কাবাডি টেস্ট সিরিজে হারে শুরু বাংলাদেশ নারী দলের। আজ রোববার নেপালের ললিতপুলের সাতদোবাতোয়া তায়কোয়ানদো হলে অনুষ্ঠিত প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক নেপালের কাছে ৪১-১৮ পয়েন্টে হেরে যায় বাংলাদেশ। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয়টি আজ একই ভেন্যুতে হবে।
শক্তিতে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে নেপাল নারী দল। এসএ গেমস ও এশিয়ান গেমসে নেপালের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ নারী দল। এ ছাড়া শারীরিক গড়নেও এগিয়ে নেপাল দল। ম্যাচে এই সুবিধা বেশ ভালোভাবে কাজ লাগিয়েছে তারা। শুরু থেকেই পয়েন্ট বাড়িয়ে নিতে থাকে স্বাগতিক দল। বোনাস পয়েন্টে এগিয়ে যায় তারা। পাশাপাশি প্রথমার্ধে একটি লোনা পায় নেপাল। ১৮-৬ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধের খেলা শেষ করে নেপাল। দ্বিতীয়ার্ধেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। একই ছন্দে খেলে ম্যাচ নিজেদের আয়ত্তে রাখে নেপাল। এই অর্ধে আরও দুটি লোনা পায় নেপাল। হারের জন্য ভ্রমণ ক্লান্তি ও ইনজুরিকে দায়ী করেছেন বাংলাদেশ দলের কোচ শাহনাজ পারভিন মালেকা, ‘আমরা গতকালই (শনিবার) ঢাকা থেকে এখানে এসেছি। তাই সেভাবে বিশ্রামের সময় পাইনি। এ ছাড়া আমাদের দুই থেকে তিনজন খেলোয়াড় ইনজুরিতে আছে। এই ম্যাচ থেকে যে সমস্যাগুলো আমরা বুঝতে পেরেছি; আশা করছি, সেগুলো কাটিয়ে পরের ম্যাচগুলোতে আমরা ভালো কিছু করব। নেপাল নিয়মিত অনুশীলনে ছিল। কিন্তু আমরা ঈদের কারণে ছুটিতে গিয়েছিলাম। তাই আমাদের অনুশীলনের কিছুটা ঘাটতি ছিল। তবে আশা করছি, আগামীকালের (সোমবার) ম্যাচে আজকের তুলনায় অনেক ভালো খেলবে বাংলাদেশ।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
খলাপাড়ার গণহত্যা দিবস: স্বাধীনতার প্রান্তে শহীদ হন ১০৬ জন
১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা বাঙালি জাতির ইতিহাসে বেদনাবিধুর একটি দিন। এদিন, গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের খলাপাড়া গ্রামের ন্যাশনাল জুট মিলস রক্তাক্ত হয়। মিলের ভেতর কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী সন্দেহে আটক ১০৬ জন নিরীহ বাঙালিকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
সেই থেকে প্রতিবছর ১ ডিসেম্বর শহীদদের স্মরণে কালীগঞ্জ গণহত্যা দিবস পালিত হয়ে আসছে। উপজেলা প্রশাসন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসমূহ শহীদদের গণকবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। তারা দোয়া ও মোনাজাত করেন শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনায়।
আরো পড়ুন:
‘১৭ বছরে ৯৪ হাজার থেকে মুক্তিযোদ্ধা আড়াই লাখ করা হয়েছে’
১২৮ জুলাই যোদ্ধার গেজেট বাতিল
কালীগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম হুমায়ুন মাস্টার সেই দিনের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি জানান, ১৯৭১ সালের সেই সকালে মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা নাস্তার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখনই পাশের ঘোড়াশাল ক্যাম্প থেকে নদী পার হয়ে হানাদার বাহিনী মিল চত্বরে প্রবেশ করে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধানে অভিযান চালানোর নামে সেখানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী নিরস্ত্র বাঙালিদের ধরে ধরে জড়ো করে।
সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে চলে ব্রাশফায়ার। প্রাণহীন হয়ে পড়ে একের পর এক শরীর। ন্যাশনাল জুট মিলে নেমে আসে নীরবতা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গণহত্যা শেষে পাকবাহিনী মিলের দক্ষিণ পাশের দেয়াল ভেঙে পালিয়ে যায়। শহীদদের মরদেহ পড়ে ছিল মিলের সুপারি বাগানে। ভয় ও আতঙ্কে কেউ কাছে যাওয়ার সাহস পাননি। মরদেহগুলো শেয়াল-শকুনের খাদ্যে পরিণত হয়। স্বাধীনতার পর এলাকাবাসী মিল চত্বরে প্রবেশ করে বিকৃত অবস্থায় ১০৬ জন শহীদের মরদেহ উদ্ধার করেন। তারপর মিলের দক্ষিণ পাশে কবর খুঁড়ে একসঙ্গে শহীদদের সমাহিত করেন তারা।
শহীদদের স্মরণে মিল কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করেন একটি স্মৃতিস্তম্ভ ‘শহীদের স্মরণে ১৯৭১’। গণকবরের পাশেই পরবর্তীতে গড়ে ওঠে একটি পাকা মসজিদ-যেখানে প্রতিনিয়ত দেশের জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া হয়।
কালীগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এটিএম কামরুল ইসলাম বলেন, “খলাপাড়ার সেই ১০৬ শহীদের রক্তগাথা কেবল অতীত নয়-এটি জাতির কাছে এক চিরন্তন দায়বদ্ধতার স্মারক। নতুন প্রজন্মের কাছে এই ইতিহাস পৌঁছে দেওয়া আর শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি ন্যায্য সম্মান জানানোই হোক আমাদের প্রতিদিনের অঙ্গীকার।”
ঢাকা/মাসুদ