ফলে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়।

এ ছাড়া গত সপ্তাহে বিক্ষুব্ধ কৃষকেরা টিকামগড়ের জাতারা কৃষিপণ্য বাজারে সরাসরি বিতরণ ট্রাক থেকে ইউরিয়ার বস্তা লুট করেন। একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গত বুধবারের ওই ঘটনায় প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি সারের বস্তা লুট হয়েছে। পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে এলেও, এ ঘটনায় জেলার সার সরবরাহের ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) স্থানীয় সাহারিয়া জাতিগোষ্ঠীর সদস্য ভূরি বাঈয়ের মৃত্যুর পর থেকে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ভূরির মৃত্যুর কয়েকদিন পর গুনা আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানাতে যান এবং স্থানীয় প্রশাসনকে তিরস্কার করেন।

ভারতে চলতি অর্থবছরে ইউরিয়া সারেরর ব্যবহার ৪ কোটি টনে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত বর্ষায় বাড়তি চাহিদা এবং গত এক দশক ধরে সর্বোচ্চ খুচরামূল্য প্রায় অপরিবর্তিত থাকার কারণে সারটির ব্যবহার ক্রমেই বেড়েছে। দেশের সবচেয়ে ব্যবহৃত সারটির বিক্রি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৮ লাখ টনে পৌঁছে, সর্বকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছে।

এই বছর ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ভালো বৃষ্টি হয়েছে। জলাধারগুলো ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ফের পূর্ণ হওয়ায় কৃষকেরাও নতুন উদ্যমে চাষাবাদ শুরু করেছেন। মধ্যপ্রদেশ সরকার জানিয়েছে, এবারের রবি মৌসুমে (অক্টোবর–মে) জলাধারে পানি বেশি থাকার কারণে ইউরিয়া সারের চাহিদাও বাড়তির দিকে রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ