মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা আজহারের আপিল কার্যতালিকায় উঠছে আগামীকাল
Published: 21st, April 2025 GMT
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের করা আপিল আগামীকাল মঙ্গলবার আপিল বিভাগের কার্যতালিকার শীর্ষে থাকবে।
বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যদের আপিল বিভাগ আজ সোমবার এ সিদ্ধান্ত দেন। আপিল শুনানি করতে দিন ধার্যের জন্য বিষয়টি উপস্থাপন করার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ সিদ্ধান্ত জানান।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে এ টি এম আজহারুল ইসলামের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ লিভ (আপিলের অনুমতি) মঞ্জুর করে আদেশ দেন। সেই সঙ্গে পাশাপাশি দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সংক্ষিপ্তসার জমা দিতে বলা হয়। পরে আপিলের সংক্ষিপ্তসার জমা দেওয়া হয়। আপিল শুনানির দিন নির্ধারণের জন্য আজ আদালতে আরজি জানান আজহারুলের আইনজীবী।
আরও পড়ুনমানবতাবিরোধী অপরাধ: জামায়াত নেতা আজহারের রিভিউ শুনানি মঙ্গলবার২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আদালতে আজহারুলের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক এবং আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো.
পরে আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপিলের সারসংক্ষেপ এরই মধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে। শুনানির দিন নির্ধারণের জন্য বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। আগামীকাল আপিলটি কার্যতালিকার শীর্ষে থাকবে বলে জানিয়েছেন আপিল বিভাগ।’
এর আগে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আজহারুলকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন আজহারুল।
এই আপিলের ওপর শুনানি শেষে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ রায় দেন। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
আরও পড়ুনমৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা আজহারের আপিল শুনবেন আপিল বিভাগ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তা পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে আবেদন করেন তিনি। এই পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষে ২৬ ফেব্রুয়ারি লিভ মঞ্জুর করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। এর ধারাবাহিকতায় মৃত্যুদণ্ড বহালের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউর পরিপ্রেক্ষিতে আজহারুলের করা আপিলের ওপর শুনানি শুরু হতে যাচ্ছে। আজহারুল বর্তমানে কারাগারে আছেন।
আরও পড়ুনজামায়াত নেতা আজহারের রিভিউ শুনানি শুরু, আগামীকাল পরবর্তী শুনানি২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম নবত ব র ধ আপ ল ব ভ গ আজহ র ল আজহ র র আইনজ ব আপ ল র র আপ ল
এছাড়াও পড়ুন:
লেবাননে এক দশক ধরে বন্দী গাদ্দাফিপুত্রকে ১ কোটি ১০ লাখ ডলার জামিনে মুক্তির নির্দেশ
লেবাননের একজন বিচারক হানিবাল গাদ্দাফিকে জামিনে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন ও তাঁর ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। হানিবাল লিবিয়ার নিহত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির ছোট ছেলে। প্রায় এক দশক ধরে লেবাননে বিচারপূর্ব আটকাবস্থায় আছেন তিনি।
লেবাননের ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি গতকাল শুক্রবার খবর দিয়েছে, গাদ্দাফিকে জামিনে মুক্তির এ রায় মুসা আল-সদরের অপহরণ ও লিবিয়ায় নিখোঁজ হওয়ার মামলায় দেওয়া হয়েছে। আল-সদর লেবাননের প্রখ্যাত শিয়া নেতা ছিলেন।
গাদ্দাফির আইনজীবী লরাঁ ব্যায়ন এ রায়কে বিদ্রূপাত্মক বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ব্যায়ন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘অন্যায়ভাবে কারাবন্দী করে রাখার মামলায় জামিনে মুক্তি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা জামিনের বিরুদ্ধে আপিল করব।’
এই আইনজীবী আরও বলেন, তাঁর মক্কেল ‘আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন’ এবং বড় অঙ্কের জামিনের অর্থ দিতে পারবেন না।
ব্যায়ন প্রশ্ন করেন, ‘আপনি চান, তিনি ১ কোটি ১০ লাখ ডলার কোথাও গিয়ে খুঁজে আনুক?’
লেবানন কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সালে গাদ্দাফিপুত্রকে গ্রেপ্তার করে। তাদের অভিযোগ, তিনি ১৯৭৮ সালে লিবিয়ায় মুসা আল-সদরের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে তথ্য লুকিয়েছিলেন। এ মামলা আজও লেবাননের মানুষের কাছে ব্যাপক আগ্রহের বিষয় হয়ে আছে।
হানিবাল গাদ্দাফিকে জামিনে মুক্তির রায় মুসা আল-সদরের অপহরণ ও লিবিয়ায় নিখোঁজ হওয়ার মামলায় দেওয়া হয়েছে। মুসা আল-সদর লেবাননের প্রখ্যাত শিয়া নেতা ছিলেন।মুসা আল-সদর যখন লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির সঙ্গে দেখা করতে যান, তখন লেবাননের একজন আদর্শিক নেতা ছিলেন তিনি।
আল-সদর ছিলেন আমাল আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা, যা এখন লেবাননের শিয়া সংগঠন হিজবুল্লাহর সঙ্গে জোটবদ্ধ রয়েছে। ওই সফরে নিখোঁজ হন তিনি। সফরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন একজন সহকারী ও একজন সাংবাদিক। তবে সফরের পর থেকে তাঁদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আল-সদরের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা বহু বছর ধরে নানা অনুমান ও অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের উত্তেজনা এ ঘটনা থেকে শুরু। গাদ্দাফি ২০১১ সালে বিপ্লবের সময় উৎখাত ও নিহত হন।
লেবাননের পার্লামেন্টের স্পিকার নাবিহ বেরি আল-সদরের পর আমাল আন্দোলনের প্রধান হয়েছেন। লিবিয়ার নতুন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা আল-সদরের নিখোঁজ হওয়া বিষয়ে সহযোগিতা করছে না। তবে লিবিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
অন্যায়ভাবে কারাবন্দী করে রাখার মামলায় জামিনে মুক্তি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা জামিনের বিরুদ্ধে আপিল করব। —লঁরা ব্যায়ন, হানিবাল গাদ্দাফির আইনজীবীঅনেকের মতে, আল-সদরের কী হয়েছে, তা জানতে হানিবাল গাদ্দাফিকে ২০১৫ সাল থেকে লেবাননে বিনা বিচারে আটক করে রাখা হয়েছে।
হানিবালের আইনজীবী বলেছেন, তাঁর মক্কেল এখন ৪৯ বছর বয়সী। এর মানে, আল-সদরের নিখোঁজ হওয়ার সময় তিনি মাত্র প্রায় দুই বছর বয়সী ছিলেন।
গতকালের ওই রায়ের পর আল-সদরের পরিবার একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে হানিবালের মুক্তির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়। তবে বলেছে, তারা এ সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করবে না।
আরও পড়ুনলেবাননের কারাগারে কেন অনশনে গাদ্দাফির ছোট ছেলে০৯ জুন ২০২৩বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হানিবাল গাদ্দাফির গ্রেপ্তার বা মুক্তি আমাদের লক্ষ্য নয়। মূল বিষয় হলো, ইমাম আল-সদরের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার নিষ্পত্তি হওয়া।’
গত আগস্ট মাসে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ লেবাননকে হানিবাল গাদ্দাফিকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানায়। মানবাধিকার সংগঠনটি বলেছে, তাঁকে ভুলবশত আটক করা হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য লুকানোর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।গত আগস্ট মাসে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ লেবাননকে হানিবাল গাদ্দাফিকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানায়। মানবাধিকার সংগঠনটি বলেছে, তাঁকে ভুলবশত আটক করা হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য লুকানোর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
গত সপ্তাহে হানিবালের স্বাস্থ্যের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, তিনি মানসিক চাপে ভুগছেন এবং পেটব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
আরও পড়ুনগাদ্দাফির ছেলে 'অপহরণের পর মুক্ত'১২ ডিসেম্বর ২০১৫হানিবাল গাদ্দাফিকে মুক্তি দিতে লিবিয়ার কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সালে লেবাননের প্রতি আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানায়। কারণ হিসেবে বিচারবহির্ভূতভাবে কারাবন্দী থাকার প্রতিবাদে অনশন করায় তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
লিবিয়ার প্রসিকিউটর জেনারেল আল-সাদিক আল-সুর লেবাননের প্রসিকিউটর জেনারেল ঘাসান উয়েদাতকে ওই অনুরোধ পাঠিয়েছিলেন। আল-সুর অনুরোধে উল্লেখ করেন, হানিবালকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে লেবাননের সহযোগিতা আল-সদরের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সত্য উদ্ঘাটনে সাহায্য করতে পারে।
আরও পড়ুনগাদ্দাফি হত্যার এক দশক, ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন লিবিয়াবাসীর১৯ অক্টোবর ২০২১