যারা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পরিবারের সঙ্গে বা একান্তে সময় কাটাতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য আজকের দিন হতে চলেছে দারুণ। জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘নেটফ্লিক্স’, ‘প্রাইম ভিডিও’, ‘জি ফাইভ’ ও ‘টেন্টকোট্টায়’ এ সপ্তাহে মুক্তি পাচ্ছে সাতটি নতুন সিনেমা ও ওয়েব সিরিজ। যেগুলোতে রয়েছে অ্যাকশন, থ্রিলার, প্রেম, কমেডি এবং ড্রামার মিশ্রণ।
জুয়েল থিফ [নেটফ্লিক্স]
ধরন: অ্যাকশন থ্রিলার। পরিচালনা: কুকি গুলাটি ও রবি গ্রেওয়াল
অভিনয়ে: সাইফ আলি খান, জয়দীপ আহলাওয়াত, নিকিতা দত্ত, কুনাল কাপুর
গল্প সংক্ষেপে: এ সিনেমায় রয়েছে এক উচ্চাভিলাষী চোরের গল্প; যাকে একটি কুখ্যাত অপরাধচক্র নিয়োগ করে বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় ও মূল্যবান হীরা ‘আফ্রিকান রেড সান’ চুরির জন্য। প্রথমে সবকিছু নিখুঁত পরিকল্পনায় এগোলেও, একটি অপ্রত্যাশিত মোড় পুরো অপারেশনকেই বিপদের মুখে ফেলে দেয়।
সুপারবয়েজ অব মালেগাঁও [প্রাইম ভিডিও]
ধরন: কমেডি-ড্রামা
পরিচালনা: রীমা কাগতি
অভিনয়ে: আদর্শ গৌরব, বীনীত কুমার সিং, শশাঙ্ক অরোরা, অনুজ সিং দুহান
গল্প সংক্ষেপে: এ সিনেমাটির পটভূমি ছোট শহর মালেগাঁও। এক তরুণ চলচ্চিত্রপ্রেমী ও তার বন্ধুরা সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা নিজের শহরের জন্য একটা সিনেমা বানাবে। নিজের মতো করে সিনেমা তৈরির লড়াই, স্বপ্নের সংঘর্ষ, আর তাদের জীবনঘনিষ্ঠ হাস্যরস–এ সব মিলিয়ে এটি একটি আবেগপ্রবণ, অনুপ্রেরণামূলক গল্প।
হ্যাভোক [নেটফ্লিক্স]
ধরন: অ্যাকশন-ক্রাইম থ্রিলার
পরিচালনা: গ্যারেথ ইভান্স
অভিনয়ে: টম হার্ডি, ফরেস্ট হুইটেকার, টিমোথি অলিফ্যান্ট
গল্প সংক্ষেপে: একটি ব্যর্থ ড্রাগ ডিলের পর একজন ক্লান্ত ও অভিজ্ঞ গোয়েন্দা জড়িয়ে পড়ে শহরের অপরাধজগতের গভীরে। একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের ছেলেকে উদ্ধার করতে গিয়ে সে এক ভয়ংকর রাজনৈতিক ও সামাজিক ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে একক যুদ্ধ, প্রচণ্ড অ্যাকশন ও মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েনের দুর্দান্ত মিশেল।
উইক হিরো ক্লাস ২ [নেটফ্লিক্স]
ধরন: স্কুলড্রামা, কোরিয়ান সিরিজ
প্রযোজনা: প্লেলিস্ট স্টুডিও
অভিনয়ে: পার্ক জি হুন, রিয়ো উন, চোই মিন ইয়ং
গল্প সংক্ষেপ: ইয়ন সি-ইউন নামের এক ছাত্র, যে আগের কিছু ট্রমা থেকে মুক্তি পেতে নতুন স্কুলে ভর্তি হয়। সেখানেও সহপাঠীদের হাতে হয়রানির শিকার হয় সে। এরপর সে নিজেই নিজের মতো করে বন্ধু তৈরি করে এবং প্রতিবাদে নেমে পড়ে। সিরিজটিতে দেখানো হয়েছে বন্ধুত্ব, মানসিক শক্তি এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে সাহসী প্রতিবাদের এক হৃদয়স্পর্শী গল্প।
তারুণম [টেন্টকোট্টা]
ধরন: রোমান্টিক থ্রিলার
প্রযোজনা: জেন স্টুডিও
অভিনয়ে: কিশেন দাস, স্মৃতি ভেঙ্কট
গল্প সংক্ষেপ: একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় অর্জুন ও মীরার। অর্জুন একজন সিআরপিএফ অফিসার। মীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এক নারী, যাকে তার প্রতিবেশী রোহিত বিরক্ত করে আসছিল। এক পর্যায়ে মীরা রোহিতকে খুন করে। অর্জুন তার অপরাধ ঢাকার জন্য সাহায্য করে।
আয়্যানা মানে [জি ফাইভ]
ধরন: কন্নড় থ্রিলার ওয়েব সিরিজ
প্রযোজনা: শ্রুতি নাইডু প্রোডাকশনস
গল্প সংক্ষেপ: নববিবাহিত যাজি বুঝতে পারে তার পরিবারে একের পর এক অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটছে এবং তার সঙ্গে জড়িত একটি প্রাচীন কুন্ডাইয়া মূর্তি। সে সত্যের খোঁজে নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে। অতিপ্রাকৃত বিশ্বাস, পারিবারিক ইতিহাস এবং আত্ম-উপলব্ধির দুর্দান্ত সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে এ সিরিজে।
ম্যাড স্কয়ার [নেটফ্লিক্স]
ধরন: তেলেগু কমেডি-ক্রাইম
পরিচালনা: কল্যাণ শঙ্কর
অভিনয়ে: রাম নীতিন, প্রিয়াঙ্কা জাওয়ালকার, নার্নে নীতিন, সঙ্গীত সোবান
গল্প সংক্ষেপ: একদল বন্ধু–যাদের প্রত্যেকের আছে আলাদা সমস্যা ও ব্যস্ততা। এক বন্ধুর বিয়েতে তারা একত্র হয়। কিন্তু বিয়ের আনন্দ উৎসব হঠাৎ বদলে যায় বিশৃঙ্খল এক পরিস্থিতিতে। যখন তারা একটি চুরির মামলায় জড়িয়ে পড়ে।
যারা ঘরে বসে ওটিটি কনটেন্ট উপভোগ করতে ভালোবাসেন, বলা যায় তাদের জন্য এ সপ্তাহটি উপহারস্বরূপ। অ্যাকশন, থ্রিল, হাস্যরস, আবেগ–সব কিছু একসঙ্গে খুঁজে পাবেন এ সাতটি নতুন কাজে। আপনার পছন্দের মুড অনুযায়ী বেছে নিন সিনেমা বা সিরিজ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘নতুন একটি দলের কয়েকজন মহারথী’ বলার পর বক্তব্য বদলালেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম
ফেসবুক পোস্টে দেওয়া বক্তব্যের কিছু অংশ পরিবর্তন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত তিনটার কিছু আগে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেওয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর দুর্নীতি নিয়ে একটি অংশের লেখা কিছুটা পরিবর্তন করেন তিনি।
মাহফুজ আলম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গতকাল রাত ২টা ৫১ মিনিটে দেওয়া পোস্টের এক জায়গায় লিখেছিলেন, ‘আজকাল অনেকের লেজ কাটা যাচ্ছে বলে, আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন। নতুন একটি দলের কয়েকজন মহারথী এতে জড়িত। সবই প্রকাশ পাবে। একটা সার্কেলে প্রায় সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত, কিন্তু একজন কোনো টাকা ধরছেন না, এটা কার সহ্য হবে!’
এই পোস্ট দেওয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ভোররাত ৪টা ২৮ মিনিটে পোস্টের এই অংশে পরিবর্তন আনেন মাহফুজ আলম। সংশোধিত পোস্টে এই অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করে তিনি লেখেন, ‘আজকাল অনেকের লেজ কাটা যাচ্ছে বলে, আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন। বিভিন্ন দলের কয়েকজন মহারথী এতে জড়িত। সব ষড়যন্ত্রই প্রকাশ পাবে।’
প্রথমে দেওয়া পোস্টের এই অনুচ্ছেদের শেষ বাক্য ‘একটা সার্কেলে প্রায় সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত, কিন্তু একজন কোনো টাকা ধরছেন না, এটা কার সহ্য হবে’ সংশোধিত পোস্টে তিনি রাখেননি।
প্রথম পোস্টে মাহফুজ আলম তদবির চেষ্টার কথা উল্লেখ করে দুর্নীতির প্রস্তাব পাওয়ার একটি ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি লেখেন, ‘তদবিরের কথা উঠল যখন, একটা ঘটনা বলি। আমাদের এক বন্ধু একজন ব্যক্তিকে আমার ভাইয়ার সঙ্গে দেখা করায়। বিটিভির একটা টেন্ডারের কাজ করে দিলে তারা পার্সেন্টেজ দেবে এবং জুলাই নিয়ে কয়েকটা দেশে প্রোগ্রামের জন্য হেল্প করবে। আমি জানার পর এটা নিষেধ করে দেই। সদুদ্দেশ্যে হলেও রাষ্ট্রের আমানতের খেয়ানত করা যাবে না। পরবর্তীতে সে টেন্ডারের কাজও স্থগিত হয়।’
কথোপকথন রেকর্ড করে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ করে মাহফুজ আলম আরও লেখেন, ‘সে ব্যক্তি কনভারসেশন (কথোপকথন) রেকর্ড করে একজন সাংবাদিককে পাঠায়। সে সাংবাদিক যোগাযোগ করলে আমি বলে দিই, ভাই, আমরা এ কাজ করতে দেইনি। আর ওই লোক ফাঁসানোর উদ্দেশ্যেই জুলাইয়ের প্রোগ্রামের কথা বলে এ কাজ করেছে। উনি আমার কথা বিশ্বাস করে আর রেকর্ডটি পাবলিক করেননি।’
এরপরই নিজের পোস্টে দুর্নীতির বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে মাহফুজ আলম লেখেন, ‘আজকাল অনেকের লেজ কাটা যাচ্ছে বলে, আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন। নূতন একটি দলের কয়েকজন মহারথী এতে জড়িত। সবই প্রকাশ পাবে। একটা সার্কেলে প্রায় সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত কিন্তু একজন কোনো টাকা ধরছেন না, এটা কার সহ্য হবে!’
পোস্টের শেষে ‘পুনশ্চ’ দিয়ে মাহফুজ আলম যোগ করেন, ‘আমার নিকৃষ্ট শত্রুরাও গত ১২ মাসে আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ করলেও দুর্নীতি বা আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ করেনি। একটি নূতন দলের মহারথীদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে তাতে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব পবিত্র আমানত। হাজার কোটি টাকার চাইতেও ইজ্জত ও রাষ্ট্রের আমানত আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
সংশোধিত পোস্টে এই অংশেও পরিবর্তন এনেছেন মাহফুজ আলম। তাতে তিনি দুর্নীতির বিষয়ে করা তাঁর বক্তব্য পরিবর্তন এবং ‘নূতন দলের মহারথী’র জায়গায় ‘বিভিন্ন দলের মহারথী’দের কথা উল্লেখ করেন। আর শেষের বাক্যটি বাদ দেন।
সংশোধিত পোস্টে বিশেষ দ্রষ্টব্য দিয়ে মাহফুজ আলম লেখেন, ‘কয়েকটা বাক্য নিয়ে অযথাই জল ঘোলা হচ্ছে, তাই এডিট করে দিলাম। জুলাই কতিপয় লোকের কাছে পলিটিক্যাল মবিলিটির ল্যাডার। একটা না, কয়েকটা দলের মহারথীরাই আমার/আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। কিন্তু, সবার এখন গুজববাজ আর সুবিধাবাদীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার।’ উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এই পোস্ট দিয়ে তাঁর ভাই মাহবুব আলমের ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করেছিলেন।
‘মিথ্যা অভিযোগের জবাব!!’ শিরোনামে ওই ফেসবুক পোস্ট দিয়েছিলেন মাহবুব আলম। গুজব ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে আমার বিরুদ্ধে আর্থিক অস্বচ্ছতার গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমার অ্যাকাউন্টে গত ৬ মাসের বিবরণী এখানে দেওয়া হলো। আমার অ্যাকাউন্টটি এখনো সচল আছে। বনি আমিন নামক ব্যক্তি ও কিছু মিডিয়ার প্রচারিত তথ্য আসলে মিথ্যা বৈ কিছু নয়। আমি অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলাম। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাকাউন্টটি ২৩ সাল থেকে খোলা।’
ভাইয়ের তদবিরের কোনো কাজ করেননি দাবি করে মাহবুব আলম লেখেন, ‘আমার ভাই মাহফুজ আলমের পক্ষ থেকে কোনো তদবিরের কাজ আমি করিনি। কাউকে সে আজ পর্যন্ত করতেও দেয়নি। আমার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যবসা বাদে আমার কিংবা আমাদের পরিবারের কোনো আর্থিক লেনদেনের ইতিহাস নেই। আমাদের পরিবার গত ৩০ বছর ধরে ব্যবসায় জড়িত। আমার বাবা গত ১৬ বছর লীগের নিপীড়নের কারণে ঠিকমতো ব্যবসায় করতেই পারেননি।
‘আমার বাবার ও মাহফুজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলো আমি ও আমার বাবা পরিচালনা করছি। এখানে কোনো অস্পষ্টতা নাই। সবই বাংলাদেশের আইন দ্বারা সিদ্ধ এবং পাবলিক ইনফরমেশন।’
ফেসবুক পোস্টে মাহবুব আলম আরও লিখেছেন, ‘গত নভেম্বরে দেশে ফিরে আসার পর থেকে অনেক তদবির এলেও মাহফুজ কোনো কাজই করেনি। বরং, আমাদের পরিবারের সকল সদস্যদের স্পষ্ট নিষেধ করা আছে, যাতে কোনো তদবির তাকে না করা হয়। তার বা আমার বিরুদ্ধে আর্থিক অসংগতি কিংবা তদবির বাণিজ্যের কোনো প্রমাণ আজও কেউ দিতে পারেনি, পারবেও না। কারণ, আমরা করিনি।’
পোস্টের বিশেষ দ্রষ্টব্যে মাহবুব আলম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বনি আমিনকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ায় আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেবেন।
এর আগে ১৭ জুলাই রাজধানীর গুলশানে সাবেক নারী সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের পরিবারের কাছ থেকে চাঁদার টাকা নিতে গিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চার নেতাসহ পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ঘটনায় গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীদের এই প্ল্যাটফর্মের সদস্যদের চাঁদাবাজি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা–সমালোচনা হচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানকে দুঃখজনকভাবে ‘মানি মেকিং মেশিনে’ পরিণত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।